এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা
বুক রিভিউয়ারঃ মুহাম্মদ আহসান হাবীব
বই: #প্রশ্নের_দর্শনলেখক: এস. এম. জাকির হুসাইন।
বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও সংশয়বাদীরা বই টি অবশ্যই পড়ুন। এই বই টি আপনাকে নতুন করে প্রশ্ন করতে শেখাবে। সৃষ্টি ও স্রষ্টা নিয়ে যেসব প্রশ্ন মানুষের মনে জাগে ও প্রচলিত আছে তার উত্তর স্বয়ং স্রষ্টা নিজেই দিয়েছেন সত্য কিতাব আল কুরআনে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত অগ্রভাগ মনুষ সেই পর্যন্ত স্রষ্টার ভাষাকে গভীর থেকে উপলব্ধি না করতে পারার কারণে নিজেকে অবিশ্বাসীদের তালিকাভুক্ত করেন। প্রতিপালকের প্রতি এই অবিশ্বাস/ সংশয়বাদীতার কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত-ই সীমালঙ্ঘন করে।
এই সীমালঙ্ঘনের পরিণতি যৌক্তিকভাবে কতটা ভয়াবহ হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ-ই ওয়াকিবহাল নয়। কারণ কি? কারণ হলো- অবিদ্যা ও অজ্ঞতা। মানুষের সবচেয়ে খারাপ ও দূর্বল দিক হলো অবিদ্যা ও অজ্ঞতা৷ ইসলাম ও কুরআন কখনো কুসংস্কার নয়। হতে পারে না। এটা আবেগের বশবর্তী হয়ে বলছি না। এর পিছনে রয়েছে অথেন্টিক যৌক্তিক বিশ্লেষণ, চিন্তা ও গবেষণা। কুসংস্কার হলো মানুষের অবিদ্যা ও অজ্ঞতা জড়িত চিন্তা। ঠিক/ সত্য জিনিসটা বুঝতে পারার অক্ষমতা মানুষকে কুসংস্কারের দিকে ধাবিত করে। অজ্ঞতা ও অবিদ্যার কারণে মানুষ নিজে সত্য কিতাব সম্পর্কে না জেনেই নিজেকে বিজ্ঞ হিসেবে জাহির করতে বেশ পটু।
অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে মূর্খামি ও পটুতার অহংকার শেষ পর্যন্ত তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা উপলব্ধি করতে সে ভুলে যায়। অথচ স্রষ্টা তাঁর প্রথম বাণীতে আমাদের জন্য কি সুসংবাদ দিলেন? তিনি বললেন, ‘পড়ো’। কারণ কেবল পড়লেই অনেক কুসংস্কার ও ভ্রান্তি থেকে বের হওয়া যায়। এ বোধদয় তাদের অনেকের থাকলেও সত্যবাণীর মর্মকথা উপলব্ধি করার ব্যাপারে তারা একেবারে উদাসীন। যার ফলে সত্যনির্দেশক ও সুস্পষ্ট কিতাবের বাণীকে তারা মূর্খের মতো প্রশ্ন করে। এবং স্রষ্টা ও সত্যবাণীর ব্যাপারে প্রকাশ করে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। অথচ স্রষ্টা কুরআনে কি বললেন? স্রষ্টা বললেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন, তবে সকল মানুষকেই একজাতিতে পরিণত করতে পারতেন।’ [ সূরা হুদ, আয়াত: ১১৮ ]। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ মহান স্রষ্টার যেমন ইচ্ছা তিনি ঠিক তেমনি করে থাকেন। নিশ্চয়ই তিনি যা জানেন আমরা তা জানি না।
প্রিয় পাঠক, বলছিলাম এস. এম. জাকির হুসাইনের লেখা ‘প্রশ্নের দর্শন’ বইটি নিয়ে। এটি এমন একটি বই যা কুরআনের আলোকে যৌক্তিক বিশ্লেষণে সাজানো একটি নান্দনিক বই। একজন চিন্তাশীল পাঠকের জ্ঞান ও বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে অনেকবেশি উন্নত করবে এই বইটি। অন্যান্য রিভিউ ও পর্যালোচনার মতো এ বইটির ভিতেরের আলোচিত বিষয়কে উল্লেখ করে রিভিউ টি লিখতে চাই না। কেবল বই টি পড়তে অনুরোধ জানাই। এমন বই না পড়ার কারণে হয়তো সংশয়বাদী হয়ে থাকা যায়। কিন্তু এমন বই পড়ার পর ভেতরের জগতটাই পাল্টে যায় ঠিক ভেতর থেকেই। নতুন আলোতে উদ্ভাসিত হয় জ্ঞানের জগৎ। কেবল তথ্য লাভের জন্য এ বই পড়ার প্রয়োজন নেই। জ্ঞান, যুক্তি, তথ্য, বিশ্লেষণ, বিশ্বাস ও উপলব্ধি লাভের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়লে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হবে বলে মনে করি।
তিরাশি পৃষ্ঠার এই বইটিতে অধ্যায় আছে পাঁচটি। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে কুরআনের সব দারুণ, যৌক্তিক ও ব্যাখ্যামূলক আলোচনা। উঠে এসেছে দার্শনিক ব্রার্টান্ড রাসেলের প্যারাডক্সের কথা। সেই সাথে বাংলার দার্শনিক আরজ আলী মাতব্বর সম্পর্কেও আছে বিশেষ মতামত ও তাঁর দার্শনিক ভাবনার সূক্ষ্ম সমালোচনা। দেখানো হয়েছে পবিত্র কিতাবে মহান রব তাঁর নিজের প্রশ্নের উত্তর কিভাবে নিজেই প্রদান করেন? ‘কুরআর মানুষের তৈরি কিতাব হতে পারে না।’ রয়েছে এই কথাটির প্রমাণ। বইটির প্রথমেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘প্রশ্ন’ কী? এ সম্পর্কে। ‘প্রশ্ন’ আসলে কি তা জানতে এই অধ্যায়টি একটি তথ্যপূর্ণ একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
লেখক এস. এম. জাকির হুসাইন একজন আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ। বাংলাদেশ ও ভারতীর উপমহাদেশের সারা জাগানো একজন ইংরেজি পুস্তিক লেখক তিনি। দুই শতাধিক ইংরেজি ভাষা ও ব্যাকরণ, ধর্মীয়, দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা বিষয়ক বই লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখার ঢং সাবলীল, যৌক্তিক, তথ্যপূর্ণ, বিশ্লেষণী একইসাথে অত্যন্ত গভীর। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম। মহান রবের ইচ্ছায় তাঁর লেখা প্রায় সবগুলো বই আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে। কয়েকবছর থেকে তাঁর কোনো বই প্রকাশিত হচ্ছে না।
চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে বিশেষ গবেষণায় লিপ্ত আছেন বলেই জানি। ‘শেফা কানন’ (Shefakanon) নামে চিকিৎসা বিষয়ক একটি ফেসবুক পেইজ তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর লেখা অনেক বই পড়ার ও রিভিউ করার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু তাঁর সাথে ফিজিক্যালি দেখা হয়নি কখনো। না-হোক, গুণী মানুষদের দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। সেজন্যই তো আমরা মুহাম্মাদ (স.), সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, যীশু, বুদ্ধ, গান্ধী, লিংকন, ম্যান্ডেলা, আরাফাত, মাহতির, নজরুল, ঠাকুর, মুজিবদের মতো মানুষকে ভালোবাসি। হ্যাঁ, দূরে থেকেও ভালোবাসি জাকির স্যারকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য- অনেকেই আরিফ আজাদের লেখা ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ বই টি পড়েছেন। বাজারে সাজিদ আসারও ছয় বছর পূর্বে (২০১২) ‘প্রশ্নের দর্শন’ বইটি প্রকাশিত হয়। পড়লেই বুঝতে পারবেন সাজিদ বোধহয় এস. এম. জাকির হুসাইন দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে এতো দারুণ করে যুক্তি দিতে শিখেছেন।
শেষ কথা, বইটির কোনো সমালোচনা করতে চাই না। পড়ুন। জানুন। বিশ্বাসের ভিত্তিটাকে আরেকটু শক্তিশালী করুন। ধন্যবাদ।
রিভিউয়ার মুহাম্মদ আহসান হাবীব। লেখক ও শিক্ষক দক্ষিণ গিদারী, গাইবান্ধা।০১/০৫/২০ ঈসায়ী। লেখক/ বইএস. এম. জাকির হুসাইন।প্রশ্নের দর্শন [২০১২]।জ্ঞানকোষ প্রকাশনী।গায়ের দাম: ১২০ টাকা।