সম্প্রতি আরও আরেকটি কান ধরানোর বিচার দেখতে পেল বাংরাদেশের জনগণ। যদিও কান ধরানোর বিচার নতুন কোন ঘটনা নয়। মূলত এই ধরনের বিচার শুরু হইছে ১ নভেম্বর ২০০৭ খ্রিঃ এর পর থেকে। তার কারণ হলো বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি যখন নির্বাহি তথা প্রশাসন বিভাগ থেকে একবারে পৃথক হয়েছিল তখন থেকে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করে নির্বাহী বিভাগ। তার পিছনের কারণ খতিয়ে দেখলে দেখা যায় কোনভাবেই বিচার বিভাগ বা বিচারিক হাকিম আদালত পৃথক হোক বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত হোক তা প্রশাসণের কর্তাব্যাক্তিরা চাননি। কেননা প্রশাসনে কর্মরত থাকা চাকরিজীবীগণ মনে করেন বিচারিক ক্ষমতা না থাকলে তাদের দেয়া আদেশ-নিষেধ জনগণ মানবে না। ফলে তারা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত আইন ২০০৯ নামে নতুন করে বিচার বিভাগের আদলে সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা চালু রেখেছে। কিন্তু সমস্যা হলো যারা নির্বাহী আদালতের হাকিম বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলে তারা কেউ আইনের ছাত্র নয় ফলে বিচারের নামে অবিচার ঘটিয়ে বসে। এই যেমন কান ধরিয়ে বিচার শেষ করা বা মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া বা শিশু আইন বলবৎ থাকা স্বত্বেও শিশু আসামীদেরকে মোবাইল কোর্ট আইনে সাজা প্রদান করা ইত্যাদি।
কৃষি বা ডাক্তারদের মন্ত্রণালয় বা সচিবালয়ের প্রধান যখন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বা ভিন্ন কোন বিষয়ে পড়া মানুষ হয় তখন কি অবস্থা হয় একবার চিন্তা করে দেখুন। বিচার মানে সেখানে অপরাধ থাকবে এবং তা প্রমাণ হলে হয় সাজা না হলে খালাস হবে। সেখানে শাস্তি বা পানিশমেন্টের থিওরি রয়েছে বা কখন কোন সাজা দিতে হবে বা কেন সাজা দিতে হবে সেসব পড়ানো হয়। আইন বিষয়ে অধ্যায়ন না করলে সাধারণত অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করলে শাস্তির মূলনীতি কি বা শাস্তির থিওরি এগুলো পড়ানো হয়না। তাই একথা সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সহজে অনুমান করতে পারে আইন না পড়ে যখন একজন ব্যাক্তি যখন নির্বাহী হাকিম বা ইউএনও হয় তখন তার দিয়ে কান ধরিয়ে বিচার করা অসম্ভব কোন কাজ নয়। কারণ আইন না জানলে এমন বিচার হবে তা সহজেই অনুমেয়। এবার আসি মূল ঘটনায়।
ঈদের দিন গত ১১ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি পার্কে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করায় পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের বয়স ১৩ বছরের ওপরে, এমন দুজনকে আটকে রাখা হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়। এই খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও আসে।
এ বিষয়ে প্রথম আলোতে ফলাও করে খবর ছাপা হয় এবং সম্পাদকীয়তে খবর আসে যে, ‘ইউএনওর কাজ কি শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা’ লেখাটি আমার নজরে আসে। আমি দু’তিনবার খবরটি পড়ি।পড়ে এটা মনে হয়েছে পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাটি কোন ধরণের অপরাধের বিচার বা এই বিচার আইনে কোথাও রয়েছে কি বা ইউএনও যে আইন ফলো করে বিচার করে সেই আইনে এই ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া বা বিচারের ফলাফল সমর্থন করে কিনা। যদি কোন আইনে না থাকে তাহলে এই কান ধরিয়ে বিচার সমাধা করার বুদ্ধি ইউএনও সাহেব কে দিলো নাকি উনাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হয়নি বা উনার আইনী জ্ঞানের প্রচন্ড অভাব নাকি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারের নামে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন ইত্যাদি নানান প্রশ্ন মনে উকি দিচ্ছে তবে আমার মনে যে প্রশ্নই আসুক না কনে তা সমাধানের কোন পথ নেই। শুধু আমার কাছে নয় খোদ প্রশাসনের নিকটেও সামধান নেই। তার কারণ মোবাইল কোর্ট নামে সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা চালু করলেও উক্ত বিষয়ে প্রশিস্খনের জন্য মূলধারার বিচারকদের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ইউএনও দের পৃথক কোন প্রশিক্ষন ব্যবস্থা নেই। যেটুকু রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় যদি প্রশিক্ষন যথাযথ হতো তাহলে কান ধরিয়ে বিচার সমাধার করার ঘটনা বারবার ঘটতো না।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে তাদের আটক করেন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পরে তাঁদের কান ধরে দাঁড় করানো হয়। সদর উপজেলা ইউএনওর নির্দেশ ও উপস্থিতিতে আটক শিশুদের এই শাস্তি দেওয়া হয়। শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব এর বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করছি। ইউএনও বলেন যে, শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কয়েকটি শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। পাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে। এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র। ভয়ে কানে হাত দেওয়া আর কান ধরিয়ে রাখা এক কথা নয়। এখানেই ক্ষান্ত হননি ইউএনও। তিনি কান ধরা অবস্থায় শিশুদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, বিনা অনুমতিতে পার্কে ঢুকে তারা গর্হিত অপরাধ করেছে। এমন অপরাধ যেন তারা ভবিষ্যতে কখনো না করে।
প্রথম আলোর মতামত কলামে যুগ্ম সম্পাদক ও কবি জনাব সোহরাব হোসেন স্যার যথার্থই লিখেছেন যে, ইউএনও দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করার মধ্যে অপরাধ দেখেছেন। কিন্তু শিশুদের অধিকারকে মূল্য দেননি। সরকারি পার্ক তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। যদি সেই পার্কে যাওয়ার সামর্থ৵ শিশুদের না থাকে, রাষ্ট্রেরই উচিত তাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ঢাকার শিশুপার্ক তো আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খুলে দেওয়া হতো সপ্তাহে এক দিন। এখন আর পার্কটি খোলা নেই। সংস্কারের নামে কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে। একটি শিশু অভিযোগ করেছে, গার্ড তাঁকে দেয়াল থেকে ঠেলে পার্কের ভেতরে ফেলে দিয়েছেন। এখানে শিশুটির অপরাধ কোথায়? এই অভিযোগের পর ইউএনওর উচিত ছিল গার্ডকে শাস্তি দেওয়া। তিনি সেটি না করে হর্ষচিত্তে শিশুদের কান ধরার দৃশ্য অবলোকন করলেন এবং তাদের সৎ হওয়ার পরামর্শ দিলেন।
ইউএনও একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা । তিনি উপজেলার প্রধান কর্মকর্তা। সে হিসেবে তাঁর জানা থাকার কথা, শিশুদের শাস্তি দেওয়া যায় না। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতেও নির্দেশনা দেওয়া আছে, তাদের যেন শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া না হয়। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের শাস্তি দেওয়া যায় না। শিশুদের শাস্তি বা অপরাধ করলে তা শিশু আইন অনুযায়ী বিচার হবে। অথচ ইউএনও এবং ওই পার্কের রক্ষীরা তাদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন!
ইউএনওদের আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের মার্চ মাসে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন। এ জন্য তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের এ প্রাদূর্ভাবে লোকসমাগম যেন না হয় সে বিষয়টি দেখভালের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় প্রথমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন দুই বয়ঃবৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।
তখন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ঐ দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। তিনি নিজে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আবার মুঠোফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এরপর একজন বৃদ্ধ ভ্যান চালককেও অনুরূপভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড দেন। এসব ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকেই বয়স্ক নাগরিকদের এভাবে সাজা দেয়াটাকে মেনে নিতে পারেননি। এমন দণ্ড ভ্রাম্যমাণ আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি এই ছবি সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোডের পর সংশ্লিষ্টদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট আইনের ক্ষমতা প্রয়োগে আরও প্রশিক্ষণ দরকার আছে কিনা তা কর্তা ব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এমন কাজ সকলেই ধিক্কার জানিয়েছিলেন। মুরব্বিদের কান ধরিয়ে ছবি তুলে আবার প্রচার করা কোনভাবেই কাম্য নয়। মোবাইল কোর্ট আইন মেনে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ হলো নাকি করোনা ভাইরাস ছড়ানো রোধে সচেতনতা সৃষ্টি হলো সে বিষয়টি এখানে সুস্পষ্ট নয়। আগে ক্ষুধার্তদের খাবারের দায়িত্ব নিবে রাষ্ট্র তাহলে দেখবেন কেউ রাস্তায় আসবে না। ঐ ছবিতে দেখা যায় যে নিচে বাজারের ব্যাগ, তারা নিশ্চয় কেনাকাটার উদ্যেশ্যে বাজারে এসেছিল। করোনা ভাইরাস ছড়াতে নয়।
কান ধরানোর দণ্ডের কথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকার করেন। তবে সরকারি ওয়েবসাইটে ঐ ছবি কেন দিলেন তা কিন্তু বোধগম্য হয়নি। তবে নাগরিকদের এভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করার বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী। তার উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
শিশুদের কান ধরানো বা বৃদ্ধদের কান ধারনোর ছবি বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় দেয়ার ছবি দেখে বা এরকম বিচার এর কথা শুনে ও দেখে কেউ নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে এ শাস্তি সম্পূর্ণ বেআইনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের দাঁড়প্রান্তে এমন অরাজকতা ও বিচারের নামে কাউকে অসম্মান মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি প্রদানকারী ঐ কর্মকর্তা যেই হোক তার বেআইনি কাজের শাস্তি দাবি করা যেতে পারে। বিচারে কখনও কাউকে কান ধরে উঠবস করাইতে নেই। আইনের মধ্যে যতটুকু ক্ষমতা (দায়িত্ব) দেয়া আছে, তার মধ্যেই বিচার কার্যক্রম সীমিত রাখা উচিত। একটা সার্ভিসের যদি কেউ আইনের বাইরে কোন কাজ করে তার দায় সে নিজেই বহন করবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের শাস্তি দেবে সার্ভিস এবং রাষ্ট্র। তবে এটা ঠিক আইনের বাইরে কাজ যে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই করেন ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক সার্ভিসের ব্যক্তিরা এমন কাজ করে থাকেন। এ ব্যাপারটা এমন যে, পরিবারের অবাধ্য ছেলেটা অন্যের বাসার ফল চুরি করে, মারপিট করে এবং সে অপরাধ করলে সবাই বলে এটা স্বাভাবিক কিন্তু সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটি যদি সামান্য অপরাধ করে তবেই হয়েছে। প্রত্যেক সার্ভিসেই এরকম কিছু ব্যক্তি আছেন। তারাই সমস্যা তৈরি করেন। এর দায় পুরো সার্ভিস নিবে না।
শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা বা বৃদ্ধকাউকে কান ধরানো চড়থাপ্পড়ের চেয়েও গুরুতর অপরাধ। এর মাধ্যমে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ইউএনও ও তাঁর সহযোগীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন।১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী শিশু আইন ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে কাগজে-কলমে অনেক উদ্যোগ নিলেও সামাজিক চর্চায় শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি, ইউএনওর কাণ্ডই তার প্রমাণ। শিশুরা কোন অপরাধ করলে তার বিচার শিশু আইনে হবে। তড়িঘড়ি করে কান ধরিয়ে বিচার করতে চাইছে কেন ইউএনও সাহেব বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা? কাউকে এভাবে শাস্তি দিলে যে সংবিধান বা বিদ্যমান মোবাইল কোর্ট আইন ও দেশের ফৌজদারী আইন সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয় তা হয়তো তিনি বুঝতে পারেন নাই। যে ইউএনও বা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বা বিচারক এই ধরণের ‘কান ধরানোর’ বিচার করলেন তিনি তো তার নিজের ক্ষমতা দেয়া মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ ভালো করে পাঠ করে আসতে পারতেন। সেটি তিনি না পড়েই বিচার কাজে নেমে গেছেন। যা ঠিক হয়নি। আইন জানা থাকলে মানতে ও প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়।সেজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষন জরুরী।
আইনে আছে সহস্র অপরাধী ছাড়া পায় পাক কিন্তু একজন নিরাপরাধ লোক যেন অন্যায়ভাবে শাস্তি না পান। বিচার করতে হলে এ জুরিসপ্রুডেন্স মাথায় রাখতে হয়। বিচার করলে শুধু হবে না এটাও দেখাতে হবে যে, সেখানে ন্যায় বিচার হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের বিচার অতঃপর ০৫ জন শিশুকে বা সিনিয়র সিটিজেনকে কান ধরিয়ে দাঁড় করানো ও তার ছবি তোলার দৃশ্য বিদ্যমান ফৌজদারী বিচারের নীতির সাথে ঠিক যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন, কাউকে যেন মিথ্যাভাবে হয়রানি করা না হয়। সবাই যেন ন্যায় বিচার পায়। যে কোন ধরনের বিচারের দায়িত্ব পুরোপিুরি মূলধারার বিচারকদের হাতে না আসা পর্যন্ত কান ধরানো বা শিশুদের বেআইনী সাজা প্রদান চলতে থাকবে তাই বিচার বিভাগ যেহেতু স্বাধীন তাই বিচার বিভাগের বাইরে ভিন্ন কোন সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা না চলে তার ব্যবস্থা রাষ্টকেই করতে হবে তা না হলে বিচারের নামে কান ধরানোর বিচার মাঝে মাঝে দেখতেই হবে।
লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, কলামিস্ট, আইন গবেষক (পিএইচডি অধ্যায়নরত) । ইমেইলঃ bdjdj1984du@gmail.com