ফয়জুল্লাহ ফয়েজ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ থেকে ৫৪ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ও ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, ৫৫ থেকে ৫৮ অনুচ্ছেদে মন্ত্রীসভা ও প্রধানমন্ত্রী বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তবে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব বিষয়ে আলোচনা করতে চাই তা হলো দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় যদি বাংলাদেশের কোন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন তবে কে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন বা কিভাবে চলবে সরকার?
প্রথমে রাষ্ট্রপতি বিষয়ে আলোচনা করছি। সংবিধান অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন, তবে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি কে অভিসংশনের ক্ষমতা সংবিধানের দেয়া হয়েছে, এছাড়া রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা মৃত্যুর কারণে বা যে কারনেই যদি রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয় তবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, এবং সংসদ কর্তৃক পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন এতে সরকারের কোন পরিবর্তন হবে না।
এবার আসি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে, সংবিধানের ৫৬ থেকে ৫৮ অনুচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ, মেয়াদ ও ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কোন প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান সেই অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি তার ইচ্ছামতো মন্ত্রীসভা গঠন করেন।
যদি কোন কারণে পূর্বে সংসদ ভেঙে না যায় তবে ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সেক্ষেত্রে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে কোনো বাঁধা নেই, তাই পাঁচ বছরের বেশি সময়ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
তবে দায়িত্ব পালন রত অবস্থায় যদি কোন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন বা তার সংসদ সদস্য পদ চলে যায় বা মৃত্যুবরণ করেন তবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ বাংলাদেশের সংবিধানে নেই, ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী যদি স্বপদে বহাল না থাকেন তবে মন্ত্রীসভার সকল সদস্যগণ পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে অর্থাৎ সরকার ভেঙে যাবে।
কিন্তু সংসদ সয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে কিনা এব্যাপারে স্পষ্ট কিছু নেই আর সেই সুযোগে রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে এই ক্ষমতা, প্রথাগত ভাবে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ই কথা তবে সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পরে বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুবরণ করেননি ফলে এই বিষয়টির স্বাক্ষী এখনও আমাদের হতে হয়নি।
তবে সহজভাবে বলা যায়। বাংলাদেশের সরকার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নির্ভর। সেহেতু প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পরও সংসদ চালু থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান মন্ত্রীর যেহেতু কোন প্রভিশন নেই, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ছাড়া কোন উপায় নেই সেহেতু নতুন নির্বাচন ই হতে পারে সবচেয়ে সম্ভাব্য পথ।
আবার প্রধানমন্ত্রী যদি অসুস্থতাজনিত কারণে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হন তখন কি হবে?
সেক্ষেত্রে সংবিধান সম্পূর্ন নিশ্চুপ, প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা কারো নেই। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, মৃত্যু বা তার সংসদ সদস্য না থাকা ছাড়া কোন কারনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য থাকতে পারবে না। আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা ও তাই অন্য কারো উপর দেয়া হয়নি। পদ শূন্য হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে যেহেতু কোন নির্বাচন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। সেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হলেই তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষমতা বা সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা মহামান্য রাষ্ট্রপতির রয়েছে।
লেখকঃ ফয়জুল্লাহ ফয়েজ, এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
The writer is solely responsible for his own opinion..