জিসান তাসফিক
ঈদ মোবারক : ঈদ হচ্ছে ইসলাম ধর্মানুলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠান। ইসলামে ঈদ দুই ধরনের। একটি ঈদ-উল-ফিতর ও অন্যটি ঈদ-উল-আজাহ।
আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে বলি : আরবীর রমজান মাসের ২৯-৩০ টি রোজা পালনের পর চাদের দেখার উপর নির্ভর করে শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদ শুরু হয়। ঈদ-উল-ফিতর টানা পাচদিন হয়। আসলে আমাদের ইসলামে ঈদ উদযাপন করা হয় কেন? এর ফজিলত কি? এ সম্পর্কে হাদিসে আছে যে রাসূল (স.) হিজরত করে দেখতে পান মদিনাবাসী বছরে দুটি উৎসব পালন করছে। উৎসব দুটিতে তারা খেলা-ধুলাসহ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য লালন করছে। উৎসব দুটির একটির নাম নাইরোজ এবং অপরটির নাম মেহেরজান। নবী (স.) মুসলমানদের জন্য এদুটির পরিবর্তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামক দুুটি পবিত্র উৎসব প্রবর্তন করেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বর্ণিত ” রাসুললাহ (সঃ) যখন [মদিনায়] আসলেন ,তখন তাদের ২টি উৎসবের দিন ছিল।
তিনি (সঃ) বলেন ‘এ ২ টি দিন এর তাৎপর্য কি?’ তারা বলল ‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ ২ টি দিনে উৎসব করতাম।’ রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন ‘ আল্লাহ্ তোমাদের কে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেনঃ ইয়াওমুদ্দুহা ও ইয়াওমুল ফিতর।”( বুখারী ও মুসলিম ) সুতরাং এ হাদিস থেকে দেখা যাচ্ছে যে ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং নতুন উৎসবের জন্য দুটো দিন কে নির্ধারণ করা হয়েছে।
রমজান মাসের সিয়াম সাধনা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে বন্ধ হয়। একমাস সিয়াম সাধনার যে উদ্দেশ্য ছিল অর্থাৎ সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকা তারই বাস্তবায়ন শুরু। সিয়াম সাধনার অন্যতম কাজ হল সুবহি সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে পানাহার থেকে বিরত থাকা হয়, সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি ঐ সকল মানুষের কষ্ট যারা না খেয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে। এতে করে ধনীদের মধ্যে গরীবের প্রতি না খেয়ে থাকা কষ্টটা উপলব্ধি হয়। এরপরে ঈদে সব ভেদাভেদ ভুলে ঈদের জামায়াতে এসে সকলে সকলের খোজ খবর নিয়ে থাক। একে অপরকে দাওয়াত দিয়ে থাকি । এক আনন্দদায়ক পরিবেশ থাকে।
কিন্তু আজ করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এই রোগ মুক্তির ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত সামাজিক দুরত্ব মহামারী থেকে মুক্তির উপায়। কারন কোনো ওষুধ বা টিকা নেই পৃথিবীতে। তাহলে আমাদের ঈদ উদযাপন কিভাবে হবে ? এ সম্পর্কে নবীজির নির্দেশনা দেখতে পারি। নবীজি বলেছেন, ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সুতরাং এই নির্দেশনা দেখা যাচ্ছে যে আমরা মহামারীতে নিজেই নিজেদের অবস্থান সুনিশ্চিত করে সুরক্ষা করি।
এই মহামারীতে আমাদের যা উচিত বলে আমি মনে করি : ঈদ উদযাপন আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে করি। আমরা হয়ত কোনো গরীবকে বাসায় খাওয়াতে পারব না কিন্তু কেউ যেন না খেয়ে থাকতে না পারে তা দেখি এক্ষেত্রে আর্থিক বা খাদ্য-দ্রব্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি। এই করোনার মধ্যে আম্পান নামক বড় ও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তান্ডব ঘটিয়েছে। তাতে অনেকের একমাত্র উপার্জনটুকুও নষ্ট হয়েছে।আমাদের সমাজের বিত্তশালীদের উচিত তাদের সাহায্যে করা । আমরা সবাই সমাজের অঙ্গ। ধনী গরীব সবাই কোনো না কোনো ভাবে সমাজের কোনো কাজে জরিত থাকি।
খেটে খাওয়া গরীব শ্রমিক শ্রেণির মানুষরা না থাকলে বিত্তশালীরা আরও বিত্তবান হতে পারবে না। আবার কোনো বড় প্রতিষ্টান তৈরি করার পিছনে অনেক মানুষের মেধা ও শ্রম থাকে। এবার আমাদের দেশের সরকার ৭১০০০ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা দিয়েছে। তার বিশাল এক অংশ গার্মেন্টস মালিকপক্ষ পাবে। এই ঈদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঈদ বোনাস আর বেতন দিয়ে দিলে তার ফলসরূপ একজন শ্রমিক তার ঘরে ফিরে পরিবারকে একটু সুখ দিতে পারবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিনরাত পরিশ্রমে একটি বড় গার্মেন্টস শিল্প হয়। সুতরাং এরাই এর প্রধান অঙ্গ।
লেখকঃ জিসান তাসফিক, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত এজন্য তিনি নিজে দায়ী থাকিবেন।