আল আমিন ইসলাম নাসিম
বৈশ্বিক মহামারী রোগের ভাইরাস করোনা যেনো এখন আর শুধু জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নেই, ক্রমশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে এখন গ্রামাঞ্চলের দিকেও ধাবিত হচ্ছে । গ্রামের দিকে এই করোনা ভাইরাস ধাবিত হলেও তাদের মধ্যে দেখা যায় না কোনো সচেতনা । নানা কুসংস্কার ও অসচেতনতায় তারা যেনো এখনো বিভোর হয়ে দিন পাড় করছে । যার জন্য সবচেয়ে আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের সুশীল সমাজসহ গ্রামের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষেরা ।
গ্রামের অধিকাংশই সাদাসিধে মনের অধিকারী । সাদাসিধে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে । তন্মধ্যে কৃষিকাজ, দিন আনে দিন খায় ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা বেশি । বৈশ্বিক এই মহামারী রোগের জন্য তাদের জীবিকা নির্বাহেও যেনো নানা বাঁধা বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে । ব্যায়ের শতো দিক থাকলেও আয়ের জন্য যেন একটি পন্থাও পাচ্ছে না অনেকে । কষ্টে দিনযাপন করছেন এমন অনেকেরই ।
আবার অনেক সৌখিন একটু বৃত্তশালী গ্রামবাসী, যাদের খাওয়া-পরনের মতো প্রয়োজন মাফিক অর্থ না থাকলেও ঘুড়ি কেনা-বেঁচা কিংবা উড়ানোর মতো মহা আনন্দে উৎসব যেনো লেগেই আছে । কেউ বা আছেন, এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে কাজ নেই, হাতে টাকা আছে, পাকা দেয়াল গাঁথছে, ছাদ ঢালাই দিচ্ছে । কিন্তু তাদের জানা নেই , কবে এই করোনা যাবে ? টাকা গুলো জমিয়ে না রেখে এমনই অপব্যায়ে নিমজ্জিত আছে তারা ।
আবার কেউবা এমনটা মনে করছেন, ছুটি চলছে, লকডাউন চলছে, মোটরসাইকেল কিনি বা বেড়াতে যায় মামাবাড়ি, খালাবাড়ি, অবসরে ঘুরা ঘুরি করা যাবে । কিন্তু তাদের এই কোভিড’১৯ এর প্রতি ধারণা তেমন নেই যার ফলে তাদের মনে হচ্ছে ছুটি দিয়েছে, কদিন পড়ে আবার ঠিক হয়ে যাবে ।
গ্রামের মানুষের সবচেয়ে অসচেতনতার কথা যদি বলা যায় তাহলে দেখা দিবে তা তাদের বাজারে গেলে । এখনো যেনো চায়ের দোকানে, ক্যারামের দোকানে বাজার ভর্তি লোকজনের আড্ডা চলছে । তাদের মনে নেই কোনো ভয়, নেই কোনো চিন্তা-চেতনা । এই খোলা বাজারের জন্যেই হয়তো একসময় পুরো গ্রামবাসীদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে ।
গ্রামাঞ্চলের ফসলাদি : আম্ফানের প্রবল ঝড়ে ও বৃষ্টিতে যেনো ফসলাদি আধ পা পানিতে থই থই করছে । নেই পানি বেরোনোর সুযোগ । একমাত্র প্রবল খরায় হয়তো ফসলাদি ঘরে আনতে পারবে কৃষকেরা । অনেকে আবার ফসল তুলে নিলেও এই সমসাময়িক বৃষ্টির ফলে গবাদিপশুর জন্য খড় বা ফসলাদির অবশিষ্ট অংশ শুকাতে পারছেন না ।
গ্রামের মানুষ অধিকাংশই এখন কর্মহীন হওয়ায় প্রধান পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছে ভ্যানে করে কাঁচামালের ব্যবসা, সবজি চাষ, দোকানদারি করা । এখন যেন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি দোকান এমনি বলতে হয় । তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেকে বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের সাধারণ নিম্নজীবি বা কর্মহীন মানুষগন ।
গ্রামের মানুষের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে করূন অবস্থা হয়েছে যেনো এখন । এমন আতঙ্কে যেনো তারা খুব দীর্ঘ সময়ই পার করেছে জীবনে বৈকি । কিন্তু করোনার চেয়ে বড়ো আতঙ্ক যেনো কিস্তি বা সমিতি ওয়ালারা তৈরি করছে । এ বিষয়ে নানা সংবাদ পত্র কিংবা সরকারের দৃষ্টিগোচর হলেও যেনো আবার এ সমস্যা এখন মাথা নাড়া দিয়েছে । যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা । এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা ।
গ্রামাঞ্চলে আরো একটি অন্যতম সমস্যা হলো শিক্ষার্থীদের সমস্যা । কেননা পিতার এই কর্মহীন অবস্থায় তাদের পক্ষে ডেটা কিনে ক্লাস করা যেনো একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । তাছাড়া নেটওয়ার্ক সমস্যা যেনো অন্যতম গ্রামাঞ্চলের । যার জন্য প্রতিনিয়ত পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের ।
গ্রামের মানুষেরা বর্তমানে খুব কম সংখ্যকই শিক্ষিত । যার ফলে তাদের মধ্যে গুজব যেনো সর্বদাই বিরাজমান । আর এই গুজবের ফলেই তারাই যেনো কোভিড’১৯ এর শিকার হচ্ছে বেশি ।
এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সহায়তা দিলেও যেনো তা পুরোপুরি তাদের ভোগ মেটাতে পারছে না । তাই অনেকেই কাজের আশায় প্রতিনিয়ত বেরিয়ে পড়েছেন এবং কোভিড’১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন ।
সর্বোপরি করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে , আমাদের গ্রামাঞ্চলের দিকেও নজর দিতে হবে । তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করিতে হবে । কেননা দেশ-বিদেশের খাদ্য সামগ্রীর অধিকাংশই তারা যোগান দিয়ে থাকে । তাই গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন, তাদের নিরাপদে রাখুন ।
আল আমিন ইসলাম নাসিম
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
মোবা নং : ০১৭৯৩৩৩০১৪৫
ইমেইল : alaminislamnasim@gmail.com