বই-বিশ্বাসঘাতক
লেখক -নারায়ণ সান্যাল
বইয়ের ধরণ-উপন্যাস
প্রকাশকাল-১৯৭৪সাল
প্রকাশক-দে’জ পাবলিশিং
ফরম্যাট-পিডিএফ
E=mc*c বোরন (10)+হি:আয়ন(4)→নাইট্রোজেন(13)+সদ্যমুক্ত নিউট্রন(1)
“বিশ্বাসঘাতক” লেখক নারায়ণ সান্যালের লেখা একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস।যে উপন্যাসটিতে পরমাণু বোমা বানানোর ম্যানহাটন প্রজেক্টের উপরে তথ্যভিত্তিক বিস্তর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক নারায়ণ সান্যাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে এক বিজ্ঞানী একক প্রচেষ্টায় একটি গোপন তথ্য রাশিয়ায় পাচার করে দেয়।আর এটাই ছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।আর এই বিশ্বাসঘাতকতা কে,কেন,কিভাবে করলো তার মূল কাহিনীই হচ্ছে এই উপন্যাসের উপজীব্য।
“বিশ্বাসঘাতক” বইয়ের শুরুতে উল্লিখিত লেখকের “কৈফিয়ত” পড়ে জানতে পারলাম,গল্পের দুটি ব্যতিক্রম বাদে প্রতিটি চরিত্রই বাস্তব।এছাড়া ঘটনার পরিবেশ,কথোপকথন ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই লেখক কল্পনা করে নিয়েছেন।এ গল্পের প্রত্যকটা চরিত্রই বিদেশী। গল্পটিতে প্রায় আড়াই ডজন নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত চরিত্র এ কাহিনীতে অংশ নিয়েছেন।তাদের প্রত্যেকের নামের পাশে লেখক তারকাচিহ্ন দিয়ে রেখেছেন।
১৯২৪ সালের ২৬ই এপ্রিল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর জন্মগ্রহণ করেন লেখক নারায়ণ সান্যাল।তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত লেখক।তার রচিত পাষণ্ড পণ্ডিত,সত্যকাম প্রভৃতি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।
১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস। একমাস আগে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র। ইউরেনিয়াম বোমা বিধ্বস্ত হিরোশিমা আর প্লুটোনিয়াম বোমা বিধ্বস্ত নাগাসাকির ধ্বংসস্তূপ তখনও সরানো যায়নি। মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত ছিল জার্মানী, রাশিয়া, ফ্রান্স অথবা জাপানের অধিকাংশ জনপদ।মানব সভ্যতার ইতিহাসে পৃথিবীতে এত বড় ক্ষয়ক্ষতি আগে কখনো হয় নি। এ বিশ্বযুদ্ধের সর্বময় কর্তা ছিলেন উন-আশী বছর বয়সের অশীতিপর বৃদ্ধ হেনরী এল স্টিমসন। এই অশীতিপর বৃদ্ধ ব্যস্ত ছিলেন প্রাতরাশে। এমন সময় টেলিফোনের ওপাশ থেকে দেখা করার আহ্বান আসলো।
তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। তিনি স্টিমসনকে জানান সকালে কানাডার রাষ্ট্রদূত তাকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। যেটা ছিল প্রাইম মিনিস্টার ম্যাকেঞ্জি কিং এর ব্যক্তিগত পত্র। প্রেসিডেন্ট স্টিমসনকে জানান যে ম্যানহাটন প্রজেক্ট এর গোপনতম তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। ১৯৩৯সালের ১১ই অক্টোবর সেদিনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে ছিল এমনি একটা চিঠি। কিন্তু সে চিঠিটি এসেছিল লঙ-আইল্যান্ডে পরবাসী শুভ্রকেশ এক বৃদ্ধ বৈজ্ঞানিকের কাছ থেকে। আর ছয় বছর পরে সেই ঐতিহাসিক চিঠিটির পুনরুক্তি করলেন। রুজভেল্ট এর উত্তরসূরি হ্যারী ট্রুম্যান।
প্রেসিডেন্ট আদেশ দিলেন এই অপহারককে খুঁজে বার করার। এ নিয়ে প্রচণ্ড কনফারেন্স রুমে একত্রে আটজন বসেছেন।যারা ছিলেন অ্যাটমবোমা প্রকল্পের সর্বময় সামরিক কর্তা জেনারেল লেসলি গ্রোভস এবং ওপেনহাইমার।যুদ্ধ চলাকালে এ প্রকল্পের ছদ্মনাম ছিল “মানহাটন প্রজেক্ট”।স্টিমসন জানান যে চিঠিটা পড়ে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে বিশ্বাসঘাতক নিঃসন্দেহে একজন বিশ্ববিশ্রুত বৈজ্ঞানিক।হয়তো, বা নোবেল লরিয়েট। একটা গোপন নথীপত্র থেকে জানা যায়,রাশিয়ান গুপ্তচর বাহিনী দীর্ঘ তিন চার বছর ধরে এই ফর্মূলা সংগ্রহের চেষ্টা করেছে।বিশ্বাসঘাতকের ছদ্মনাম ছিল ডেক্সটার। মানহাটন প্রেজেক্টের অন্তত দশটি প্রধান শাখা তিন-চার হাজার মেইল দূরত্বে ছড়ানো ছিল।”মানহাটন প্রজেক্ট” ধারনা করলো যে বারোজন বৈজ্ঞানিক এমন একটা গোপন নথী প্রস্তুত করার ক্ষমতা রাখে।তাদের মধ্যে নোবেল লরিয়েট পাঁচজন।
এখন কথা হচ্ছে যে জিনিসটা নিয়ে এত ঘাটাঘাটি সেটা হচ্ছে “পারমাণবিক বোমা”।এখন আমরা কি জানি সেটা কি বা কিভাবে বানানো হয়।লেখক সেটারও বর্ণনা “কী” তে দিয়েছেন। কিন্তু একপর্যায়ে জানা যায় যে,এই পারমাণবিক অস্ত্রের যাবতীয় সংবাদ যে গুপ্তবাহিনী সংগ্রহ করে যাচ্ছে তার সবই একজন জানতেন এমনকি গুপ্তবাহিনীকে সহায়তাও করেছেন।উনি যে একাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তা নয় উনার সাথে আরো অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন।শেষে সেই বিশ্বাসঘাতক ধরা পড়ে এবং তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়।১৯৫০সালের ৩০শে জানুয়ারি বিশ্বাসঘাতক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
২য় বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পরেই জানা যায় যুদ্ধের সময়ের এক অতি গোপনীয় প্রজেক্ট এর গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য রাশিয়ায় পাচার হয়ে গেছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে সেই বিশ্বাসঘাতক যে এই কুকর্মটি করেছে বা কেনই করেছে তা নিয়েই ছিল এই বইটির কাহিনী। আমি মানবিকের ছাত্রী। বিজ্ঞানটা আমার মাথায় একটু কমই ঢুকে।তবে “বিশ্বাসঘাতক” বইটি লেখক এত সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছেন যে মাথায় না ঢুকে উপায় নেই।এ বইয়ের সবচেয়ে বেশি যে বিশেষ দিকটি আমার ভাল লেগেছে তা হল বিংশ শতাব্দীর যে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন আবিষ্কার পড়ে এসেছি তা একই মলাটে আবদ্ধ করেছেন লেখক নারায়ণ সান্যাল। তাছাড়া বইটিতে লেখক অনেক জটিল বিষয়আশয় নিয়ে ঘেঁটেছেন।এক্ষেত্রে অনেক লেখকেরই গুলিয়ে যেত আমার মনে হয়।কিন্তু লেখক নারায়ণ সান্যাল “বিশ্বাসঘাতক” বইয়ে এতগুলি চরিত্র আর এত জটিল বিষয় আশয় নিয়ে ভজঘট পাকান নি।
তবে হ্যাঁ,”বিশ্বাসঘাতক” একটি অনবদ্য উপন্যাস।এটি এমন একটি বই যা একবার পড়া শুরু করলে,শেষ না করা অবধি থামা যায় না।বিশ্বাসঘাতককে চিহ্নিত করার আগ্রহে পুরো বইটি পড়ে ফেলেছি।বইটি এখনো যারা পড়েননি তারা খুব শীঘ্রই বইটি পড়ে ফেলুন।আর জানুন মানব সভ্যতার ইতিহাসে আর্থিক মূল্যমানের উপর সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা কে করেছিল।
অনাবিলা অনা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
অনার্স ১ম বর্ষ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, নেত্রকোনা।