সব
facebook apsnews24.com
বই-আমি বীরাঙ্গনা বলছি, লেখক- নীলিমা ইব্রাহিম - APSNews24.Com

বই-আমি বীরাঙ্গনা বলছি, লেখক- নীলিমা ইব্রাহিম

বই-আমি বীরাঙ্গনা বলছি, লেখক- নীলিমা ইব্রাহিম

এপিএস বুক রিভিউ

রিভিউয়ার: এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

আমি বীরাঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহিম

অনেক স্বপ্ন আর তীব্র বাসনা নিয়ে বাঙালি যুদ্ধ করে একটি পেশাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। যারা কিনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর অন্যতম হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত ছিল। ২৫ মার্চ কালো রাত্রির ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে একটি জাতির মুখকে চিরতরে বন্ধ করে কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থের যে মিশন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ বাঙালির সর্বস্তরের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয় ছিল স্বাধীনতা। তাই অনেকটা খালি হাতেই মোকাবিলা করতে হয়েছিল বাঙালিকে একটা দুর্ধর্ষ বাহিনীর বিরুদ্ধে। পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা বাস্তবে ফল লাভ করেনি। দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী পুরোটাই নাজেহাল হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

সবাই যুদ্ধে অংশ নেয়নি বা নেওয়া অনেক কারণেই সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে নারীদের কম পরিমাণই সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল কিন্তু তাই বলে তাঁরা যুদ্ধ করেননি এমনটি হয়তো বলা ঠিক হবে না। তাঁরাও যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাঁদের যুদ্ধে ত্যাগের পরিমাণ ছিল অন্যান্য সব যোদ্ধার চেয়ে বেশি। পুরুষেরা সে সময় তাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাদের অরক্ষিত রেখে যুদ্ধে চলে যায়। এইসব নারীদের তাঁরা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদেরকে বাধ্য করা হয়েছিল পাকিস্তানিদের লালসার শিকার হতে। এই বীর নারীদের মরতে দেওয়া হতো না। যতক্ষণ শরীরে প্রাণের স্পন্দন থাকতো ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পশুর ক্ষুধা মেটাতো। এই বীর নারীদের যে লাঞ্ছনা এবং যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল তা ছিল বোধের অতীত।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় দুই থেকে চার লক্ষ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছিল। এই সংখ্যা যেটাই হোক না কেন কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না দেশের জন্য তাঁদের আত্মত্যাগের কথা। অনেকে তাঁদের অাত্মত্যাগ মুখে স্বীকার করলেও যুদ্ধের পর তাঁদের পরিবারে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছে। এমনি অনুদার ছিল তখনকার সমাজব্যবস্থা। তাছাড়া যেখানেই তাঁরা গিয়েছেন সেখানেই প্রত্যেক পদে পদে তাঁদেরকে শুনতে হয়েছে অপমানজনক নানা কথা। কিন্তু যিনি যথার্থ সম্মান দেখিয়েছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এই নারীদের মা হিসেবে সম্বোধন করেন এবং ‘বীরাঙ্গনা’ সম্মানে সম্মানিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে লাঞ্ছিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য অনেকেই পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁদের মধ্যে নীলিমা ইব্রাহিমের শ্রম ছিল প্রশংসা পাবার মতো। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নির্যাতিত নারীদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া এবং কর্মক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছেন। কিন্তু অনুদার ও সংকীর্ণ মানসিকতার ধ্বজা বহনকারী সমাজের কারণে তিনি সবক্ষেত্রে সফল হতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত এইসব বীরাঙ্গনাই হচ্ছেন এই গ্রন্থের কুশীলব এবং গ্রন্থটি তাঁদেরই আত্মচিৎকারের লেখিতরূপ।

মোট সাতজন বীরাঙ্গনা নারীর গল্প এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। ‘গল্প’ শব্দটা কেমন যেন অপমানজনক বলে মনে হচ্ছে তাই বলতে পারি এই গ্রন্থটি তাঁদেরই সংগ্রামী আত্মত্যাগের বাস্তবরূপ যা গল্প নয় সত্যি এবং ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ও সম্মানজনক অধ্যায়। সম্মানজনক স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে তাঁদের অবদান আর পাকিস্তানিদের নিকট থেকে যে বর্বরতা তাঁদের সাথে সংঘটিত হয়েছিল সেটা ছিল কলঙ্কিত অধ্যায়।

যে সাত নারী ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ গ্রন্থের উপজীব্য হয়েছে তাঁরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তাঁদের মধ্যে অাছেন কৃষক, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও রাজনৈতিক পরিবারের প্রতিনিধি। এইসব বীরাঙ্গনা অর্থাৎ বীর নারীরা পাকিস্তানিদের সাথে সংগ্রাম করে এক স্বাধীন ও মুক্ত দেশের আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার প্রাণপন চেষ্টা করেছেন এবং তাঁদের ত্যাগকে জাতি সম্মানের সাথে গ্রহণ করবে সেটা তাঁদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা এই বীর নারীদের উপযুক্ত সম্মান দিতে পেরেছি কী? এই ব্যর্থতা আমাদের লজ্জার, আমাদের হীন ও জাড্য মানসিকতার উজ্জ্বল প্রমাণ। পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশ যখন স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বীর নারীদের আত্মদানকে সম্মানের চোখে দেখে, তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে, আমরা সেই জায়গায় হয়েছি ব্যর্থ।

মানুষের ধিক্কার ও অপমানজনক আচরণে এই বীর নারীরা আহত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু বেঁচে থাকার সংগ্রামে তাঁরা হেরে জাননি। সংগ্রাম তাঁদের অব্যাহত থেকেছে সবসময়। তাই তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা অবিরাম। তাঁদের এই অস্তিত্বের সংগ্রাম থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছি তো?

এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

প্রকাশক: জাগৃতি (প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৪, প্রথম দুই খণ্ডের অখণ্ড প্রকাশ: ১৯৯৮, দশম সংস্করণ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০)
মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯০
গ্রন্থের প্রকৃতি: মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের আত্মকথা

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj