মুহিদুল ইসলাম মাহী
অমানুষগুলো দেখতে আপাদমস্তক মানুষের মতই হয়। অজুহাত ও ক্ষমতার হাত নামক দুটি হাতের সমন্বয়ে তাদের মোট হাতের সংখ্যা চারটি। তাদের এই চতুষ্টয় হাতের কর্মক্ষমতা পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ হতে সর্বোচ্চ স্থান মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বর্হিভূত ছিল করোনা ভাইরাস। সময়ের আবর্তনের সাথে সাথে অভিযোজনিক প্রক্রিয়ায় ভাইরাসটিও রূপ বদল করে।
চরম দারিদ্র্য থেকে শুরু করে উন্নয়নের শিখরে আরোহিত প্রতিটি দেশকেই নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিয়েছে এই মহামারী করোনা। তার বিষাক্ত ছোবল ও প্রলয়ংকারী আক্রমণ হতে রক্ষা পায়নি আবালবৃদ্ধবনিতা।
মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে, বাতাসে লাশের গন্ধ ছড়িয়ে, আলোর গতিতে ভাইরাসটি ছুটে বেড়াচ্ছে দেশ হতে দেশান্তরে।
করোনা ভাইরাস বিল গেটস, জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেটসহ সকল ধনাঢ্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। বিষণ্ণ, অসহায় ও অবসাদগ্রস্থ করেছে বিশ্বনেতাদের। নিম্নবর্গের পশু থেকে শুরু করে উচ্চবর্গীয় সকল গোত্রের প্রাণীর জীবনযাত্রায় নিকোষ কালো অন্ধকারের ছাপ ফেলেছে বিধ্বংসী করোনা।
করোনা সমগ্র বিশ্বকে পরিবর্তনের পথে ধাবিত করলেও নিরস্ত্র, বিবস্ত্র, নির্লজ্জ ও অসহায় হয়ে ধরাশায়ী হয়েছে চোর, বাটপার, দুর্নীতিবাজ, পাতিনেতা, সুদখোর ও ঘুষখোরদের নিকটে। এই বিশেষ গুণধারী ব্যক্তিদের চরিত্রের বিন্দু পরিমাণও করোনাকালে পরিবর্তন হয়নি। এই ক্রান্তিকালে জাতি রেশনের চাল দেখেছে ব্যবসায়ীর গুদামঘরে, ত্রাণের তেল দেখেছে খাটের নিচে ও অসহায়ের ত্রাণের টাকা দেখেছে পাতিনেতাদের পকেটে। আমরা দেখেছি ক্ষুধিতের হাহাকার, ষাটোর্ধ বৃদ্ধের বিবস্ত্রীকরণ, বিবস্ত্রের বুকফাটা আর্তনাদ ও ছাব্বিশ লক্ষ বেকারের নিরব কান্নাস্রোত। আমরা দেখেছি সফেদ লাশের মিছিল, ছুড়ে ফেলা বেওয়ারিশ লাশ যেমনভাবে জারজ নবজাতকে ছুড়ে ফেলা হয়, ডাক্তারদের চিকিৎসাহীন মৃত্যু, পুলিশদের অব্যক্ত যন্ত্রণা, সাধারন মানুষের বর্ণনাতীত ভোগান্তি।
এই অভূতপূর্ব নির্মম পরিস্থিতিতে সবাই ভেবছিল মানুষ তার ভিতরের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে আসবে। কিন্তু ধর্ষকরা আজও ধর্ষণের মাধ্যমে তাদের যৌন লালসা চরিতার্থ করছে, নেশাখোররা নেশার টাকা জমানোর জন্য নিজের স্ত্রীকে অন্যের বিছানায় পাঠাচ্ছে,ধরছে নিভৃত অসহায় পথচারীর গলায় ছুরি। পাতিনেতারা অস্ত্রবাজী, টেন্ডারবাজী ও নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যস্ত। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্য আজও অক্টোপাসের মত সমাজের সবকিছুকে আটকে রেখেছে। কখনো কি মনুষ্যত্ববোধের উদয় হবে না? বাঙালি কি সারাজীবন চোরের জাতি হিসেবে খ্যাত হবে? আর কতকাল!
হাঁপিয়ে উঠি, স্তম্ভিত হই, বিস্ময়ে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকি আকাশপানে। এই বাংলা কি আমরা চেয়েছিলাম? এই বাংলাই কি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা? এই বাংলাই কি জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা?
চলুন নিজেকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি। মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। আবারও একসাথে থাকি, একসাথে বাঁচি, সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকি।
লেখক: মুহিদুল ইসলাম মাহী, গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।