মতিউর রহমান
অনিবার্য করে তোলা লেট ম্যারেজের পক্ষে প্রধান উদ্দেশ্য হল জনসংখ্যা বিস্ফোরণ বা ভূমির তুলনায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা প্রতিরোধ করা।আমাদের শিক্ষিত প্রজন্ম ৮-১০ বছর Pre-marital Relation (প্রেম) continue করে তারপর বিবাহের উপযুক্ত হচ্ছে। এই সময়টাতে অভিভাবকের পরামর্শ বা তাদের মধ্যস্ততা বিহীন থেকে অত্যন্ত জটিলতার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে হয়। প্রথম পছন্দটা বাস্তবতা না ভেবে কেবল নিখাদ আবেগ দিয়ে হয়। ফলে ভুল কিছু সিলেকশন হবার আশঙ্কা বেশি। প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে কোন ঝামেলা হলে নিজেদের অপরিণত বুদ্ধি দিয়ে কিংবা জিদের বশে সম্পর্কের জটিলতা জটিল থেকে জটিলতর হয়, ঠুনকো কারণে সম্পর্ক ভেঙে যায়। জীবন হয় নষ্ট, ঝরে যায় লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুনীর অনুভূতি। জীবন্ত লাশ হয়ে বাকি জীবন শ্বাস বয়ে করতে হয় দ্রুত মৃত্যুর প্রতীক্ষা। (বাকি জটিলতাগুলো অন্য একটা পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, এই পোস্টের প্রথম কমেন্টে তার লিংক দেয়া আছে।)
জনসংখ্যা বিস্ফোরণের অজুহাতে আমরা মানুষের পারিবারিক জীবন বিপন্ন করতে পারি না। এভাবে চলতে থাকলে বিয়ে ছাড়াই ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোর মত বাচ্চা হবে, সম্পর্কের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। আর যদি বিয়ের প্রতি নিরুৎসাহিত করতেই হয়, তাহলে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির মত ফ্রি-মিক্সিং বা ফ্রি-সেক্সকে প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রাইমারি স্কুল থেকে সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে।মানুষকে জোর করে তাদের সহজাত অনুভূতি আস্বাদনে বাঁধা দেয়া অমানবিক হয়ে দাঁড়ায়। শুধু যে শারীরীক চাহিদা মূখ্য ব্যাপার তা নয়, মানসিক সঙ্গের গুরুত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
আর ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সনদ লেট ম্যারেজের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালায়, সকল দেশকে এর আলোকে আইন প্রণয়ন করতে প্রণোদনা দেয়। জাতিসংঘের ১৭ টি SDGs এর অন্যতম হল Gender Equality। এর উপায় হিসেবে লেট ম্যারেজের প্রেষণা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়, এর বিকল্প অনেক উপায় আছে।অনেক বুদ্ধিবেত্তা এসব সনদের আলোকে লেট ম্যারেজের প্রেষণার জন্য আইন প্রণয়ন করাকে বাধ্যতামূলক মনে করেন। কিন্তু এসব সনদ আমাদের সংবিধানের ঊর্ধ্বে প্রাধান্য পেতে পারে না। কেননা আমাদের আইনী ব্যবস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত মনিস্ট নয়, বরং ডুয়ালিস্ট। কাজেই আন্তর্জাতিক কোন সনদ আমরা মানব কিনা তা একান্তই আমাদের রাষ্ট্রীয় ইচ্ছার ব্যাপার।
বাল্য বিবাহের প্রসঙ্গে আসি। বিভিন্ন দেশের আইনে মেয়েদের বিবাহের উপযুক্ত বয়স হল ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ কিংবা কোন কোন দেশে সর্বোচ্চ ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। আর ছেলেদের ১৬ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১ বছর বয়স হল বিবাহের ন্যূনতম বয়স।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর হল বিবাহের ন্যূনতম বয়স। অর্থাৎ বয়সের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে “বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স” বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। ১৮/২১ এর আগে বিবাহ করলে তা হবে বাল্য বিবাহ।
আপনার কোন সেন্স বলে যে ১৮ বছরের আগে মেয়ে আর ২১ বছরের আগে ছেলেরা শিশু?কোন সেন্স বলে ১৬-১৭ বছরের মেয়ে বা ১৮-২০ বছরের ছেলে বাল্য?ক্লাস নাইনে পড়ার সময় দেখেছি আমার সহপাঠীদের অনেকে ক্লাসের গ্যাপে ক্লাসরুমে দলবেঁধে পর্ণ ভিডিও দেখছে।আবার, অনেকের জীবনের গল্প জেনেছি। অনেকে ক্লাস 7/8/9 এ প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কারোর’বা ক্লাস 10-11 এর মাঝেই শুরু এবং এগুলো তাদের সম্পূর্ণ নিজের আগ্রহে, নিজের ইচ্ছায়, কখনো’বা অন্যের দ্বারা জোরপূর্বক। মাস্টারবেশন যেন অতি স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকে এগুলো সাধারণ কথাপ্রসঙ্গে অকপটে স্বীকার করতে দ্বিধা করে না, কেউবা জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে বিপদ এড়াতে বা ডিপ্রেশনে পড়ে শেয়ার করে হাল্কা হবার জন্য বা পরামর্শের জন্য বিশ্বস্ত কারোর সাথে শেয়ার করে। আবার অনেকে মজাচ্ছলে বলে। এই যে এগুলো মজাচ্ছলে বলা বা এগুলো নিয়ে বিকৃত কথা বলাও অস্বাভাবিক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ।
এছাড়াও বিভিন্ন জরিপ, যেমন- বেজলাইন সার্ভে, 2005 অনুযায়ী ১৭ বছর বয়স পূর্ণ হবার আগেই বাংলাদেশের প্রায় ৫০ শতাংশ ছেলে-মেয়ে যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। উপরন্তু যৌন শিক্ষা না থাকায় এরপর ভয়াবহ বিপদে পড়ে, মানসিক বিপর্যস্ততায় ভোগে।
বাস্তবতা অনুধাবন করুন, এ সমাজ প্রচণ্ড মানসিক চাপে পিষ্ট open-secret গুপ্ত ব্যাভিচারী একটা প্রজন্ম তৈরী করছে। এটার বিস্ফোরণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের থেকেও ভয়ানক হবে। এদিকে বর্তমানে প্রায় ৫০% ছেলে মেয়ে 18 বছর বয়স হবার আগেই যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। এছাড়াও গর্ভপাত মহামারী আকার ধারণ করছে। (বেজলাইন সার্ভে, ২০০৫। এখন নিশ্চয় এই হার আরো বেড়েছে। আর ২৮-৩০ বছরে বিবাহের পূর্বেই কত কী ঘটে যায়, শতকরা কতজন অনভিজ্ঞ থাকে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।)তাদেরকে অশ্রদ্ধা করছিনা। তবে এই অভিজ্ঞতা বিবাহের মাধ্যমে হলে কোন ক্ষতি হবে না, বরং ভাল হবে।
চাহিদা আর চাহিদা পূরণের উপায়ের মাঝে আনুপাতিক দূরুত্ব বেশি হলে চাহিদা কোন নিয়ম মানবে না। চুম্বক পরস্পরের থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরুত্বের পর আর আকর্ষণে কাছে টানতে পারে না। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ আর চাহিদা সেই অতি দূরুত্বে থাকা চুম্বকের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ যুবসমাজের চাহিদাকে আকর্ষণে আপন করে ধরে রাখতে পারছে না। মূল্যবোধের অনাকর্ষণে কেবলমাত্র ব্যাভিচারের মাঝে যৌন সম্পর্ক সীমাবদ্ধ না থেকে এটাকে আরো সহজলভ্য করার জন্য আর্থিকভাবে সচ্ছল যুবসমাজ বিভিন্ন সেক্স টয়ের দিকে ঝুঁকছে। এভাবে প্রচলিত সামাজিক ম্যাকানিজম দিয়ে যুব সমাজকে মানসিক বিকৃতির চরম শিখরে পৌছাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
(নিচের অংশ লিখতে সব থেকে বেশি সংকোচ লাগছে। তবু লিখি, ট্যাবু নিয়ে আর কতদিন চলবে! )
অন্যদিকে, বিবাহপূর্ব স্ত্রী ভিন্ন অন্য নারীর সাথে মিলন বা স্বামী ভিন্ন অন্য পুরুষের সাথে মিলন মনের একটা পিছুটানের অনুভূতি বা কন্ট্রোলের স্ট্যামিনাকে ধ্বংস করছে । যার ফলে বিবাহের পর উপযুক্ত স্বামী/স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পেলেই অন্য কারোর সাথে মিলনে কোন আত্মিক বাঁধা বা অনুশোচনা ফিল হয়না। এভাবে বিবাহের পরেও পুরানো অভ্যাস সহজে ছাড়া যায় না।
উপরন্তু, ১২-১৪ বছর বয়সে যৌন অনুভূতি প্রাপ্ত হবার পর থেকে ২৮-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত অধিকাংশ ছেলে অপ্রাকৃতিক (মাস্টারবেট ইত্যাদি) উপায়ে চাহিদা পূরণে অভ্যস্ত হয়। মেডিকেল সাইন্সের মতে এমন অধিকাংশ ছেলের পৌরুষত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পরবর্তিতে স্ত্রীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে বিবাহিত নারীদের একটা অংশ সহজেই পরোকিয়ায় আসক্ত হয়। অনেক মেয়ের ব্যাপারেও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য।
এছাড়াও লিভ টুগেদার এবং সমকামিতার পেছনেও মূল কারণ হল এই বিলম্বিত বিবাহ। অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকে, অথবা অতি গোপনে দায়সারাভাবে কাজী অফিসে গিয়ে বিবাহ করে কাবিননামা জোগাড় করে যাতে বাসা ভাড়া নেবার পরে এলাকার মানুষ সন্দেহ করে ধরলে প্রমাণ দেখাতে পারে যে তারা আসলেই স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু তাদের পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব কেউ জানে না। এক সময় পরিবার বেটার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করলে পরে তারা আবার সেখানেই বিয়ে করে নেয়। আবার প্রযুক্তির এই যুগে স্যাম্পল দেখে কম্পিউটারে নিজে নিজেই কাবিনের ফেক কপি বানিয়ে নিরাপদে বাসা ভাড়া নেয়া অতি সহজ।এভাবে চূড়ান্ত বিবাহের পূর্বেই অনেকে কয়েক বছরের দাম্পত্যজীবন লিড করে। কেউ কেউ এর মাঝে অনেকবার গর্ভপাত করতে বাধ্য হয়।
#বাস্তবতা ভাবুন, #সমাধান করুন।
সমাধানের উপায় হিসেবে বলা যায়:-জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করার একমাত্র উপায় লেট ম্যারেজ নয়। বিকল্প উপায় অবলম্বন করা বেশ সহজ।যেমন -ছেলেমেয়েদেরকে সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু তারা দেরিতে প্রথম (২২-২৫ বছর বয়সে) বেবি গ্রহণ করুক। এরপর চীনের মত এক সন্তান বা দুই সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কন্ট্রোল করা সম্ভব। আর্লি ম্যারেজ হলেও লেট বেবি গ্রহণ করলে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে। প্রাইমারি স্কুলে এসব শিক্ষা দিন, তাদের প্রয়োজনের সঠিক সময়ে বিবাহ দেবার দায়িত্ব নিন।
নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধ নির্মাণ করে বিকল্প প্রবাহের ব্যবস্থা না করলে দু-কূল প্লাবিত হয়ে বন্যা হবেই। তাতে সংশ্লীষ্ট জীবন ও সম্পদের ধ্বঃস অনিবার্য।তাই নয় কি?আর এর দায় কার?
লেখকঃ মতিউর রহমান, শিক্ষার্থী, LL.B, 2015-16 সেশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। Email- motiurmdm@gmail.com