সব
facebook apsnews24.com
ভার্চুয়াল ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির যুগপৎ পরিচালনা হউক করোনা কালের বিচারিক ভাবনা - APSNews24.Com

ভার্চুয়াল ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির যুগপৎ পরিচালনা হউক করোনা কালের বিচারিক ভাবনা

ভার্চুয়াল ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির যুগপৎ পরিচালনা হউক করোনা কালের বিচারিক ভাবনা

মোঃ আজিজুর রহমান দুলু

পৃথিবী ও বাংলাদেশব্যাপী করোনা ভাইরাস জনিত মহামারি চলাকালিন সরকার দেশের বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করতে সম্প্রতি ‘আদালত র্কতৃপক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টও এই অধ্যাদেশকে কার্যকরভাবে প্রয়োগের জন্য ক’টি পরিপত্র জারি করেন। আদালতের জরুরী কার্যক্রম করোনা দূর্যোগের সময় পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে একটি ওয়েব সাইটও চালু করা হয়। কিন্তু তথাপিও মূলত ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল (লগ ইন mycourt.judiciary.gov.bd), Google meat, Microsoft teams, ইত্যাদি সফটওয়ার ব্যবহারে জটিলতা ও আইনজীবীদের প্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্য জনকল্যাণকর ‘আদালত কতর্পক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ কার্যকর হবার দিন(১১/০৫/২০২০খ্রি: তারিখ) হতেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া শুরু করে।

সচেতন সবাই বুঝতে পারছিলেন যে, কারোনা ভাইরাসজনিত দূর্যোগের কঠিন সময়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা না করলে একদিকে যেমন বহু মানুষ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, অপরদিকে আদালতের কার্যক্রম গতানুগতিকভাবে পরিচালনা করলে বিজ্ঞ বিচারক, আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী তথা জনগণ এ মহামারিতে আক্রান্ত হবার মারাত্বক ঝুকিতে পড়বে। তথাপিও ভার্চুয়াল পদ্ধতরি জন্য Google meat, Microsoft teams, Zoom ইত্যাদি সফটওয়ার ব্যবহারে মারাত্বক জটিলতা পরিদৃষ্ট হওয়ায় আইনজীবীসহ সকলে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকেই আশঙ্কা করতে থাকেন যে সরকার চমৎকার একটি আইন প্রণয়ন করা সত্ত্বে ও সফটওয়ার/সিস্টেম জটিলতার জন্য তা বুঝি আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। বহু জেলায় আইনজীবী সমিতি ভার্চুয়াল শুনানি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বা সিদ্ধান্ত নেবার জন্য জরুরি মিটিং ডাকে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন হলেও শেরপুর জেলাতে ভার্চুয়াল শুনানি বর্জন হয়নি, বরং সেরা সাফল্য এসেছে উক্ত জেলার বিশেষ করে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতেই। ভার্চুয়াল শুনানির জন্য সহজ ও কার্যকর তিনটি দাপ্তরিক আদেশ জারি করেন শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব এস. এম. হুমায়ুন কবীর। মূলত তাঁর এই তিনটি আদেশ যিনিই দেখবেন, তিনিই ভার্চুয়াল শুনানিতে উৎসাহিত বোধ করবেন এবং সফলভাবে কাজ করতেও সক্ষম হবেন। তিনি বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, আইনজীবী, জেল কতৃপক্ষ, পি.পি./কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের কাজ অতি সহজ করে দিয়েছেন ঐ তিনটি আদেশ দ্বারা। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শেরপুর র্কতৃক র্ভাচুয়াল শুনানরি মাধ্যমে আদালত পরিচালনার ১ম ও ২য় আদেশে দ্বারা তিনি মূলত আইনজীবীদেরকে ভার্চুয়ালী কাজ সহজে করবার পথ দেখিয়েছেন এবং জেল কতৃপক্ষ সংশ্লষ্টি সকলকে ভার্চুয়াল শুনানি/ফলাফল সহজে কার্যকর করবার পথ দেখিয়েছেন।

এ দু’টি আদেশের আলোকে কাজ করতে আইনজীবীসহ সংশ্লিস্ট কারো কারো কিছু সমস্যা হবার প্রেক্ষিতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শেরপুর র্কতৃক র্ভাচুয়াল শুনানীর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার ৩য় আদেশে (র্কাযক্রমে অংশগ্রহণ সহজীকরণ আদেশ) জারি করেন। তিনি ৩য় আদেশ দ্বারা মূলত রাষ্ট্র পক্ষ অর্থ্যাৎ সি.আই./সি.এস.আই./পি.পি./এ.পি.পি/এফ.সি.সি.ও, ফরিয়াদীপক্ষ, আসামীপক্ষ, আইনজীবীবৃন্দ ও সংশ্লষ্টি সকলকে আদালতে সহজভাবে ভার্চুয়াল শুনানি করবার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। শেরপুর বারের আইনজীবীদের নিকট হতে জানা যায় যে, শেরপুর জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম হুমায়ুন কবিরসহ অন্যান্য সকল বিচারক https://streamyard.com ব্যবহার করে চমৎকারভাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি করে সফল হন। এই সফলতার পিছনের রহস্য হলো শেরপুরের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভার্চুয়াল শুনানীর প্রাক্কালে সুচিন্তিত আদেশ জারি করা। এবং সকল ম্যাজ্রিস্ট্রেট ও আগ্রহী আইনজীবীদেরকে সহজ ভাবে ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট পদ্ধতিটিকে জনপ্রিয় করে তোলা।

শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনা করে নিজে নিষ্পত্তি করেন ১৬টি মামলা (ভিসি. কেস নং-১-১৬), তাঁর অধীনে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সুলতান মাহমুদ নিষ্পত্তি করেন ২১টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-২১), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত ফারিন ফারহানা নিস্পত্তি করেন ১৩১টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-১৩১), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত হুমায়ুন কবীর নিষ্টপত্তি করেন ০৫টি মামলা (ভিসি কেস নং-), সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহসিনা হোসেন তুষি নিষ্পত্তি করেন ০৫টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-৫), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত মোহসিনা হোসেন নিষ্পত্তি করেন ২৭টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-২৭), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মো: আল-মামুন নিষ্পত্তি করেন ০৭টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-৭), জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত মো: আল-মামুন নিষ্পত্তি করেন ৩১টি মামলা (ভিসি কেস নং-১-৩১) এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালত মো: শরিফুল ইসলাম খান নিষ্পত্তি করেন ২৫টি মামলা (ভিসি কেস নং ১-২৫)। এভাবে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে রেকর্ড পরিমান ২৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেন মাত্র নয় দিনে।

এতে বহু সংখ্যক মানুষ পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পেরেছে। অন্যান্য জেলায় এক/একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাকি ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্বহীন থেকেছেন বিধায় তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ হয়নি । কিন্তু শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট সকলে ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে কোর্ট পরিচালনা করেছেন বিধায় প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটই এই পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে ‘চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুর’ ফেইজবুক পেইজে প্রবেশ করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে প্রদত্ত দিক নির্দেশনায় প্রাকটিস ডিরেকশনে যে তিনটি সফটওয়্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই তিনটি সফটওয়ারের বাহিরে অন্য যে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে শেরপুর জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ অন্যান্য বিচারকবৃন্দ এবং আইনজীবীগণ সহজে ভার্চুয়াল শুনানি সম্পন্ন করতে পেরেছেন সেই কাজটি আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক? ইহার সহজ উত্তর হল আইনগতভাবে ওই কাজটি পুরোপুরি ভাবেই সঠিক। যদিও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে প্রদত্ত প্রাকটিস ডাইরেকশন এ https://streamyard.com এর কথা উল্লেখ ছিল না তথাপিও ইহা এই কারণে যে 2020 সালের এক নম্বর অধ্যাদেশ অনুসারে বাংলাদেশে বিদ্যমান আদালত সমূহ তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করার জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। উক্ত অধ্যাদেশের কোথাও এ কথা বলা হয়নি যে কোন পদ্ধতির তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হইবে। অধ্যাদেশে যেহেতু নির্দিষ্ট করে কোন প্রকার সফটওয়্যার পদ্ধতি কথা উল্লেখ করা হয়নি সেহেতু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে প্রাকটিস ডাইরেকশন দেয়ার সময় উপরে উল্লেখিত তিনটি সফটওয়্যার এর সহিত অন্য যে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাতে যায় তাহার দিক নির্দেশনা থাকা উচিত  ছিল। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট যে তিনটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই তিনটি পদ্ধতির থেকে অবশ্যই অবশ্যই সহজ পদ্ধতি হলো https://streamyard.com পদ্ধতি। বর্তমান করনা সংকট কালে অনেক আইনজীবীগণ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের আইনি আলোচনা ও আড্ডা করেছেন। ইহা থেকে এ কথা বোঝা যায় যে এই https://streamyard.com  পদ্ধতি অনেক সহজ। আমরা যেহেতু আমাদের বিচার বিভাগে ভার্চুয়াল শুনানির পদ্ধতি সবেমাত্র শুরু করেছি সেই হেতু উপরোক্ত এই সহজ পদ্ধতিতে কিংবা অন্য যেকোন সহজ পদ্ধতিতে আদালত যাতে ভার্চুয়াল শুনানি সম্পন্ন করিতে পারেন তার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা আবশ্যক। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের সহিত সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সকল আদালতের বিচারকার্য সীমিত আকারে কিংবা পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের আদালত সমূহের কার্যক্রম ভার্চুয়াল ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির সমন্বয়ে যুগপতভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদেশ প্রদান করিলে সর্ব দিক হইতে উত্তম হইবে বলিয়া ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়।

লেখকঃ মোঃ আজিজুর রহমান দুলু, সাবেক বিচারক  ও  আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, মোবাইল-০১৭১৬৮৩২৩০৮ E-mail: azizurrahmandulu@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj