নূরুন্নবী সবুজ
আপনি তিন বার তালাক বললে আপনার স্ত্রীকে তালাক দেয়া হবে । মুসলিমদের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনে আপনাকে তালাক দিতে হলে বিশেষ কিছু বিধি বিধান মানতেই হবে । আপনি যদি এই বিধি বিধান গুলো না মানেন তাহলে আপনার তালাক যেমন বৈধ হবে না তেমনি পরবরর্তীতে অনেক আইনী ঝামেলায় পড়তে পারেন । আর তাই এসব ঝামেলা এড়িয়ে আমরা কিভাবে আইনী প্রকিয়ায় তালাক দিবো সে সমন্ধে জানবো।
ধর্মের বিধান মতে তালাক দেবার আগে বা পরে আপনাকে স্থানীয় কাজী বা আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তারপর আপনাকে ৫০০ টাকা মূল্যের একটি স্ট্যাম্পে তালাকের হলফনামা তৈরী করতে হবে। হলফনামা অবশ্যই সকল আইনী প্রকিয়া অনুসরণ করে করতে হবে বা নোটারি করে নিতে হবে।
হলফনামা তৈরীর কাজ সমাপ্ত করার পর তালাকের দুইটি নোটিশ তৈরী করে একটি স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা বরাবর এবং অপরটি স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার চেয়ারম্যানের বরাবর পাঠাতে হবে। আপনাকে চিঠি অবশ্যই রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে প্রেরণ করতে হবে। চিঠি পাঠানের ৩০ দিনের মাঝে আপনার স্ত্রীর এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান একটি আপোষ মিমাংশার জন্য আলোচনা ব্যবস্থা করবেন। আপোষ মিমাংসা হলে অনেক ভালো না হলেও সমস্যা নাই।
একটি বিবাহ যেহেতু সারা জীবনের বন্ধন মনে করা হয় এবং তালাকের মাধ্যমে শুধু দুই জন ব্যক্তির সম্পর্কই নয় অনেকের সম্পর্কের মাঝে এর খারাপ প্রভাব পড়ে তাই স্থানীয় মিমাংসার মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় সামান্য সমস্যার কারনে যেন সে সম্পর্কের কোন ভাঙ্গন না ধরে। এখানে সমাধানের কোন পথ আছে কিনা তা বের করার চেষ্টা করা হয়। মিমাংসায় কোন আপোষ না হলে,তালাকের দিকে যাবে এই প্রকিয়া।
আর হ্যা, স্ত্রী অনেক ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ গ্রহণ করে না । স্ত্রী তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলেও তালাক বা তালাকের নোটিশ বৈধ হবে। আর মূলত এজন্যই রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে।
আলোচনাও যখন কাজে আসে না এবং তালাকের নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মাঝেও আপনাদের ভেতর তালাক প্রত্যাহার করার কোন সিদ্ধান্ত আসে না তখন আপনাকে কাজী অফিসে গিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে ।
আপনি যদি তালাক রেজিস্ট্রি করে না নেন তাহলে তালাক হয়নি বলে ধরে নেয়া হবে। আর স্ত্রীর গর্ভে যদি সন্তান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা সময় বা যত দিন সন্তান প্রসব না হবে তত দিন তালাক স্থগিত থাকেবে। এমনটি করা হয়েছে গর্ভের সন্তানের বৈধতা বা পিতার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য।
৯০ দিন গনণা করা হয় যে তারিখে নোটিশ পাঠান সে দিন থেকে। আপনি কোন অবস্থাতেই তালাকের ক্ষেত্রে দেনমোহর ছাড়া তালাক দিতে পারবেন না ।
আপনাকে অবশ্যই তালাকের ক্ষেত্রে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তালাকের হলফনামা তৈরী বা নোটিশ পাঠানো অপর দিকে তালাক রেজিস্ট্রি করা কোনটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় ।
আপনি আইনের বিধান মেনে তালাক দিন এবং পরবর্তী আইনী ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকুন। পরবর্তী পর্বে স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিবে সেটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট ।
mdnurunnobiislam379@gmail.com