এডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু
বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন অনুসারে যে কোন ডেড বডি বা লাশ হস্তান্তরের দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিন্তু বিচার বিভাগের সামগ্রিক ব্যর্থতার কারণে আজ মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে লাশ হস্তান্তর করছে অন্য কেঊ। গত ০৮.০৮.২০২১ ঈঞ তারিখ রাতে ৭১ টিভি তে প্রচারিত সংবাদ ও জনাব ফারজানা রূপা এর আলোচনায় ঊঠে আসে যে তথ্য সেটি হ লো নারায়ণগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে জাওয়া ৫২ জন সম্মানিত নাগরিক-শ্রমিকদের ডেড বডির হস্তান্তর। লাশ হস্তান্তরের সময় একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছিলো।
হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হলো সেলিম নামের একজন সম্মানিত নাগরিক তার সাত বছরের শিশুকন্যা সহ তার স্ত্রীর লাশ গ্রহণের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলেন তখন তার স্ত্রীর পিতা-মাতা পক্ষের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয় । যাইহোক এক পর্যায়ে যখন অ্যাম্বুলেন্স এ লাশ প্রদান করা হয়েছিল তখন জনাব সেলিম ও তার সাত বছরের শিশুকন্যা কে কান্না ও বিলাপ করতে দেখা যায় অর্থাৎ তারা লাশ পায় না । তার আগে ৭১ টিভির সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জনাব সেলিমকে যখন প্রশ্ন করেছিলেন তখন একটি বিষয় উঠে আসে সেটি হলো স্ত্রীর জীবন অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়ার কারণে যে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছিল তাহা জনাব সেলিম এর স্ত্রীর পিতা-মাতা পক্ষ পেয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে জনাব সেলিম কিংবা তার সাত বছরের নাবালক কন্যা একটি টাকাও পায়নি ৭১ টিভির উক্ত সংবাদ অনুসারে।
করণা মহামারীর এই ডামাডোলের মধ্যে লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি ছোট্ট একটি বিষয় মনে হলেও জনাব সেলিম এর পরিবার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে একটি সুদূরপ্রসারি ভূমিকা রয়েছে । বিচার বিভাগের সেই ব্যর্থতা দূর করতে কিংবা ভবিষ্যতে আরো অনেক জনাব সেলিম এর মত পরিবারে অশান্তি দূর করতে লাশ হস্তান্তর বিষয়টি পর্যালোচনার দাবী করে। এখানে বলা আবশ্যক যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সম্পত্তি হলো যে কোন বর্ণনায় হস্তান্তরযোগ্য বা অহস্তান্তরযোগ্য বস্তু যেখানে কোনো ব্যক্তির অধিকার ও স্বার্থ প্রদান করা হয়েছে ।
যে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার লাশ সৎকার করতে হয় । সেই সৎকার করার দায়িত্ব তার নিকট আত্মীয়দের নিকট বর্তায় । নিকটাত্মীয়দের যাহা দায়িত্ব তাহা প্রকারান্তরে তাদের অধিকার থেকে সৃজিত । ইহার ফলে লাশ যে একটি সম্পত্তি এবং ইহাতে যে তার নিকট আত্মীয়দের অধিকার রয়েছে সৎকার করার এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই। যে কোন ব্যক্তির লাশ যে একটি সম্পত্তি তার আরো একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের দেশে বিভিন্ন কবরস্থানে অনেক সময় রাতের বেলা যখন লাশ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন কিন্তু পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারার অধীনে মামলা করা হয় এবং এ ধরনের মামলা আমাদের দেশের অনেক আদালতে বিদ্যমান রহিয়াছে । কবরস্থানে লাশ চুরি করার ফলে কেন ৩৭৯ ধারায় পুলিশ মামলা রেকর্ড করে ? তার প্রধান কারণ হলো পেনাল কোডের ৩৭৮ ধারায় যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে চুরির সেই সেখানেও তার নিকট আত্মীয় অথবা কবরস্থানের লোকজনের অসম্মতিতে লাশ স্থানান্তর করাটা পেনাল কোডের ৩৭৯ ধারার অপরাধ কে অন্তর্ভুক্ত করে। এবার একটু বাহিরের দেশের রায়ের দিকে তাকাই।
আমেরিকার উচ্চ আদালতে ডেড বডি সম্পত্তি কি না এই প্রশ্ন উঠলে উক্ত আদালত ডেড বডি যে সম্পত্তি সেই বিষয়ে নিম্নোক্ত কথা পরিস্কার ভাবে বলেনঃ
“There is no right of property in a dead body in the ordinary sense, but it is regarded as property so far as necessary to entitle the surviving spouse or next of kin to legal protection of their rights in respect to the body. Lubin v. Sydenham Hospital, Inc., 181 Misc. 870 (N.Y. Sup. Ct.1943)” আমেরিকার উচ্চ আদালত আর একধাপ এগিয়ে অন্য একটি মামলার রায়ে বলেন যে, “certain rights and duties exist regarding the burial and disposal of the body of a decedent. Upon the death of a married person, the surviving spouse has the paramount right as to the custody of the remains of the deceased and its burial. Radomer Russ-Pol Unterstitzung Verein v. Posner, 176 Md. 332 (Md. 1939)”
আমাদের আলোচনার জনাব সেলিম কিন্তু তার স্ত্রীর ডেড বডি পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকারী ছিলেন উপরোক্ত রায়ের পারসুয়েসিভ ভ্যালু অনুসারে।
যে কোন ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি যদি তার মৃত্যুর পরে তার ওয়ারিশগন পেতে পারেন তাহলে জনাব সেলিম ও তার ৭ বছরের নাবালক শিশুটিও কিন্তু একই কারনে সম্পত্তির অধিকারী। প্রশ্ন আসতে পারে ইহা তো ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা। এই ক্ষতিপূরণের টাকাও কি ওয়ারিশ অনুসারে ভাগ বাঁটওয়ারা হবে ? উত্তর হল হ্যাঁ । কেননা জনাব সেলিমের স্ত্রীর জীবন আগুনে পুরে শেষ হয়েছে জন্য তার জীবনের মুল্য বাবদ ২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তার জীবনের মুল্য ২ লক্ষ টাকা সঠিক কি না তাহা এখানে বিবেচ্য বিষয় নহে। এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো জরিমানার টাকার অংশ কেন জনাব সেলিম ও তার ৭ বছরের নাবালক শিশু কন্যা পাবে না ? পুলিশ কোন আইনের ভিত্তিতে উক্ত ২ লক্ষ টাকা জনাব সেলিমের শ্বশুর পক্ষের লোকজনের নিকট প্রদান করল? এখানে বলা আবশ্যক যে, পুলিশ বলতে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কে বোঝাচ্ছি। আগামিতে কোন একদিন যদি সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা উচ্চ আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেন আপনি কোন আইনে আদালতের আনুমতি ছাড়া ডেড বডি গুলো হস্তান্তর করেছেন? আমার মনে হয় এমন টি হলে লাশ হস্তান্তরের এই ভুল প্রক্রিয়াটির সংশোধন হবে ভবিষ্যতের ন্যায় বিচারে প্রভাব রাখতে।
এখন আসি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর এখতিয়ার আছে কিনা যে কোন ডেড বডি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে? সহজ উত্তর হলো হ্যাঁ। আমাদের সিআরপিসি, ১৮৯৮ এর ৫১৬এ এবং ৫২৩ ধারা অনুসারে যে কোন সম্পত্তি ডিসপোজাল এর এখতিয়ার হলো সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর। কিন্তু সেই এখতিয়ার যখন সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োগ করেন না কিংবা পুলিশ প্রবিধানমালা, ১৯৪৩ এর ২১ প্রবিধি অনুসারে পর্যবেক্ষণ (Watch) করেন না তখন তাহাকে বলতে হয় বিচার বিভাগের লজ্জা। সেই সাথে একথাও বলা যায় যে, একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলো তার এলাকার বিচারিক watacher এবং তার জুরিসডিকশনাল অবস্থান হলো বিচারিক নিরাপত্তার Watch tower এবং ঊচ্চ আদালতের দায়িত্ব হলো জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট Watch tower এ থেকে তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালোণ করতেছে কি না তাহা সুপারভাইজ করা।
একই প্রবিধানমালা, ১৯৪৩ এর ৩১০ প্রবিধান অনুসারে ডেড বডি ডিসপোজাল (Disposal) এর দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর। আবার অনেক বিচারক বা আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলতে পারেন পুলিশ প্রবিধানমালা, ১৯৪৩ এর ৩১০ প্রবিধান এ শুধু ম্যাজিস্ট্রেট এর কথা বলা আছে। এই ম্যাজিস্ট্রেট কি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ? উত্তর হলো হ্যাঁ। কেননা CrPC, 1898 এর Section 4A (2)(a) ধারা অনুসারে CrPC, 1898 ছাড়া অন্য যে কোন বলবত আইনে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে তাহা হবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এরও কারন হলো উক্ত ধারা অনুসারে নারায়ণগঞ্জ এর সেজান জুস কারখানার আগুনের ঘটনায় একটি ক্রিমিনাল মামলা হয়েছে যাহা তদন্তাধিন। মামলা না হলেও হতো কেননা কেননা CrPC, 1898 এর Section 4A (2)(a) অনুসারে মামলা হউক বা না হউক যখন কোন ঘটনায় তদন্ত, আটক, সাজা, অনুসন্ধান, ট্রায়াল কিংবা অন্য কোন প্রসিডিংস এর বিষয় থাকে তখন তাহা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর কাজ। আর একটা কথা পুলিশ যে, যে কোন সম্পত্তি আদালতের অনুমতি ছাড়া ডিসপোজাল (Disposal) করতে পারে না তাহা আমাদের উচ্চ আদালত পরিস্কার ভাবে বলছেন SIDDIQUE AHMED SAWDAGAR v. THE STATE মামলায় যাহা 40 DLR (HCD) 268 Para-6 এ রিপোর্ট হয়েছে। আরো সুবিধা হলো 21 DLR (1969) 807 Para-11 এ বলা হয়েছে যে, পরিস্থিতি অনুসারে কোন সম্পত্তি আদালতে উপস্থাপন ছাড়া সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডিসপোজাল (Disposal) করতে পারেন।
সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য বা বিচার বিভাগের লজ্জা এই প্রসঙ্গে হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ২৭.১১.২০০৭ ইংরেজি তারিখের ১৯৮৯৯ জি নম্বর সারকুলার।
এই সার্কুলার এর কিছু অংশ হয়েছে আইন বহির্ভূত বিষয়ে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন এই কথাটি সিআরপিসিঃ ১৭৪ ধারায় নাই। সুরতহাল প্রতিবেদন এর কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট যাবে কিন্তু এর মানে এই নয় যে যে ডেড বডি ডিসপোজাল (Disposal) তিনি। উক্ত ১৭৪ ধারাকে সঠিকভাবে হৃদয়াঙ্গম না করে উক্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। মোদ্দা কথা হলো সার্কুলার এবং সিআরপিসি 1898 এই আইনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে অবশ্যই সিআরপিসি 1898 প্রাধান্য পাবে উক্ত সার্কুলার এর উপর। মূলত ১৭৪ ধারাতে সুরতহাল সম্পন্ন করতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে intimated করার জন্য বলা হয়েছে। ডেড বডি হস্তান্তরের এখতিয়ার এখানে দেয়া হয় নাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে। ফলে ডেড বডি অন্য যে কোন সম্পত্তির ন্যায় Disposed of হবে সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা। আর একটি এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, ২০০৯ সালে যখন বিচার বিভাগ আলাদাকরনের সময় CrPC, 1898 এর সংশোধন করে হয়েছে তখন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর পরিবর্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট সুরতহাল প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই সমস্যা হলো সুরতহাল প্রতিবেদন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট থাকার কারনে সংশ্লিষ্ট ইউ ডি মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি যখন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে complaint করেন তখন উক্ত সুরতহাল প্রতিবেদন তলব ও প্রাপ্তির জন্য কয়েক টি তারিখ চলে যায় আর ফরিয়াদি তার দাখিলকৃত নালিশ শুনানি তারা তারি করতে না পেরে হয়রানির স্বীকার হয়। কিন্তু কোন ভাবেই উক্ত ১৭৪ ধারায় ডেড বডি হস্তান্তরের এখতিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে দেয়া হয় নাই। আর একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলি অর্থাৎ সুরতহাল প্রতিবেদন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট পাঠানোর কথা বলা হলেও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন কিন্তু সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট পাঠাতে হবে কেননা ময়না তদন্ত প্রতিবেদন CrPC, 1898 এর Section 4A (2)(a) ধারাকে এট্টাক্ট করে।
যাই হোক, এদেশে অসংখ্য ঘটনার মতো এই ঘটনাতেও বিচার বিভাগের লজ্জা পরিলক্ষিত হলো। এই লজ্জা ঊর্ধ্ব দিকেও যায় এই জন্য যে ঊর্ধ্ব কর্তৃপক্ষেরও একটা দায়িত্ব আছে অধস্তন আদালতের বিচারক অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যখন ভুল করেন বা দায়িত্বে অবহেলা করেন যেমন করে হযরত উমর বলেছিলেন ইউফেত্রিস নদীর অববাহিকায় যদি একটি কুকুর না খেয়ে মারা যায় তার জন্য আমি উমর কাল কিয়ামতে দায়ী হবো। জনাব সেলিমের ৭ বছরের যে নাবালক শিশু সন্তান ডেড বডি না পাওয়ার যন্ত্রণায় যে কষ্ট ভোগ করেছে এবং ক্ষতিপূরণের টাকার অংশ না পাওয়ার কারনে ভবিষ্যতে আর যে কষ্ট ভোগ করবে তার দায় থেকে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন কি দায় এড়াতে পারে বা পারবে? আমি অবশ্যই বলব পারে না বা পারবে না।
লেখকঃ আজিজুর রহমান দুলু, আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।