বলা হয়ে থাকে প্রেম স্বর্গ থেকে এসেছে। তবে এই প্রেম বা ভালোবাসার সংজ্ঞা এক একজনের কাছে এক এক রকম। কারো কাছে প্রেম মানে আমৃত্যু বন্ধন আবার কারো কাছে নিছক টাইম পাস। যার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার সাথেই সাজনাতলায় জেতে হবে এমন কোন ধরাবাধা নিয়ম বা আইন বাংলাদেশে নেই। পশ্চিমাদের মত আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশন অপেক্ষাকৃত অবাধ মেলামেশা শুরু করেছে। যেখান থেকে নারী পুরুষের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং একপর্যায়ে কোন এক পক্ষের প্রলোভনে উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে শারীরিক সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্কের যখন অবনতি ঘটে তখনই শুরু হয় ব্ল্যাকমেইলিং। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াতে “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ অতঃপর মামলা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই মামলাতে ভিক্টিম কতটুকু ন্যায়বিচার পাই?
বলা হচ্ছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ কিন্তু আমরা কি জানি কখন একটি ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যায় আর কখন বলা যায় না। দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণ হতে হলে নিম্নলিখিত শর্ত সমূহ পুরন করতে হবে।
মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
মেয়ের অনুমতি ছাড়া।
মৃত্যুভয়ে বা আঘাত দেওয়ার কারণে সম্মতি নিয়ে।
তার সম্মতিতে, যখন লোকটি জানতে পারে যে সে তার স্বামী নয়, এবং তার সম্মতি দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি অন্য একজন ব্যক্তি যার সাথে তিনি আছেন বা নিজেকে আইনী বিবাহিত বলে বিশ্বাস করেন।
সম্মতি নিয়ে বা সম্মতি ছাড়া, যখন ভিক্টিমের বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে হয়।
এই ৫টি শর্ত বা উপাদান সমূহ পূরণ করলেই ধর্ষণ হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে ৪ ও ৫ নং উপাদান প্রমানের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। ৪ নং উপাদান নিয়ে ইন্ডিয়াতে বোম্বে হাইকোর্টের একটি ল্যান্ডমার্ক জাজমেন্ট আছে। একটি মামলায় বম্বে হাইকোর্টের গোয়া বেঞ্চ মতামত দেয় গভীর প্রেমের সম্পর্ক থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক সম্পর্কের জেরে কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যাবে না। এই মামলায় বলা হয়েছিলো এক মহিলার সঙ্গে যোগেশের আলাপ হয় এবং ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক দানা বাঁধে। প্রেমিকাকে পরিচয় করানোর জন্য তার বাড়িতে নিয়ে যায় যোগেশ। কিন্তু পরিবারের কেউ বাড়িতে না থাকায় রাতে ঐ বাড়িতেই থেকে যান ঐ তরুণী। দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে তাদের আরও শারীরিক সম্পর্ক হয়। ওই মহিলা নিম্ন বর্ণের হওয়ায় শেষপর্যন্ত বিয়ে করতে রাজি হননি যোগেশ। পড়ে ওই মহিলা যোগেশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযযোগ আনেন এবং বলেন বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেই তিনি শারীরিক সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিলেন।
মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সি ভি ভাদং তথ্যপ্রমাণের উপরে ভিত্তি করে বলেন, ‘শুধুমাত্র পুরুষ সঙ্গীর দেওয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতির বিনিময়েই মহিলা শারীরিক সম্পর্কে সম্মতি দেননি, বরং দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেই রাজি হয়েছিলেন তিনি। এমনকী, এই ঘটনার পরেও দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। ওই ব্যক্তিকে নিত্য প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্যও করতেন মহিলা। তিন থেকে চারবার দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। ফলে, এটা স্পষ্ট যে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে তিনি ওই মহিলার উপর জোর করতেন বা তাঁকে শারীরিকভাবে শোষণ করতেন, এমন দাবি মেনে নেওয়া যায় না।(সূত্র-টাইমস অব ইন্ডিয়া)
সুতরাং কেও যদি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে সেটা এই কেস ল অনুসারে ধর্ষণ হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে না যদি না কেও ভিন্ন কিছু আদালতে প্রমান করা পারে। আবার ৫ নং উপাদান অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি তার বিবাহিত স্ত্রী’র সাথে সম্মতিক্রমে বা সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে যার বয়স চৌদ্দ বছরের কম হয় তবে সেটাও ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।
বর্তমানে এই ধরনের সমস্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করতে যেয়ে ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠছে। শেষপর্যন্ত যখন সম্পর্কের অবনতি হয় এবং মামলা হয়ে কোর্ট পর্যন্ত গড়াই। তবে এধরনের সমস্যা সমাজ থেকে দূর করতে হলে প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
লেখকঃ সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া
শিক্ষানবিশ আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্ট
ইমেইল- shajidmahmud@gmail.com