সব
facebook apsnews24.com
লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। - APSNews24.Com

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

তসলিমা নাসরিনের লজ্জা নিয়ে বিতর্ক মহীরুহের অাকার ধারণ করেছে। গত শতকের ক্রান্তিলগ্নে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় গ্রন্থটি। প্রকাশকাল থেকেই বিতর্কের অবতারণা। সে বিতর্ক চলছে বর্তমানেও। গ্রন্থের উপজীব্য সাম্প্রদায়িকতা। বাংলাদেশের মানুষের সাম্প্রদায়িকতা! গ্রন্থটিতে বাংলাদেশকে একটি চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপন্যাস গ্রন্থটির কাহিনির সারাংশ বর্ণনা করে পর্যালোচনায় যাবো। যে পাঠকের কাছে উদ্দিষ্ট গ্রন্থিটি অপঠিত, তার জন্যও বুঝতে সহজ হয়।

গল্পের মূল চরিত্র সুরঞ্জন। বাবা সুধাময়। মা কিরণময়ী এবং বোন মায়া। সুধাময় একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে পাক-হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনে বিকলাঙ্গ হয়ে শয্যাশায়ী সুধাময়।তবে, স্বাধীনতার দুই দশক পরেও তারা স্বাধীন নয়। নির্যাতন নিপীড়ন থেকে মুক্ত নয়।হিন্দু হওয়ার দরুন ক্রমাগত মুসলমানদের দ্বারা নির্যাতিত। বাসরত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে সর্বত্র-ই মুসলমানদের প্রভাব প্রতিপত্তি। হিন্দু সুরঞ্জন সহ তার সমগোত্রীয়রা শুধু বঞ্চিত-ই নয় সর্বত্র নির্যাতিত।বাংলাদেশ মানেই সাম্প্রদায়িক, বাংলাদেশ মানেই গোরা,কট্টর। মুসলমানদের দেশে হিন্দুদের চাকরি-বাকরিও পাওয়া অসম্ভব বলা চলে। এ নির্যাতন অারো প্রখর রুপ ধারণ করেছে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রভাবে। অযোধ্যায় বাবড়ি মসজিদ ভাঙায় বাংলাদেশের মুসলমানরা ক্ষেপে গিয়ে হিন্দু নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। সারাদেশে মন্দিরগুলোকে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্যাতনের যাতাকলে পরে বাস্তুভিটা ছেড়ে যেতে হচ্ছে। হিন্দু তরুণীদের হরহামেশাই ধর্ষণ নিপীড়নের স্বীকার হতে হচ্ছে। উদাহরণ টেনে এক অলোচনায় বলা হয়েছে–মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, টুঙ্গিপাড়া, শেরপুরের সব মন্দীর গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, পুরুষদের মেরেছে, নারীদের ধর্ষন করেছে। এবং এগুলোকে বাংলাদেশের স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেন হরহামেশাই এদেশে এসব ঘটে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় অপহরণ করা হয়েছে সুরঞ্জনের বোন অার সুধাময়ের কন্যা মায়াকে। মুসলমানদের এ নির্যাতন ছাপিয়ে গেছে একাত্তরের পাক বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনকেও। অাইন, প্রশাসন মুসলমানদের কোনো বিচার করছেনা। মুসলমানদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে হিন্দু ছেলে-মেয়েরা মুসলমান ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করে মুসলমান হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। অথবা শেষ রক্ষা পেতে চলে যেতে হচ্ছে হিন্দু অধ্যুষিত দেশ ভারতে।

রচনাটি প্রকাশিত হয় ‘৯০ এর দশকের শেষের দিকে। বাবড়ি মসজিদ কান্ডের কয়েক বছর পরেই। ভারতের অযোধ্যায় (১৯৯২ সালে) সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ( অারএসএস) মুসলমানদের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দেয় এবং মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের প্রস্তাবনা এনে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ দেয়। রোষে ক্ষোভ ফেটে পড়ে ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানরা। প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমে অাসে। ভারতীয় সরকার নির্বিচারে হত্যা করে হাজার হাজার অান্দোলনরত মুসলমানদের। সাম্প্রদায়িকতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বৈশ্বিক অালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে অাসে এ সাম্প্রদায়িক নির্মমতা। ক্ষুন্ন হয় ভারতীয় ভাবমূর্তি।

গান্ধী-নেহেরু-মাওলানা অাজাদ অসাম্প্রদায়িক ভারত গড়ার জন্য কাজ করেছেন। সব জাতি-ধর্ম-বর্ণ মিলে এক এক জাতি গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন; ভারতীয় জাতি। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব বাগড়া দিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, মুসলমানরা অালাদা জাতি। জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্ব অার ইংরেজদের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসির ফলে তৈরি হলো পাকিস্তান। প্রমানিত হলো ভারত একজাতির রাষ্ট্র নয়। এই ভাঙনের নেপথ্যে দায়ী জিন্নাহ ও তার সমমনা ব্যাক্তিরা। তবুও ভারত তার একজাতির দাবির উপর অটল। কেননা এখনো শতাধিক জাতের লোক বসবাস করছে অখন্ড একটি রাষ্ট্রে। এজন্য বৈশ্বিক ভাবে তাদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। এ ভাবমূর্তিতে চির ধরে যখন স্বয়ং ভারতীয় সরকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর অাঘাত হানে । যেহেতু বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী একটি দেশ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তাই বাংলাদেশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ এর প্রতিবাদ করেন

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মভীরু হলেও সাম্প্রদায়িক নয় । দুঃখজনকভাবে, কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটানা ঘটেছে। এটি নিশ্চয়ই লজ্জা জনক। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে অার অার তাতে রংচং মাখিয়ে কিতাব লেখা হয়েছে কিন্তু ভারতবর্ষে যে সাম্প্রদায়িক দাঙায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অহরহ খুন-জখম হয়েছে, সবলের অত্যাচারে দুর্বল সম্প্রদায় ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করেছে সেকথা তুলে ধরা কার দায়িত্ব?

যার প্রতিবাদ মধ্যপ্রাচ্য সহ পশ্চিমা অনেক দেশেও হয়েছে। জিসিসি’র সম্মেলনে এটিকে ‘ মুসলিম পবিত্র স্থানে বিরোধী অপকর্ম’ হিসেবে প্রস্তাব পাস করা হয়। বিশ্ব সমাজ ভারতকে সংখ্যালঘুদের রক্ষায় অারো তৎপর হতে অাহবান জানান। ঠিক তখনই হারানো সম্মান উদ্ধারে এগিয়ে অাসেন এ গ্রন্থের লেখিকা। বাংলাদেশর প্রতি ক্ষোভ অার তার প্রতি ভারতের ঋণ শোধে লিখেন এই সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক গ্রন্থটি। এটির মাধ্যমে ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতার রুপটি অাবৃত করে রাখতে চেয়েছিলেন। প্রচার-প্রচারণা করে বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছেন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত সাম্প্রদায়িক দেশ নয় বরং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ। উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের অন্যতম বুদ্ধিজীবী অাহমদ ছফা গ্রন্থটি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এ লেখাটির সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে’। অন্যত্র লিখেছেন, তসলিমা অনেক সময় প্রতিবাদী হিসেবে নাম কেনার জন্য ষাঁড়কে যেমন লাল কাপড় দেখিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হয়, একইভাবে মোল্লা-মৌলবীদের সে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলো। তিনি তাকে ভারতের ছুড়ে দেয়া উপগ্রহ হিসেবে অাখ্যা দিয়েছেন।

মোঃ অারিফুল ইসলাম
শিক্ষার্থী,
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj