বিশ্বজাহানের মহান পতিপালকের ইচ্ছা ছাড়া কেউ নেতৃত্ব পায় না, কোন কিছুই ঘটে না। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন, আবার যাকে খুশী রাজ্যহীন করেন। তিনি মানুষকে বলেছেন দলভূক্ত থাকতে এবং সৎ কাজের আদেশ দিতে ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে। যার এ ধরণের কোন দল নেই, সে মহান আল্লাহর আদেশের বরখেলাপকারী। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা ও পথনির্দেশক হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সকল মানুষের জন্য সুন্দর একটি জীবনাদর্শ দিয়ে গেছেন, যিনি ভঙ্গুর ও পিছিয়ে পড়া একটি সমাজকে পরিণত করেছিলেন উন্নত সমাজের একটি মডেলে। তিনি রাজনীতি করেছেন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অপকর্ম দুরীকরণে কাজ করেছেন। সৎ রাজনীতি না করে মহানবী (সাঃ)- এর নামে কানাকাটি করলে কাজ হবে না।
সকল দেশের সকল ধর্মের সকল সময়ের সকল দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, ধর্মগুরু এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাদের হাত দিয়ে মানব সভ্যতা এগিয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিত আমাদের মহান বীরেরা স্থাপন করেছেন দেশপ্রেমের অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত, যারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে গেছেন।
শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমানসহ সকল মহান নেতাদের হাত দিয়ে আমরা পেয়েছি আজকের এই প্রিয় বাংলাদেশকে, যারা রাজনীতি করেছেন দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে, যারা মানুষ ঠকানোর, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের, নিজেকে ফুলে ফেঁপে বড় করার রাজনীতি করেননি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমূখদের হাতে আমাদের এই প্রিয় দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছে।
বর্তমান প্রজন্মের জন্ম গ্রহন করেই পরিচিত হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্নীতিগ্রস্থ এক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে যেখানে অধিকাংশরাই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ভুলে যায় তার অতীতকে। ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজস্ব দায়িত্ব পালনে অসততা ইত্যাদি অধিকাংশ রাজনীতিক ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাধারণ প্রবনতায় পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ রাজনীতিকের দৃশ্যমান আয়ের উৎসের সাথে সম্পদের ব্যাপক ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। মন্ত্রী, এমপি ও নেতা মানেই বলা যায় দেশে-বিদেশে কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ আর ক্ষমতার ব্যাপক দাম্ভিকতা। আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সেবাখাতসমুহ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দি পরেও উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশ অতিমাত্রায় বিদেশ নির্ভর। মেধার পরিবর্তে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার পুরষ্কার এদেশে উন্নত জাতিগঠনের অন্যতম একটি অন্তরায়। রাজনৈতিক সহিংসতা সর্বক্ষেত্রে দেশের মাথা নত করে দেয়।
আইন হচ্ছে ধর্মীয় বিধানের প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোন আইন ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য অনন্য উদাহরণ এই দেশে লালিত-পালিত কোন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হতে হবে। এই বাংলাদেশ সবার- মুসলমানের, হিন্দুর, বৌদ্ধের, খৃষ্টানের। তাই দেশ গঠনে থাকতে হবে সবার অংশীদারিত্ব।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোনটা গঠিত হয়েছে পরাধীনতার যুগে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বা প্রয়োজনে, কোনটা গঠিত হয়েছে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে। পাশাপাশি কিছু দল গঠিত হয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে, আবার কোন কোনটা গড়ে উঠেছে পাশ্চাত্যের ধার করা নাস্তিক্যবাদী মতাদর্শে। দেশ এখন স্বাধীন। এখন আর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। এখন দরকার গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনার। সুশাসনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার এখনই সময়। তার জন্য দরকার সৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৎ হলে প্রশাসন সৎ হতে বাধ্য। সেই সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সৎ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। প্রত্যেককেই নিজস্ব অবস্থান থেকে সততার সাথে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে, দেশের স্বার্থকে সবার ওপরে বিবেচনা করতে। সর্বাগ্রে সবাইকে জাগরিত করতে হবে দেশাত্ববোধকে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের তূলনায় অনেক এগিয়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এই সুন্দর বাংলাদেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জনসম্পদ যা দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই সম্ভাবনার বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সুন্দর একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে হবে যেখানে কেউ শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবে না, বরং বিদেশীরা লাইন ধরবে বাংলাদেশে এসে শিক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহনের জন্য। দেশের বিপুল এই মেধাবী জনশক্তি কর্মদক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে এবং প্রযুক্তি ও অবকাঠামোখাতে সারাবিশ্বে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ধরণের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার তা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আজই রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে হবে। নিজস্ব চিন্তা, চেতনা, সৃজনশীলতা ও মতাদর্শ দমিয়ে রেখে বিনা প্রশ্নে বাপ-দাদাদের রাজনীতি করা এক ধরণের জাহেলিয়াত, যা আরব পৌত্তলিকদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কলুষিত, পচা দূর্গন্ধময় রাজনীতি পরিত্যাগ করে নতুনের আলোকবর্তিকা হতে হবে। সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অপকর্মে অবলা পশুর মতো নীরব থাকা অথবা সেই অপকর্মের পক্ষে যুক্তি খোঁজা এক ধরণের পশুত্ব। কেননা পশুদের কোন বিবেক নেই, তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা ভোগ নয়, রাজনীতি মানে নিজেকে বিকশিত করা, আলোকিত করা, জ্ঞানে-গুণে নিজেকে সমৃদ্ধ করা, নিজের ভেতরকার মানবিক মূল্যবোধকে জাগরিত করা, নিজেকে দেশের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত করা, তুলে ধরা।
মোঃ ইয়ারুল ইসলাম
মহাসচিব, বাংলাদেশ কংগ্রেস