সব
facebook apsnews24.com
পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী - APSNews24.Com

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

বাংলাদেশের অধিকাংশ মামলা মোকদ্দমা হয় জমিজমা কেন্দ্রিক না হয় পারিবারিক বিষয় নিয়ে। যেমন-বিবাহ বিচ্ছেদ, তালাক, দেনমোহর, খোরপোষ, বাচ্চার গার্জিয়ানশীপ এবং দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার বিষয়ক। পারিবারিক আইন ও এই পরিবার বিষয়ে সমস্যা নিয়ে মানুষের জানা এবং আগ্রহের কমতি নেই।পারিবারিক আইন ও সমস্যা বিষয়ে জেনে রাখা ভালো। নাগরিক হিসেবে আইন-কানুন সকলের সামনে সহজে বোধগম্য করে তুলে ধরা যায় একমাত্র লেখালেখির মাধ্যমে। আজকের লেখাটিও তার ব্যতিক্রম নয়। অতি সম্প্রতি পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ বাতিল করে পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পাস করেছে বাংলাদেশের সংসদ। মূলত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ পারিবারিক আদালত সম্পর্কিত সমস্যার বিচার ও পদ্ধতিগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করে আসছিল এবং উক্ত অধ্যাদেশ বাতিল হওয়ায় এখন নতুন পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ বলবৎ রয়েছে।এই নতুন আইনটি বিশেষ আইন এবং আইনের উদ্দেশ্যে হলো পারিবারিক সমস্যা বিষয়ক মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করে মামলাজাট কমানো। আইনের ছাত্র হিসেবে নতুন আইনে কি কি বিষয় সংযুক্ত করা হলো যা পূর্বের অধ্যাদেশে ছিলনা এবং আগের আইনের সাথে নতুন আইনের মিল-অমিল কোথায় তা তুলে ধরবো।সর্বপরি নতুন আইনের সুবিধা, অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করবো।
শুরুতে জেনে রাখি পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এর ৫ ধারা অনুসারে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে বর্ণিত বিধানাবলি সাপেক্ষে, পারিবারিক আদালতে নিম্নরূপ সকল বা যেকোনো বিষয় সম্পর্কিত বা তা থেকে উদ্ভূত যেকোনো মোকদ্দমা গ্রহণ, বিচার এবং নিষ্পত্তির নিরঙ্কুশ এখতিয়ার বিজ্ঞ পারিবারিক আদালতের থাকবে, যথা :-
(ক) বিবাহ বিচ্ছেদ;
(খ) দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার;
(গ) দেনমোহর;
(ঘ) ভরণপোষণ; এবং
(ঙ) শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান।
বিবাহ বিচ্ছেদের মতো দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য মোকাদ্দমাও পারিবারিক আদালতে দায়ের করতে হয়। ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ৯ ধারা অনুসারে, যদি কোন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে বা স্ত্রীদের ভরণপোষণ প্রদান করতে ব্যর্থ হন তবে তাঁর স্ত্রী বা সকল স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে কেউ আইনগতভাবে প্রাপ্য প্রতিকারের অতিরিক্ত ভরণপোষণের জন্য চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে পারবেন। এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদির মতো বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হয়েও পারিবারিক মোকদ্দমা দায়ের করে স্বামীর নিকট থেকে ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১০ ধারা অনুসারে, নিকাহনামা বা বিবাহের চুক্তিতে মোহরানা বা দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি বিস্তারিত লিপিবদ্ধ না থাকলে সম্পূর্ণ মোহরানা চাওয়া মাত্র প্রদেয় বলে নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ মুসলিম আইনে প্রাপ্য স্ত্রীর মোহরানা বা তার কোন অংশের অধিকার কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ হবে না। স্ত্রী নিজে থেকে তালাক দিলেও দেনমোহর পাবেন। এমনকি স্ত্রীর মৃত্যু হলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। দেনমোহর পাওয়ার জন্যও উত্তরাধিকারীরা মামলা করতে পারেন।

শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানের জন্যও পারিবারিক আদালতে পারিবারিক মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে?

ছেলেসন্তান ৭ বছর পর্যন্ত ও মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। এবং বাবা ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। বাবা ভরণপোষণ না দিলে আদালতের মাধ্যমে মা তার সন্তানের ভরণপোষণ বাবার কাছ থেকে আদায় করতে পারেন। তবে বর্তমানে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে তা আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্ধারণ করে থাকেন। বিজ্ঞ আদালত সন্তানের বয়সের বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি কোথায় সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিত হবে সে বিষয়ে বেশি নজর দেন। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সন্তানের বয়স মুখ্য বিষয় হয়না।

দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, পিতামাতার রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিবাহবিচ্ছেদের পরে রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত সমস্যা এবং আপিল পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিয়ন্ত্রণ (এর পরে এডিআর হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে) বিকল্পের অনুপস্থিতি।

পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ -এর ৫ ধারা মতে, পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার রয়েছে যে কোনও বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত যেকোন মামলার বিচার করার এবং নিষ্পত্তি করার, যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অভিভাবকত্ব এবং শিশুদের হেফাজত, যা একই থাকে আগের অধ্যাদেশ-১৯৮৫ এর ৫ ধারা হিসাবে।

তবে, পারিবারিক জীবন এবং পারিবারিক আইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যা পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ শুরু হওয়ার পরেও পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থেকে যায়, যেমন বিবাহ, দত্তক নেওয়া, উইল, হেবা, উত্তরাধিকার, পিতামাতার ভরণপোষণ ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত বিভিন্ন মামলার রেফারেন্সে কি বলেছে তা যাচাই কার যায়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মতে, পারিবারিক আদালত বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মোহরানা, ভরণ-পোষণ ও অভিভাবকত্ব এবং সন্তানদের হেফাজত সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় মোকাবেলা করতে পারে; মোঃ চাঁদ মিয়া বনাম রূপনাহার ৫১ ডিএলআর ১৯৯৯ (এইচসিডি) ২৯২ এ উদ্ধৃত করা হয়েছে।

অতএব, পারিবারিক বিষয়ের উপর পারিবারিক আদালতের বিস্তৃত এখতিয়ার রয়েছে এবং পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ এর ৫ ধারা এর ব্যাখ্যা কঠোরভাবে করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, বিবাহের বৈধতা উপরোক্ত ক্ষেত্রে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পারিবারিক আদালত দ্বারা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
পারিবারিক আদালত শফিকুল হক বনাম মিনা বেগম ৫৪ ডিএলআর (২০০২) ৪৮১ এবং আবদুল হাসেম বনাম মাহমুদা খাতুন ৬৪ ডিএলআর (২০১২) ৪৯৪ মামলায় কাবিননামার সত্যতা যাচাই করেছেন বিচারপতি এমদাদুল হক বলেছেন যে এস ৫৯ বা ইমপাওয়ার পারিবারিক আদালত শিশুর বৈধতা সম্পর্কিত বিষয়ের বিচার এবং নিষ্পত্তি করতে পারে যদি এটি শিশুদের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজতের বিষয় থেকে উদ্ভূত হয়।
১৯৮৫ সালের বাতিল অধ্যাদেশের মতো পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ চালু হওয়ার পরেও বৈবাহিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য পারিবারিক আদালতে কারা আসতে পারবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

পূর্বে, একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিচারিক নিয়ম ছিল যে শুধু একজন স্বামীই দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য পারিবারিক আদালতে আসতে পারেন।
তাছাড়া, এ প্রসঙ্গে নেলি জামান বনাম গিয়াসউদ্দিন খানের মামলায়, আদালত রায় দিয়েছে যে স্বামী একটি অবাধ্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দাম্পত্য অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মামলা করছে আইনের সামনে সকলে সমান বলে এবং আর্টিকেল ২৭ নং এর অধীনে সাম্যের সাংবিধানিক নীতির সাথে সম্পর্কিত বিবেচনা করা হলে সে অপ্রচলিত, অযোগ্য এবং বেমানান। সংবিধানের ২৭ নং আর্টিকেলের অধীনে আইনের সমান সুরক্ষা এবং সংবিধানের আর্টিকেল ৩১ নং অনুযায়ী পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে। অর্থ্যাৎ দাম্পত্য অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মামলা শুধু পুরুষ নয় স্ত্রী ও দায়ের করতে পারবে।। বিচার বিভাগের এমন একটি প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও, সংসদ পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ -এর মাধ্যমে উল্লিখিত দ্বিধাকে স্পষ্ট করতে পারেনি যা হতাশাজনক।
নতুন পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পাস করার ক্ষেত্রে সংসদের আরেকটি ব্যর্থতা হলো-আপিল পর্যায়ে ADR-এর জন্য কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। জেলা বিচারকদের উপর চাপ কমাতে পারিবারিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল মামলা সংক্রান্ত নতুন বিধান অর্থাৎ ধারা ১৮ এবং ১৯-এর সাথে সংসদ নতুন পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পাস করেছে, যা প্রশংসনীয়।

কিন্তু, বিচার বিভাগে মামলার জট হ্রাস করার জন্য সংসদের দ্বারা পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ এর মাধ্যমে আপিল পর্যায়েও এডিআর সম্পর্কিত সুস্পষ্ট বিধান সন্নিবেশ করা উচিত ছিল।

যেখানে সংসদ মামলার ব্যাকলগ কমাতে দেওয়ানী মামলার আপিল পর্যায়ে ADR অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশোধনী আইনের মাধ্যমে দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ সালের কোডে ৮৯-সি ধারা সন্নিবেশিত করেছে অর্থাৎ, দ্য কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০০৬। পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার জন্য ADR প্রক্রিয়া যুক্ত করতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

যদিও ১৯৮৫ সালের আগের অধ্যাদেশের ১০ ধারা এবং সদ্য প্রণীত পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ এর ধারা ১১ উভয়েই প্রাক-বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত অনুরূপ বিধান রয়েছে যা পারিবারিক বিবাদে ADR ব্যবহার করার জন্য একটি ব্যাখ্যামূলক উইন্ডো খোলা রেখে পারিবারিক ট্রাইল কোর্টে যাওয়ার আগে কোনও বিধান নেই। আপিল পর্যায়ে ADR এর সাথে সম্পর্কিত যা পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ এর মাধ্যমে যোগ করা যেতে পারে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সংসদ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের অধ্যাদেশে পূর্ব-বিদ্যমান ত্রুটি, চ্যালেঞ্জ এবং সম্পূর্ণ সময় ও যুগের চাহিদা মতে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ কয়েকটি নতুন ধারা সংশোধন ব্যতীত পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পূর্বের ত্রুটিপূর্ণ অধ্যাদেশ এর মতো রয়েছে।
পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ দ্বারা বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালতের পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন পারিবারিক আদালতের মামলার কোর্ট ফি বৃদ্ধি করা এবং পারিবারিক আপিল আদালতের নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা। আইন অনুযায়ী, সরকার শুধু জেলা জজের আদালত নয়, জেলা জজের সমতুল্য অন্যান্য বিচারকের আদালতকেও এ ধরনের মামলার আপিল আদালত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। এই আইনের অধীনে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ পদমর্যাদার অন্যান্য আদালতেও আপিল করা যেতে পারে।
এছাড়া বিলে পারিবারিক আদালতের মামলার কোর্ট ফি ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে।

ফলে এটা সুস্পষ্ট যে, আগের আইনে বিচারিক আদালতে মামলার আপিল কেবল জেলা জজের আদালতে করা যেত। এখন একটা জেলায় জেলা জজ পদ মর্যাদার অন্যান্য সকল জেলা জজ কোর্ট এ আপিল মামলা দ্রুত নিস্পত্তি ও মামলার জট কমাতে আইনে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতের মামলার কোর্ট ফি ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করেছে এবং পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ কার্যকর হওয়ার পরে পারিবারিক বিচার আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজদের আদালত সহ অন্য যেকোনো আদালতে আপিল করা যেতে পারে । জেলা বিচারকদের সমতুল্য বিচারক, যেমন, মহিলা ও শিশু বা শ্রম আদালত, যা মামলার বোঝা কমাতে সাহায্য করবে। তা ছাড়া, পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ বিচারে উপস্থিত না হয়ে হলফনামার মাধ্যমে আদালতে সাক্ষী প্রমাণ যোগ করার অনুমতি দিয়েছে, যা পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩-এর ধারা ১৩(৬) দ্বারা পারিবারিক আদালতের পদ্ধতিতে নতুন যোগ করা হয়েছে।

অধিকন্তু, পূর্বে অধ্যাদেশ-১৯৮৫ –এর ধারা ১৭(২) (বি) অনুযায়ী, ৫০০০ টাকার বেশি নয় এমন মোহরানার জন্য পারিবারিক বিচার আদালত কর্তৃক গৃহীত ডিক্রি থেকে কোনো আপিল করা যাবে না। পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ আগেরে অধ্যাদেশে উল্লিখিত বিধানটি বাতিল করেছে। ১৯৮৫ এবং আপিলের ক্ষেত্রে মোহরানার পরিমাণ ৫০০০০ টাকার বেশি নয়। যাইহোক, দুর্ভাগ্যবশত, পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পাস করার পরেও আগের অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর চ্যালেঞ্জ এবং ত্রুটিগুলি এখনও পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে, যারা পারিবারিক আদালত থেকে প্রতিকার চাইতে পারে।

প্রস্তাবিত গ্রাম আদালত সংশোধনী আইন ২০২৪ আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো পারিবারিক আদালত নামক বিশেষায়িত আদালতের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়ার জন্য ০৩ (তিন লক্ষ) টাকা পর্যন্ত বকেয়া ভরণপোষণ সংক্রান্ত বিষয় গ্রাম আদালতকে এখতিয়ার দিয়ে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা মনে রাখা ভালো যে, শুধু বকেয়া ভরণপোষণের জন্য কেউ পারিবারিক আদালতে মামলা করে না এবং সাধারণত ৩ (তিন লক্ষ) টাকা পর্যন্ত বকেয়া ভরণপোষণের দাবি খুব কম পারিবারিক মামলাতেই দেখা যায়। বকেয়া ভরণপোষণের বিষয়টি প্রস্তাবিত গ্রাম আদালত সংশোধনী আইন ২০২৪ তে রাখার বাস্তবতা হলো পারিবারিক আদালতে বিচার্য্য অন্যান্য সকল বিষয় যাতে চেয়ারম্যানদেরকে দিয়ে বিচার করাতে পারে অর্থ্যাৎ বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে আরেকটি সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা দাঁড় করানোর (মূলত জুডিসিয়ারীর ক্ষমতা হরণ করাই লক্ষ্য বিচার করা নয়,) জন্যই মূলত উক্ত সংশোধনীতে ভরনপোষণের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। নতুন পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ নিঃসন্দেহে একটা ভালো ও যুগোপযোগী আইন কিন্তু তারপরও আইনটি সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে পুনরায় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে আইনটেক আরও কল্যাণমূখী করা যেতে পারে।

লেখকঃ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কলামিস্ট ও আইন গবেষক (পিএইচডি অধ্যায়নরত) ইমেইলঃbdjdj1984du@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj