মূলতঃ রাজনীতির প্রকৃত প্রতিশব্দ হলো জননীতি। রাজনীতির মূল প্রেরণা আসলে জনকল্যাণ। জনগণের উদ্দেশ্য ও ইচ্ছাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড। যে রাজনৈতিক দল যত জনকল্যাণমুখী সে রাজনৈতিক দল তত জনপ্রিয়, তত শক্তিশালী। প্রত্যকটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয় কিছু স্বতন্ত্র চিন্তা-চেতনার ব্যক্তিবর্গের দ্বারা। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো যখন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, কিংবা রাজনৈতিক দলগুলি যখন আপামর জনতার শোষণযন্ত্রে পরিণত হয়, তখনই মূলত নতুন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি এবং বিস্তারলাভ শুরু হয়।
রাষ্ট্রজীবনে অনেক রাজনৈতিক দলেরই জন্ম হয়। কিছু কিছু টিকে থাকে মানুষের হৃদয়ে, আবার কিছু কিছু বিলীন হয়ে যায় কালের গর্ভে। জন্ম নিয়ে টিকে থাকা, সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা, সকল ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে চলা ততটা সহজ নয় একটি রাজনৈতিক দলের জন্য। কেননা, রাজনীতির পথ কখনই সোজা নয়। এটির গতিপথ নদীর গতিপথের চেয়েও বক্র ও জটিল। এখানে রয়েছে যুদ্ধ, শান্তি, ন্যায়-অন্যায়, বুদ্ধি, শক্তি-সাহস, অনিশ্চয়তা, সফলতা-ব্যর্থতা সবিকিছুর জটিল সমন্বয় ও সমীকরণ। রাজনীতিতে থাকে নিজ দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা, থাকে বিপক্ষ দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা। বিপক্ষ দলের প্রতিযোগীর চেয়ে নিজ দলের প্রতিযোগিরা আরও বেশি ভয়ানক।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অনেক শক্তিশালী রাজনৈতিক দল শত্রুপক্ষ নয়, নিজের দলের নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বের কারণে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্বপক্ষ ও বিপক্ষ শক্তিকে সমন্বয় করে, জনগণের আস্থা অর্জন করে একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অপরিসীম গর্ব ও সম্মানের বিষয় যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনেক বার দেখিয়েছে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে। আজ এই দলটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
১৯৪৯ সালের এই দিনে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় দলটির। শুরুতে সভাপতি ছিলেন জনাব মাওলানা ভাষানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জনাব শামসুল হক। তার পর থেকে অনেক নেতৃত্ব এসেছেন দলটিকে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর মৌলিক চাহিদা পূরণে সকল সময় হয়েছেন ব্রতী। তারই সুবাদে আজ দলটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের মধ্যে একটি এবং বর্তমানে দলটি সরকার গঠণের মাধ্যমে দেশের সকল মানুষের জন্য একটানা দীর্ঘদিন কাজ করার বিরল গৌরব অর্জন করেছে।
৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭১ সকল সময়েই দলটির অবদান অনস্বীকার্য এবং সকল আন্দোলনেই দলটি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ফলে জনতার হৃদয়ে দলটির একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে আজ অবধি। আবার, অনেক দলই রয়েছে যারা মানুষের ভালবাসা ও সমর্থনের অভাবে হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। যে সকল দলের মূল নেতৃত্ব নিজ স্বার্থ বেশি দেখেছেন, পদ আর স্বার্থ নিয়ে যারা বেশি টানাটানি করেছেন তারাই হারিয়ে গেছেন কালের গর্ভে। একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকা এবং দেশেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভাল নেতৃত্বের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। নেতৃবৃন্দের কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করেই একটি দল সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিংবা পিছিয়ে পড়ে, অর্জন করে মানুষের ভালবাসা অথবা ঘৃণা।
সাধারণ সম্পাদক হিসেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেন জনাব শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জনাব তাজ উদ্দিন আহমেদ, জনাব জিল্লুর রহমান, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, জনাব সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জনাব আব্দুল জলিল, জনাব সৈয়দ আশারাফুল ইসলাম এবং জনাব ওবায়দুল কাদের। সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন জনাব মাওলানা ভাসানী, জনাব মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, জনাব শেখ মুজিবুর রহমান, জনাব এ এইচ এম কামারুজ্জামান, জনাব জোহরা তাজউদ্দিন, জনাব আব্দুল মালেক এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনপ্রিয় এই দলটিকে আগামী দিনেও ভালভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দক্ষ ও জনপ্রিয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি তৃণমূলেও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসা দরকার। আজ থেকে ৭১ বছর আগে পৃথিবী যেমন ছিল, আজ ঠিক তেমনটি নেই। সময়ের বিবর্তনে আমরা সকলেই পরিবর্তিত হচ্ছি। আরও একধাপ উন্নত হওয়ার চেষ্টা করছি সকলেই। দলটির এই ঐতিহাসিক দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ দেশের প্রধান দলগুলি দেশের সকল জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে এবং দলের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে বিত্ত-বৈভবের উপর গুরুত্ব কমিয়ে আদর্শিক, জনপ্রিয়, দূরদর্শী ও জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব করুক- এটাই হবে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা।
–রায়হান কাওসার, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, Email: raihankawsardu@gmail.com