সব
facebook apsnews24.com
বইয়ের নাম: "আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি" গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: শাহাদুজ্জামান। - APSNews24.Com

বইয়ের নাম: “আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি” গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: শাহাদুজ্জামান।

বইয়ের নাম: “আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি”  গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: শাহাদুজ্জামান।

এপিএস বুক রিভিউ

রিভিউয়ারঃ মোঃ মেহেদী আরিফ

বইয়ের নাম: “আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি”
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: শাহাদুজ্জামান।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলা কথাসাহিত্যে এক প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। বিপ্লবী চিন্তায় উজ্জীবিত, সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্ভাসিত, উর্বর মস্তিষ্কের পাঠক, নিষ্ফলা মাঠের সার্থক কৃষক ইলিয়াস বিশ্বাস করতেন “ভোটের রাজনীতিতে দরকার পোস্টার, বিপ্লবের জন্য চাই সাহিত্য”। “আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি” হল একজন ব্যক্তি মানসের ক্যানভাস, একজন সমাজ চিন্তকের চিন্তার রাজ্য, একজন প্রচারবিমুখ দেশহিতৈষীর ইচ্ছা, অভিপ্রায়, আকুতি, ক্ষোভ ও অনুসন্ধানের দর্পণ।

ডায়েরির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত নিত্যদিনের রাজনৈতিক ঘটনার আলেখ্যর পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব চিন্তা মুখ্য হয়ে ফুটে উঠেছে। সাহিত্যিক ইলিয়াসকে মৃত্যু চিন্তা কুরে কুরে খেয়েছে, প্রতি জন্মদিনে তাই নিজস্ব নিক্তিতে পরিমাপ করেছেন আয়ু-পরমায়ুর অক্ষ-দ্রাঘিমা। ৩৯-তম জন্মদিনে এসে উপলব্ধি করেছেন,”39 years passed, how many years left?”

তিনি বিপ্লব চেয়েছেন সমাজে, আক্ষেপ করেছেন সমাজপতিদের বস্তাপঁচা রাজনীতির নোংরামি দেখে। অজ্ঞ, মূর্খ, পাঠাভ্যাস বিমুখ রাজনীতিবিদদের ন্যাকামিতে ব্যথিত হয়েছেন বারবার। উপলব্ধি করেছেন লেনিন, মাওসেতুং, স্টালিন, টলস্টয়রা রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য চর্চার নিয়োজিত থেকেছেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করেছেন। সেখানে নেহেরু আর গান্ধীজির দুই-একটি বই ছাড়া পারতপক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিকদের বিশ্বের দরবারে উল্লেখ করার মত কিছুই নেই। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ইলিয়াস মনে করতেন, সমাজতন্ত্র বাংলাদেশে নতুন কোনো যুগের অবতারণা করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।

ইলিয়াস ডায়েরি লেখার ক্ষেত্রে ‘বেকনিক স্টাইল’ মেনে চলেছেন যেন। ফ্রান্সিস বেকনের মত বিন্দুর মাঝে সিন্ধুর গভীরতা নিরূপন করেছেন। খুব ছোট বাক্যে বুঝিয়েছেন বিশাল কিছুকে। একটি কথা স্মর্তব্য, ইলিয়াস পড়েছেন ঢের, লিখেছেন খুব কম, তবে যা দিয়েছেন তার মাঝেই বাংলা সাহিত্যে বিশাল জায়গা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। ” চিলেকোঠার সেপাই” ও “খোয়াবনামা” বাংলা সাহিত্যের অনন্য দুই সৃষ্টি।

ইলিয়াসের ডায়েরিতে শুরু থেকে শেষ অবধি ধর্মঘট, গ্রেপ্তার, শ্লোগান, বিক্ষোভ ও আন্দোলনের বারুদের গন্ধ আছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের পক্ষে কোনো আন্দোলন করা একেবারেই অসম্ভব। লেখকের ভাষ্য,” আমাদের এখানে middle class- এর লোকদের পক্ষে কোনো আন্দোলন করা একেবারেই সম্ভব নয়। West Bengal কি India-য় তবু হতে পারে। West Bengal-এর middle class-এর জন্ম অনেক দিন। আমাদের এখানে লোকজন middle class ভুক্ত হওয়ার সুবিধাগুলো পেতে শুরু করেছিলো ১৯৬০ সালের দিক থেকে। এখনো সুবিধা পাওয়া চলছেই। এই অবস্থায় এইসব লোক establishment -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে কেন? এখানে lower middle class সুবিধাভোগী এবং তাদের প্রবণতা নিজেদের top class-এর লোকদের সঙ্গে identify করা।” তিনি আক্ষেপ করেছেন যে, আমাদের দেশে ১০-১২ টি মাঝারি ধরনের সাহিত্য লিখে প্রতিষ্ঠিত লেখক বনে যাচ্ছেন অনেকেই যা খুব পীড়াদায়ক। প্রতিষ্ঠিত সব পত্রিকা থেকে তাদের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করা হয়।

ইলিয়াস তাঁর ডায়েরির এক বিশাল অংশ জুড়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সেরা কথন টুকে রেখেছেন, কোরআন সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বাণীও লিপিবদ্ধ করেছেন, আর আছে সেখানে তাঁর নিজ সাহিত্যকর্মের কঙ্কাল তথা খসড়া, আছে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ। তবে তাঁর ডায়েরিকে সুন্দরভাবে সাজাতে বেগ পেতে হয়েছে স্বয়ং সম্পাদক শাহাদুজ্জামানকে।

ইলিয়াস কালমার্ক্সের পর জাঁ পল সার্ত্রেকে ইউরোপের সবচেয়ে যোগ্য প্রতিনিধি মনে করেন। তাঁর মতে, ইউরোপকে এই দুই জন বোদ্ধা সবচেয়ে ভালোভাবে ফোকাস করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামকে তিনি কোনো ফ্রেমে ফেলতে পারেন নি। কারণ নজরুল এক ধাপ থেকে আরেকধাপে আকস্মিকভাবে পদার্পণ করেছেন খুব ক্ষিপ্রভাবে। ভাসানীর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা তাকে আন্দোলিত করেছে কিন্তু ভাসানীর পীর প্রথা কিংবা ধর্মীয় কেন্দ্র স্থাপনের প্রচেষ্টাকে তিনি সামন্ত মনোভাবের পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাঁর ডায়েরিতে সবচেয়ে বেশি ডব্লিউ বি ইয়েটস এর কবিতার পঙক্তি পাওয়া যায়। আইনস্টাইন সহ অন্যান্য যুগশ্রেষ্ঠ বহু বোদ্ধাদের পঙক্তি দিয়ে তিনি তাঁর ডায়েরির পৃষ্ঠা ভরিয়েছেন। কথা অল্প কিন্তু ওজন খুব ভারী যা পাঠককে সহজেই অভিভূত করে, পাঠকের চিন্তার দুয়ারে হানা দেয়, পাঠককে নতুন শক্তিতে বেগবান হওয়ার জন্য ভিতরে ভিতরে উস্কে দেয়। তাঁর ডায়েরিতে লেখা স্টিফেন গোল্ড-এর একটি বাণী দিয়ে শেষ করবো। বাণীটি এমনঃ “Well, evolution is a theory, it is also a fact. And facts and theories are different things, not rungs in a hierarchy of increasing certainty. Facts are the world’s data. Theories are structures of ideas that explain and interpret facts.”

বুক রিভিউয়ার: মোঃ মেহেদী আরিফ, শিক্ষক ও সংগঠক, এসো আলোকিত হই।

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj