অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা
COVID-19 মহামারি বর্তমানে অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থাকে অভূতপূর্ব চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। চলাচল ও সামাজিক দূরত্বের উপর কঠোর বিধিনিষেধের সাথে আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে তাই দেখা দিয়েছে এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। যেহেতু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিচার প্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরণের Barrier তৈরি করেছে তাই ইতিমধ্যে বলিভিয়া, ইকুয়েডর এবং আর্জেন্টিনাসহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলি ছাড়াও কানাডা,অষ্ট্রেলিয়া, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই E-Court তথা প্রাক-বিচারে আটক বন্দীদের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন করে শুনানির ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে এবং এসব অঞ্চলের অন্যান্য সরকারও একই পদক্ষেপ বিবেচনা করছেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায়ও মহা সংকটের এই সময় পরিবর্তন আনয়নের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট শুরু করেছে এক নতুন যাত্রা।
Actually ভার্চুয়াল কোর্ট এর উদ্দেশ্য হলো এটা নিশ্চিত করা যে আসামীরা তাদের মামলার শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে যেন অপেক্ষা না করে এবং অহেতুক তাদের কারাগারে রাখা না হয়,যেখানে COVID-19 তে আক্রান্ত হওয়া তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।।
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি “ওয়ারেন ই বার্গার” উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য-
“আমাদের এই ধারণা থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত যে আদালতই একমাত্র জায়গা যেখানে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হয়।দাবীযুক্ত লোকেরা সম্ভবত বেদনাদায়ক লোক।তারা ত্রাণ এবং ফলাফল চায় এবং তারা আইনজীবী এবং বিচারকদের সাথে আদালত কক্ষে বা অন্য কোথাও আছে কিনা সে বিষয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই ”
এছাড়াও যখন আইনী ব্যবস্থা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চলে আসে তখন কী কী সুবিধা রয়েছে তা লক্ষ্য করা যাক।।
ইহা ভ্রমণ এবং দীর্ঘ ভ্রমণের সময়কে দূর করবে অর্থাৎ Cost effective(মহামারিটি শেষ হওয়ার পরে)
ইহা ভিডিও কনফারেন্সিং,উচ্চমানের অডিও, ভিডিও,পাঠ্য এবং গ্রাফিকাল তথ্যের বিনিময় সমর্থন করে এবং এটি কয়েক মিনিটের মধ্যেই বদলে যেতে পারে বলে এটি নথির সংক্রমণে বিলম্বকে দূর করবে।অর্থাৎ ইহা Time bound.
প্রমাণ উপস্থাপনে কোনও অদক্ষতা থাকবে না। এগুলি স্ক্যান করা যায় এবং বিভিন্ন ফাইলের জন্য প্রচুর পরিমাণে নথি মুদ্রণের খরচ বাঁচাতে পারে।
আমাদের কাউন্টির আইনী ব্যবস্থার একটি প্রধান পটভূমি হল পক্ষগণের শুনানির প্রতিটি তারিখে আইনজীবীদের আদালত এবংঅফিসগুলিতে ভ্রমণ ব্যয়।ভিডিও কনফারেন্সিং এই বিচারে জড়িত প্রত্যেকের জন্য অর্থ ও সময় সাশ্রয় করবে।
এটি সাক্ষীর অপেক্ষায় থাকা সময়ের অপচয়গুলি দূর করবে।।
শুনানির বৈদ্যুতিক রেকর্ডিং নিজেই একটি পর্যাপ্ত রেকর্ড তৈরি করবে এবং গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতিবেদনের উন্নতির আশা করবে।
দলগুলি অনলাইন মোড যেমন Credit Card, Paytm,Online Banking ইত্যাদির মাধ্যমে জরিমানা এবং ফি দিতে পারবে।।
মিঃ মিশ্র তাঁর চিঠিতে একটি মন্তব্যও করেছিলেন যে “কেউ যদি প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য নতুন মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তবে তার উচিত এই জাতীয় কোনও ধারণা ফেলে দেওয়া।”
তাঁর এই বক্তব্য প্রযুক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা কঠোর।কারণ তিনি এমন একটি দেশের আইনী ব্যবস্থায় প্রযুক্তির সুযোগ এবং সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারেন না যেখানে শূন্যপদ সহ আদালতে লক্ষ লক্ষ মামলা বিচারাধীন রয়েছে।যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়,প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নতি করতে পারে এবং পরীক্ষার সময় সাশ্রয় করতে পারে।ভিডিও কনফারেন্সিং এবং প্রযুক্তি ভারতীয় আইনী ব্যবস্থায় এগিয়ে যাওয়ার পথ।দেশে লকডাউন প্রত্যাহারের পরে ব্যাপক ব্যবস্থাবদ্ধ পরিবর্তন আশা করা যায়।পরিবর্তন আইনী ব্যবস্থাগুলি যা এখন চলছে তা আদালতকক্ষ এবং বিচারের জন্য একটি ডিগ্রি ভার্চুয়ালিজম নিয়ে আসবে।আইনজীবী এবং বিচারকদের এই আইনটি বুঝতে হবে যে-
“Change is the law of nature”.অর্থাৎ “পরিবর্তন প্রকৃতির নিয়ম”
বিশ্ব বিবেচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি ভার্চুয়াল কোর্ট এক ধরণের আশির্বাদস্বরূপ।বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়।করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে তাই রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে।আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ,২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে।এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার,বিচারিক অনুসন্ধান,দরখাস্ত বা আপিল শুনানি,সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ,আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এই অধ্যাদেশ জারির পর সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ভার্চুয়াল ব্যবস্থা হাইকোর্ট রুলস-এ অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এ কারণে পরদিন ১০ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ফুলকোর্টসভা হয়।
এই সভা শেষে ঐদিনই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে আদালতের জন্য ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়।এ ছাড়াও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ এবং হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করা হয়।
কিন্তু এটা শুরু করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও গ্যাজেট-এর সংকট তৈরি হয়েছে বলে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ জানিয়েছেন৷
আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘‘মামলা জট কমাতে কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷”
তিনি বলেন,‘‘প্রাথমিকভাবে জামিন শুনানি এবং দেওয়ানি আদালত চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷আর উচ্চ আদালতও ভার্চুয়াল বেঞ্চের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷তবে ফৌজদারি বিচার চালাতে হলে সাক্ষ্য আইনের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে৷সেই আইন সংশোধনের উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি৷’’
ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট ২১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে৷তিনটি বেঞ্চ ও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বেঞ্চ গঠন করেছে।।
শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামিন শুনানি।অদ্যাবধি(১৮ মে)ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতিতে সারাদেশের নিম্ন আদালতে ৪ হাজার ৬৬৪টি জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ৩ হাজার ৪৪৭ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।রবিবার (১৭ মে) সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।প্রত্যেক আদালত একটি ই-মেইল আইডি এবং মোবাইল ফোন নাম্বারের মাধ্যমে চিহ্নিত হচ্ছে৷ আইনজীবীগণও একইভাবে চিহ্নিত হচ্ছেন৷জামিন আবেদন এবং শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে দাখিল করতে হচ্ছে৷আর ভার্চুয়াল উপস্থিতি শারীরিক উপস্থিতি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে৷
এই ভার্চুয়াল কোর্টের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের অধীনে ইউএনডিপি প্রশিক্ষণ, অনলাইন টিউটোরিয়াল ও সফটওয়্যারের কাজ করছে৷এই কাজে যুক্ত ইউএনডিপির একজন কর্মকর্তা জানান,উচ্চ আদালত প্রাথমিকভাবে অধস্তন আদালতের ৮৩ জন বিচারককে মনোনীত করেছে৷তাদের প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে৷ এই প্রশিক্ষণে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকেও সংযুক্ত করা হয়েছে৷তারা বার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে৷ধারাবাহিকভাবে বিচারকদের এই প্রশিক্ষণ চলবে৷ আর জেলার বিজ্ঞ আইনজীবীদের বারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
তবে এই আদালত পরিচালনার পর বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।তরুণ আইনজীবীদের বেশিরভাগই এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানালেও প্রবীণ আইনজীবীরা এ প্রক্রিয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন।বয়সজনিত কারণে প্রযুক্তিগত বিদ্যায় জ্ঞানের অভাব, জানা থাকলেও অনভ্যস্ততা, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ইত্যাদি কারণে মূলত প্রবীণ আইনজীবীরাই এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।অভিযোগেরও অন্ত নেই তাঁদের। তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞানের স্বল্পতা তাঁদের এতটাই কম যে গোপালগঞ্জের জেলা আইনজীবী সমিতির সভায় ভার্চুয়াল কোর্টে যে ধরনের সুরক্ষা পোশাক পরতে হবে সেগুলো তাদের নেই এমন মন্তব্যও করা হয়েছে।
ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে,বিজ্ঞ আইনজীবীগণ কিভাবে আবেদন দাখিল ও শুনানি করবেন সে বিষয়ে আগাম প্রশিক্ষণ না থাকা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী (যেমন: স্ক্যানার,ল্যাপটপ) না থাকায় কিছু কিছু জেলায় এই আদালত কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবী সমাজ।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী:গাজীপুর,মুন্সিগঞ্জ,মাদারীপুর, শরিয়তপুর, টাঙ্গাইল, ঝালকাঠী, পাবনা, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা এবং মৌলভীবাজার জেলায় এখনো ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়নি।এসব জেলার বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না।
বিজ্ঞ আইনজীবীগণের আরো কিছু Key Informant Interview উল্লেখ করি।
♦রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক জানান,‘‘প্রথম দিনে আমাদের এখানে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়নি৷ আদালত থেকে আমাদের শুধু জানানো হয়েছে৷ আমরা সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি৷তবে এটা কিভাবে হবে তা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার একটি স্মার্ট ফোন আছে৷ কিন্তু এটা দিয়ে ফোন করা আর ফোন ধরা ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারি না৷এখন কি অ্যাপ লাগবে,কিভাবে ডাউনলোড করবো তা কিছুই জানি না৷এর জন্য আসলে প্রশিক্ষণ দরকার হবে৷এর মাধ্যমে জামিন শুনানি হয়তো হবে,কিন্তু বিচার কাজ কিভাবে হবে!উন্নত বিশ্বে হয় বলে শুনেছি৷কিন্তু আমাদের তো সেই স্থাপনা,ল্যাপটপ, প্রশিক্ষণ কিছুই নাই৷’’
♦ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনও জানান সোমবার ঢাকায় ভার্চুয়াল কোর্ট শুরু সম্ভব হয়নি৷ তবে চারজন বিচারকের ইমেইল এবং মোবাইল ফোন নাম্বার জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷তারা মঙ্গলবার থেকে জামিন শুনানি করবেন৷
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা নিয়ে এগোনো কঠিন৷কারণ ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে ২৩ হাজার আইনজীবী আছেন৷আদালতের সংখ্যা অনেক৷তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কর্মকর্তা -কর্মচারী আছেন৷ তাদের কিভাবে ভার্চুয়াল কোর্টে সংযুক্ত করা হবে আমি জানি না৷বড় জোর জামিন আর দেওয়ানি আদালতের ইনজাংশন-এর কাজ হতে পারে৷’’
♦সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন,”ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার পদ্ধতি আমাদের বিচার ব্যবস্থা ও দেশের মানুষের কাছে নতুন এবং এ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণাও নেই।তবে করোনার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে এ পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে কার্যকর করা যায়।আমার জানা মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত,পাকিস্তানসহ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে এ পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে।” তিনি আরও বলেন,‘যেকোনো মানুষের জরুরি বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।এ পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচার পাওয়ার জন্য সাময়িক প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে এটি আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রচলিত যে রীতি সেটির পরিপূরকও নয়,বিকল্পও নয়।সাংবিধানিক শূন্যতা রোধে এটি কার্যকর হতে পারে।’
♦ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, “করোনা সংক্রমণে বর্তমানে যে ভয়ংকর পরিস্থিতি তাতে সীমিত আকারেও আদালত খোলার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করি। কেননা তাতে আদালতে লোক সমাগম হবেই এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকবে।জীবন না বাঁচলে তো সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ থাকে না।অনলাইনে বিচার কার্যক্রম হলে অন্তত স্বাস্থ্যঝুঁকিটা থাকছে না।তবে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ,লোকবল,পরিবেশ, যৌক্তিক উপাদান নিশ্চিতের পাশাপাশি সব বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবী যেন সমান সুযোগ পান সেটিও দেখতে হবে।একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে আমাদের সামনে।”
♦হাইকোর্টের ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথম জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন ভার্চুয়াল কোর্ট চালু এদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ।ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথমে আবেদন করতে গিয়ে নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে। সর্বোপরি এটি একটি নতুন ব্যবস্থা।এর সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই।ধীরে ধীরে এর পূর্ণতা পাবে। তাছাড়া সাংবিধানিক কোর্ট এক মুর্হতের জন্যই বন্ধ হতে পারে না।এজন্য এটি চালু করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
♦প্রথম ভার্চুয়াল কোর্টে রিট আবেদনকারী বিজ্ঞ আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন সারাবাংলাকে বলেন, “সব কিছু বন্ধ থাকা সত্বেও ভার্চুয়াল কোর্ট থাকায় হালদায় ডলফিন বন্ধে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি।এটি ভার্চুয়াল কোর্ট থাকার কারনেই সম্ভব হয়েছে।আদালতে না গিয়ে বাসায় বসে শুনানি করে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির অনুভুতি আসলেই অন্য রকম।ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি করে খুবই ভালো লেগেছে।”
যাই হোক, উপরের কথাগুলো যতই সহজ অথবা কার্যকর শোনাক না কেন,ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপনে এর নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
“Same solution is not applicable for everything.”
বিচারক সংকটের বিষয়টি তো রয়েছেই।তারপর প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কারণে সহজেই ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো ভাগ্য সব দেশের নেই।অতএব,প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করার মাধ্যমেই এর সুফল গ্রহণ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ,জারি করা কোর্ট পরিচালনার দিকনির্দেশনা (Practice Directions)পালন করা ছাড়াও,‘রিমোর্ট পয়েন্টে’ মামলাকারীর কাছে ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তির সুবিধা রয়েছে কিনা? থাকলেও Online show এর Authenticity কতটুকু??Sufficient Internet Supply আছে কিনা,Electricity connectivity issues এদিকগুলোতেও যথাযথ দৃষ্টি রাখতে হবে।অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের নেওয়া যেকোনও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ,এটার পেছনে ব্যয় এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ও উন্নতমানের ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তির ব্যবহার করা।
এছাড়াও Confidentiality বা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর রাখতে হবে।মামলাকারীর ব্যক্তিগত ডিভাইসে মামলার শুনানির অডিও, ভিডিও রেকর্ড করার মধ্যে গোপনীয় তথ্য প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে,যা মামলাকারী ব্যক্তি অন্য পরিস্থিতিতে অবৈধ মামলার সুবিধার্থে তা ব্যবহার করতে পারেন।যেহেতু সব কার্যক্রম অনলাইন বেসিস তাই এসব ডাটা Viral হবার সম্ভাবনাও বেশি রয়েছে যা দ্বারা নিরপরাধ ব্যক্তিকে Harass করার জন্য তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারে।তথ্য গোপনীয়তা যেকোনও গণতান্ত্রিক দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সর্বদা সংবেদনশীল।কারণ গোপনীয়তা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
একটি জিনিসের যেমন ভালো দিক থাকবে তেমনি মন্দ দিকও থাকবে।কারণ পুরো মহাবিশ্ব এ ভারসাম্যের উপরই প্রতিষ্ঠিত।তবে যে জিনিসটি ক্ষতির তুলনায় উপকারী বেশি তাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে।।
পরিশেষে বলতে চাই,নিঃসন্দেহে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের বিচার ব্যবস্থা উপকৃত হবে।আর সময়ের প্রয়োজনেই ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতিতে যেতে হয়েছে বিচার বিভাগকে।এই করোনা মহাসংকটের সময়ে ভিডিও কনফারেন্স অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে যদি ইহার প্রয়োগ সঠিকভাবে করা হয়।তাহলেই কেবল ইহা বাংলাদেশের পুরো বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।আবার যদি মামলাকারীর বাস্তব পরিস্থিতি এবং সামগ্রিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সমন্বয় ঘটে,তাহলে ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম সফল হবেই হবে।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত।