সব
facebook apsnews24.com
ধর্ষণ, জঘন্য অপরাধের বিচার ও শাস্তি - APSNews24.Com

ধর্ষণ, জঘন্য অপরাধের বিচার ও শাস্তি

ধর্ষণ, জঘন্য অপরাধের বিচার ও শাস্তি

সাজিদ মাহমুদ ভুঁইয়া

পত্রিকা খুললেই প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের সংবাদ দেখা যায়। শুধুমাত্র গত জুন মাসেই ১০১ জন নারী ও শিশু ধর্ষণ সহ মোট ৩০৮ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে । (সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক; ০২ জুলাই, ২০২০) যা সত্যি উদ্বেগজনক সমগ্র জাতির জন্য এত এত ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে সে তুলনায় বিচার শেষে সাজা পাচ্ছে কতজন? সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে জাতির সামনে

তবে প্রকাশিত সংবাদের তুলনায় বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিআইনের ৩৭৫ ধারা অনুসারে ধর্ষণ হবার জন্য টি উপাদান থাকা জরুরি

উপাদান সমূহঃ

১। কোন মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

২। কোন মেয়ের অনুমতি ছাড়া

৩। মৃত্যুভয় বা গুরুতর আঘাত দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সম্মতি নিয়ে।

৪। যখন ছেলেটি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির সম্মতি আদায় করে এবং ছেলেটি জানে ভবিষ্যতে সে মেয়েটিকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করবে না।

৫। যে ক্ষেত্রে সম্মতি নিয়ে বা সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে , যে ক্ষেত্রে ভিক্টিমের বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে হয়।

অর্থাৎ দণ্ডবিধি“র এই আইন অনুসারে কোন পুরুষ যদি কোন মেয়ে বা স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া বা মৃত্যুভয়, আঘাতের ভয় বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মতি আদায় করে যদি শারীরিক সম্পর্ক করে  তবে সেটাও ধর্ষণের আওতায় পড়বে আবার এই আইনের নং উপাদানকে ব্যাখ্যা করার পর কোন ব্যক্তি যদি তার বিবাহিত স্ত্রী সাথেও এই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলে সেটাও ধর্ষণ বলে গণ্য হবে তবে শর্ত থাকে যে, এই ক্ষেত্রে তার স্ত্রী বয়স ১৪ বছরের কম হতে হবে বয়স যদি ১৪ বছরের বেশি হয় সেটা আবার ধর্ষণ হবে না

তবে এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ধর্ষণ অপরাধের জন্য আবশ্যকীয় যৌনসঙ্গমের জন্য যৌনাঙ্গ প্রবেশ যথেষ্ট হবে

আবারনারী শিশু নির্যাতন দমন আইনএর এর উপধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “যদি কোন পুরুষ ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ব্যতিরেখে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, প্রতারনামুলক ভাবে বা অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সম্মতি নিয়ে বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করে তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে

এই আইনের ব্যাখ্যাতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে ধর্ষণ হতে হলে অবশ্যই যৌন সঙ্গম হতে হবে অর্থাৎ যৌন সঙ্গম ছাড়া কোন ধর্ষণ হয়েছে বলা যাবে না

প্রেক্ষাপট নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলা আসে চেম্বারে মামলার এজাহার অনুযায়ী ভিক্টিমের বর্ণনা ছিল এরকমমফিজ (২১) (ছদ্দনাম) আমাকে নিয়ে রাস্তার পাশের একটি ক্ষেতে নিয়ে যায় এবং তার যৌনাঙ্গ আমার (ভিক্টিম০৭) প্যান্টের উপর দিয়ে ঘষাঘষি করতে থাকে সেই সময়ে রাস্তার লোক দেখলে আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়

এই ঘটনার পরে মামলার বাদী থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু করেন।

প্রেক্ষাপট একবার এগারো (১১) বছরের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে বছরের এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এবং এই অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে

অথচ দণ্ডবিধি আইনের ৮২ ধারা অনুসারে বছরের নিচে কোন শিশু অপরাধ সংগঠিত করলে এই আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা যাবে না অর্থাৎ এই ধারার অধীন বছরের কম বয়সী শিশুকে আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে আবার ৮৩ নং ধারা তে বলা হয়েছে বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুর এমন কোন কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না যে ক্ষেত্রে শিশুর সংশ্লিষ্ট কাজের প্রকৃতি ফলাফল বিচার করার মত জ্ঞান ছিল না বা পর্যাপ্ত বুদ্ধির পরিপক্কতা লাভ করেনি

প্রেক্ষাপট এর ঘটনা একটি বিচার্য বিষয় আদালত অভিযুক্ত কে পরিক্ষা করে দেখবে ঘটনার সময় তার কাজের প্রকৃতি ফলাফল বিচার করার মত সঠিক জ্ঞান ছিল কি না? যদি না থাকে তাহলে আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন এই ব্যাপারে।

তাহলে যে সব ঘটনাগুলো মিডিয়াতে প্রকাশ হয় সেগুলো কি ভিত্তিহীন? উত্তর না, কোনটাই ভিত্তিহীন না তবে অনেক সময় আইনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে এ ধরনের ঘটনাকে ধর্ষণ ধর্ষণ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা। শেষ পর্যন্ত যখন বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় বিজ্ঞ আইনজীবীর জেরাতে সাক্ষী কর্তৃক প্রদত্ত সাক্ষ্যর সাথে এজাহার বা ১৬১ ধারার জবানবন্দী এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ধারার সাথে অসামঞ্জস্য থাকায় অভিযুক্ত মামলা থেকে খালাস পায় এবং ভিক্টিম ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। শুধুমাত্র অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনা যা ভুল ধারায় মামলা করতে বাধ্য করে যার পরিপ্রেক্ষিতে শতসহস্র বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

যারা এ ধরনের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন তাদের প্রতি অনুরোধ প্রতিটি সংবাদ প্রকাশের পূর্বে সেই সম্পর্কে ভালো করে জেনে তারপর সংবাদ প্রকাশ করুন। কারন আপনাদের অসতর্কতার জন্য একটি পরিবারকে সামাজিক ও মানসিক ভাবে হেয় পতিপন্ন হতে হয়। বিচার শেষে অভিযুক্ত যখন নিরাপরাধ হিসেবে প্রমানিত হয় তখনও সমাজ তাকে পূর্বের মত আর গ্রহণ করতে চায় না। তাছাড়া একটি অসতর্কতামুলক রিপোর্ট ভিক্টিমকে তার ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

আইন এমন একটি বিষয় যেখানে দাড়ি কমা সহ প্রতিটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র শব্দের পার্থক্য হবার কারনে মামলার ধারা এমন কি বিচারিক প্রক্রিয়া পরিবর্তন হতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের পূর্বে একজন ভালো আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। এতে যেমন ভিক্টিমের জন্য ন্যায়বিচার পেতে সুবিধা হবে অপরদিকে বিচারিক প্রক্রিয়াকেও তরান্বিত করবে।

লেখকঃ   সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া
শিক্ষানবিশ আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্ট
ইমেইলshajidmahmud@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj