অধিকাংশের ভাষ্যমতে শারীরিক কিংবা মানসিক ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাকই দায়ী। এটা নিয়ে প্রথমেই নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু নোংরা ঘটনার বর্ননা তুলে ধরছি, পরবর্তীতে বিস্তার আলোচনা করবো।
যখন বোরকা, হিজাব এবং নেকাব আবৃত করে বাস কিংবা রাস্তাঘাটে চলেছি তখন কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষদের থেকে বাজে ইঙ্গিত দেখেছি। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো একবার মায়ের সাথে বাসে আসছিলাম, একজন পুরুষ এমনভাবে দাঁড়ালেন আমি সিটে বসেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। প্রতিবাদ করতেই পুরুষটা বলে উঠলেন বাস ভর্তি মানুষের মধ্যে এমন একটু আধটু হয়। এবং মা ও আমাকে চুপ করতে বললেন। বোরকা, হিজাব এবং নেকাবে আবৃত থেকেও বাবা বয়সী পুরুষের থেকে নোংরা হাতের স্পর্শ পেয়েছি। স্বাভাবিক পোশাকেও যে আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে, সেই একই আচরণ ওয়েস্টার্ন পোশাকেও দেখেছি পুরুষের চোখে।
এবার আসি পরবর্তী আলোচনায়, পুরুষ বলতেই আজকাল আমরা ধর্ষক বুঝি। কারণ অধিকাংশ পুরুষের নোংরা মানসিকতার দরুন নারীরা ভাবেন সব পুরুষই ধর্ষক। তাদের মধ্যে যেসব পুরুষরা সাহসী বিকৃতমনা তারাই শারীরিক ধর্ষণ করে এবং যারা কম সাহসী এরা ইশারা, ইঙ্গিত কিংবা চোখের মাধ্যমে মানসিক ধর্ষণ করে। এবং এদের গন্ডিই অতটুকু। আচ্ছা যে মেয়েটি ধর্ষণ হওয়ার পরে আমরা তার পোশাককে দায়ী করছি সেই মেয়েটি কি তাহলে ধর্ষক ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সামনে পড়েননি? যদি পড়েন তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকার দরুন ধর্ষণ করেননি এবং যার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নেই সেই হচ্ছে ধর্ষক। এখন আলোচনা আসতে পারে ধর্ষণ করার জন্য কোন কারণ লাগে না, যার মস্তিষ্ক বিকৃত তার থেকে নারী, এমনকি মাদ্রাসার একটা ছোট্ট ছেলেও বলাৎকারের স্বীকার হয় তেমনি প্রাণীও।
সব থেকে পরিতাপের বিষয় একটা মেয়ে ধর্ষণ হলেই আমরা তার পোশাককে দায়ী করে আঙ্গুল তুলি। যদি পোশাকই দায়ী হবে তাহলে সাত বছরের শিশু, বৃদ্ধা, পর্দাবৃত নারী কিংবা কোন মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলী ধর্ষণে ধর্ষিতার পোশাক দায়ী নয়, কারণ তাদের পোশাক যৌন উত্তেজনা ছড়ায়নি। তাহলে দায়ী কে?
নির্জনে হেঁটে যাওয়া হাড্ডিসার কঙ্কাল মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলীর শতছিন্ন নোংরা পোশাক, রাস্তার ধারে খেলতে যাওয়া পাঁচ বছরের শিশুটির ফ্রক কিংবা শরীর ভেঙে কুঁচকে যাওয়া বৃদ্ধার পোশাক দেখে ধর্ষক প্রলুব্ধ হয় না। তাহলে ধর্ষিতার পোশাক দায়ী নয়, তাহলে দায়ী কি পুরুষের মানসিকতা?
সবথেকে কষ্টের বিষয় কেউ কেউ ধর্মের সাথে সংযুক্ত করে ধর্ষকের পক্ষ নেন। এবং বলেন ইসলামে নারীদের পর্দার বিধান আছে তারা সেটি মেনে চলে না এজন্যই ধর্ষণ হয়। ইসলামে মুমিন নারী এবং মুমিন পুরুষ উভয়ের দৃষ্টি অবনত সম্পর্কে বলা আছে, কিন্তু ইসলামের দোহাই দিয়ে আমরা একতরফা নারীদেরকে জোরপূর্বক পর্দার বিধান মেনে চলার কথা বলছি, অথচ পুরুষের নোংরা মানসিকতা জাস্ট এড়িয়ে যাচ্ছি। আসল পর্দা হচ্ছে নফসের পর্দা যা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাহ্যিকভাবে আলোচনা করলেও দেখা যায় আপনি যখন নাইট কোচ বাসে কোথাও ভ্রমণ করেন তখন বাসচালকের থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারেন। তিনি যখন বাস চালান তখন তার আশেপাশে কেউ কেউ প্রেম করেন, কেউ কেউ গল্প করেন, কেউ কাওকে দৃষ্টি দিয়ে নোংরা ইঙ্গিত করেন, কেউ বাসে ভীড়ের মধ্যেও নারীদেরকে ছুঁয়ে বাসনা পূর্ণ করেন কিংবা কেউ কেউ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন কিন্তু বাসচালক এগুলোর কোনদিকেই ভ্রুক্ষেপ করেন না তার দায়িত্ব হচ্ছে যাত্রীদের সেইফটি।
ধর্ষণের উপর গবেষণা করে যে তথ্য বা উপাত্ত পাওয়া যায় তাতে প্রমাণিত হয় যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের স্বীকার হন নিরীহ নারী ও শিশুরা। কিছু তথ্য দিই দেখে নিবেন যেখানে প্রমানিত হয় ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক দায়ী নয়_
=>শ্যামনগরে ধর্ষণ শেষে কলেজ ছাত্রীকে হত্যা। _পত্রদূত.নেট=>আটজন মিলে ধর্ষণ করে মেরে ফেল্লো গর্ভবতী ছাগল।_NEWSEN5.INFo=>Father held for raping daughter. _THEDAILYSTAR.NET=> ময়মনসিংহে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণ। _BD-PRATIDIN.COM=>বাড়িতে ঢুকে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ। _ JAGONEWS24.COM=>টুঙ্গিপাড়ায় গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ। _ BANGLA.DHAKATRIBUNE.COM=>সাভারে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা। _ BANGLA.DHAKATRIBUNE.COM=>চকলেটের লোভ দেখিয়ে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করলেন বৃদ্ধ। _ BANGLA.DHAKATRIBUNE.COM=>স্কুল ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ১৫ জন মিলে ধর্ষণ। _ BANGLA.DHAKATRIBUNE.COM=>পিঠা কিনে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের স্বীকার স্কুল ছাত্রী। _ JAMUNA.TV=>খেলতে গিয়ে ধর্ষণের স্বীকার ৫ বছরের শিশুটি। _ NTV.B.D.COMCOM
এতদস্বত্বেও কি ধর্ষনের মতো অপরাধ সংগঠিত করার জন্য নারীর পোষাককে দায়ী করা মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়?
সুমাইয়া বান্না
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ
অনার্স তৃতীয় বর্ষ