আবুজার গিফারী
আজ সারাবিশ্বে বড় আতংকের নাম করোনা ভাইরাস। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে দেশের সংসদ পর্যন্ত একই আলোচনা সবার মুখে ঘুরেফিরে।সকলেরই একটাই চাওয়া কিভাবে এখান থেকে আমরা পরিত্রান পেতে পারি। আজ বিশ্ব থরথর করে কাঁপছে এ মহামারি ভাইরাসের প্রকোপের ফলে।শিশু থেকে কিশোর,যুবক,বৃদ্ধ সবার চোখে মুখে একটি আতংকের নাম COVID-19। সব দেশই তারা তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে মরণব্যাধিটাকে প্রতিহত করতে কিন্তু এ ভাইরাসটির কাছে সব দেশই যেন আত্মসমার্পন করেছে।ইতালির প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিছে,”পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে,একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে”।
চীন থেকে শুরু হয়ে ভাইরাসটি পর্যায়ক্রমে ইতালি, স্পেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ইরানসহ অনেক দেশে আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ভাইরাসটি। বড় পরিতাপের বিষয় এই যে, কোন দেশই এখনো পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রতিষেধক তৈরী করতে পারে নি এ ভাইরাসটি ধ্বংস করতে। মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ছাড়িয়ে ও আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছাড়িয়ে। ইতালির লোকজন ভাইরাসটাকে অনেকটা ছোট করে দেখার কারণে আজ তাদের ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে।
তারা এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় যেটা সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকেই আন্দাজ করা যায়।চীন খানিকটা কাটিয়ে উঠলেও এখনো পুরোপুরি স্থীর হতে পারে নি, সৌদি আরবের অনেক মসজিদগুলোতে নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এমনকি মুসলমানদের উমরা পালনও স্থগিত রাখা হয়েছে। যে শহরগুলোর রাস্তাতে উপচেপড়া ভিড় থাকতো সে শহরগুলা আজ যেন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। রাস্তা, শপিংমল, ট্যুরিস্ট প্লেসসহ সবজায়গা এখন জনশূন্য। যেটা বিশ্বের শ্রমবাজারে ইতিমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিতেও খানিকটা ধস নামার সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এবার আসি আমার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে, প্রথমেই বলে রাখি এ দেশে এখনো পর্যন্ত ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করে নি তবে ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার দারপ্রান্তে। এবার আসি পরের কথাই, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৪, আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে ও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে সহস্রাধিক। ইতিমধ্যে অনেকটা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে ভাইরাসটি প্রতিহত করতে, এমনকি স্কুল, কলেজসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও যদি আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি আমরা আমাদের জায়গা থেকে করোনাকে মোকাবেলা করতে কতখানি প্রস্তুত তাহলে নিশ্চয় উত্তর হবে শূন্য। কেননা যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালী, কানাডার মতো উন্নতশীল দেশ ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষেধক তৈরী করতে সে তুলনায় আমরা অনেকটাই ক্ষীণ।
এটা বলে আমি আমার দেশকে ছোট করছি না বরং সত্য কে মেনে নিচ্ছি।সব দেশের চিকিৎসকরা গবেষণা করে ভাইরাসটি প্রতিহত করতে একটিমাত্র প্রতিষেধক পেয়েছে, আর সেটা হলো জনসচেতনতা। সুতরাং জনসচেতনতাই হলো ভাইরাসটির বড় প্রতিষেধক। এবার আসি আমাদের দেশের কিছু অসাধুব্যবসায়ী প্রসঙ্গে, কিছুদিন আগে পিয়াজ নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছিলো আমার দেশের কিছু কুচক্রীমহল এমনকি লবন নিয়েও কিছুটা কৃত্রিম সংকট তৈরী করার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পরিশেষে সফল হয় নি। তদ্রুপভাবে আমাদের দেশে এ ভাইরাসটিকে ঘিরে জনগনের মাঝে আতংক বিরাজ করাই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা অর্থ হাতানোর পায়তারাই নেমেছে।
তারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। হ্যান্ডওয়াশ ও মাস্কের দাম পিচ প্রতি ২০-৩০ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু তারা একটিবারের জন্যও ভাবে না আমার দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলা অর্থ পাবে কোথায়? আমাদের দেশতো উন্নতশীল নয় যে,সরকার আমাদেরকে বিনামূল্যে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করবে। গতদিন এক দোকানে হ্যান্ডওয়াশ কিনতে গেছি, তারা হ্যান্ডওয়াশের মূল্য চাই ১২০ টাকা কিন্তু হ্যান্ডওয়াশের গায়ে মূল্য দেয়া আছে ৯৫ টাকা।
দোকানদারকে যখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন,২০০৯ এর কথা বলি অর্থ্যাৎ এরুপ মূল্য নিলে কর্তৃপক্ষ আপনাকে জরিমানা করবে এ কথা বলি,তখন দোকানদার এমনভাব দেখালো যেন সে আমার কথা শুনছেই না। বঙ্গবন্ধু কি আমাদেরকে এমন দেশ উপহার দিতে চেয়েছিল যেখানে কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ এ রীতি বিদ্যমান থাকবে।আর এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের SDG বাস্তবায়ন আগামীতে অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যাই হোক, সরকারকে এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে এমনটা করতে সাহস না পাই।
এবার আসি প্রতিষেধক নিয়ে,যেহেতু এ মরণব্যাধি ভাইরাসের বড় প্রতিষেধক হলো জনসচেতনতা সেহেতু আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, যেমন অযথা চায়ের দোকানে বা বাজারে সময় না কাটানো, বাজার থেকে বাড়িতে এসেই সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলা, গরম পানি বা চা পান করা ও শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া এবং হাঁচি দেয়ার সময় টিস্যু বা রোমাল ব্যবহার করা ও বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা।
সর্বোপরি, আমরা আমাদের জন্য হলেও সচেতন হয়ে এ ভাইরাসটিকে প্রতিহত করি। যদি আমরা সবাই এরুপ সচেতন হয়ে এ ভাইরাসটিকে প্রতিহত করতে পারি তাহলে হয়তোবা ইতালি, চীন, স্পেনের মতো আমাদের দেশকে মৃত্যুর মিছিল গুনতে হবেনা। আর এরুপ জনসচেতনতাই হোক করোনা মোকাবেলার প্রতিপাদ্য বিষয়।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, আবুজার গিফারী, আইন বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।