সব
facebook apsnews24.com
বইঃ সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড, মূল: প্লেটো, ভাষান্তর: ড. সফিউদ্দিন - APSNews24.Com

বইঃ সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড, মূল: প্লেটো, ভাষান্তর: ড. সফিউদ্দিন

বইঃ সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড, মূল: প্লেটো, ভাষান্তর: ড. সফিউদ্দিন

এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা

সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড
মূল: প্লেটো
ভাষান্তর: ড. সফিউদ্দিন আহমদ

রিভিউয়ারঃ এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ফিরে যেতে হবে আমাদের। গ্রীসের এথেন্সে আমরা বিচরণ করবো। এই বিচরণে আমাদের চোখের সামনে একটি প্রজ্ঞাদীপ্ত মনীষীর ছবি ভেসে উঠবে। সেখানে দেখবো হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, রাস্তার মোড়ে এককথায় যেখানে জটলা সেখানেই একলা বয়ান করে যাচ্ছেন একজন শিল্পী। হ্যাঁ, বয়ান করছেনই বটে! একের পর এক প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে যেন এক আশ্চর্য প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা চলছে। এখানে উঁকি দিলেই আমাদের সঙ্গে দেখা মিলবে প্রখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬৯-৩৯৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) সঙ্গে।

সক্রেটিস একজন দার্শনিক হলেও মূলত ছিলেন একজন শিক্ষক। যুগের কালিমা দূর করে একটি আলোকিত আগামীর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। সক্রেটিস চেয়েছেন মানুষকে জড় জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে উদার, সহনশীল, মানবিক এবং যুক্তিবাদী মননের অধিকারী হতে। যুগে যুগে বিভিন্ন জ্ঞানীদের ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে সক্রেটিসের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সমাজ জ্ঞানী এবং উঁচু মাথার মানুষকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। বরং জ্ঞান, মেধা ও মননে মাথা উঁচু করলেই সমাজ সেই উঁচু মাথাকে ছেঁটে দিতে চেয়েছে। এই উঁচু মাথাকে ছেঁটে দিতে গিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন কুচক্রীদের জন্ম হয়েছে। আর এক্ষেত্রে মদত দিয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র।

সক্রেটিস কখনো কোনো কিছু লিখে গিয়েছেন বলে মনে হয় না। আর লিখলেও আজ পর্যন্ত সেগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় নি। সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড আমাদের বিস্মিত করে, এক অব্যক্ত বেদনায় করে নীলাভ। কী এমন হয়েছিল যার জন্য সক্রেটিসকে মরতে হয়েছিল? সেই বিষয়ে আলোচনার আগে একটু বলে নেওয়া ভালো বর্তমানে সক্রেটিস সম্পর্কে আমরা যা কিছু জানছি বা জানার চেষ্টা করছি তার পশ্চাতে অবদান রয়েছে সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটোর। তিনি একটি গ্রন্থ লেখেন যার ইংরেজি রূপ ‘The last days of Socrates’। এই গ্রন্থেরই অনূদিত রূপ হচ্ছে ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড’।

সক্রেটিস মনে করতেন সততা, ন্যায়, নীতি, আদর্শ একটি সমাজ ও জাতির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের বোধ-বুদ্ধি জাতিকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করে। এই বোধের কারণে এবং মানুষ হিসেবে নিজেরও যে দায়বদ্ধতা আছে সেই জায়গা থেকেই তিনি গ্রিসের মানুষদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই জ্ঞানের মশাল প্রজ্বলনের চেষ্টা করেন তিনি। তখন সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। কারণ তাঁদের কাছে এই জ্ঞানপিপাসুদের এবং বিশেষ করে সক্রেটিসকে মনে হয়েছে চরমতম প্রতিযোগী যা তাদের সামাজিক অবস্থান নড়বড়ে করে দিতে পারে। এজন্য ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হতে থাকে। অ্যানিটাস, মেলিটাস এবং লাইকন এ তিন ব্যক্তি পাদপ্রদীপের সামনে থাকেন যদিও তাদের পশ্চাতে মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন অনেকেই। তাদের বক্তব্য হচ্ছে-
১. সক্রেটিস নাস্তিক।
২. এথেন্সের দেবদেবীকে সক্রেটিস স্বীকার করেন না।
৩. সক্রেটিস তাঁর কল্পিত নতুন দেবদেবী প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। এবং
৪. তরুণদের তিনি নৈতিকতাহানি ঘটিয়ে বিপথগামী করেছেন।

সক্রেটিসের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন যা তাঁর দেওয়া জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও বিচারক ও সমাজের সব মাথা এক হয়ে সক্রেটিসকে হেমলক খাইয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। সক্রেটিস ইচ্ছে করলেই নির্বাসন দণ্ড বা অন্য কোনো লঘু দণ্ড নিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি মনে করেন এতে প্রমাণ হয়ে যায় যে সক্রেটিস দেশ ও জাতির জীবনে অনিষ্টকর কিছু করেছেন। মৃত্যুর পূর্বেও তাঁকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় সক্রেটিস সেটাও প্রত্যাখ্যান করে দেশের আইন ও প্রচলিত রীতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন।

জীবননাট্যের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে আমরা বিস্মিত না হয়ে পারি না। মৃত্যুর পূর্বেও এই মানুষটি তাঁর শিষ্যদের বিভিন্ন উপদেশ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন এবং মৃত্যুভয়ে একটুও বিচলিত হননি। এমনকি হেমলকের গ্লাস যখন তিনি নিজের হাতে নিলেন তখন তাঁর হাত কাঁপতে দেখা যায়নি এবং তিনি ছিলেন নির্বিকার। তিনি হেমলক এমনভাবে পান করেন যে মনে হয় যেন তিনি অমৃত পান করছেন। এভাবেই একটি বিবেকের মৃত্যু ঘটে অবসান ঘটে একটি সময়ের।

সক্রেটিসরা তখনও ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাঁদের দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও বিশ্বের মানুষের মধ্যে যে জ্ঞানপিপাসা তাঁরা জাগিয়ে তুলেছেন সেই পিপাসায় কাতর মানুষেরা এখনো খুঁজে ফিরেন সক্রেটিসদের।

সক্রেটিসকে জানার জন্য গ্রন্থটি আকর গ্রন্থের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। পড়ে দেখতে পারেন। হয়তো এই গ্রন্থই আপনার অন্তরের সুপ্ত প্রতিভাকে প্রদীপ্ত করে তুলবে।

রিভিউয়ারঃ এ. এইচ. এম. আওরঙ্গজেব জুয়েল

প্রকাশক: রোদেলা (দ্বিতীয় প্রকাশ: জুন ২০১৯)
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪০
গ্রন্থের প্রকৃতি: সক্রেটিসের জীবনী

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj