সব
facebook apsnews24.com
জাল দলিল: চিনার উপায়, যা করবেন, প্রতিকার পাবেন যেভাবে? - APSNews24.Com

জাল দলিল: চিনার উপায়, যা করবেন, প্রতিকার পাবেন যেভাবে?

জাল দলিল: চিনার উপায়, যা করবেন, প্রতিকার পাবেন যেভাবে?

আবেদ আলী নামে একজন ব্যাক্তি তার ৩৩ শতাংশ জমি থেকে মাত্র ১৫ শতাং জমি বিক্রি করে দিল । কিছু দিন পর সে দেখতে পেল, যে তার তার জমি কিনেছে সে পুরো ৩৩ শতাংশ জমি ভোগ দখল করছে। এই নিয়ে সে গ্রামে শালিস বসালেও সেখানে ক্রেতা সব জমি কিনেছে বলে জমির দলিল দেখালো। গ্রামের লোকজনও বললো আবেদ আলী পুরো ৩৩ শতাংশ জমি বিক্রি করেছে । তাই সে জমির মালিকানা আবেদ আলী আর পেল না ।এমনাবস্থায় কি করতে হবে হবে আবেদ আলী বুঝতে না পেরে আকাশ পাতাল ভাবনা শুরু করে দিল।

একই গ্রামের সাধারণ এক ব্যক্তি রফিক মিয়া। তার আবাদী ২০ শতাংশ জমি আছে।একদিন সে জানতে পারলো অন্য জনের নামে দলিল হয়ে আছে। সে বুঝতে পারে না এমন অবস্থায় কি করবে । আদালতে দলিল দস্তাবেশ ছাড়া সে রায় পাবে না তা বুঝতে পারে । সে জানে যে তার জমির মালিকানা দাবি করেছে তার দলিল ভুয়া কিন্তু সে এমন অবস্থায় কি করবে? অবৈধ মালিকের কাছ থেকে আইন তাকে কিভাবে প্রতিকার কিভাবে দিবে সেটি তার জানার ইচ্ছা।

উপরের ঘটনাগুলো সমাজে হরহামেশাই ঘটে থাকে। এমন অবস্থায় আমরা কিভাবে জাল দলিল সনাক্ত করবো, কোন কোন পদ্ধতিতে আমাদের আগাতে হবে আমরা অনেকেই জানি না ।বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা এক্ষেত্রে প্রতিকারের ব্যবস্থা রেখেছ। সচেতন নাগরিক হিসেবে সে বিষয়টি আমাদের জেনে রাখা উচিত। জাল দলিল বিষয়ে প্রথমেই যদি সন্দেহ তৈরী হয় তাহলে প্রথমে আমরা সাধারণ কিছু বিষয়ের দিখে নজর দিবো। যেমন :

১. দলিলে যে স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তাতে কোন সমস্যা আছে কিনা?

২. যে দিন দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সেদিন কোন সরকারি ছুটির দিন ছিলো কিনা?

৩. যে সব স্বাক্ষীর উল্লেখ আছে তারা দলিল সমন্ধে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কি কথা বলে?

৪. জমির রেজিষ্ট্রি মূল্য এবং জমি দামে কোন পার্থক্য আছে কিনা?

৫. নামজারির ধারাবাহিকতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আগে খতিয়ে দেখবো।

৬. দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় জমির উপর মামলা ছিলো কিনা?

৭. যে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলো সে মৃত ছিলো কিনা?

৮. যে ভেন্ডারের কাছ থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছিলো তার তথ্য সঠিক কিনা?

ইত্যাদি প্রাথমিক ভাবে এই কাজ গুলো শেষ করার পর আমরা জাল দলিলের বিষয়ে যে সন্দেহ তা প্রমাণের কাছাকাছি যাবো। এগুলো আমাদের প্রমাণকে শক্তিশালী করবে। এরপর আমাদের আরও কিছু কাজ করতে হবে যাতে করে সহজে জাল দলিল প্রমাণ করা যায় । জাল দলিল প্রমাণের কাজ গুলো আমরা করতে পারলে আদালতে খুব সহজে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।

একটি বিষয় জেনে রাখা উচিত উপজেলা রেজিষ্ট্রি অফিসে চারটি বালাম বই থাকে । ৩ ও ৪ নং বালাম বইয়ে উইল ও অসিয়ত বাদে বাকী যে হস্তান্তর করা হয় তার তথ্য প্রমাণ রাখা হয় আর তাই আপনার জমির দলিল যদি উইল বা অছিয়ত বাদে হয় ৩ ও ৪ নং বালাম বইয়ে খোজ করে দেখুন তাতে দলিলের সাথে কোন তথ্যের কোন অসামজ্ঞস্য আছে কিনা। আপনি যদি কোন অসামজ্ঞস্য পান তাহলে সে তথ্য নিয়ে নিন। পাশাপাশি আপনি ১ নং বালাম বই এবং ২ নং বালাম বই অবশ্যই খোজ করবেন।

কোন দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য উপস্থাপন করা হয় তা ১ নং বালামে প্রথম লিপিবদ্ধ করা হয় এবং ২ নং বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয় সে দলিল যদি কোন কারনে রেজিস্ট্রি না করা হয় সে কারনগুলো। তাই সব বালাম বইয়ে আপনার সকল তথ্যের খোজ নিতে হবে। বালাম বইয়ের ৩ নং তথ্য প্রত্যেক রেজিস্ট্রি দলিলের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি ইনডেক্স রাখা হয় । সেখানে জমির দাতা গ্রহীতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি সকল তথ্য রাখা হয়।

জমির পরিমাণ, মূল্য , লেনদেন কৃত জমির পরিমাণ , জমির প্রকৃতি সকল তথ্য এই ইনডেক্সে থাকে। আর তাই আপনি যদি ইনডেক্স যাচাই করেন তাহলে খুব সহজে মিলিয়ে দেখতে পারবেন ইনডেক্সের সাথে সে দলিলের কোন গরমিল আছে কিনা। আপনি যদি গরমিল খুজে পান তাহলে জাল দলিল প্রমাণ করা খুব সহজ হয়ে যাবে। জাল দলিলের সাথে সাথে যে অনেক ক্ষেত্রে বিক্রিত জমির পরিমাণের চেয়ে বেশী পরিমান জমি লিখে নিয়ে অনেকে প্রতারণা করে থাকে ।

এইরকম ক্ষেত্রেও দলিল জাল তা প্রমাণের সুযোগ আছে। জমির পরিমাণে তারতাম্য করা হলে দলিলের ভিতরের পাতা পবির্তন করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দলিলের সাথে যুক্ত যে এলটি নোটিশ সেটি যুক্ত বা পরিবর্তন করা হয় না আর তাই এই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে খোজ নিতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এলটি নোটিশ পরিবর্তন করা হলেও জমির রেজিস্ট্রির তারিখের সাথে সামজ্ঞস্য রেখে তা পরিবর্তন করতে পারে না তাই এই বিষয়টির উপর আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জমির মূল্য অনুযায়ী যে পে অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয় । তাই জমির পরিমাণ ও মূল্যের উপর নির্ভর করে অবশ্যই পে অর্ডারের যে পরিবর্তন তাও সামজ্ঞস্য হতে হবে। জাল দলিলের ক্ষেত্রে অনেক রকম প্রতিকার প্রচলিত আছে। সুনির্দৃষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭২ এর ৩৯-৪১ ধারায় এ সমন্ধে বলা হয়েছে। ৩৯ নং ধারা অনুযায়ী কোন দলিল বা লিখিত চুক্তি যদি বাতিল বা বাতিলযোগ্য হয় এবং তা ক্ষতির কারন হয় তাহলে তা বাতিলের জন্য আবেদন করা যায়।

জাল দলিল

আদালত উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে সে দলিল বা চুক্তি বাতিলের আদেশ দিতে পারেন। আর চুক্তি বা দলিলটি যদি বাতিল হয়ে যায় এবং সেটি নিবন্ধিত থাকে তাহলে সেই নিবন্ধিত কর্মকর্তার কাছে সেই রায়ের একটি কপি পাঠানো হবে। তারপর সে কর্মকর্তা তা বাতিলের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আবার ৪০ নং ধারা অনুযায়ী কোন দলিলের পুরো অংশ বাতিল বা বাতিলযোগ্য না হলেও মামলা করা যায় ।

এক্ষেত্রে দলিলটির যতটুকু বাতিল করা দরকার ততটুকু বাতিল করার আদেশ দিবেন । আবার ৪১ নং ধারা অনুযায়ী যে পক্ষে দলিল বিলুপ্তির আদেশ দেয়া হয়েছে তার নিকট হতে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। আবার কেউ যদি মনে করে শুধু ৪২ ধারা অনুযায়ী ঘোষণামূলক মামলা করবে তাহলে সেটাও করতে পারবে। আবার এক্ষেত্রে অন্যন্য প্রতিকার চাইবার অধিকারও আছে। তবে দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে তামাদি আইন-১৯০৮ এর ৯১ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসরণ করতে হবে।

এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলিলের বিষয়ে প্রতারণা জানার ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তাই প্রতারণার বিষয়ে জানার পর কালবিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন্ আইন ও আইনের বিধি বিধান গুলো জানার মাধ্যমে আমরা অনেক আইনী ঝামেলার সহজ সমাধান করতে পারি । ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সকলের সচেতনতা অনেক জরুরী ।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত থাকা এই আইনগুলো আমরা যত চর্চা করবো ততই সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট mdnurunnobiislsm379@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj