সব
facebook apsnews24.com
দুর্নীতি রুখতে যা করনীয় - APSNews24.Com

দুর্নীতি রুখতে যা করনীয়

দুর্নীতি রুখতে যা করনীয়

বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না করে যে দুর্নীতির প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় তা আমরা সবাই স্বীকার করবো আবার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দ্রুত হবার সম্ভাবনাও নাই। এমন অবস্থায় তাহলে কি দুর্নীতির লাগাম ধরা যাবে না? আমরা দুদক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর দায় দিয়ে নিজের মনকে হালকা করার চেষ্টা করি যা আমাদের দূর্নীতি বন্ধ করার যে কার্যকরী উপায় সে উপায় বের করার সুযোগ থেকে দূরে রাখে।সাপের বিষ দিয়ে সাপের বিষ ধ্বংস করতে হয়,তেমনি প্রত্যেকটি সমস্যার উৎস বের করতে পারলে আমরা তার দ্রুত সমাধান করা যায়।

পৃথিবীতে থেকে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে। আমরা যদি দুর্নীতির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী না করি এবং পাশাপাশি তার যে বীজ আছে তা ধ্বংস করে দেই তাহলে আমার বিশ্বাস দূর্নীতির শুধু লাগাম ধরাই নয় বরং চিরতরে একে বন্ধ করা সম্ভব।আমরা দুর্নীতি বলতে মূলত বুঝে থাকি সরকারী দপ্তরে সরকারী কর্মচারীর জনগণের সেবক হওয়া সত্ত্বেও বৈধ উপায়ে উপযুক্ত সেবা না দেওয়াকে। আর এ পাশাপাশি আমরা নির্দেশ করে থাকি উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ,ঋণখেলাপি,কর ফাঁকি,অর্থ পাচার,বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টাকা নয় ছয় ইত্যাদি।

আবার দুর্নীতির বিস্তারিত আলোচনায় আমরা অন্তভূক্ত করতে পারি অতিরিক্ত দ্রব্য মূল্য,খাদ্যে ভেজাল,চিকিৎসা ফাঁদ,শিক্ষা ব্যবসা,ভাড়া নৈরাজ্য কিংবা একটি নিদৃষ্ট শ্রমজীবি বা পেশাজীবি মানুষের যে অর্থের জন্য বা কাজ নিখুত করার জন্য যতটুকু সময় ও শ্রম দেওয়া দরকার তার অনুপস্থিতিকে।এ কাজগুলো স্বাভাবিক নৈতিকতা বিরোধী যা শুধু ব্যাক্তির ক্ষতিই করেনা বরং পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। একজন ছাত্র হিসেবে যখন আমার দ্বায়িত্ব সৃজনশীল পড়াশুনা এবং সৃষ্টিশীল কাজ করা যার জন্য আমার পরিবার এবং পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র ব্যায় করে চলছে তা যদি আমি না করি তাহলে আমার কাজ যে ভাবে যতটুকু সতকর্তায় করা উচিত ছিলো তা না করায় আমিও দুর্নীতিগ্রস্ত।

একজন রিক্সাচালক যখন অসুস্থ মানুষকে বহন করার জন্য বেশী ভাড়া চায় বা একজন শ্রমিক নিজের যতটুকু শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারতো তার চেয়ে কম শ্রম দেয় বা একজন ব্যাক্তি প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও গ্যাস পুড়ায়,এসি চালায়,ভাড়া না দিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করে তখনও সে রাষ্ট্র এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর কাজ করে যা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। আর তাই আমরা দুর্নীতির সজ্ঞায়নে বলতে পারি ‘‘যে কোন কাজ তা সরকারী,বেসরকারী বা ব্যাক্তিগত যাই হোক না কেন যতটুকু মনোযোগ আর গুরুত্বের সাথে যে ভাবে করা করা উচিত ছিলো তা যদি না করা হয় এবং সেটি যদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তাহলে তাই দূর্নীতি’’। দুর্নীতির কারনে সমাজে অর্থ বৈষম্য বাড়ে,কাজের স্বাভাবিক গতি কমে যায়,জনগণের রাষ্ট্রের প্রতি যে কর্তব্য পালন করা উচিত তা পালন করে না,সমাজিক অবক্ষয় ও অপরাধ বেড়ে অনেক ক্ষেত্রে তা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্তের হুমকিও তৈরী করে।

যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা সকলে দেশকে ভালোবাসে এবং দেশের মঙ্গলের জন্য তারা নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়। প্রত্যেক নাগরিক চায় স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ লাভের জন্য নাগরিক দ্বায়িত্বগুলো পালন করতে কিন্তু পরিস্থিতি একজন নাগরিকের দেশের মঙ্গল করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা করতে দেয় না। যাকে ভালোবাসা হয় তার উপর কিছু সময় জন্ম নেয় অভিমান যার কারনে ভালোবাসা থাকলেও কিছু ভালো না লাগার মত কাজ আমরা করি। দেশের প্রতি ভালোবাসা আজ অনেকের অভিমানে পরিণত হয়েছে,সেই অভিমান যদি আমরা ভাঙ্গাতে পারি তাহলে তৈরী হবে এক গভীর দেশপ্রেম যা শুধু দুর্নীতিই নয় বরং অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলোকেও সহজে সমাধান করে দিবে।

একটি বীজ যেমন উপযুক্ত পরিবেশসহ আলো,বাতাশ ও পানি পেলে অঙ্কুরিত হয় তেমনি করে যদি আমরা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করি তাহলে দেখতে পারবো সকলের দেশপ্রেম এবং নাগরিক দ্বায়িত্ব পালন দেশকে দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ দিচ্ছে।

কেন মানুষের দেশের প্রতি অভিমান তৈরী হয়েছে বা কেন মানষ দুর্নীতি করে তার কারন অনুসন্ধানে দুইটি কারন দেখা যায়।এই দুইটি কারন থেকেই মূলত দুর্নীতির উৎপত্তি আর তাই এই দুই সমস্যার সমাধান খুব সহজে নির্মূল করবে দুর্নীতি আমরা পাবো আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ। উৎস দুইটি হলো
১. সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা এবং
২. সামাজিক অনিশ্চয়তা।

সমাজের বিভিন্ন স্থরে আলাদা আলাদা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বসবাস করে সমাজের মানুষ।একজন ব্যাক্তি,একটি পরিবার তার সামাজিক মর্যাদা হারাতে চায় না বরং বাড়াতে চায় থাকতে চায় সমাজের অন্য মানুষের চোখে উঁচু স্তরে।সমাজের উঁচু স্তরে থাকার সহজ ও প্রধান উপায় অর্থের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করার কারনে সমাজের মানুষগণ অর্থ আয়ের প্রতিযোগিতায় নেমে নিজেকে নিজের নৈতিকতার বিরুদ্ধে কাজ করাতে বাধ্য করে বেশীর ভাগ সময়।একজন ব্যাক্তির ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের সমকক্ষ আরেকজনকে করতে চায় না বলে আর একজনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করেনা যাতে করে অন্য জন সফল হতে পারে।সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে একজন মানুষ সহজে উপলব্ধি করে সে যদি তার বর্তমান অবস্থা থেকে পড়ে যায় তাহলে তাকে কেউ টেনে তুলবে না।একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান তার ৫ বছরের দ্বায়িত্ব শেষে কি সামাজিক মর্যাদা নিয়ে থাকবে বা একজন সরকারী কর্মচারী অবসরে চলে গেলে তার জীবন ধারন পদ্ধতি প্রত্যাশিত হবে কিনা তা একজন মানুষকে তার নৈতিকতার বিরুদ্ধে ভাবতে শিখায়।

একজন সরকারী কর্মচারী যে সারাজীবন সততার সাথে চাকুরী করেছে যার বাড়ি গাড়ি নাই তার সামাজিক মর্যাদা একজন দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মচারী যে অনেক টাকা আর গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছে অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে তার চেয়ে কম।গ্রামে যে ব্যাক্তিটি সুদ খায় বা অবৈধ উপায়ে অনেক আয় করে তাকেই সব স্থানীয় সালিশে ডাকা হয় সম্মানের সাথে যেখানে বৈধভাবে আয় করা একজন সৎ শ্রমিক বা কৃষকের অবস্থান থাকে অনেক নিচে।এই যে সামাজিক অবস্থান নির্ণয়ের মাপকাঠি এটিই হচ্ছে সমাজের প্রধান সমস্যা।


১৯৬১ সালে যেখানে মানুষ ৩৭৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা লাভ করতে পারতো সেখানে বর্তমানে ৬০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা লাভ করতে পারে তেমনি করে যদি সম্পদের মালিকানার একটি সীমানা বেধে দেয়া হয় তাহলে সামাজিক অনিরাপত্তা দুর হয়ে যাবে,বৃদ্ধি হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার নিশ্চয়তা দেয়া যাবে মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার বন্ধ করা যাবে দুর্নীতি।

সামাজিক অনিশ্চয়তার বিষয়টি মূলত মানুষের আত্মতৃপ্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত। একজন মানুষ যে গান ভালোবাসে সে যদি গানের পেশার সাথে যুক্ত থাকতে পারে তাহলে তার কর্মে তার একঘেয়েমি আসবে না,পূর্ণ মনযোগ এবং সৃজনশীলতার সাথে সে কাজ করবে,সে নিজেও বিনোদন পাবে এবং অন্যকেও বিনোদন দিবে।এমন করে প্রত্যেকের ভালোলাগার কাজ যদি তাকে সরবরাহ করা যায় তাহলে তা ভালোবাসায় পরিণত হবে যে ভালোবাসার সাথে প্রতারণার চিন্তা মাথায় আসবে না।

গাড়িকে ব্রেক কষে চালালে যেমন শক্তি ক্ষয় হয় কিন্তু গতি পাওয়া যায় না তেমনি মানুষের ভালো লাগার কাজকে করার সুযোগ তৈরী না করে প্রথম থেকেই তাদের মনে বিরক্তি আর একঘেয়েমি তৈরী করে দেয়া হয় যার কারনে যার যা দ্বায়িত্ব তা মন থেকে না করে দায় থেকে করে যার কুফল আমরা আজ হারে হারে বুঝতে পারছি।যে কাজ মন থেকে মেনে নেওয়া হয়নি তাতে মানসিক বিকাশ যেমন ঘটবে না তেমনি মানবিকতা কাজ না করাই স্বাভাবিক যার ফলে অবচেতন ভাবেই সে দুর্নীতির সাথে আপোষ করতে বাধ্য হতে হয়।

অর্থাৎ ভালো লাগার কাজে নিয়োগের মাধ্যমে কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরী করে এবং সম্পদ অর্জনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে অস্বাভাবিক মানসিকতার বিকাশ রোধ করে আমরা খুব সহজে সমাজের স্বাভাবিক অবস্থা তৈরী করতে পারবো বন্ধ করতে পারবো দুর্নীতি।নীতির পরিবর্তন করলে খুব সহজেই দুর্নীতির রোধ করা যাবে।আর তাই কোন প্রতিষ্ঠানের বা ব্যাক্তি বিশেষের দায় না দিয়ে সবার স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ লাভের যে আগ্রহ,দেশের জন্য কাজ করার যে ইচ্ছা তা পূরন করার জন্য বাস্তব ভিত্তিক এই পদক্ষেপগুলো রাষ্ট্রকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।।আমার বিশ্বাস আমরা এর মাধ্যমে দুর্নীতিসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করত পারবো।

লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট mdnurunnobiislsm379@gmail.com

মতামত সম্পূর্নই লেখকের ব্যক্তিগত।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj