সব
facebook apsnews24.com
বইয়ের নাম-দেশে বিদেশে, সৈয়দ মুজতবা আলী - APSNews24.Com

বইয়ের নাম-দেশে বিদেশে, সৈয়দ মুজতবা আলী

বইয়ের নাম-দেশে বিদেশে,  সৈয়দ মুজতবা আলী

এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা
দেশে বিদেশে
সৈয়দ মুজতবা আলী


“দেশে বিদেশে” মূলত একটি ভ্রমণকাহিনী। এটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণকাহিনী হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কথা সাহিত্যিক, পন্ডিত এবং আমার গুরু সৈয়দ মুজতবা আলীর কাবুলবাসের অভিজ্ঞতা । তিনি তার এই লেখায় তুলে ধরেছেন রম্য রসাত্মক বর্ণনার মাধ্যমে বিভিন্ন পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষের সাথে রসালাপ, ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা এবং শেষ পর্যায়ে এসে আফগানিস্তান ছেড়ে আসার করুন কাহিনী। ঠিক ভ্রমণকাহিনী যেমন হওয়া উচিত সেখানকার মানুষদের সেখানকার প্রকৃতি আর সেখানকার সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে, ঠিক তাই তিনি তুলে ধরেন কখনো পাঠান অাহমদ আলী, অধ্যাপক বগদানফ এবং মুহাম্মদ খান ও অন্যান্য চরিত্র গুলোর মধ্যদিয়ে যেমন বাইরে থেকে পাঠানদের শুষ্ক, রসকষহীন কাঠখোট্টা মনে হলেও একবার আলাপ হলেই তারা যে কাউকে আপন করে নেয়। গল্পের বেশির ভাগ যদিও নিজেদের গোষ্ঠী আর জাতির কথা কিন্তু তাতে করে তাদের চিন্তা ভাবনা আত্মকেন্দ্রীক ভাবলে ভুল হবে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায় তাদের মেহমানদারিতে।

পাঠানরা যে অলস এবং আড্ডাবাজ জাতি হলেও তারা আরামপ্রয়াসী নয়। গালগল্প আর আড্ডায় মশগুল থাকা স্বভাবের ভেতরে তাদের কৃত্রিম দেশপ্রেম আবিষ্কার করে মুজতবা আলী।

আফগানরা ব্যবসা – বাণিজ্যে বেশ অপরিপক্ক হওয়ায় তাদের রাজ্য কখনো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ওভাবে চোখে পড়েনি। অভাবের তাড়নায় তাই তারা লুটতরাজ করে বেড়ায়। তাদের কতগুলো গোষ্ঠী রয়েছে যেমন আফ্রিদি, শিনওয়ারী, খুগিয়ানী এদের সম্পর্কে মুটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায় বইটিতে।

“দেশে বিদেশে” ভ্রমণকাহিনীটির যাত্রা শুরু হয় হাওরা স্টেশন থেকে লেখকের একা স্বদেশ ত্যাগের আদ্র ব্যথা বুকে নিয়ে। এবং শেষটা হয় জগদ্বন্ধু আবদুর রহমানের সাথে বিদায় দিয়ে।
দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের ইতিহাস ভৌগোলিক সীমান্ত এমনই জটিল যে নিজেদের ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামাতে হলে তাদেরকে আরো কয়েকটি দেশের ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। এখানে লেখক কাবুলবাসীদের আক্ষেপ তুলে ধরতে চেয়েছেন – আফগানের মাটির নিচে স্বর্ন না থাকুক আফগান যেনো বরফ শূণ্য না হয়।

এছাড়াও বইটিতে কিছু মনের মতো উক্তি পেয়েছি –
যেমন, ১। যাত্রার দিনই অর্ধেক ভ্রমণ ২। উঠোন সমুদ্র পেরোলেই অর্ধেক মুশকিল আসান ৩। হন্তদন্ত হওয়া মানে শয়তানের পথে চলা ৪। দুঃখ না পেলে দুঃখ ঘুচবে কি করে (রবীন্দ্রনাথ) ৫। সব কিছু পন্ড না হলে পন্ডিত হয় না ৬। কুইনিন জ্বর সারাবে বটে, কিন্তু কুইনিন সারাবে কে? ৭। বাঘ হতে ভয়ংকর কু-রাজার দেশ। (কনফুসিয়াস) ৮। রাজ্য চালানো হচ্ছে সিংহের পিঠে সাওয়ার হয়ে জীবন কাটানো। সিংহের পিঠ থেকে এক মুহূর্তের জন্য নামবার উপায় নেই। যতক্ষণ উপরে আছ সিংহ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না ; কিন্তু তোমাকে অহরহ সজাগ থাকতে হবে। এজন্যই ক্ষমতার তখৎকে সিংহাসন বলা হয়। এরকম আরো অনেক।

দেশে বিদেশে বইটি পড়লে আপনাকে মানতে হবে সৈয়দ মুজতবা আলী কিভাবে তার আফগান ভ্রমণ রচনায় কি প্রাঞ্জল বর্ণনার মাধ্যমে মরুর বুকে মধুর চাষ করেছেন। আবদুর রহমান সহ প্রতিটি চরিত্রে প্রতিটি ঘটনাকে লেখক এমনভাবে বর্ণনা করেছেন সবগুলো যেনো একদম জীবন্ত। আমার মনে হয়েছে আমি নিজে যেনো লেখকের সাথে আড্ডা, সেই হাসি আনন্দ, সেই কষ্ট, সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশ নিচ্ছি। আমি নিজেই যেনো বইটির একটি চরিত্র। কাবুলের বরফ ঢাকা পথে ঘাটে আমি লেখকের সঙ্গী। কী এক অসাধারণ ঘোরের মধ্যদিয়ে বইটি পড়ে শেষ করেছি বুঝতে পারিনি।

লেখক যখন পাঠককে একটি জীবন্ত লেখা উপহার দেন তখন পাঠক হয়ে উঠেন লেখকের বইয়েরই একটি কাল্পনিক চরিত্র। আর এখানেই একজন লেখকের সার্থকতা।

সৈয়দ মুজতবা আলী তাকে যেভাবে চিনি ?

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন সিলেটেই। পিতা খান বাহাদুর সিকান্দার আলী ছিলেন সাব-রেজিস্টার,সরকারি চাকুরীজীবি সে সূত্রে সৈয়দ মুজতবা আলীর শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। তিনি যে মহা পাণ্ডিত্যের অধিকারী তা আমাকে আর আপনাদের মাঝে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিবার কিছু নেই। কারণ আপনি যদি দেশে বিদেশে পড়ে থাকেন সেখানে ওমর খৈয়ামের কবিতা থেকে জর্মান কবি গ্যেটের উক্তি অনুবাদ পড়লেই বুঝতে পারবেন৷ সংস্কৃত, ইংরেজি আরবি, ফারসি, জর্মান সহ ১৮টি ভাষা তার দখলে। সেক্ষেত্রে আমার গুরু মানতে একটুও দ্বিধা হচ্ছে না।

‘চাচা কাহিনী’ – বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি চিরজীবী হয়ে তুমি ” গল্প দিয়ে শুরু ‘ ঔষধ খেলে সর্দি সারে সাত দিনে, না খেলে এক সপ্তায়। আপনার ইচ্ছে হলে চতুরঙ্গ, চাচা কাহিনী,শবনম, নানা ভাষায় নানা কবির নানা বয়ান এর যেকোনো একটা আমাকে গিফট করলে মুটেও মন্দ হবে না৷ এখানে বলা যাবে না -“বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।” 😁

সর্বোপরি এই সময়ে যথাসম্ভব রুমে অবস্থান করুন।আজাইরা অকাজ কুকাজ না করে বই পড়ুন, মুভি দেখুন ভালো কিছু করে সময় কাটান।
হ্যাপি রিডিং। ধন্যবাদ।

রিভিউয়ারঃ নাজমুস সাকিব খান
শিক্ষার্থী,অর্থনীতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
nazmussakibkhan3@gmail

আপনার মতামত লিখুন :

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

রিভিউ বই : আওয়ামী লীগ উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

লজ্জাঃ উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো।

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ বই:দিবারাত্রির কাব্য

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বুক রিভিউ: ‘মরণ বিলাস’। রচয়িতা আহমদ ছফা।

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

বই পাঠ পর্যালোচনা: বিশ্বাসঘাতক, নারায়ণ সান্যাল এর উপন্যাস

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই -সাদাত হোসাইন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj