অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা
একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের সর্বজন গ্রাহ্য কোন নিয়ম-নীতি যদি না থাকে,তখন অনিবার্য ভাবে সে সমাজের নীতি হয়ে দাঁড়াবে”Survival of the fittest”-অর্থ্যাৎ যোগ্যতমের বেঁচে থাকা। অথবা “Might is right”-অর্থাৎ জোর যার মুল্লুক তার।সে সমাজ বা রাষ্ট্রে তখন মানুষের বসবাসের অযোগ্য একট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করবে-যেখানে সভ্যতা ধ্বংস হবে।
William Pitt যথার্থই বলেছেন–”Where law ends,tyranny begins.”আদিম যুগে আমরা যদি একটু তাকাই তাহলে দেখতে পারি যে The then সময়ে কোন আইন ছিল না।
কিন্তু সমাজ ও সভ্যতার ক্রম বিকাশের পথ ধরে আধুনিক যুগে আজ এমন কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না,যে রাষ্ট্রে আইন নেই।বলা বাহুল্য,আইন ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই অচল। তবে এক্ষেত্রে যে প্রশ্ন অপরিহার্য তাহলো-আইনের শাসন মানেই কি সুশাসন?সব ধরণের আইনের শাসন কি মানুষের কাঙ্ক্ষিত?অবশ্যই নয়।
আইন যদি জনকল্যাণকর না হয়,যৌক্তিক না হয়, তখন আইনের শাসনও সুশাসন দিতে পারে না।এ প্রসঙ্গে আমরা ঔপনিবেশিক আমলের আইনের শাসনের কথা স্মরণ করতে পারি। In fact,”Rule of Law” বা ‘আইনের শাসন’ শব্দটি ফরাসি বাক্যাংশ “La Principe De Legality”(বৈধতার নীতি)থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা কেবল পুরুষদের নয়,আইনের নীতি ভিত্তিক একটি সরকারকে বোঝায়। এই অর্থে উপরোক্ত ধারণাটি স্বেচ্ছাচারী শক্তির বিরোধী ছিল।
অধ্যাপক এ.ভি.ডাইসির আইনের শাসনের ধারণাটি বিশ্বজুড়ে পরিষ্কার,সুনির্দিষ্ট এবং সর্বাধিক অনুশীলনযোগ্য। ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ক্লাসিক বই ‘সংবিধানের আইন’ এ তিনি এই ধারণাটি তৈরি করেছিলেন।তাঁর মতে….”Everything should be done according to Law”
তবে আইনের শাসন স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার বিধি বিরোধী।
বস্তুত গণমানুষের অধিকারের সুরক্ষা,সমাজ-রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে তাই গণমুখী আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।কিন্তু আইন যখন সার্বজনীন না হয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির অনুষঙ্গ হয় তখন তা আইনী বৃত্তের বাইরে গিয়ে Black Law বা কালাকানুন এ রূপ নেয়।তাই কোন সমাজ-রাষ্ট্রে যখন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকে তখন সে সমাজ-রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং সে জাতির পতনও অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।এ প্রসঙ্গে হযরত আলী(রা.)এর উল্লেখযোগ্য উক্তিটি বলতে চাই,…‘রাজ্যের পতন হয় দেশ থেকে সুবিচার উঠে গেলে, কারণ সুবিচারে রাজ্য স্থায়ী হয়’।
অতএব সুশাসনের মানদণ্ডই হচ্ছে আইনের শাসন। আইনের শাসন হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিবিশেষ যেখানে সরকারের সকল কর্মযজ্ঞই সংবিধিবদ্ধ নিয়মের অধীনে পরিচালিত হয়।মোট কথা,
আইনের শাসন তখনই বিদ্যমান থাকে,যখন সরকারি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অনুশীলন সাধারণ আদালতের পর্যালোচনাধীন হয়।
আইনের শাসনের প্রেক্ষাপট জাতিরাষ্ট্র ভেদে অভিন্ন নয়।ইংল্যান্ডে যেসব সাধারণ নীতির মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত হয়েছে তার অধিকাংশই সেখানকার নাগরিকদের আদালতে উত্থাপিত বিভিন্ন মামলার রায়ের ফল।এ ছাড়া ম্যাগনা কার্টা (১২১৫),দ্য পিটিশন অব রাইটস (১৬২৮) এবং বিল অব রাইটস (১৬৮৯)-এ ইংরেজ জাতির স্বাভাবিক অধিকারসমূহ ঘোষিত ও রক্ষিত হয়েছে।ইংরেজদের ঐতিহ্য, রীতিনীতি,ব্যবহারবিধি এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে ইংরেজদের সচেতনতা গড়ে উঠেছে।যা সুশাসন বা আইনের শাসনের মানদণ্ড হিসেবেই বিবেচিত।ব্রিটিশ ভারতেও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা এবং Preventive Detention Act এর কারণে আইনের শাসন মোটেই অবারিত হয়নি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিল অব রাইটস’এর অনেক বিষয় অনুরূপ ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যসহ গৃহীত হয়। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ পাকিস্তানের সংবিধান(১৯৫৬ ও ১৯৬২)এবং ভারতের সংবিধান থেকে ব্যাপকভাবে অনুসরণ করা হয়।তবে বাংলাদেশের সংবিধানে বিধি বিধানের নিজস্ব জায়গা রয়েছে।বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী –
“গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজকে উপলব্ধি করা রাষ্ট্রের মৌলিক লক্ষ্য হবে – এমন একটি সমাজ যেখানে আইনের শাসন,মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা,সাম্যতা এবং ন্যায়বিচার,রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সুরক্ষিত হবে সমাজের সকল নাগরিকের জন্য।”এই প্রতিশ্রুতি অনুসারে আইনের শাসনের জন্য নিম্নলিখিত ধনাত্মক বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সংবিধানের “২৭” অনুচ্ছেদে ঔপনিবেশিক আমলের সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাতে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান,সকল শ্রেণির মানুষ একটি অভিন্ন আইনের অধীন-যে আইন কার্যকর হবে সাধারণ আদালতের মাধ্যমে।
জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে সে আইনের প্রয়োগ হবে সমান।
“২৮” অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,জাতি,ধর্ম,বর্ণ,গোত্র, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিক কোনোরূপ বৈষম্যের শিকার হবে না।কিছু সীমাবদ্ধতাসহ সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধানের ৪২(১) অনুচ্ছেদে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে এমন কোনো বিধান ছিল না যা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহকে সঙ্কুচিত করে।সীমিত শাসন ও আইনের শাসনের ধারণা বেশ কার্যকর ও যুৎসই-ই ছিল বলে মনে করা হয়।এতে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে,একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সংবিধান প্রণেতাগণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধই ছিলেন।কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে,মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই সংবিধানে জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংযুক্ত করা হয়।তার সাথে যুক্ত হয় নিরাপত্তা আইন,বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং আরও কয়েকটি নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ।
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এ নিবর্তনমূলক আটকের বিধান ও কতিপয় গুরুতর অপরাধের শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে দ্রুত বিচারের বিধান করা হয়।১ থেকে ১৪ ধারা পর্যন্ত বিনাবিচারে আটক,বিনা পরোয়ানায় সর্বোচ্চ ১২০ দিন আটক এবং এ আইনবলে গঠিত উপদেষ্টা বোর্ডের সুপারিশক্রমে আটকাদেশের মেয়াদ আরও বৃদ্ধির বিধানটি করা হয়।যদিও তাত্ত্বিকভাবে কোনো ব্যক্তিকে ১২০ দিনের বেশি সময় আটক রাখার বিধান ছিল না,তবু বাস্তবে সরকার সহজেই একই ব্যক্তিকে পুনরায় গ্রেফতার করতে এবং আরও ১২০ দিন আটক রাখতে পারত।
এবার আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মধ্যকার সম্পর্ককে একটু বিশ্লেষণ করি।আইনের শাসন এবং মানবাধিকার একই নীতির দুটি দিক,মর্যাদায় বাঁচার স্বাধীনতা।আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মধ্যে একটি অবিভাজ্য এবং অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে।মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণের পর থেকে এই অন্তর্নিহিত সম্পর্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে
It is essential,“if man is not to be compelled to have recourse,as a last resort,to rebellion against tyranny and oppression, that human rights should be protected by the rule of law”.অর্থাৎ এটি প্রয়োজনীয়,”যদি মানুষ বিদ্রোহ করার জন্য সর্বশেষ উপায় হিসাবে বাধ্য না হয় তবে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে, আইনের শাসনের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত ”।
আসলে মানবাধিকার সভ্যসমাজে স্বীকৃত এক অনুষঙ্গ।।অতি প্রাচীনকালে মানবাধিকারের ধারণা সূচিত হয়।মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন,সহজাত,অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার।মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার।মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে।তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না।মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার।আদিম মানুষের জিজ্ঞাসা ছিল যে কষ্ট করে একটি শিকার ধরে বা খাবার সংগ্রহ করে সে তা অন্যদের সাথে শেয়ার করবে কেন?ধীরে ধীরে সামনে আসে অসহায় শিশুর অক্ষমতার প্রশ্ন।রান্নাবান্নার প্রচলনের পর নারী-পুরুষের কাজের বিভাজন হয়।নারীরা রান্নাবান্না,গেরস্থালির কাজ আর পুরুষেরা চাষাবাদ আয়-রোজগারের কাজে লিপ্ত হয়।সূচিত হয় পরিবারপ্রথা।ফলে আদিম যুগের ‘যে পায় সে খায়’ নীতির পরিবর্তে ‘সবার জন্য আশ্রয়,খাবার ও নিরাপত্তা’র ধারণাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে পরিবারের ভেতরে অধিকারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সমাজে শক্তির দাপট মানবিক অধিকারকে শৃঙ্খলিত করে।শক্তিমানরা সমাজের হর্তাকর্তা ভাগ্যবিধাতা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজপতিরা সাধারণের ওপর নানা রকম ভ্যাট বসিয়ে আরাম-আয়েশে দিনাতিপাত করত।তারা নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য নানা রকম বিধিবিধান তৈরি করত।এর মাধ্যমে মানবিক অধিকারগুলো সঙ্কুচিত হতো,কখনো বা চরম লঙ্ঘন হতো।সর্বাধিক হতো নারীর অধিকার।তারা চরম লাঞ্ছনা ও নিগ্রহের শিকার হতো।তাদের মতামতের আদৌ কোনো মূল্য ছিল না।নারী ছিল ভোগের সামগ্রী। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অধিকারে থাকত অসংখ্য নারী।তাদের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না।আশ্রয়,বস্ত্র,খাদ্য পেলে তারা বর্তে যেত।
শিক্ষার অধিকারের ধারণা এসেছে আরো অনেক পরে।আজকাল ধর্মকে প্রগতিবিরোধী হিসেবে দেখানোর প্রয়াস দৃশ্যমান।যা কিছু আধুনিক সব কিছুকে ধর্মবিরোধী বলে প্রচারের প্রয়াস লক্ষণীয়। কিন্তু পৃথিবীতে মানবাধিকারের ধারণা এসেছে ধর্মের মাধ্যমেই।
“গৌতম বুদ্ধ” মানুষের অধিকারের সীমানা ছাড়িয়ে জীবের অধিকারের মন্ত্রও উচ্চারণ করেছেন জোরেশোরে।তিনি অহিংসার বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।
“যিশুখ্রিষ্ট” অন্যের অধিকারের প্রতি এতটাই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যে,আক্রান্ত হলেও প্রত্যাঘাত করতে বারণ করেছেন।
“হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ)”বিদায় হজের ভাষণে সুস্পষ্ট ভাষায় দাস-দাসীদের অধিকারের কথা ঘোষণা করেন।তিনি বলেন, “তোমরা যা খাবে তাদের তা-ই খেতে দেবে,তোমরা যা পড়বে তাদের তা-ই পড়তে দেবে।”
পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে.”তোমরা তাদের জন্য ভূষণস্বরূপ,আর তারা তোমাদের জন্য।”এখানে নারী-পুরুষে বিন্দুমাত্র ফারাক করা হয়নি।পবিত্র কোরআনের বাণী কেবল পুরুষকে সম্বোধন করে অবতীর্ণ হয়নি। পবিত্র কোরআনে ‘হে মানুষ’ বা ‘হে বিশ্ববাসীগণ’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।পুরুষ বা নারী এই দুই দলে মানুষকে বিভক্ত করেনি ইসলাম।এখানে মানুষ দুই দলে বিভক্ত,খোদাভীরু ও খোদাদ্রোহী।ইসলামে পরামর্শ করে কাজ সম্পাদনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।পরামর্শ ও মতবিনিময়ের এই চেতনা ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের রূপ লাভ করেছে।আধুনিক গণতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি রচনাকারী জ্যাঁ জ্যাক রুশোর সেই বিখ্যাত উক্তি প্রণিধানযোগ্য।
‘Man is born free but everywhere he is in chains’
তাঁর আরেকটি বক্তব্যও স্মরণীয় হয়ে আছে ‘আমি তোমার সাথে একমত না-ও হতে পারি কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আমি জীবন দিতেও রাজি।’
আমেরিকায় গণতন্ত্রের নতুন মাত্রা যোগ করেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন।গৃহযুদ্ধ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষাকারী এই প্রেসিডেন্ট সরকারের যে সংজ্ঞা দেন তা আজো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। আব্রাহাম লিংকনের ভাষায়
“Government of the people, by the People and for the people”
সরকার নির্বাচনের অধিকার যে জনগণের তা লিংকন স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। এই সংজ্ঞার সাথে আইনের বিষয়টিও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।সরকার যখন জনগণের মধ্য থেকে তাদের দ্বারা তাদেরই কল্যাণের জন্য নির্বাচিত হয় তখন আইনের শাসন নিশ্চিত হয়।যে সরকার জনগণের দ্বারা সমর্থিত নয় সে সরকার মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিতে পারে না।বরং জনগণের ওপর চেপে বসা সরকার নাগরিক অধিকার হরণ করেই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে। তবে একটি কথা না বললেই নয় মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিবার,সমাজ,মিডিয়া, সরকার সব পক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে।
একটি শিশুর ভরণ-পোষণ লালন-পালনের ভার প্রাথমিকভাবে পরিবারকেই নিতে হয়।এজন্য পিতা-মাতা অভিভাবক সরকারের দিকে আঙুল তুলে বসে থাকেত পারে না।পরিবারেরও সীমাবদ্ধতা আছে।একটি বিশেষ সমাজ বা এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা,শিক্ষা,যোগাযোগ ও বিনোদনের মতো বিষয়গুলোতে গোত্র,সংঘ বা সমাজের দায়বদ্ধতা আছে।মিডিয়ারও পরোক্ষ দায়বদ্ধতা আছে।প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জনসমক্ষে তুলে ধরে।মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসনের ভূমিকাই মুখ্য।
বর্তমানে Human rights Movement ক্রমবর্ধমান ধারণাগত,আদর্শিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।আমরা এখনও এমন এক বিশ্বে বাস করি যেখানে ব্যতিক্রম না হয়ে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা আদর্শরূপে পরিণত হয়েছে।বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে,যখন আমরা দেখছি যে,মানুষের অধিকারসমূহ আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত,হানাহানির কারণে বার বার লংঘিত হচ্ছে।তবে মানবাধিকারের বিষয়টি ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া যাবে না।এজন্য জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে।শিক্ষিত না হলে মানুষের অধিকার সমুন্নত করা সম্ভব নয়।সম্ভব নয় দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে এর সুফল পৌঁছে দেয়া।একমাত্র সুশাসনের মধ্যদিয়েই মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী।