#বই সমালোচনা।
এটি সহজ কাজ নয়।
তবুও একটি বিষয় নিয়ে শুরু করতে চাই। শুরু করতে চাই আমার লেখা বই দিয়েই।
#বইয়ের নাম “অনামিকা”।
ধরণ- উপন্যাস।
লেখক- আমি- নাহিদুল ইসলাম শাহীন। প্রকাশকাল- ১৯৯৯
প্রকাশনী- খান পাবলিশার্স
৩৮/৪, বাংলাবাজার, ঢাকা
মূল্য- ৫০ টাকা মাত্র।
#এটি আলোচিত-সমালোচিত, ঐতিহাসিক, কালজয়ী, ব্যাপক পাঠক নন্দিত জনপ্রিয় উপন্যাস নয়।
তবে অসামান্য পারিবারিক জীবন সংগ্রামের টানাপোড়েন নিয়ে লেখা
সামান্য পাঠকপ্রিয়, খানিক জনপ্রিয়
একটি উপন্যাস।
গল্প সহজ সাবলীল। লেখার ধরনও সরল, সহজবোধ্য। জটিল সমীকরণে পাঠককে বিব্রত করতে চাইনি। এই স ময়ে শহরে জীবনের কিছু খন্ডচিত্র বলা যেতে পারেএই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। লেখক (আমি) সাদাসিধাভাবেই উপস্থাপন করেছে উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রগুলো।
কাহিনী গতানুগতিক নয়, আবার অনেকের পরিচিতি রয়েছে গল্পের সাথে এমনও মনে হতে পারে। শহরের প্রভাবশালী পিতার দূর্নীতি, অনৈতিক জীবন যাপন। জুয়ার টেবিলে বসা, মদের আড্ডায় মেতে উঠাকে একমাত্র সন্তান মেনে নিতে পারেনা। পিতার পাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়ে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র “স্বাধীন” ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায় একদিন। বিভিন্ন জায়গায় বিবাগী হয়ে ঘুরেফিরে ক্লান্ত সে। পিতার নষ্ট প্রাসাদে ফিরবে না সে। কিন্তু ঘরে সহজ সরল মা তার অপেক্ষায় মৃত প্রায়। স্বামীর অত্যাচারের দাবানলে পুড়ে পুড়ে ভেতরে ছাই হয়ে যাওয়া নিষ্পাপ ধার্মিক নারী “সুফিয়া বেগম”। স্বাধীনের মা। মা’র জন্যই তাকে ফিরে আসতে হয়। তবে ভেতরে তার যুদ্ধাংসী মনোভাব। পিতার অমানবিক পাশবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে তাকে। একা পারবে না কঠিন পথ পারি দিতে। অলৌকিক ভাবে অদৃশ্য থেকে পাশে থাকে উপন্যাসের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র “অনামিকা”। প্রত্যেকটি ঘটনা, কখন কি করে এই খেলায় জয়ী হতে হবে স্বাধীনকে তার পূর্ব সংকেত জানিয়ে দেয় অনামিকা।
স্বাধীনের একমাত্র বোন অন্ধ প্রতিবন্ধি। পড়াতে আসে প্রিতম নামের এক যুবক। এই প্রীতমের লালসার স্বীকার হয় স্বাধীনের বোন “তন্নী”। প্রীতম ঠান্ডা মাথায় সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের ফলিত বিষবাষ্পে নষ্ট করে দেয় তন্নীর জীবন। একদিন তন্নীকে ধর্ষন করে পালিয়ে যায় প্রীতম। অনামিকার তথ্য অনুযায়ী স্বাধীন জানতে পারে প্রীতমকে ওদের বাড়ীতে পাঠায়েছে “দিলরুবা খানম” নামের ভয়ংকর এক মহিলা। স্বাধীনের বাবার দ্বারা চরম দুঃসময়ে পতিত মহিলা দিলরুবা খানম প্রতিশোধ নিতে প্রীতমকে তন্নীর শিক্ষক হিসেবে পাঠায় ওদের বাড়িতে। উদঘাটিত তথ্য ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে স্বাধীন জানতে পারে তার নিরীহ সাদামাটা মা’র অজান্তেই দিলরুবা খানমের সাথে স্বাধীনের পিতা- আকবর আলী খানের ছিলো অবৈধ সম্পর্ক। সেই বিষাদ ভুলতে প্রতিশোধ নেবার হাতিয়ার হিসেবে প্রীতমকে কাজে লাগায় দিলরুবা। পুলিশ খুঁজতে থাকে অপরাধীদের।
স্বাধীনের মগজে তখন খুন করার সহজ পরিকল্পনা। সে চায় পুলিশ অপরাধীদের ধরার আগেই তাদের হত্যা করবে স্বাধীন।অনামিকার ফোন থেকে জানতে পারে এক বাড়ীর ঠিকানা। পিতার পিস্তল হাতে স্বাধীন ওই বাড়িতে পৌঁছে আঁতকে উঠে। একই বাড়িতে তার পিতা আলী আকবর খান, দিলরুবা খানম ও প্রীতম। ঘোলাটে হয়ে যায় সব কিছু, কেনো তারা তিনজনই একসাথে? এক মুহূর্ত ভেবেই গুলি চালাতে থাকে সে। রক্তাক্ত মেঝেতে নির্বাক নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে স্বাধীন।
শেষান্তে বিপদসংকুল চরম দুঃসময়ে স্বাধীনের পাশে এসে দাঁড়ায় অনামিকা। কিন্তু আইনের কঠিন জাল ছিন্ন করে স্বাধীনকে কি মুক্ত করতে পারবে অনামিকা? সুফিয়া বেগম প্রিয় সন্তানের অপেক্ষায় বছরের পর বছর। চোখের জল শুকিয়ে যেতে থাকে। এবার আর ফিরে আসে না তার বুকের আরাধ্য প্রিয় সন্তান- স্বাধীন।
# উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ এটি।
বইটি ২১ বছর আগে লেখা। তখন হাতে প্রচ্ছদ আঁকা হতো। এখন কম্পিউটারে। কাগজ আগে নিম্নমানের ছিলো। এখন অপসেট পেপারে। তাই বইয়ের প্রচ্ছদ অলংকরণ সাদামাটা। বইটির কয়েকটি সংস্করণ বের হয়েছে। এখন হচ্ছে না। যদি মহামারী কেটে যায়, যদি আবার পৃথিবী স্বাভাবিক হয় তবে বইটির নতুন সংস্করণ বের হবে ইনশাল্লাহ। সবাইকে ধন্যবাদ। যারা কষ্ট করে পড়লেন। যারা পড়লেন না তাদেরও ধন্যবাদ।
রিভিউয়ারঃ নাহিদ শাহীন
আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা।