নুর মুহাম্মদ খান, লন্ডন থেকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন…
মানুষ পৃথিবীর বুকে বসবাস করে সেই পৃথিবীকেই অত্যাচার করে চলেছিলো। তারই ফলস্বরূপ পৃথিবী মানুষকে উপহার দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। যার শুরু চীনের উহান শহর থেকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশই আজ করোনায় আক্রান্ত। করোনার ছোবল থেকে রেহাই পায়নি যুক্তরাজ্যও।গত ২৪মার্চ ২০২০ থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ফলে মানুষ শুরু করে দেয় দীর্ঘ প্রস্তুতি। সুপারশপ ও গ্রোসারি দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় মুহূর্তেই খালি হতে থাকে দোকানের শেলফ। এই সুযোগে অসাধু ব্যাবসায়ীরা বাড়িয়ে দেয় নিত্যপন্যের দাম। জরুরী না হলে বের হওয়া যাবে না ঘর থেকে। দুই জনের বেশি মানুষ একসাথে চলাচল করলে পুলিশ জরিমানা করছে।
যুক্তরাজ্য সরকার জনগণের জন্য সীমিত আকারে গণপরিবহন চালু রেখেছে এবং ভাড়া ফ্রী করে দিয়েছে। আতঙ্ক সবার মাঝে এই বুঝি গ্রাস করলো মহামারী করোনা ভাইরাসে। কর্মব্যস্ত লন্ডন শহর আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হত না। পরে রীট করা হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর শুরু করে এবং তাদেরকে ধর্মীয় বিধান মেনে কবর দেওয়া হচ্ছে। এপর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৩,৯৯৮ জন। বাংলাদেশী কমিউনিটির একটি বড় অংশ থাকে ইস্ট লন্ডন (হোয়াইট চ্যাপল)। বিভিন্ন ধরনের কাজ করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। সব কিছু এখন থেমে গেছে করোনা ভাইরাসের কারনে। বাংলাদেশী মানুষের তত্ত্বাবধানে প্রচুর মসজিদ আছে। আক্রান্ত রোধ করতে যুক্তরাজ্য সরকার সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে। বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল -কলেজ, সার্ভিস এপার্টমেন্ট, টেকওয়ে রেস্টুরেন্ট, মিনিক্যাব সার্ভিস। ফলে লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হোটেল বিজনেসে পরবর্তী ২বছরের মধ্যে ফেরার ইচ্ছে নেই।
কোম্পানির পরিচালকরা সরকার থেকে ম্যক্সিমাম ১০-১২ লাখ টাকা অনুদান পাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যংক গুলো যুক্তরাজ্য সরকারের সুপারিশে কোম্পানি গুলোকে সহজ শর্তে লোন অফার করছে। যদিও কোম্পানির পরিচালকরা এখন বিজনেস চালাবে না।তবে কোভিড-১৯ সবচেয়ে বেশি দুর্দশা ও দুর্ভোগের মুখে পড়েছে illegal immigrants। তারা পাচ্ছে না কোন অনুদান কোন লোন, না পারছে পরিবারকে সাপোর্ট দিতে।পারছে না বাড়ি ভাড়া দিতে,খাবার কিনতে। আয় শুন্য হওয়ায় বাংলাদেশে পাঠাতে পারছ না রেমিট্যান্স। সরকার থেকে কোন রকম সুবিধা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই যেকারণে illegal immigrants মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইতালি, ফ্রান্স সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো আমেনেস্টি করেছে কিন্তু যুক্তরাজ্যে আমেনেস্টি দেওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যেকারণে অধিকাংশ মানুষের বাংলাদেশে ব্যাক করার সম্ভবনা রয়েছে। ২০১৬ থেকে Brexit নিয়ে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অবশেষে ৩১ডিসেম্বর ২০২০ইউরোপ থেকে বের হয়ে যাবে যুক্তরাজ্য। সেকারনে যুক্তরাজ্য নতুন করে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মানুষের সামনে দুইটা হুমকি Brexit ও Covid-19।সবশেষে দেখা যাচ্ছে লন্ডনে যারা বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বসবাস করছে তাদের মধ্যে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হয়ে পড়েছে। যেটার প্রভাব খুব শ্রঘই বাংলাদেশেও পড়বে।বাংলাদেশী কমিউনিটির মানিট্রান্সফার অফিস ছিলো যেগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকত।কিন্তু কোভিড-১৯ কারনে অফিস গুলো এখন ফাকা। এটি স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লেগে যাবে।যেহেতু যুক্তরাজ্য সরকার non essential ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলোকে জোরপু্র্বক বন্ধ রাখার জন্য ঘোষণা দিয়েছে সেই কারণে কোটি কোটি মানুষ বাধ্য হয়ে বাসায় বসে আছে। তাদের মধ্যে যারা HMRC তে payroll বেতন নিত শুধুমাত্র তারাই ৮০% বেতন পাচ্ছে সরকার থেকে। আর অনেকেই আছেন যারা HMRC তে ঘোষণা না দিয়ে কাজ করত তারা সরকার থেকে কোন অনুদান পাচ্ছে না।যেকারণে এইসব কর্মহীন মানুষেরা দুর্ভোগের মধ্যে আছে।
আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। গোটা বিশ্বের মানুষ নতুন করে শুরু করবে তাদের সংগ্রামী জীবন এবং নির্মল ও সুন্দর হবে তাদের জীবন। কল্যাণময় হোক পৃথিবীর সকল মানুষের জীবন।
লিখে পাঠিয়েছেন লন্ডন প্রবাসী নুর মুহাম্মদ খান, লেখক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী । Email: info@firstlinkconnect.co.uk