সব
facebook apsnews24.com
৭০ নং অনুচ্ছেদ ও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন প্রসঙ্গ - APSNews24.Com

৭০ নং অনুচ্ছেদ ও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন প্রসঙ্গ

৭০ নং অনুচ্ছেদ ও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন প্রসঙ্গ

নূরুন্নবী সবুজ

৭০ নং অনুচ্ছেদ ওৃ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন প্রসঙ্গআইনে একটি ল্যাটিন ম্যাক্সিম প্রচলিত আছে ‘‘ Ab Abusu Ad Usum Non Valet Consequentia ’’ যার অর্থ কোন কিছুর অপব্যবহার দিয়ে তার ব্যবহারকে রোধ করা যায় না।সহজ করে বললে বস্তুর ইতিবাচক ব্যবহার বা বস্তুর ব্যাবহারিক গুরুত্ব দেখতে হবে কেউ যদি তার নেতিবাচক ব্যাবহার করে তাহলে তা দিয়ে বস্তুর উপকারের দিককে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহার কোন অংশেই কম হচ্ছে না। কিছু মানুষ যেমন এটি প্রয়োজনে ব্যবহার করছে তেমনি কিছু মানুষ ব্যবহার করছে বিলাসিতা হিসেবে আর একটা বড় গোষ্ঠী ব্যবহার করছে সহজে অপরাধ কর্ম সংগঠনে।মোবাইল নেট সুবিধা বা ব্যাংকিং সুবিধা কারো কারো জন্য অবৈধ কাজ করার সহজ উপায়।

আবার মাদক দ্রব্যের কুফল থাকলেও এর থেকেও কম রাজস্ব আদায় হয় না। আজ সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিদিনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা হলেও আমরা কি গাড়ি ঘোড়া বন্ধের পক্ষে কথা বলবো বা বলবো যে আমাদের যাতায়াত করার দরকার নেই।আর বলা হলেও তা নিশ্চয়ই সুবিবেচনার মাঝে পড়বে না। ৭০ নং অনুচ্ছেদ নিয়ে শুরু থেকেই অনেক বিতর্ক চলে আসছে। স্বাধীনতার পর আমরা প্রায় অর্ধ-শত পথ পাড়ি দিচ্ছি। স্বাধীনতার সময়ের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ পরিবর্তন এসেছে।এর মধ্যে সংবিধান ১৭ বার সংশোধন হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র্র্রের সকল খুটি আরো মজবুত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রকে আরো কল্যাণমুখী করতে কিছু বিধানের ইতিবাচক পরিবর্তন করা যেতেই পারে।

৭০ নং অনুচ্ছেদের মূল বিষয় হচ্ছে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর আসন শূন্য হবার কারণ।এখানে দুইটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।১. দল হতে পদত্যাগ২. দলের বিরুদ্ধে ভোট দান।এই দুই ঘটনার যে কোনটির মাধ্যমে সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে।প্রথমটি নিয়ে তেমন কোন বিতর্ক নেই তবে পরেরটি নিয়ে বিতর্ক চলমান।এর মধ্য থেকে আমাদের এক বিশেষ ধরণের সমাধান বের করতে হবে।দলের স্বার্থে এবং সরকারকে স্থিতিশীল করার স্বার্থে এমন বিধান সংবিধানে সংযোজন যেমন সময়ের প্রয়োজন ছিলো তেমনি এখন এতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনাও কর্তব্য হয়ে পড়েছে।

সাধারনভাবে কোন দলের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার অর্থ হলো সে দলের নীতি আদর্শের উপর তার আনুগত্য।প্রত্যেক দলের রাজনৈতিক কেীশল থাকে যার মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাদের মত সাজাতে বা পরিবর্তন করতে চায়।আর দলের প্রার্থী তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের ব্যানারে আসার কারনে নির্বাচিত হয় তেমনি অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীর দলীয় পরিচয়ের চেয়ে তার ব্যক্তি পরিচয় বড় থাকে। দল একটি প্লাটফরম হিসেবে কাজ করলেও ব্যক্তি যোগ্যতাও তার নির্বাচনে জয় লাভ করার পিছনে বিশেষ অবদান রাখে।তবে এই দুইটির যে কোনটিই ঘটুক না কেন যারা নির্বাচিত করে বা ভোট দেয় তারা প্রত্যাশা করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে তাদের সুবিধামত কাজ হবে এবং তারা শোষিত বা বঞ্চিত হবে না।

কিন্তু দল যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় বা এমন কোন কাজ করতে চায় যা সাধারণের প্রত্যাশিত নয় তাহলে নির্বাচিত ব্যক্তিটিকে কি দলের পক্ষে নাকি সাধারণের পক্ষে থাকতে হবে।দলের পক্ষে না থাকলে তার আসন থাকছে না আর দলের পক্ষে থাকলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।কোন ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করে তাহলে সেটা আলাদা বিষয় কিন্তু যদি সে দলের আনুগত্যের অভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পদ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটা কোন না কোন ভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রে সুষ্ঠু বিকাশের পথকে বাধা গ্রস্ত করে ।

কোন দল টিকাতে গেলে অবশ্যই কিছু কঠোর বিধানের দরকার আছে। কিন্তু তার প্রকৃতি এমন না যে তার কারনে সাধারণের প্রত্যাশা ব্যহত হয়। কোয়ালিশন সরকারের প্রবণতা ৭০ নং অনুেেচ্ছদের বিধানকে হয়ত অনেক ক্ষেত্রে যেীক্তিক করে তুলে ।কিন্তু বর্তমানের যে বিধান আছে তেমনটি না রেখে এর নমনীয় কিছু বিধান রাখা যায়। শক্তিশালী বিরোধী দলের বিলের উপর ছাটাই প্রস্তাব বা বিতর্কে অংশগ্রহণ হয়ত জনগণের ভিতর বিল,সমন্ধে তার ব্যবহারিক দিক সমন্ধে জানতে সাহায্য করে কিন্তু আমাদের মত দেশের জন্য তা কতটুকুই বা ফলপ্রæস হতে পারে। আর বিরোধী দলগুলো বিরোধিতা করলেও তারা যেহেতেু সংখ্যায় কম থাকে তাই সরকার দল চাইলে যে কোন বিল খুব সহজে পাস করতে পারে। আর বিরোধী দলের পক্ষে দেখা যায় বিল পাস করার সংখ্যা হয়ে পড়ে নগণ্য।

গণতান্ত্রিক প্রকিয়ায় নির্বাচিত সরকার যেহেতেু জনগণের কাছে দ্বায়বদ্ধ তাই এই বিষয়ে দ্বায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমাদের ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে হাটা দরকার।১৯৭২ সালের সংবিধান-এই ৭০ নং অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয় । ১৯৫৪ সালে আমরা যে বাজে ঘটনার সম্মুখিন হই তার কারনেই আমাদের এই বিধান সংবিধানে যোগ করতে হয়। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭ টি আসনের মধ্যে ২৩৩ টি আসন পায়। এই নজির বিহীন সাফল্যের পর আমাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পাবার কথা ছিলো এবং আমাদের গর্বের বিষয় ছিলো সেটি।

কেন্দ্রীয় সরকারও তখন বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছিলো। কিন্তু দফায় দফায় যখন ক্ষুদ্র স্বার্থের কারনে দল পরিবর্তন হতে থাকে এবং সরকার পরিবর্তন হতে থাকে তখন আশা আমাদের নিরাশায় পরিণত হয়। যে সাফল্য আমাদের জন্য শুভ আনার কথা ছিলো সে কাজটি আমাদের জন্য হয়ে উঠে নিছক। ব্যক্তি স্বার্থের কারনে ঘন ঘন দল বদল এবং অস্থিতিশীল সরকারের সুযোগ নিয়ে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক আইন জারি হয়। যে সাংসদদের একতা বদ্ধ এবং জনগণের জন্য রাষ্ট্রের জন্য কাজ করার কথা ছিলো তারা নিজের স্বার্থের জন্য সামরিক সরকারের পরিবেশ তৈরী করে দিলো।

সংবিধান যখন প্রণয়ণ করা হয় তখনও এই ধারনা ছিলো যে সাংসদগণ নিজের স্বার্থের জন্য জনগণের কাছে দেয়া কথা ভুলে যাবে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে আর তা যেন না হয় তার জন্য ৭০ নং অনুচ্ছেদকে যুক্ত করা হয়। এখন নিবাচিত সাংসদগণ যদি তাদের জনবান্ধব ,জনগণের সেবক এবং ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিবে না বলে মনে করে তাহলে তাদের এই বিতর্কিত ৭০ নং অনুচ্ছেদ-এর ভিতর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনার কথা চিন্তা করা উচিত।

এতে করে জনগণের আশা পূরণের পথ আরো গণতান্ত্রিক হবে।

আমরা শিশুর হাত ছেড়ে দিয়ে আছাড় খেতে দেই বলেই শিশু হাটতে শিখে এবং একসময় সে দেীড়ায় এবং যেভাবে ইচ্ছা চলতে পারে । আমাদেরও আজ হাত ছেড়ে দেয়া দরকার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য। একটা বাজে অভিজ্ঞতা আমাদের চিরন্তন করে রাখার কোন প্রয়োজন নেই। আর তাই জনকল্যাণ মূলক রাষ্ট্র হিসেবে ৭০ নং অনুচ্ছেদে বিশেষ কিছু পরিবর্তন আনা উচিত আমরা আনতে পারি। এমন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হলো,

১. সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর প্রতি ছয় মাসে তার সম্পদের হিসাব নিতে হবে এবং নির্বাচিত থাকা অবস্থায় প্রত্যক্ষ বাপরোক্ষভাবে যেন সম্পদ বৃদ্ধি করতে না পারে এই বিধান।

২. যে ব্যক্তির আয়ের বৈধ পথ নাই এবং রাজনীতিকে অবৈধ আয়ের পথ মনে করে তার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা।

৩. নির্বাচিত হবার পর এলাকায় না থেকে অপ্রয়োজনে বাইরে থাকা বন্ধ করা

৪. এতো বেশী প্রটোকল বা সব সময় একগাদা নেতা নিয়ে না ঘুরে বরং সরাসরি জনগণের সাথে কাজ করতে হবে। সরকারী প্রটোকলই যতেষ্ট।

৫. নির্বাচিত হবার পর পরিবারের সদস্যদের আচরণ যেন অস্বাভাবিক না হয় বা তারা যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে তার বিধান রাখা।

৬. প্রতি ছয় মাসে জবাবদিহিমূলক জনসভা করা যেখানে প্রতিনিধি তার আয় ব্যয়ের হিসাব সহ কাজের পরিকল্পনা এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করবে। কোন কাজে কত ব্যয় তা যেমন প্রকাশ করতে হবে তেমনি কাজটি কতদিন টেকসই রাখার জন্য করা হচ্ছে তাও জানাতে হবে।

৭. সরকারী কর্মচারীদের প্রভাবিত না করে জনগণকে তাদের অধিকার ও দ্বায়িত্ব সচেতন তৈরী করতে তাদের রাষ্ট্রের কাঠামো সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া।

৮. বিল যাদের জন্য পাস করা হবে তাদের সাথে সরাসরি জনপ্রতিনিধি থেকে জরিপ করে এবং তাদের মতামতের আঙ্গিকে বিলের খসড়া তৈরী করা।

এই পরিবর্তগুলো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জরুরী। এই বিধানগুলো যদি আমরা ৭০ নং অনুচ্ছেদে যুক্ত করতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমরা আমাদের প্রত্যাশিত ফল পাবো ।এবং সাথে অধিকাংশের যে দাবী ৭০ নং অনুচ্ছেদকে শুধুমাত্র অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে সেটি করেও আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারি।

নুরন্নবী সবুজ, লেখক ও কলামিষ্ট

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj