এপিএস বই পাঠ পর্যালোচনা
বই: একলব্য
লেখক: হরিশংকর জলদাস
“হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য নাম
দ্রোণের চরণে আসি করিল প্রণাম”।।
“দ্রোণ কহিল তুই হোস নীচ জাতি
তোকে শিক্ষা দিলে হইবে অখ্যাতি”।।
হুমায়ুন আজাদ স্যারের একটা কথা আছে, “ইতিহাস হলো বিজয়ীদের দ্বারা লিখিত বিজিতদের বিরুদ্ধে একগাদা কুৎসা”।কথাটা মিথ্যা নয়। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার প্রমাণ রয়েছে।আর্যরা শিক্ষা-দীক্ষা আর যুদ্ধ কৌশলে অনার্যদের থেকে এগিয়ে থাকায় তারা সবসময় অনার্যদের অবহেলা আর ঘৃণার চোখে দেখতো। এর প্রমাণ রয়েছে আর্য সাহিত্যের পাতায় পাতায়। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি পাঠে তেমন ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায়।অনার্য মানেই তাদের কাছে নীচুজাত,বর্বর,দস্যু আর ঘৃণিত। নিজেদের গুণগান, ধর্মবিশ্বাসের উচ্চসিত প্রশংসা ও প্রচার,আর অব্যাহত অনার্য ঘৃণায় ভরপুর এইসব আর্যসাহিত্য। তবুও অনার্যদের বীরত্বের ইতিহাস মুছে ফেলা যায়নি।ঘৃণা আর অপপ্রচারের বাঁকে বাঁকে রয়েছে অনার্য বীরত্বগাঁথা।
বলা হয়,যা নেই মহাভারতে,তা নেই ভূ-ভারতে।বইটিতে বর্নিত হয়েছে একলব্যের কাহিনী। মহাভারতের অন্যতম চরিত্র।অনার্য নিষাদ জাতিগোষ্ঠীর এক রাজা হিরণ্যধনুর পুত্র সে। রাজপুত্র হয়েও তিনি হতে পারেন নি দ্রোণাচার্যের শিষ্য। শিষ্য হিসেবে তাকে গ্রহণ করেনি আচার্য দ্রোণ। কেন?কোন অপরাধে সে পেল না আচার্য দ্রোণের শিষ্যত্ব? হ্যাঁ, অপরাধ তার আছে। ভয়ানক অপরাধ।আর তা হলো সে অনার্য। নিষাদ জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।নীচু জাতের মানুষ।তাই রাজপুত্র হয়েও তিনি পেলেন না আচার্য দ্রোণের শিষ্যত্ব।ব্রাহ্মণ্যবাদী দ্রোণ কি করে একজন নীচু জাতের মানুষকে শিষ্য করবেন?
দ্রোণ তাকে গ্রহণ না করলেও তাঁকেই গুরু হিসেবে মেনেছিল একলব্য। তাঁর মূর্তি গড়ে,তাকে গুরুপদে আসীন করে নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় একলব্য হয়ে উঠেছিল এক চৌকস ধনুর্ধর। দ্রোণের সবচেয়ে চৌকস আর দক্ষ শিষ্য অর্জুনকেও হার মানিয়েছিল একলব্য। খোদ দ্রোণের থেকে চৌকস ও দক্ষ তীরন্দাজ হয়ে উঠছিলেন একলব্য। একজন অনার্য হয়ে উঠবেন আর্যদের থেকেও বড় যোদ্ধা? তা হয় কি করে? অর্জুন আর দ্রোণের ঘৃণা, অবহেলা আর ব্রাহ্মণ্যবাদী কূটকৌশলে বৃদ্ধাঙ্গুলি হারালেন একলব্য।বীর একলব্য; অনার্য একলব্য।
যুদ্ধ পরাজয়ের মধ্য দিয়েই শেষ হয় একলব্যের কাহিনী। পরাজিত একলব্যের কাহিনী বর্নিত হয় আর্যসাহিত্যে। অনার্য লিখিত সাহিত্যে হয়তো একলব্য হয়ে উঠতো যুদ্ধজয়ী ভুবনশ্রেষ্ঠ বীর।তবে সে ইতিহাস আমরা জানি না।আর্য লিখিত ইতিহাসে একলব্য হয়ে উঠতে পারেনি শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।যেমন পারেনি মহাবীর কর্ণ।আর্য অর্জুন আর দ্রোণের ব্রাহ্মণ্যবাদী কূটকৌশলের কাছে হেরে যায় একলব্য।না হলে একলব্যই হয়ে উঠতো ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ বীর।
বইটিতে একলব্যের কাহিনী বর্নিত হয়েছে।সরল বর্ণনা। একটানা পড়ে যেতে পারবেন। লেখকের লেখা আগে পড়িনি।এটাই প্রথম।তাই উৎকর্ষতা নিয়ে কথা বলছি না। লেখকের গল্প বলার কৌশল ভালো মনে হয়েছে।যদিও কাহিনী মহাভারত থেকে নেয়া।
রিভিউয়ারঃ সুশান্ত ওঝা। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সংসদ