সব
facebook apsnews24.com
বইয়ের নাম: সমাজ দর্পণ লেখক: ড. গোপাল চন্দ্র সরদার ধরন: প্রবন্ধ - APSNews24.Com

বইয়ের নাম: সমাজ দর্পণ লেখক: ড. গোপাল চন্দ্র সরদার ধরন: প্রবন্ধ

বইয়ের নাম: সমাজ দর্পণ  লেখক: ড. গোপাল চন্দ্র সরদার  ধরন: প্রবন্ধ

এপিএস বই পাঠ পর্যালোচনা

বুক রিভিউ: মোঃ মেহেদি আরিফ

বইয়ের নাম: সমাজ দর্পণ
লেখক: ড. গোপাল চন্দ্র সরদার
ধরন: প্রবন্ধ
প্রকাশনী: গাঙচিল প্রকাশন
পৃষ্ঠা: ৮৮
গায়ের মূল্য: ১২৫ টাকা।

ড. গোপাল চন্দ্র সরদার একজন শিকড়সন্ধানী গবেষক, চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব, অনুকরণীয় শিক্ষক ও বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়ণকারী একজন সচেতন পাঠক। চালচলন ও কথাবার্তায় তিনি বন্ধুপ্রতিম। সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত গোপাল চন্দ্র সরদারের Sense of humour ঈর্ষণীয় যা তাঁর কথাবার্তা, বক্তৃতা কিংবা শ্রেণিকক্ষের আলাপচারিতায় স্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়। বৃহৎ বিষয়কে তিনি অল্প কথায় প্রকাশ করেন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে পাঁচমিশালি মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে তিনি রচনা করেছেন “সমাজ দর্পণ” বইটি। সমাজের মানুষের সাথে তাঁর মিশে যাওয়ার ঈর্ষণীয় ক্ষমতা অপূর্ব রকমের সুষমা সৃষ্টি করেছে তাঁর ব্যক্তিত্বে। একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি খুটে খুটে বের করেছেন সমাজের ত্রুটি, অধঃপতন, স্খলন, বিড়ম্বনা, অবক্ষয়, বৈষম্য; উপলব্ধি করেছেন সংস্কৃতি, সামাজিক কর্মকাণ্ড, প্রথা, আচার, শিক্ষা ও সংগ্রাম আর রূপায়ণ ঘটিয়েছেন ব্যক্তিসত্তার।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ২৩টি অমূল্য প্রবন্ধের এক নীড় হলো “সমাজ দর্পণ” বইটি। স্বাধীনতার ৪৯টি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও দেশের মানুষেরা এখনও উন্নয়নের মূল শিকড়কে স্পর্শ করতে পারেনি যা লেখককে দারুণভাবে আন্দোলিত করেছে। একজন শিকড়সন্ধানী লেখকের বেশে তিনি সমাজের কোলে ডুব দিয়ে দেখেছেন সমাজের বাস্তব রূপ। সমাজে উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে আমরা এক শ্রেণির গম্ভীর চরিত্রের মানুষের দেখা পাই। এই শ্রেণির মানুষকে অন্যরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে মূল্য দেয়। লেখকের মতে,”একজন মানুষ সমাজে তার সার্বিক কর্মকাণ্ডে যে অবস্থান দখল করে মূলত ওটাই তার ব্যক্তিত্ব”। কথা কম বলা ভাবগাম্ভীর্যে টইটম্বুর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে ব্যক্তিত্ববান বলতে তিনি নারাজ। বিএ,এমএ পাশ করে গাঁয়ের কোনো ব্যক্তি মাঠে কাজ করলে সমাজের নাক লম্বা মানুষগুলো তাদেরকে ব্যক্তিত্বহীন বলে তাদের কপালে সীল মেরে দেয়। আসলে কোনো কাজ যে ছোট নয় এটা আমরা মানুষ হিসেবে বুঝতে প্রায়ই ব্যর্থ হই, যার ফলশ্রুতিতে উন্নতির শিকড়েই আমরা অবস্থান করি, শিখরে ওঠা আমাদের কাছে স্বপ্নই থেকে যাই। কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে না জেনে তাদের চরিত্রের সার্টিফিকেট প্রদান করি যা সমাজে শুধু কোন্দলই সৃষ্টি করে, সমাধান দিতে পারে না। সমাজে নারী নির্যাতনে সমাজের নারীরাও কম দায়ী নয়, লেখক এমনটিই মনে করেন। আর পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের একক আধিপত্যকে তিনি নিন্দা জানিয়েছেন, প্রবলভাবে ধিক্বার জানিয়েছেন নারীদের প্রতি পুরুষের গোড়ামী মনোভাবকে।

সমাজে ন্যায়পরায়ণ লোকের ঘাটতি উপলব্ধি করে লেখক আক্ষেপের সুরে বলেছেন,” বর্তমান সমাজে ন্যায়ের কথা বলা লোকের অভাব নেই, অভাব আছে ন্যায়পরায়ণ লোকের”। সক্রেটিস কিংবা নজরুলের সাহসী মনোভাবকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। নেতা-নেত্রীদের মৌসুমী প্রতিশ্রুতি ও তা রক্ষায় গড়িমসি যে সমাজের জন্য খুব নেতিবাচক তা তিনি উপলব্ধি করেছেন। সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁতকে তিনি মানবতাবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অগাস্ট কোঁত ছিলেন গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পূজারী, যিনি সমাজের উন্নয়নের জন্য সমাজের সকল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির উপর আলোকপাত করেছেন।

লেখক গোপাল চন্দ্র সরদার মনে করেন যে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছাড়া সমাজ প্রগতি অসম্ভব। তিনি বলেন” মুক্তভাবে যখন মানুষ চিন্তা করতে ব্যর্থ হয় অথবা কোনো একটি আদর্শকে সর্বাপেক্ষা বেশি মূল্যায়ন করে তখন তাকে মৌলবাদী বলা যেতে পারে। এজন্য আমরা কমিউনিস্টদেরকেও মৌলবাদী বলতে পারি। মৌলবাদী বলতে পারি ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক দলগুলোকে।” আমরা যে সমাজে বসবাস করি সে সমাজকে তিনি প্রতিবন্ধী সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সন্ত্রাস, ঘুষ, ভেজাল,দুর্নীতি, শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য প্রভৃতি ঘাতকরূপী অক্টোপাসের নিগড় থেকে মুক্ত না হতে পেরে সমাজ আজ রীতিমতো ব্যাধিগ্রস্ত। কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বের শিক্ষার সাথে সাথে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সমাজের মানুষকে খাঁটি মানুষে পরিণত করতে পারে বলে লেখক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। এর মধ্য দিয়ে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য মানুষের মন থেকে বিতাড়িত করা সহজ হবে। লেখক বিশ্বাস করেন যে, মনে-প্রাণে যারা প্রগতিশীল তাদের কোনো ধর্ম কিংবা জাত নেই, মানবধর্মই তাদের কাছে আসল। সুখ ও সমৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হিসেবে তিনি সুন্দর পরিকল্পনাকে চিহ্নিত করেছেন। দেশের ঘরোয়া সমস্যা সমাধানে বিদেশী হস্তক্ষেপকে দারুণভাবে নিন্দা করেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে রাজনীতি কিংবা সন্ত্রাস উত্তরাধিকার সূত্রে হাতে হাত ধরে চলছে। তাই এই বিষবৃক্ষের ফসল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে।

সমাজের ক্ষত সৃষ্টিতে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্যের রমরমা উপস্থিতি জানিয়ে দেয় জাতি হিসেবে আমাদের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার নিত্য ফরমান। সংযমকে সুখ ও সমৃদ্ধির পরশপাথর হিসেবে তিনি বিবেচনা করেছেন। একই ধরনের মন মানসিকতার লোক ছাড়া আত্মীয়তা বা বন্ধুত্ব কোনোটিই সম্ভব নয় বলে লেখক মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মন মানসিকতার অসম বিন্যাস অশান্তির খনি। ব্যক্তিমালিকানার একক আধিপত্য পৃথিবীতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পিছনে সবচেয়ে বড় কাঁটা তারের বেড়া। মানস জগতের ভিত্তি মূল নির্মাণ করে সমাজ। আর এই সমাজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে মানুষ আদর্শে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যদি আন্তরিকতায় অভিন্ন হয়। লেখক বলেন,” গণতন্ত্র নবজাতক শিশুর মত। তাকে লালন পালনে ত্রুটি ঘটালে সে লক্ষ্যচ্যুত হয়।”

“সমাজ দর্পণ” লেখকের নিজস্ব চিন্তার জগৎ সম্পর্কে পাঠককূলকে ভাবিয়ে তোলে। একই সাথে তা সকলকে সমাজকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। বইটির নামের সার্থকতা প্রবন্ধগুলিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে এ বইটি দারুণ একটি সংযোজন।

বুক রিভিউয়ার: মোঃ মেহেদি আরিফ, পরিচালক, এসো আলোকিত হই এবংসিাবেক শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj