এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা
বইয়ের নাম: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
লেখক: সৈয়দ শামসুল হক
রচনার ধরণ: কাব্যনাট্য
প্রকাশক: চারুলিপি প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৯৯১
মূল্য: ১৩৫ টাকা মাত্
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চের জন্য লেখা সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম নাটক। লণ্ডন নগরীতে বসে তিনি ১৯৭৫ সালের ১লা মে থেকে ১৩ জুন এর ভিতর কাব্যনাট্যটি লিখেছিলেন।
টিএস ইলিয়েটের কাব্যনাট্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সৈয়দ শামসুল হক এই কাব্যনাট্যটি রচনা করেছেন।
কাব্যনাট্যটি একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোনো এক বাস্তব ঘটনা কে নিয়ে লিখা; কিন্তু সেই ঘটনা ঠিক কোথায় ঘটেছিল তা শনাক্ত করা সম্ভব নয়; এমন ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকাতেই সেইদিন ঘটেছিল।
হানাদার পাকবাহিনীকে যারা সহায়তা করেছিল তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ঐ হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীরই শিকারে পরিণত হওয়ার চিত্র এই নাটকে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন সৈয়দ শামসুল হক।
গ্রামের মাতব্বর পাকবাহীনির কাছে তার মেয়েকে তুলে দিতে বাধ্য হয়। যে ক্যাপ্টেনকে বন্ধু মনে করে সহায়তা করেছিল মুক্তিবাহিনীকে ধরিয়ে দিয়ে সেই বন্ধুর নিকট একরাতের জন্য নিজের মেয়ে তুলে দিয়েছেন, ধর্মের নাম নিয়ে নিজেই। আর সেই মাতব্বর এর মেয়েকে পাকবাহিনীর কাছে নির্যাতিত হওয়ার করুণ কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে এই নাটকে।এবং যে গ্রামবাসীরা মাতব্বরকে ভালো বলে জানতো সেই গ্রামবাসীর কাছে যখন মাতব্বর মেয়ে গতরাতে ঘটনা বলে বিষ পান করে আত্মহত্যা করে তখন সেই গ্রামবাসীর হাতেই মাতব্বর প্রাণ হারায়।
গ্রীক ট্রাজেডি `রাজা ঈদিপাস’ এর সাথে মিল রেখে যে সৈয়দ শামসুল হক তার নাটকটি রচনা করেছেন তা নাটক পড়লে খুব সহজেই বুঝা যায়। আর কোথায় অমিল রয়েছে তাও খুব সহজেই বুঝা সম্ভব নাটকটি পাঠের মাধ্যমে।
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে পাঠক ও দর্শকের কাছে পরিচিত হলেও মুক্তিযুদ্ধকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আরো বড় একটি মুক্তির জন্য দর্শককে প্রাণিত করতে- সে মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে,ধর্মের নৌকায় নৈতিক অন্যায়কে পার করিয়ে দেবার যুগযুগান্তরের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধ।
নাটক হয় জীবন্ত মানুষের স্বর নিয়েই রচিত -ছাপা পৃষ্ঠায় নাটক থাকে অনুপস্থিত, যেমন স্বরলিপি নয় বস্তুত কোনো গান; উচ্চারণই তার মুক্তি,কণ্ঠেই তার জন্মগ্রহণ,মঞ্চেই তার জীবন। নাটক এমন যে মঞ্চে কিছু জীবন্ত মানুষ, মঞ্চের বাহিরে কিছু জীবন্ত মানুষ এবং এই দুই জীবন্ত সমাবেশের ভেতরে বয়ে যায় সৃষ্টির বিদ্যুৎ, সেই বিদ্যুৎ সম্ভব হয় কেবল তখনই জীবন্ত মানুষের অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয় জীবন্ত ভাষায়।
রিভিউয়ার
মো: পলাশ হোসেন
বাংলা বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ:২০১৮-১৯