তাইমুম আলী আহাদ
আইন বহির্ভূত ভাবে ও শিশু আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে শিশুদের দন্ড দেয়া, তুচ্ছ কারণে ষাটোর্ধ্ব মুরব্বির কান ধরে উঠবস করানো ও তার ভিডিও ধারন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্বেছাচারীতার মাধ্যমে আইনজীবী গ্রেপ্তার ও পরে তাদেরই উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত দন্ড বাতিল এবং দগদগে স্মৃতি হিসেবে কুড়িগ্রাম কান্ড সহ একের পর এক বহুবিধ ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন তারা। ঘটনাগুলো বেশিদিন আগের নয়। মাত্র ২ দিন আগে নিজেও কিছু ঘটনার সাক্ষী হলাম। ঘটনা বিশ্লেষণেই বোঝা যাবে।
ঘটনা ১. গতকাল জয়পুরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া আক্তার জয়পুরহাট সার্কিট হাউজ এলাকায় ৫-৭ জন শিশু যাদের কিনা গড় বয়স হবে ১৪ বছরের মত (শিশু আইন অনুযায়ী শিশু)তারা প্রত্যেকেই মাস্ক পরিহিত ছিলো, তাদেরকে ধমক দিয়ে সাশিয়প জেলের ভয় দেখাচ্ছেন বলতেছেন তোদের সবাইকে জেলে দেব তখন কিভাবে বের হবি? ঘটনা চলমান অবস্থায় সেখান থেকে চলে আসলাম পরে সেখানে কি হয়েছে তা আর জানা হয় নি।
ঘটনা ২ আজকে মসজিদ মার্কেট এলাকায় ১ কিশোর কে মাস্কবিহীন অবস্থায় পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ধরে আর্মির হাতে সপোর্দ করলেন এবং লাঠি দিয়ে ছেলেটাকে পেটানো হলো!
প্রশ্ন হলো পাবলিক সার্ভেন্ট বা জনগণের সেবক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রশাসনে আসীন হবার পর সীমিত সময়ের জন্য সীমিত পরিসরে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পাবার পরে যখন সেই জনগণকেই দাস মনে করেন এবং নিজেকে প্রভু মনে করেন, নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখান এবং আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে আইনের অপপ্রয়োগ করেন, তখন একজন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ আর অবৈধ কাজের মধ্যে সীমারেখা টানা কঠিন হয়ে যায়। যদি তিনি আইন না মানেন এবং না বুঝেন, তখন প্রকারান্তরে তিনি মোবাইল কোর্ট নামক বিষয়টিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেললেন। অথচ উক্ত কার্যক্রম যদি আইনের জ্ঞানসম্পন্ন একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হতো, তবে আইনের শাসন ও সমুন্নত থাকতো এবং ন্যায়বিচার ও দ্রুততার সাথে নিশ্চিত হতো।
ইতোমধ্যেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এক রায়ে নির্বাহীদের দ্বারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অবৈধ ঘোষনা করেছেন এবং উক্ত কার্যক্রম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালনের নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে সরকার উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করলে তা বর্তমানে আপীল বিভাবে বিচারাধীন রয়েছে। আশা করা যায় আপীল বিভাগ উক্ত আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করে নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট নামক শব্দের অবসান করে আইনের শাসন নিশ্চিতকল্পে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা উক্ত ব্যবস্থা পরিচালনার হাইকোর্ট এর রায় বহাল রাখবেন।
দিন শেষে সব কিছুই রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার উপর আটকে যায়! সরকারের স্বার্থ যে কোনখানে তা স্পষ্ট মাজদা’র হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন করতে সরকার এক দশক লাগিয়ে ছিলো। সেই বিচারবিভাগ পৃথককরণ ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আরো ২০ বছর লাগলে লাগুক, হাল ছাড়লেই তা সোনার পাথর বাটি!
লেখকঃ তাইমুম আলীআহাদ শিক্ষার্থী, (তৃতীয় বর্ষ) আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ই-মেইলঃ taimumtm789@gmail.com