সুজন বিপ্লব
প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলে মহামারী-অতিমারী প্রাণঘাতি করোনা রোগমুক্ত পৃথিবী আবার সচল হবে। বলা চলে করোনার ন্যায় প্রাণঘাতি ভয়াবহ দূর্যোগে পতিত শিক্ষানবিশ আইনজীবিগণ কি আজীবন রবি ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ‘ফটিক’ চরিত্রের মতো শেষ হয়ে যাবে? প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সরকার অনুমোদিত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত আইন কলেজে ভর্তি, পাঠকার্যক্রম ও চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা উত্তীর্ণরা এলএলবি এবং এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করে। আইন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা মেধা, পরিশ্রম ও নীতিনিষ্ঠতার সাথে স্নাতক ডিগ্রীধারী হলেও আইজীবী হওয়ার স্বাভাবিক স্বপ্ন খুন হয়ে যায়। এই ট্রাজেডী থেকে আমরা মুক্তি চাই, বাঁচতে চাই। অবিলম্বে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভুক্তির নামে অযৌক্তিক পরীক্ষা বাতিল ও শিক্ষানবিশি শেষে আইনজীবী সনদ প্রদানের ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বিষয়টা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরের মধ্যে আনতে ভুক্তভোগীসহ আইনের ছাত্রছাত্রী এবং সুধী জনের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। এ অন্যায্য ছাঁটাই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া জরুরী।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নামক কারাগারে বন্দী যখন শিক্ষানবিশগণ
শিক্ষাজীবন পরবর্তী আইন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে আইনজীবী হিসাবে কার্য সম্পাদনের ইচ্ছা থাকলেও বার কাউন্সিলের প্রচলিত নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে বেকারজীবনে পতিত হতে হয়। বিশেষায়িত পেশাভিত্তিক আইন শাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আইনজীবী হিসাবে পেশা গ্রহণের আবেদন করেও বছরের পর বছর দীর্ঘ বেকার তালিকার সংখ্যাভুক্ত হওয়া লাগছে। এভাবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়িতে কাদের লাভ হচ্ছে?
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্ধারিত পরীক্ষার জন্য ভর্তি, রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম পূরণ বাবদ ফি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে বিদ্ধ করছে। বার কাউন্সিলের পরীক্ষাগারে রুদ্ধ আইন শাস্ত্রের ছাত্রছাত্রীদের আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। তাহলে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী যারা আইন বিষয়ে স্নাতকধারী, তাদের ভবিষ্যৎকে ইচ্ছাকৃত বেকারত্বের দূর্ভোগে ফেলা হচ্ছে। এই অবিচার-অন্যায়ের দিন কি শেষ হবে না? আইনের মতো উচ্চতর বিষয়ে শিক্ষিত একটি শ্রেণীকে বেকার বসিয়ে রাখার ভুলনীতি-দূর্নীতির ফলে জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে আমরা দক্ষ, উদ্যোমী ও মেধাবী তরুণের আইনী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও রসায়নবিদ প্রভৃতি বিশেষায়িত পেশায় এমন পরীক্ষা পদ্ধতি নেই সেবাধর্মী আইন ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি পত্রের (খরপবহংব) জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করার লেশমাত্র যৌক্তিকতা নেই। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিসহ উন্নত বিশে^র কোথাও এমন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু নেই। পাশ^বর্তী ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে তিন ধাপের জটিল পরীক্ষা ব্যতিরেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত ফি নিয়ে আইনজীবী সনদ প্রদান করা হয়।
১৯৮১ সাল পর্যন্ত আইনজীবী সনদ প্রাপ্তির জন্য আমাদের দেশেও কোন পরীক্ষা নেওয়ার প্রচলন ছিলনা। ২০১২ সালের পূর্বে তিন ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পূর্বে যারা পরীক্ষা পদ্ধতির আওতামুক্ত আইনজীবী সনদ পেয়েছেন। তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি যৌক্তিক হবে? প্রচলিত বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা কতটা যৌক্তিকতা বহন করে? যৌক্তিকতার নিরিখে বার কাউন্সিল তালিকাভুক্তি পরীক্ষা বাতিল করা উচিত। শিক্ষানবিশি কার্যক্রম শেষে আইনজীবী সনদ প্রদানের বিকল্প কিছু নেই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস এবং বার কাউন্সিল আদেশ, ১৯৭২’র (ঞযব ইধহমষধফবংয খবমধষ চৎধপঃরড়হবৎং ্ ইধৎ ঈড়ঁহপরষ ঙৎফবৎ, ১৯৭২) ‘বিধি-৭৩এ’ ও ‘অনুচ্ছেদ ৪০(১) ও ৪০ (২)’ অনুযায়ী উদ্ভুত সংকটময় পরিস্থিতি ও সমস্যা নিরসনে বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা নামীয় কারাগারের অবসান ঘটিয়ে আইনজীবী সনদ দিতে পারে। শিক্ষানবিশদের চরম ভোগান্তি-বঞ্চনা-নির্মমতার যন্ত্রণা থেকে রেহাইয়ের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার নামে বেকার বানানো চলবেনা। বার কাউন্সিল চালিত আইনজীবী তালিকাভুক্তি এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা বছরে দুই বার হওয়ার নিয়ম থাকলেও ৩ বছর পর এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে বাকী পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশে কত বছর লাগবে, তার কোন গ্যারান্টি নাই। তাই অযৌক্তিক আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি শতভাগ যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়।
বেকারত্বের অভিশাপে আইন পেশা ছাড়ছেন শিক্ষানবিশরা
আইন শাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অনেক শিক্ষার্থী প্রতিকূল পরিস্থিতি ও অনিচ্ছার কারণে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট প্রভৃতি চাকুরীতে যোগদান করেনা। অনেকেই আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে ব্যারিস্ট্রার হওয়ার সম্ভাবনাকে ত্যাগ করে। সেক্ষেত্রে স্বাধীন পেশা আইন ব্যবসা-আইনজীবী হওয়ার পথে হাঁটতে হয়। আইনজীবী হওয়া আইনের শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হিসেবে গণ্য হয়। বার কাউন্সিল হোক বা সরকার-রাষ্ট্রের কারো সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা শুভ বোধ সম্পন্ন মানুষের কাম্য নয়। ৩-৫ বা ১০ বছর কিংবা দীর্ঘকাল থেকে অনন্তকাল শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে বশিকরণের প্রক্রিয়ার অংশ এই আইনজীবী সনদ নিবন্ধন পরীক্ষা চালু থাকতে দেওয়া যায়না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। বিলম্বিত পরীক্ষা, ফলাফল প্রকাশসহ নানা রকমের জটিলতায় ৮০ ভাগ আইনের গ্রাজুয়েটগণ আইন পেশা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলস্বরুপ আদি পেশা ত্যাগে বাধ্য শিক্ষানবিশরা পেশা নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। আর একদল তরুন, দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষিত বেকার বনে যায়। দেশ বেকারে সয়লাব হচ্ছে। তাতে ‘লাভের গুড়টা খাচ্ছে কে?’
আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার খপ্পরে আইনজীবী হতে না পারা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিজীবন ও পরিবার তথা সমাজ জীবনে কতটা ভয়াবহতা নেমে আসে, সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এটা সবাইকে অনুভব করা দরকার। আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নভঙ্গে দায় কার? আইনে ¯œাতক ডিগ্রি নেওয়া সন্তানটা বেকার বাসে থাকতে বাধ্য, আইনে লেখাপড়া শেখার জন্য সে বেকার জীবনে বখে যায়। সন্তানের জীবন ও ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পতিত দেখে নির্ঘূম পিতা-মাতাকে দুশ্চিন্তায় জীবন কাটাতে হয়। অবসরে থাকা পিতামাতার জীবনে বোঝা হয়ে বেকার জীবনের যন্ত্রণা কত ভয়াবহ, জানেন? এলএলবি বা এলএলএম ডিগ্রিধারী শিক্ষানবিশ কাল সম্পন্ন করে আইন ব্যবসায় মনোনিবেশের মধ্য দিয়ে আয়-রোজগার করে খেলে ‘কার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে’ আমাদের বোধগম্য হয়না।
আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা কতটা জরুরি?
আইন পেশায় যুক্ত হওয়ায় ক্ষেত্রে ছাঁটাই প্রক্রিয়ার নামান্তর আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় টিকতে না পেরে শিক্ষানবিশরা পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বার কাউন্সিলের ভুলনীতি-দূর্নীতি, অযৌক্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নানামুখী প্রতিবন্ধকতায় আদালত পাড়া থেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিতাড়ন রোধে কি পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি না? আদি পেশা ছাড়তে বাধ্য হওয়া খুব গ্লানিকর। পেশা হতে ছাঁটায়ের ডিপ্রেশন মাথায় নিয়ে পুর্নবার নতুন পেশা নির্বাচনের পথে নামতে হচ্ছে। নিরুপায় শিক্ষানবিশগণ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে, পরিহাস ও নিগ্রহের কলঙ্ক নিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তাকে অহেতুক অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষা ফেল করার জন্য আজীবন গ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়।
বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীগণ কি তাদের জুনিয়রদের পেশাগত জীবন থেকে ছাঁটাইয়ের অবিচারমূলক আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে মুখ খুলবেন না? আইন, আইন শিক্ষা, আদালত-বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি সমাজে নেতিবাচক ধারণা বেড়েই চলেছে। আইন শিক্ষা প্রত্যেক সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হলেও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে সকল পর্যায়ে সুমতি-সমতার বদলে বৈষম্য আর দূর্নীতি-লুটপাটের মচ্ছব দেদারছে চলছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন অঙ্গনের অব্যবস্থাপনা নির্মূল করতে হবে। এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণের জীবন মান উন্নয়নে আইন শাস্ত্রজ্ঞরা ভূমিকা রাখতে পারে। আইন পেশার সমস্যাগুলো জিইয়ে রেখে আইনের শাসন চাওয়া অবাস্তব কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে দেখছি, আইনজীবী হওয়ার প্রক্রিয়া সংকোচন, ছাঁটাই ও প্রবেশাধিকার সংরক্ষণের ফর্মূলা জারি করা হয়েছে। আইন পেশার বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের অদূর ভবিষ্যৎকে মহাবিপদের মধ্যে ফেলার আয়োজন চলছে। তরুণেরাই মেধাসত্তা, দক্ষতা ও য্যোগ্যতার আধার, সেকারণ অবসরগামী প্রবীণের হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আমরা নির্ভার হতে পারি না। আজকের শিক্ষানবিশরাই সুন্দর আগামীর প্রতিশ্রুতিশীল আইনজীবী হিসেবে হাজির হবে। শিক্ষানবিশি শেষে আইনজীবী হওয়ার রাস্তা আটকের রাখা যৌক্তিক হতে পারে না। পেশা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার কালো অধ্যায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সমগ্র জীবনকে দগ্ধ করবে। অন্য পেশায় স্থানান্তর শুধু ব্যক্তিক ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রও চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকর্তাদের হুঁশ ফিরুক।
আইন পেশাকে আধুনিকায়ন ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার আওতাধীন করতে হবে। মানবিক সমাজ গঠনে বিজ্ঞ আইনজীবীদের সর্বাত্মক ভূমিকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যক্রম সুচারুভাবে নিয়মতান্ত্রিক, যৌক্তিক ও জবাবদিহি নির্ভর করতে হবে। শিক্ষানবিশগণের বেকার বানানোর কর্তৃত্ব সমূলে উৎপাটন করা সময়ের দাবি। বিশে^ বেকারত্ব বর্ধনশীল ২০টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশ ১২তম অবস্থানে রয়েছে। অথচ অন্যায়ভাবে, তোঘলকি কারবার করে বেকারদের বড় অংশ হিসেবে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের তৈরি করা হয়েছে। ক্ষেতমজুর আন্দোলনের জনপ্রিয় স্লোগান, ‘ভর্তার নিচে তরকারি নেই, ক্ষেতমজুরের নীচে মানুষ নেই’ তদ্রুপ বলতে পারি-শিক্ষানবিশ আইনজীবীর নিচে মানুষ হয়না। এই শিক্ষানবিশদের বাঁধা হাত খুলে দিয়ে কর্মবীর হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটা তাদের অধিকার। শিক্ষানবিশরা চাকুরি নয়, আইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনজীবী সনদের অধিকার দাবী করেছে। বেকারমুক্ত দেশ গড়ার অংশ হিসেবে আইনজীবী সনদ বিনা ছাঁটাইয়ে দেওয়া উচিত। এটা বাস্তবিক ও ন্যায় সঙ্গত। দীর্ঘদিন জেঁকে বসা মুরুব্বীতন্ত্রের গোমর ফাঁসের সময় এসেছে। শিক্ষানবিশ মেয়াদান্তে আইনজীবী সনদ পাওয়া সকলের অধিকারকে খর্ব করা চলবেনা।
বার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ২০২০ খ্রিস্টাব্দের এমসিকিউ পরীক্ষার পেন্ডিং লিস্টে থাকা হাজার-হাজার পরীক্ষার্থীদের নানা ঝামেলা ও হয়রানি পোহাতে হয়েছে। প্রায় ৩ বছর পর অনুষ্ঠিত পরীক্ষার চাহিত শর্ত কিভাবে অসম্পূর্ণ রেখে ঠিক পরীক্ষার দু’চারদিন পূর্বে সংশোধন করে প্রবেশপত্র নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো। পরীক্ষার প্রস্তুতি শিকেয় তুলে পেন্ডিং লিস্টের নাম কাটানোর জন্য পরীক্ষার্থীকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। তারপর সারাদেশ থেকে জড়ো হওয়া পরীক্ষার্থীরা অচেনা রাজধানী ঢাকার নগরীর কোথায় পরীক্ষা কেন্দ্র-তা খুঁজে বের করতে নানা দূর্ভোগে পড়ে। এই হয়রানিমূলক আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা কোন যুক্তিতেই চালু থাকতে পারে না। অহেতুক পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল ও শিক্ষানবিশ মেয়াদকাল শেষে আইনজীবী সনদ প্রদান আশু করণীয়।
শিক্ষা শেষে কাজ চাই। দাবিটি শতভাগ যৌক্তিক। যারা কাজের ক্ষেত্র আটকে রেখেছে, তারাই অন্যায় ও অমার্জিত ধারা প্রশ্রয় দিচ্ছে। অযৌক্তিক আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বিলম্ব না করে বাতিল করার মধ্য দিয়ে ইনসাফ কায়েম করতে হবে। অন্যায়-অবিচার রোখা জরুরী, অস্তিত্বের প্রয়োজনে আইনের সকল শিক্ষার্থীসহ, সুধীমহল, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগঠন সমূহের উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য ছাত্রগণআন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যান্য উচ্চতর সেবামূলক বিশেষায়িত পেশার মতো আইন পেশায় আইনজীবী হিসেবে আইন ব্যবসার জন্য শিক্ষানবিশদের প্রতি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আইন বিষয়ে স্নাতকরা চাকুরী নয়, আইন ব্যবসা করতে চায়। আইনজীবী হিসেবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য পরীক্ষার বোঝা মাথায় চাপানো বন্ধ করুন। এটা সর্বান্তকরণে অন্যায়। শিক্ষানবিশি অন্তে অবিলম্বে আইনজীবী সনদের দাবি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
* সুজন বিপ্লব, সাবেক ছাত্রনেতা ও শিক্ষানবিশ আইজীবী