সব
facebook apsnews24.com
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (পর্ব-২) - APSNews24.Com

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (পর্ব-২)

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (পর্ব-২)

মোঃ মাহবুবুর রহমান

৪. ত্রূটি পূর্ণ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শত্রূ সম্পত্তির উদ্ভব হয়েছিল । যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান সরকার Defence of Pakistan Ordinance , ১৯৬৫ প্রণয়ন করে। যুদ্ধের কারনে অনেক হিন্দু বা সংখ্যালঘু পরিবার তাদের সহায়-সম্পত্তি পাকিস্তানে কোন রকম বন্দোবস্ত না করেই ভারতে চলে যায়। ফেলে যাওয়া এসকল সম্পত্তি দখল ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য The Enemy Property (Custody and Registration) Order, 1965 এর মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার দখলে নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পট পরিবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ Bangladesh Vesting of Property And Assets Order ,1972 আইন জারি করা হয়।

আবার ১৯৭৪ সালে The Enemy Property (Continuance of Emergency Provisions) Repeal Act ,1974 এর মাধ্যমে এ সকল সম্পত্তির নাম শত্রু সম্পত্তি থেকে অর্পিত সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং তা বাংলাদেশ সরকারের নিকট অর্পিত হয়ে যায়। এর অব্যবহিত পর থেকেই এসকল অর্পিত সম্পত্তি তার মূল মালিক তথা হিন্দু বা সংখ্যালঘু পরিবারের নিকট প্রত্যার্পণ বা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল তথা হিন্দু সমাজ, সুশীল সমাজ, উদার রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ তিন দশক ধরে আন্দোলন করার ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন পাশ করা হয়।এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন পূর্বক মূল মালিক দের নিকট সম্পত্তির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। মূল আইনে আইন পাশের ১৮০ দিনের মধ্যে প্রত্যার্পণ যোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুতও প্রকাশের কথা বলাছিল। ২০০২ সালে সংশোধনী এনে সরকারকে প্রত্যার্পণ যোগ্য সম্পত্তি সরকারের নিকট অনির্দষ্টকাল পর্যন্ত রেখে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়। সুতরাং প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া থমকে দাড়ায়। ২০১১ সালে পূণরায় সংশোধনী এনে ‘ক’ ও ‘খ’ তফসিল অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

‘ক’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রনে ও সরকারের নিকট থেকেই প্রত্যার্পণ যোগ্য ছিল। অন্যদিকে ‘খ’ তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছিল এমন সম্পত্তি যেগুলো মূলত সরকারের নিকট অর্পিত ছিলনা এবং সরকারের কাছ থেকে প্রত্যার্পণ যোগ্যও ছিলনা। তার অর্থ হলো এ সম্পত্তি গুলো প্রভাবশালী লোক জন যবর দখল করে রেখেছে বা রেখেছিল। ‘ক’ তফসিলে উল্লেখিত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য এই আইনের অধিনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়। অন্যদিকে ‘খ’ তফসিলে উল্লেখিত সম্পত্তির সমস্যা নিস্পত্তির জন্য বিভিন্ন কমিটি করার বিধান দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ১ বছর পরেই ২০১২ সালে আরেকটি সংশোধনী এনে ‘খ’ তফসিল সংক্রান্ত যাবতীয় বিধান বাতিল করা হয়। সুতরাং ক্ষমতাধর মানুষের হাতে যবর দখল কৃত সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার সুযোগ আর কারো থাকলো না। তবে আমার এই লেখার বিরূদ্ধে যুক্তি থাকবে যে ২০১৪ সালের ২০ জুলাই সরকার ভূমি প্রশাসন ম্যানুয়াল- ভলিউম ,৩ এর মাধ্যমে এ সকল সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে মূল মালিককে মিসকেস তথা মিউটেশন করার পথ করে দিয়েছে। আমার প্রশ্নহলো, এতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কে তাদের দখল হওয়া সম্পত্তি কিভাবে মিউটেশন করে নিবে ?

অন্যদিকে ‘ক’ তফসিলে উল্লেখিত সম্পত্তি তথা সরকারের দখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য মূল মালিককে ২০১২ সালের সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৩ সালের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে বলা হয়েছে । কিন্তু অনেকেই যারা এসময়ের মধ্যে মামলা করতে পারেনি তাদের আর মামলা করার সুযোগ নেই। অনেকেই হয়তো দেশে না থাকা বা বিভিন্ন কারনে যথাসময়ে মামলা করতে পারেন নি। মামলার তামাদির মেয়াদ তাড়াহুড়া করে এতো স্বল্প করা হলো কেন? যেহেতু ট্রাইব্যুনাল এখনো বিদ্যমান তবে মামলা করার তামাদি ২০১৩ সালেই শেষ করে দেওয়া নিয়ে অবশ্যি প্রশ্ন তোলা যায়। অথচ সরকারের অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে অনেক বেশী সদিচ্ছা থাকা দরকার ছিল।

কারণ ব্যক্তি পর্যায়ে যে ক্ষতির সম্মুখিন মানুষ হয়েছে তা দেখলে চোখ কপালে উঠার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রথিতযশা শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত তার ২০০৮ সালে প্রকাশিত গবেষনায় দেখিয়েছেন অর্পিত সম্পত্তি ইস্যুতে ২৭ লক্ষ হিন্দু পরিবার সরাসরি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। ১২ লক্ষ মানুষ প্রায় ২৬ লক্ষ একর যায়গা বেদখল হয়েছেন যার বাজার মূল্য ৩১০৬৬৩৬ মিলিয়ন টাকা। আমি বিচার বিভাগের সাথে জড়িত অনেকের সাথেই কথা বলে দেখেছি । তারা এ ব্যপারে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ নির্বাহী প্রশাসনের যথাযথ সহযোগিতার অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।

৫. খতিয়ান বা জমি –জমা সংক্রান্ত কাগজপত্রের সংখ্যাধিক্য জটঃ

বর্তমান ভূমি প্রশাসনের গঠন তিনটি বিষয়ের উপর নির্ধারিত । আর এই তিন বিষয়ের প্রত্যেকটিই ভিন্ন-ভিন্ন অফিস কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। যার সর্বশেষ পর্যায়ে ভুমির মালিকানা সম্পর্কিত রেকর্ড সংরক্ষণের দায়িত্ব পড়ে তহসিল অফিসের উপর। অথচ এসকল রেকর্ড রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের দায়িত্ব সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের উপর অর্পিত। অপর দিকে ভিন্ন অফিস রয়েছে সেটেলমেন্টের দায়িত্ব বাস্তবায়ন করার জন্য। এক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হলো মালিকানা সংক্রান্ত বিষয় সমূহ রেকর্ড করা হচ্ছে দুইটি ভিন্ন অফিসে যে অফিসদ্বয় পৃথক নির্বাহী এখতিয়ার সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের অধঃস্তন হয়ে কাজ করে। সমস্যা শুরু হয় যখন জমির মালিকানা নিয়ে কোন সমস্যা শুরু হয় এবং মালিকানা স্বত্বের প্রমানপত্র সমূহ বিরোধ নিস্পত্তি কল্পে উপস্থাপন করা হয়। এখন একজন যদি তহসিল অফিস থেকে এক ধরণের প্রমান পত্র সংবলিত নথি হাজির করে।অন্য জন রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এবং অপর জন সেটেলমেন্ট অফিস থেকে নথি হাজির করে। এবং প্রত্যেকটি নথিই যদি পরস্পর বিরোধী হয়, তবে একজন বিচারক এ সকল নথি দেখে কিভাবে বিচার করবেন ? কারণ এই প্রত্যেকটি অফিসই সরকারি ভাবে বিধিবদ্ধ এবং এ সকল অফিস কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যেকটি দলিল-পত্রই আইনত গ্রহন যোগ্য। সুতরাং জমি-জমার দলিল পত্রের সংখ্যাধিক্য জট ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি কেন্দ্রীয় সমস্যা হিসেবে নির্ধারণ করা যায়।

৬.উত্তরাধিকার নির্ধারণের যথাযথ পদ্ধতির অভাব এবং ত্রূটি পূর্ণ নাম জারী পদ্ধতিঃ

৬.উত্তরাধিকার নির্ধারণের যথাযথ পদ্ধতির অভাব এবং ত্রূটি পূর্ণ নাম জারী পদ্ধতিঃ বাংলাদেশে জন্মের পর জন্ম সনদ দেওয়া হয়। আবার মৃত্যুর পর Death Certificate বা মৃত্যু সনদপত্র ও দেওয়া হয়।এক জন ব্যক্তির মৃত্যুর পরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী কারা হলো তা নির্ধারণ করা ।নিকাহ বা বিয়ে রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে বিয়ে যেমন বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, মৃত্যু সনদপত্র নিবন্ধনের জন্য এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আবার মাঠ পর্যায়ে এগুলো তদারকির জন্য কোন কর্মকর্তাও নেই। কোন এলাকায় কোন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করা মাত্রই যদি নিবন্ধন পূর্বক তার উত্তরাধিকারীদের পরিচয় সমূহ লিপিবদ্ধ করে ফেলা হতো পরবর্তীতে জমি-জমার পার্টিশনের সময় উত্তরাধিকার নির্ধারণ সম্পর্কিত সমস্যা ঘটতোনা। কারণ, অনেক সময়ই দেখা যায় এগুলো নিয়ে আত্বীয়-স্বজনদের মধ্যে অনেকেই ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয়।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ নং ধারার বিধান অনুযায়ী কোন জমির নামজারী করণেরএকটি অন্যতম কারণ হলো উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পার্টিশন বা বন্টন। এক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নির্ধারণে অনেক সময় দূর্বৃত্তায়নের কারণে নামজারীর সময় অনেকেই অন্যায়ভাবে অন্যের জমিতে নামজারী সম্পন্ন করে বসছেন। আবার এমন ঘটনাও অনেক আছে – একজনের যায়গা অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ২০ ধারা, Bangladesh Land Holding (Limitation) আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩ এবং ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৪নং ধারা অনুযায়ী জমি ধারণের পরিমানের উপর ক্ষেত্র মতে বিধি –নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেটা কে আইনের ভাষায় Ceiling of land holding. বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে নাম জারীর সময় এগুলো কতটুকু খেয়াল করা হয় তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।

৭. ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত সমস্যাঃ

২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর সংশোধনী এনে ১৪৫ক থেকে ১৪৫ঝ পর্যন্ত মোট ৯টি ধারা সংযোজন করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান করা হয়। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদানের তিন মাসের মধ্যে আপিল করতে হবে৷ মজার ব্যপার হলো এই নতুন বিধানের আলোকে সারা দেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলেও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল আর আলোর মুখ দেখেনি ।এই আপিল ট্রাইব্যুনাল কেন যে আলোর মুখ দেখলো না তার কোন সুদত্তর নেই। অনেকে মনে করেন ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে জড়িত পদস্থ কর্মকর্তা সৃস্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফসল হলো ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল আলোর মুখ না দেখা।

আমি বিচার বিভাগে নিয়োজিত একাধিক বিচারকের সাথে কথা বলে দেখেছি এবং তারা এ বিষয়টি নিয়ে হতাশা জ্ঞাপন করেছেন। কারণ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালএকটি রায় দিলে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কার্যত আর কোন যায়গা নেই। ফলাফল হলো আইনি শুন্যতা (Legal Vacuum) সৃস্টি। ফলশ্রুতিতে মানুষ তখন কোন পথ না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিটের আশ্রয় নিচ্ছে। আবার একই বিষয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা রুজু হচ্ছে। যেটা মামলার ভারে নুযো বিচার ব্যবস্থায় Multiplicity of proceeding বা মোকাদ্দমার আধিক্য সৃস্টি করছে। সুতরাং ২০০৪ সালে আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। (চলবে……)

লেখকঃ প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

লেখার প্রথম পর্ব পড়ার জন্য ক্লিক করুনঃ https://apsnews24.com/news/1214

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj