নুরন্নবী সবুজ
আজকের এই লেখনি আপনাকে যেমন সাক্ষ্য আইন সমন্ধে সুন্দর একটি ধারণা দিবে তেমনি আপনি যদি হতাশ থাকেন আপনার মটিভেশনাল কথার দরকার হয় সেটিও পেয়ে যাবেন। সাক্ষ্য আইন ও পড়া হয়ে যাচ্ছে আবার আপনার ভিতর ভালো কিছু করার জন্য শক্তি আর সাহস তৈরী হচ্ছে বিষয়টি দারুন উপভোগ্য হবে। আর এর মাধ্যমে সাক্ষ্য আইন পাঠ করা ও মনে রাখা হবে আগের চেয়ে সহজ আর সাবলীল।
পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষকে তার কাজের মাধ্যমে বেচে থাকতে হয়। সমাজে নানা পেশার মানুষ বাস করে। কেউ যে কাজ পারে অন্য হয়ত সে কাজ পারে না। অনেক সময় এমন হয় যে কোন ব্যাক্তি খুব সুন্দর করে গান গাইছে তাই দেখে গাণ গাইতে ইচ্ছে করে কেউ মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন পায় আর একজনের ইনকাম ২ লক্ষ টাকা এই দেখে নিজের যা ছিলো তাই নিয়ে দুংখের শেষ নাই।
কখনো আমরা একাটি কাজ পারি না বলে বড় আফসোস করি। আমাদের ভেতর দুংখের শেষ থাকে না। আমাদের বাস্তব জীবনেও নানা সমস্যা নানা ভাবে কুড়েকুড়ে খায় ।আমরা চাই তার সমাধান কিন্তু নানা কারনে তা আরা সম্ভব হয়ে উঠে না। সাক্ষ্য আইনের ১১৮ ধারা বিশ্লেষন করলে আমরা দেখতে পাই কোন পাগল ব্যাক্তি বা শিশুও সাক্ষি হতে পারে । আদালত তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারে। আদালত এক্ষেত্রে যে বিষয়টি দেখে তা হলো যাকে যে প্রশ্নটি করা হচ্ছে সে সে বিষয়টি বুঝতে ও উত্তর করতে পারছে কি না। যদি সে তা পারে তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহন কর হয় হয়
বাস্তবজীবনে নিজেকে যখন অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা হয় তখন তার থেকে খারাপ কিছু আসতে বাধ্য । আমি যে কাজটা করতে ও করাতে চাই সে কাজটা আমি কতটুকু জানি ও কতটুকু মানি তার উপরই আমাদের সাফল্য নির্ভর করে । ১১৮ নং ধারা অনুযায়ী যদি আমরা আমাদের কাজকে শুধু আমি কতটুকু জানি আর কতটুকু মানি তার উপর সাজাই তাহলে খুব সহজেই জীবনের ভিত নতুন এক শক্তি আর সাহস কাজ করাতে পারবো। সব কিছুর সাথে নিজেকে তুলনা করলে ছোট করাই শুধু হবে ভালো কোন কাজ হবে না।
‘আর এই কাজ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কিছু প্রস্তুতি দরকার । কাজ আর কাজের গতি এমন হবে যেন তা খুব সহজেই কোন মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারে আমি ভালো কিছু করতে যাচ্ছি । নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই ভালো কিছু করা সম্ভব। আপনি যদি একজন আইন বিশ্লেষক হতে চান তাহলে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে। আইনকে সহজবোধ্য করার জন্য তা নিয়ে তুলনা তৈরী করতে হবে এবং আইনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে লেখতে হবে। আপনি যদি এমনটি করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনার লক্ষ্য পূরণ হবে। আর আপনার কাজগুলো নির্ধারন করবে আপনি কি হতে যাচ্ছেন আপনার কি হতে ভালো লাগে । নিজেকে তাই লক্ষ্যের স্থানে পেীছে দিতে প্রস্তুতি নিন। । সাক্ষ্য আইনের ৭ এবং ৮ নং ধারায় মূলত এই কথাটিই বলা হয়েছে। রক্তমাখা ছুরি হাতে থাকলে সাধারণ অনুমান করা যায় ছুরির দ্বারা কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে তেমনি কোন ব্যাক্তি যদি কাধে গামছা নিয়ে দাত ব্রাশ করতে থাকে সহজ অনুমান হয় তার এখন পানির দরকার। জীবন যোদ্ধাদের যুদ্ধ প্রস্তুতিও এমন হওয়া চাই যা একজন মানুষের সহজ অনুমান করাতে বাধ্য করবে এই ব্যাক্তি এই জায়গায় যাবে।
অনেকেই বলে রাতদিন গাধার খাটুনি খাটলাম কিন্তু কোন ফল পেলাম না । আমার চেয়ে কম পরিশ্রম করে পাশের বাড়ির নন্দলাল ফল পেয়ে গেল আর আমার বেলায় ঘটলো তার উল্টো টা। এমন টি হয়ে থাকে কারন কোন কাজ কেন আর কিভাবে করতে হবে তা বুঝতে পারি না বা বুঝার চেষ্টা করি না।আমাদের আগে সমস্যা নির্ধারণ করতে হবে। বা আমরা যদি এমন কিছু কাজ নির্ধারন করি যে কাজগুলো করলে আমি সফল হবো তাহলেই সফল হওয়া সম্ভব। যেমন আপনি আইনের গবেষক হবার জন যদি গল্প উপন্যাস চর্চা করেন তাহলে তো কোন ফল আসবে না বা আসতে পারে না।
আপনি আইন বিশ্লেষক হবার জন্য যে কাজগুলো করবেন তার একটি তালিকা তৈরী করলেন
১. প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আপডেট জানবো।
২. একজন আইনজীবীর সাথে সপ্তাহে অন্তত একদিন আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
৩. মামলার পক্ষ বা বিপক্ষের সাথে দেখা করে তাদের সমস্যা গুলো নিয়ে সহজ সমাধান চিন্তা করবো।
৪. প্রতিনিয়ত তৈরীকৃত আইনগুলো নিয়ে পড়বো ও প্রয়োজনানুসারে তা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করবো।
৫. অবশ্যই প্রতিদিন মামলার নজিরসহ আইনের মূল বই পাঠ করবো ইত্যাদি।
এই কাজগুলো যদি নিয়মিত করা যায় তাহলে আপনার আইন বিশ্লেষক হবার যে ইচ্ছা তা পূরণ হবে। সাক্ষ্য আইনে যাকে বলা হয় বিচার্য বিষয়। সহজ করে বললে যে কাজগুলো করলে একটি নিদৃষ্ট লক্ষ্য পূরণ করা যায় তাই বিচার্য বিষয় । আইনের ভাষায় আদালত এমন কিছু প্রশ্ন নির্ধারন করবেন যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরী হলে মামলার রায় দেয়া যাবে তাই বিচার্য বিষয়।
আপনি প্রতিনিয়ত আইন বিশ্লেষক হবার জন্য যে কাজগুলো করছেন তাতে দেখা গেল শুধু কাজগুলো করেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। তার জন্য আরো কিছু কাজ করা দরকার যেমন ক্লায়েন্ট দের সাথে কথা বলার জন্য কোর্ট চত্তরে যাতায়াত করা, সংসদে আইনের উপর কি রকম আলোচান বা পাঠ হচ্ছে তার প্রতি নজর রাখা ইত্যাদি।আপনার মূল বিষয়ের সাথে অন্যান্য যে বাড়াতি কাজগুলো করতে হয় সে কাজগুলোই হলো প্রাসঙ্গিক বিষয়। আপনি বাড়তি কাজগুলো ছাড়া মূল কাজগুলো করতেই পারবেন না। আইনের ভাষায় যাকে বলা হয় বিচার্য বিষয় প্রমান করার জন্য অন্যান্য যে বিষয়গুলোর দরকার হয় তাই বিচার্য বিষয়।
সাক্ষ্য আইনের ৫ ধারার আলোকে যদি কোন কোন কাজগুলো করতেই হবে আর এই কাজগুলো করতেই হলে কোন কোন কাজের সাহায্য নিতে হবে তা সাজাতে পারি তাহলে আমাদের গাধার খাটনি কমে যাবে ও সফলতা লাভ করা সহজ হবে।
গোপনীয়তা রক্ষা করা জীবনের চলার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকে কোন কথা কাকে বলতে হয তা সমন্ধে সঠিক জ্ঞান রাখে না। নিজের জীবনের গোপনীয়তাও রক্ষা করতে পারে না। যে দুর্বল বিষয়গুলো নিয়ে অন্যরা ক্ষতি করতে পারে সে দিকগুলোও অন্যের কাছে অবলিলায় বলে দেয় । এটি জীবনের কাজগুলোতে যেমন জটিল করে তেমনি সমাজ ও সমাজের মানুষের প্রতি বিরুপ ধারনা তৈরী করে । এজন্য গোপনীয়তা রক্ষা করা বিশেষ জরুরী কাজ। সাক্ষ্য আইনে এই প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করেই ১২০, ১২২, ১২৩, ১২৬, ১২৯ সহ অন্যান্য ধারায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে সৎ-সততা ও বিশ্বাস-বিশ্বস্ততার জন্য এই বিধানগুলো যতেষ্ট দরকার আছে।
একমুখে দুই কথা যারা বলে তারা স্বাভাবিক কোন মানুষ হতে পারেনা। এরা যেমন নিজের ক্ষতি করে তেমনি ক্ষতি করে অন্যের । তাই এদের মুখ বন্ধ করা হয়ত সম্ভব না কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। একটি প্রবাদে বলা হয় গাছে তুলে মই টান দেয়া। যে তার কথা বারবার পরিবর্তন করে বা যে কথা দিয়ে কথা রাখে না তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা বোকামী । সাক্ষ্য কিছু মানুষের যখন তখন মন পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝতে পেরেছে বিধায় ১১৫, ১১৬ ও ১১৭ ধারায় প্রতিবন্ধ নামে একটি বিশেষ বিধান যুক্ত করেছে। এই বিধানের মাধ্যমে মূলত বুঝানো হয়েছে একজন ব্যাক্তি তার কথার পরিবর্তন করতে পারে না, একবার কোন ব্যাক্তি যে কাজটি সত্য বলে বিশ্বাস করিয়েছে তা আর পরিবর্তন করা যাবে না।
একজন ব্যাক্তি জীবনে নতুন কিছু করতে চায় কিন্তু সে পুরানো কাজগুলোই বারবার করে তাহলে তো নতুনত্ব আনা সম্ভব না। যখন একজন ব্যাক্তি অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই সে রাষ্ট্র ও সমাজ সমন্ধে জ্ঞান রাখে। বাংলাদেশের বেকারত্ব ও কর্মের সমস্যার দোহাই দিয়ে যদি সে তার কাজ থেকে দূরে থাকে তাহলে তার দুর্ভাগ্যের জন্য সে দায়ী হবে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা আছে এটি নতুন করে প্রমাণ করার দরকার নেই । এটি সত্য ধরে আপনাকে কর্ম পরিকল্পনা সাজাতে হবে তাহলে আপনি আপনার যে প্রত্যাশিত কাজ ও ফল তা পাবেন। আলাদা করে এই বিষয়ে প্যারা নেবার কোন মানে হয় না। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা রোধ বা নানা কারনে সাক্ষ্য আইনের ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ ধারায় এই রকম কথাই বলা হয়েছে যে আদালত কিছু বিষয় সত্য বলে ধরে নিবেন তা আর আলাদা করে প্রমাণ করার দরকার হবে না। আইনের ভাষায় যাকে বলা হয় বিচারিক অবগতি বা জুডিশিয়াল নোটিশ।যখন কেউ তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন সে বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষ হতে পারে।
শীতের সকালে যদি কোন ব্যাক্তি কোদাল কাধে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটে তাহলে খুব সহজ অনুমান করা যায় সে ব্যাক্তি মাটি কেটে আসলো তাই তার শরীর গরম ও তাই সে শীতের জন্য গরম পোষাক পড়েনি। আবার কোন ব্যাক্তি যদি পায়ে কেস ও ট্রাউসার পাশাপাশি শরীরে একটি পাতলা সুতি কাপড় পড়ে হাটে তাহলে অনুমান করা যায় সে ব্যায়াম করছে। এই অনুমান গুলো যে সব সময় সত্য হবে তাও নয় তবে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। যে ক্ষেত্রে অনুমান সত্য হবার সম্ভাবনা বেশী তা আদালত সত্য বলে ধরে নেন।এরুপ হলে তা আদালতে যদি কেউ মিথ্যা বলে দাবী করেন তাহলেই কেবল মাত্র তা সন্দেহের মাঝে পড়তে পারে। এই বিষয়গুলোই হলে আদালতের ভাষায় ” শ্যাল প্রিজিউম”। আবার যে বিষয়গুলো আদালত সত্য বলে ধরতেও পারে নাও পারে সেগুলো “মে প্রিজিউম” বলে গণ্য হবে। এই ক্ষেত্রে আদালত প্রমানের জন্য আহ্বান করতে পারেন বা নাও পরেন।
অন্যের সমন্ধে বা ঘটনার সমন্ধে যাই অনুমান করা হোক না কেন তা সব সময় সত্য হবে এমন কোন কথা নাই । অনেক সময় তা মিথ্যাও হতে পারে। কোন ব্যাক্তি তাকে কোন কিছুর যোগ্য বলে মনে করে তাহলে তাকেই তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। যে ব্যক্তি গায়ক হতে চায় তার গাণের গলার মাধুরী দিয়ে তাকেই দর্শক শ্রোতা মুগ্ধ করে জনপ্রিয় গায়ক হতে হবে। সে যদি তার যোগ্যতার প্রমাণ না করে শুধু মাত্র দাবী করেই বসে থাকে যে সে ভালো গায়ক তাহলে তার সমন্ধে কেউ জানবেও না তার যোগ্যতার প্রমাণ করাও হবে না। সাক্ষ্য আইনের বিধানও কোন বিষয়ের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা প্রমাণ করা । এক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন কে কোন বিষয় প্রমাণ করবে তা নির্ধারন করে দিয়েছে । ১০১ ও ১০২ ধারায় মূল কথাটি বলা হলেও ১০১- ১১৪ ধারা পর্যন্ত মূলত এই কথাটিই বলা হয়েছে। নিজের অস্তিত্ব নিজেকেই জানান দিতে হবে। নিজের অস্তিত্ব নিজেকেই প্রমাণ করতে হবে।আমি যে বিষয়টির দাবী করছি তার প্রমাণ আমাকেই করতে হবে।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট। mdnurunnobiislam379@gmail.com, 01517856010