বইয়ের নামঃ ড্রাগন সিড, মূলঃ পার্ল এস বাক, অনুবাদঃ বুলবুল সরওয়ার
প্রকাশকঃ ঐতিহ্য, পৃষ্ঠাঃ ৩১২, মুদ্রিত মূল্যঃ ৫৫০ টাকা
রিভিউয়ারঃ মোনায়েম ইসলাম তমাল
চীনের নানচিং শহরে জাপানী সেনাবাহিনী যে নৃশংস হত্যাকান্ড এবং ধর্ষণযজ্ঞ চালিয়েছিলো তা ইতিহাসের পাতায় নানচিং হত্যাকান্ড বা ধর্ষণ নামে পরিচিত। তৎকালীন সময়ে এই আতংক শুধু নানচিং শহরে সীমাবদ্ধ ছিলো না । নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক তার ‘ড্রাগন সিড’ এ চিত্রায়িত করেছেন কিভাবে জাপানী নির্মমতা ছড়িয়ে পড়িয়েছিলো শহর থেকে দূরের গ্রামে। এই ভয়াবহতা কৃষিনির্ভর গ্রামগুলোতেও কতটা প্রভাব ফেলেছিলো তার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিঙ তান নামক এক কৃষির পরিবারকে বেছে নিয়েছেন পার্ল এস বাক।
লিঙ তানের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের স্বকীয়তা তাদের একজন থেকে আরেকজনকে করেছে আলাদা। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় , অশিক্ষিত এই পরিবারের লিঙ তানের ছেলের বউ জেড এর কথা । এই পরিবারে শুধুমাত্র সে পড়তে পারে এবং পড়ার আগ্রহ এতই বেশি যে কিনা নিজের চুল বিক্রি করে বই কেনার টাকা জোগাড় করতেও প্রস্তত। হত্যাকান্ড এবং ধর্ষণ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের জীবনে সাংসারিক ঝামেলা ছাড়া আর কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্ত নৃশংসতা শুরু হলে জাপানী সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাইনি লিঙ তানের পরিবারও ।
জাপানী সৈন্যরা ধর্ষনও করতো খুব শৃঙ্খলার সাথে। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে কিংবা কখনো কখনো ধর্ষিতার বাড়িতেই পরিবারের অন্য সদস্যের সামনে একে একে ধর্ষন করতো এবং ধর্ষনের নৃশংসতা বাড়ানোর জন্য কখনো যোনিপথে বোতল কিংবা পায়ুপথে বাঁশ ঢুকিয়ে দিতো। এমনকি শিশুদের যোনাঙ্গ ছুরি দিয়ে কেটে বড় করে তারপর ধর্ষন করতো। ধর্ষন থেকে রক্ষা পায়নি মৃত মানুষও । যাদের প্রতিচ্ছবি হলো উ লিয়েনের বুড়ি মা (উ লিয়েন হলো লিঙ তানের জামাই) ।
এই যজ্ঞ গ্রামের মানুষদের কাউকে বানিয়েছে লাশ আবার পারিপার্শ্বিকতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে কেউ কেউ হয়ে গিয়েছে শত্রুদের গুপ্তচর। বিপ্লবী যে কেউ হয়নি এমন কিন্ত নয়! লিঙ তানের ছোটো ছেলে লাও সান যার কমনীয়তা সৈন্যদের বলাৎকারে আকৃষ্ট করেছিলো সেই পরবররীতে হয়ে ওঠে বিপ্লবী। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শত্রুদের বিরুদ্ধে নমনীয় মাংশপেশি কিভাবে শক্ত হয় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো লাও সান।
ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসগুলো পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে দেখেছি লেখকের একপাক্ষিকতা কিংবা মনগড়া কল্পকাহিনী । এই বই পড়েও মনে হয়েছিলো একপাক্ষিক একটা রচনা। কিন্ত পরে একটু যাচাই করে বুঝলাম “ড্রাগন সিড” জাপানী নির্মমতার একটা খন্ডচিত্র মাত্র। সবমিলিয়ে বলা যায় চিরায়ত জীবন এবং সংগ্রামের মিশেলে ভালো একটা উপন্যাস।
রিভিউয়ারঃ মোনায়েম ইসলাম তমাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইবি, কুষ্টিয়া