ব্যারিষ্টার নূর মুহম্মদ আজমী
(মুসলিম ও শিখ নিধনের ৪ ঘটনা)
[এক]
সারা ভারত জুড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিমদের প্রতি রাষ্ট্রীয় মদদে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যে ঘৃণা ও প্রতিহিংসা ছড়ানো হচ্ছে তারই কিঞ্চিত বাস্তব রূপ হচ্ছে দিল্লির সাম্প্রতিক সহিংসতা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি প্রাণহানির ঘটনা শোনা গেলেও ধারণা করা হচ্ছে প্রকৃত পরিসংখ্যান আরো অনেক বেশি। আক্রান্ত এলাকায় হিন্দু সাংবাদিকরাও যেতে পারছেনা। প্যান্ট খুলে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিচ্ছে উগ্রবাদী হিন্দুরা।
বিস্তারিতঃhttps://www.kalerkantho.com/online/world/2020/02/25/878853
[দুই]
মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। কাশ্মিরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালায়। ঘরে ঘরে ঢুকে তারা স্বাধীনতাকামীদের (ওদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী) খোঁজ করে। এতে কাশ্মীরের বেসামরিক নাগরিকরাও আক্রান্ত হয়। দেরাদুনে সংঘবদ্ধ ভারতীয়রা কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। হামলার মুখে কোনো রকম একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে পালিয়ে আসেন প্রকৌশল বিদ্যার শিক্ষার্থী জুনায়েদ আইয়ুব রাদার। তিনি বলেন, আমি খুবই আতঙ্কিত। জুনায়েদ বলেন, “বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষ ও দারিদ্র্যে হাজার হাজার বেসামরিক কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন। কিন্তু আপনি কখনও শুনেছেন কী ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কোনো বেসামরিক লোকের হামলা কিংবা ভয় দেখিয়েছেন কাশ্মীরিরা?”
বিস্তারিতঃ https://www.jugantor.com/…/1…/কাশ্মীরে-আতঙ্ক-ঘরে-ঘরে-তল্লাশি
[তিন]
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে সংঘটিত অগ্নিকান্ডকে কেন্দ্র করে ভারতের গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। এ দাঙ্গায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের আক্রমণে অসংখ্য নিরপরাধ মুসলিম প্রাণ হারায়। কোনো ধরণের প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করা হয়, সবরমতী এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনটি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে অযোধ্যা থেকে ফেরার সময় একদল মুসলিম তার ওপর আক্রমণে চালায়, এবং ট্রেনটি জোর করে থামিয়ে একটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে রাজ্য সরকারের একটি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। ২০০৮ সালে সরকারি সে রিপোর্টে বলা হয়, ট্রেনের ভেতরের একটি দুর্ঘটনা থেকেই হয়তো আগুনের সূচনা হয়েছিল। গুজরাটের সে সময়কায় মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং হিন্দু দাঙ্গাকারীদের পরোক্ষভাবে উস্কানি দিয়েছিলেন।
বিস্তারিতঃ
https://en.m.wikipedia.org/wiki/2002_Gujarat_riots
[চার]
১৯৮৪ সালের ৬ জুন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবস্থিত স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে স্বর্ণমন্দিরে শিখদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ অগণিত সাধারণ শিখ জনতা নিহত হয় সেনাবাহিনীর হাতে। আর এরই প্রতিশোধস্বরুপ সে বছরই ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দুই শিখ দেহরক্ষী তাকে গুলি করে হত্যা করে। সাথেসাথেই রাষ্ট্রীয় মদদে সারাদেশে শিখদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী ৩ দিনে একটি সুসংবদ্ধ দাঙ্গার মাধ্যমে সারা ভারতে অসংখ্য নিরপরাধ শিখকে হত্যা করা হয়। শুধু দিল্লিতেই হত্যা করা হয় ২,৭৩৩ শিখকে। কংগ্রেসের কর্মীরা শিখ নিধনে লোহার রড, ছুরি, লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। দাঙ্গার ফলস্বরূপ অগণিত শিখ মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। শিখদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে, চলে গণহারে লুটপাট। এক বিচিত্র বন্যতায় মেতে ওঠে পুরো ভারত!
বিস্তারিতঃ https://roar.media/…/the-anti-sikh-riot-and-sikh-massacre-…/
লেখকঃ ব্যারিষ্টার নূর মুহাম্মদ আজমী, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
ব্যক্তিগত মতামতের জন্য পত্রিকা দায়ী থাকবে না।