পৃথিবীতে যুগে যুগে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস মহামারী আকারে আবির্ভুত হয়েছে। কখন ও গনচীনে, কখন বা ভারতে, আবার কখনও যুক্তরাষ্ট্রে, আফ্রিকান দেশ গুলোতে বা এমন কি রাশিয়াতেও যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এবারের ভাইরাস অত্যন্ত মারাতক ভয়াবহ যাহার নাম করোনা, বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যে যেখানে করোনা নামক ভাইরাসটির উপস্থিতি নেই। প্রত্যেকটা দেশে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর মিছিল পাড়ি দিচ্ছে।
কেউ মনে করেন সুদুর চীনই ভাইরাসটির জন্য দায়ী, কেউ বা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী কেউ বা মনে করেন পৃথিবীতে আমরাই একক নেতৃত্বের অধিকারী সুতরাং আমরাই ভাইরাসটির মাধ্যমে প্রভাবশালী দেশ গুলো ধ্বংস করে আমরা নেতৃত্ব দিব। আসলে কোনটি ঠিক আজও কোন গবেষক, বিজ্ঞানী বা জ্যোতিষী বা কোন দেশ সঠিক ভাবে এর প্রকৃত কারন নির্ণয় করতে পারেনি। প্রতিদিনই টিভির পর্দায় নজর দিলে বা সংবাদপত্র পড়লে ঐ একই চিত্র পাওয়া যায় যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কোন কোন দেশে ভাইরাসটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে আবার কোন কোন দেশে এর প্রকোপ কিছুটা কমে আসছে। করোনা সম্পর্কে আমরা এখন সবাই কম বেশী জানি। মানুষকে সচেতন করার মত আমার কাছে তেমন কিছুই নেই তবুও আমি দুই একটি কথা শুধু মাত্র জনগণের বা মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে চাই। আমরা বাঙ্গালী জাতি খুব সাহসী, আমাদের সাহস অনেক বেশী।
আমরা ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা কমিশন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সর্বপরী ১৯৯০ সালের সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জয় লাভ করেছি। অনেক রক্ত দিয়েছি অনেক আত্মত্যাগ ও করেছি। সুতরাং করোনা যুদ্ধেও আমরা জয় লাভ করবো ইনশাল্লাহ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মনে রাখা উচিত এই ভাইরাসটি কিভাবে ছড়াচ্ছে, আমরা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছি। যদি একটু মনোযোগী হই এবং সচেতন হই তাহলে হয়তো আমরা আমাদের নিজেদের এবং পরিবারকে সুরক্ষা করতে পারি। সরকার এর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হচ্ছে। টিভির পর্দায় বা সংবাদপত্রের এবং বিভিন্ন জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, এমপি মহোদয়সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরাও জনগনকে সচেতন করার জন্য সব কিছু করে যাচ্ছে। কিন্তু কেন মানছিনা? একটু ভেবে দেখুন যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে তার কাছে আমরা ভয়ে কেউ যাচ্ছিনা। আর যদি মারা যায় কি অবস্থায় দাফন কাপন হচ্ছে ভাবুন, একটু ভাবুন। ভাবলেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন।
শুধু আল্লাহ তালার দোহাই দেবেন না। কোনটি ভাল কোনটি মন্দ সব কিছু বিচার করার শক্তি আল্লাহ তালা আমাদেরকে দিয়েছেন। করোনার কারনে আমরা যে একে বারে ঘরের ভিতর বসে থাকবো তাহা ঠিক নহে। আমাদের তো সংসার আছে ধর্ম আছে বাবা মা আছে সন্তান আছে তাদের জীবিকার জন্য আমাদের তো কাজ করতেই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মোদ্দা কথা হচ্ছে আমরা যদি আরেকটু সচেতন হই এবং সকল জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করি হয়তবা আমরা সফল হতে পারি বা করোনাকে জয় করতে পারি। আমরা এই বিপদের মুহুর্তে কোন চায়ের দোকানে হাট-বাজারে ভিড় করবোনা। জন সমাগম থেকে বিরত থাকবো, তিন ফুট থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখবো, মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবো না। বাড়ীতে একটু বিশ্রামে থাকবো। মাঝে মাঝে গরম পানি গড়গড়া করবো। লেবুর সরবত বানিয়ে পান করবো বা একটু চা বানিয়ে পান করবো। কোন আতœীয় স্বজনকে আপাতত আসতে দেবনা বা আমরা এমুহুর্তে কোন আতœীয় স্বজনের বাড়ি যাবো না। এমনটি যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমার মনে হয় আমরা করোনার মহামারী থাবা থেকে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো এবং প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজে প্রার্থনা করি তাহলে আল্লাহ কৃর্তক হয়তো অতি দ্রুত আমরা করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে পরি।
সর্বশেষে সবার কাছে আকুল আবেদন আসুন আমরা এক সংঙ্গে লড়াই করি, স্বাস্থের বিধি মেনে চলি এবং সরকারের ঘোষিত নিয়ম কানুন মেনে চলি। আমরা সুস্থ্য থাকবো অপরকে সুস্থ্য থাকার জন্য সাহায্য করবো। যেখানেই যাই না কেন আমরা যেন মাস্ক পরিধান করি মাস্ক ছাড়া যেন বাহিরে না যাই। যেখানে সেখানে যেন থুথু না ফেলি এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানেরা যাতে বাহিরে না যায় সে দিকে দৃষ্টি রাখি এবং আমরা এমূহুর্তে কোন আত্মীয় স্বজনে বাড়ি যাবো না ও আমাদের বাড়িতে না আশার জন্য অনুরোধ করবো, মাক্স না পড়া লোকজনকে এড়িয়ে চলবো, এটাই হোক আজকের আমাদের শপথ ও অঙ্গিকার।
লেখকঃ জহিরুল ইসলাম (শাহীন)
সহঃ অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ কলারোয়া।