সব
facebook apsnews24.com
স্ত্রী কখন স্বামীকে তালাক দিতে পারবে, আইন কি বলে? - APSNews24.Com

স্ত্রী কখন স্বামীকে তালাক দিতে পারবে, আইন কি বলে?

স্ত্রী কখন স্বামীকে তালাক দিতে পারবে, আইন কি বলে?

নূরুন্নবী সবুজ

প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে স্বামীই স্ত্রীকে তালাক দিবেন। কিন্তু এমন কিছু পরিস্থিতি আছে যখন স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামীর সাথে থাকা সম্ভব হয় না । স্ত্রী মাঝে মাঝে এমন পরিস্থির স্বিকার হলে তালাক দেবার বিধান রাখা হয়েছে । স্বামী মূলত তার স্ত্রীকে খুব সহজেই বিশেষ কোন কারন না দেখিয়েই তালাক দিতে পারে। কিন্তু স্ত্রী তালাক দিতে চাইলে শর্ত পূরণ করতে হয়।

স্ত্রীর তালাকের ক্ষেত্রে মূলত ২ টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

১.স্বামী যে প্রকিয়ায় তালাক দিতে সে প্রকিয়ায় ও

২. পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার মাধ্যমে। স্বামীর প্রকিয়ায় তালাক : বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বিবাহের রেজিস্ট্রি রাখতে হয় ।

আমরা একে কাবিননামা বলে থাকি । এই কাবিনামায় ১৮ নং একটি কলাম আছে । সহজ করে বললে ১৮ নম্বর দেয়া একটি বিশেষ ঘর বা কলাম বা শিরোনাম আছে । আর এই কলামেই স্ত্রী তার স্বামীকে তার স্বামী যে ভাবে তালাক দিতে পারবে কিনা তার বিধান আছে। এখনে যদি স্ত্রীকে স্বামী তালাক দেবার ক্ষমতা দেয়া থাকে তাহলে স্ত্রী খুব সহজেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।

স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেবার আগে তাই অবশ্যই এই ঘরটি পড়ে নিতে হবে। পরবর্তী অনুসরণীয় পদ্ধতি হলো, আপনাকে স্থানীয় কাজী বা আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তারপর আপনাকে ৫০০ টাকা মূল্যের একটি স্ট্যাম্পে তালাকের হলফনামা তৈরী করতে হবে। হলফনামা অবশ্যই সকল আইনী প্রকিয়া অনুসরণ করে করতে হবে বা নোটারি করে নিতে হবে। হলফনামা তৈরীর কাজ সমাপ্ত করার পর তালাকের দুইটি নোটিশ তৈরী করে একটি স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা বরাবর এবং অপরটি স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার চেয়ারম্যানের বরাবর পাঠাতে হবে।

আপনাকে চিঠি অবশ্যই রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে প্রেরণ করতে হবে। চিঠি পাঠানের ৩০ দিনের মাঝে আপনার স্বামীর এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান একটি আপোষ মিমাংশার জন্য আলোচনা ব্যবস্থা করবেন। আপোষ মিমাংসা হলে অনেক ভালো না হলেও সমস্যা নাই। একটি বিবাহ যেহেতু সারা জীবনের বন্ধন মনে করা হয় এবং তালাকের মাধ্যমে শুধু দুই জন ব্যক্তির সম্পর্কই নয় অনেকের সম্পর্কের মাঝে এর খারাপ প্রভাব পড়ে তাই স্থানীয় মিমাংসার মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় সামান্য সমস্যার কারনে যেন সে সম্পর্কের কোন ভাঙ্গন না ধরে।

এখানে সমাধানের কোন পথ আছে কিনা তা বের করার চেষ্টা করা হয়। মিমাংসায় কোন আপোষ না হলে,তালাকের দিকে যাবে এই প্রকিয়া। আর হ্যা, স্বামী অনেক ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ গ্রহণ করে না । স্বামী তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলেও তালাক বা তালাকের নোটিশ বৈধ হবে। আর মূলত এজন্যই রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে। আলোচনাও যখন কাজে আসে না এবং তালাকের নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মাঝেও আপনাদের ভেতর তালাক প্রত্যাহার করার কোন সিদ্ধান্ত আসে না তখন আপনাকে কাজী অফিসে গিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে ।

আপনি যদি তালাক রেজিস্ট্রি করে না নেন তাহলে তালাক হয়নি বলে ধরে নেয়া হবে। আর স্ত্রীর গর্ভে যদি সন্তান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা সময় বা যত দিন সন্তান প্রসব না হবে তত দিন তালাক স্থগিত থাকেবে। এমনটি করা হয়েছে গর্ভের সন্তানের বৈধতা বা পিতার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। ৯০ দিন গনণা করা হয় যে তারিখে নোটিশ পাঠান সে দিন থেকে। কোন অবস্থাতেই তালাকের ক্ষেত্রে দেনমোহর ছাড়া তালাক বৈধ হবে না ।

আপনি ( স্ত্রী ) তালাক দিলেও দেনমোহর পাবার অধিকারী থাকবেন। পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে: ১৮ নং কলামে তালাকের অনুমতি না দেয়া থাকলে সেক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করতে হবে।

মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ এর ২ নং ধারায় কিছু কারন দেখানো হয়েছে যার এক বা একাধিক কারন বিদ্যমান থাকলে বা বা যে কোন কারন দেখিয়ে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করা যাবে। কারনগুলো হলো

১. ৪ বছর ধরে স্বামী নিখোজ

২. স্বামী ২ বছর যাবত তার ভরণপোষণ দিতে পারেনি বা ইচ্ছা করে দেয় নি

৩. অনুমতি ছাড়াই ২য় স্ত্রী গ্রহণ করেছে

৪. স্বামীর ৭ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে কারদন্ড হয়েছে

৫. যুক্তিসংগত কারন ছাড়া ৩ বছর দাম্পত্য দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়

৬. বিবাহের সময় বা তার পরে যদি স্বামী পুরুষত্বহীন হয়ে পড়ে

৭. ২ বছর যাবত যদি কুষ্ঠরোগ, পাগল অবস্থায় বা মারাত্মক যৈন ব্যাধিতে ভোগেন

৮. ১৮ বছর বয়সের আগেই পিতা মাতা বিবাহ দিলে এবং ১৯ বছর বয়সের মধ্যে বিবাহ বিচেছদ চাইলে তবে এক্ষেত্রে তাদের মাঝে যৈন সম্পর্ক হওয়া যাবে না।

৯ স্বামী যদি তার সাথে নিষ্ঠর আচরণ করে। আর এ রকম আচরণগুলেো হলো ক) তাকে স্বাভাবিক ভাবেই আক্রমণ করেন বা তার সাথে এমন আচরণ করেন যা তার জীবনকে দুর্দশাগ্রস্ত হয় সেটা শারীরিক অত্যাচার হোক বা না হোক খ) খারাপ নারীদের সাথে থাকে বা ঘৃণ্য জীবন যাপন করেন গ) তাকে নৈতিক বিবর্জিত কাজে থাকতে বাধ্য করে বা চেষ্টা করে ঘ)তার সম্পত্তিতে তার অধিকার হরণ করে বা করার চেষ্টা করে ঙ) তার বিশ্বাস বা ধর্মাচারে বাধা দেয় চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে কোরাআনের নির্দেশ অনুসারে ন্যায়সংগত ব্যবহার করতে না পারলে। এই নিষ্ঠুর আচরণগুলো করলে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে।

স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাক যেমন সহজ তেমন কঠিন একটি প্রকিয়া বলা যায় স্ত্রীর তার স্বামীকে তালাক। তালাকের মত কাজকে যদিও ইসলামে উৎসাহিত করা হয়নি তবুও মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির তৈরী হয় যাতে মধুর এবং পবিত্র সম্পর্কে বিচেছদ আনতেই হয়। আমাদের জীবনে এমন করুন পরিস্থিতি না আসুক এমনটাই কামনা।

লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট । mdnurunnobiislam379@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj