এপিএস বই পাঠ-পর্যালোচনা
রিভিউয়ারঃ কামরুল ইসলাম পাভেল
বই-পিতামহ, লেখকঃ সাব্বির জাদিদ, ঐতিহ্য : প্রকাশিত মুদ্রিত মূল্য : ৮০০ টাকা
শুরুতেই বইটার নাম নিয়ে কয়েকটি কথা। প্রায় ৫০০+ পেজের একটা উপন্যাস পড়ে বুঝতে পারিনি কেন বইটার নাম “পিতামহ”। এ এক আজব সেলুকাস! যদিও শুধু নামের জন্য বইটা কিনেছিলাম। মুহাম্মদ সা. এর পিতামহ আব্দুল মোত্তালিবের জীবনীগ্রন্থ ভেবেছিলাম। কিন্তু কোথায় তিনি! পুরো ৫০০+ পেজের বইতে সব মিলিয়ে আব্দুল মোত্তালিবের কথা সর্বোচ্চ উল্লেখ আছে হয়তো ৫০-৬০ পেজ। তাই নাম হিসেবে বইটিকে অনায়াসে একটি ব্যর্থ বই হিসেবে গণ্য করা যায়। আদৌ যদি এটাকে বই বলা যায়!!
তারপর আলোচনা করা যায় উপন্যাসের নায়ককে নিয়ে। অবশ্যই তিনি আব্দুল মোত্তালিব নন। নায়ক একজন ক্রীতদাস। যার নাম তালহা। নায়ক সাহেব ক্রীতদাস হলেও তার মাঝে ক্রীতদাস সুলভ কোনো আচরণ পাঠক নিশ্চয় লক্ষ্য করবে না। কারন পুরো উপন্যাসে তিনি হিরো, তিনি বীর, তিনি পাদ্রী, তিনি মহাপ্রেমিক, তিনি প্রতিবাদী – এক পুরুষরুপে আবির্ভূত হোন। ক্রীতদাস হলেও তার প্রেমে হাবুডুবু খায় তারই মালিকের বেটী। এভাবে আরো এক-দুজন মহামানবী নায়ক সাহেবের জন্য ব্যথায় উহুআহা করেন। যেন বাংলা সিনেমার সেই অলৌকিক প্রেমকাহানি। আহা, মধুঁ মধুঁ!
এরপর বইয়ের সংলাপ নিয়ে কিছু বলতেই পারে পাঠকেরা। বইটা পড়ার সময় কেউ যদি যে কোনো একটা বাংলা সিনেমার কথা মাথায় রাখেন তাহলে পড়তে সুবিধা হবে। আপনার সাহায্যের জন্য আমি মহানায়ক সাকিব খানের কোনো সিনেমার কথা স্মরণ করতে বলবো। “চৌধুরী সাহেব আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু ছোটলোক না” টাইপ সিনেমাটিক রিডিকিউলাস ডায়ালগে ভরপুর পুরো বইটাই। মাঝে মাঝে পাঠক না হেসে পারবে না বইটা পড়ার সময়। সমগ্র জীবনে আর কোনো বইতে এত হাস্যকর সংলাপ এই ক্ষুদ্র পাঠক পায়নি। হয়তো আর পাবেও না। কারন তিনি আর কোনোদিন এইসব উচ্চমার্গীয় বইয়ের স্পর্শে যাবেন না। তবে এই ধরনের সংলাপের তুলনা চলে একমাত্র বাংলা সিনেমায়। অর্থ এবং সময়ের যে ক্ষতি সেটা আর কহতব্য নয়। ৬০০ টাকা দিয়ে একটা বই কিনে যদি আপনার নরকের যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেটা কিভাবে প্রকাশ করা যায় পাঠকের জানা নেই ।
বইটা পড়তে নিয়ে মহান বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের “আপেক্ষিকতার থিওরী” না বুঝেও অনুধাবন করতে পারা যাবে। বইয়ের প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি ঘটনা, তালহা নায়ক দাস সাহেবের হিরোইজম পড়তে পড়তে আর সময় কাটে না। মনে হয় জীবন শেষ হয়ে যাবে তবু এই বই পড়া শেষ হবে না। কোয়ারেন্টাইনের একটা সপ্তাহ নরকের রূপ নিলেও নিতে পারে এই মহান উপন্যাস(?) পড়ে। কোনো এক মনিষী বলেছিলেন, নেভার আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ জেনারেল পিপল। এদের মাথা ভরা গোবর কিন্তু এরা শক্তিশালী। এই মাথাভরা গোবর শ্রেণির পাঠকের উহুআহা রবে গ্রুপগুলো মুখরিত আর তাদের উহুআহায় মুগ্ধ হয়ে কিনেছিলাম কয়েকবছর আগে এক বেস্টসেলারের বই। তিনি ললনাদের ক্রাশ। এবং এইসব বইপড়ুয়া হাব্লিরা ‘ভাইয়া ভাইয়া’ রবে মেলা প্রাঙ্গন মুখরিত করেন। সেই ভাইয়ার বই পড়ে কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি অর্থ এবং সময়ের নিদারুণ অপচয় হেতু।
তারপর আরেকবার এই মহান উপন্যাস(?) ‘পিতামহ’। পুরো বইটা এতোটাই রিডিকিউলাস সিনেম্যাটিক যে বইয়ের পাতায় পাতায় সিনেমার গল্প ঢুকে গেছে। এক জায়গায় দেখি সাকিব খান আর তার কোনো লাড়কির লুতুপুতু সংলাপ। আবার বইয়ের আরেক জায়গায় মিল পাই ফ্রাঙ্ক ডারাবন্টের বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা “The shawshank redemption “এর অনুরুপ জেলমুক্তির কাহিনি। কিভাবে কিভাবে তালহা সাহেব যেন এন্ড্রু ডুফ্রেয়ঁ এর মতন বিশাল দেয়াল ছিদ্র করে বের হয়ে যায়। পুরো ব্যাপারটাই পাঠকের মাথার উপর দিয়ে যেতে বাধ্য। তখন কোনো পাঠক না হাসলে তাকে তাকে অভিনন্দন।
পুরো বইটার একটাই পজিটিভ দিক আছে। সেটা হলো এর প্রচ্ছদ। উজ্জ্বল এবং লোভনীয়। আর বিজ্ঞাপনের চূড়ান্ত সদ্ব্যবহার। যে কেউ প্রচ্ছদ দেখে বইটা কেনার প্রতি আগ্রহী হবে যদিও বইয়ের ভেতরে পুরাই সেলুকাস কনটেন্ট। ফকফকা। আর যাদের বইটা পড়ে মনে হয়েছে ‘সেই’। তারা আমারে ক্ষমা করবেন। সম্ভবত এসব বই পড়া এবং পড়ে বুঝার ক্ষমতা আমার মতন ক্ষুদ্র পাঠকের নেই। শুভ পঠন।
রিভিউয়ারঃ কামরুল ইসলাম পাভেল, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।