সব
facebook apsnews24.com
ভার্চুয়াল কোর্ট নাকি কোর্টের ভার্চুয়াল কাজ? জেলায় জেলায় সমন্বয়হীনতার প্রতিকার। - APSNews24.Com

ভার্চুয়াল কোর্ট নাকি কোর্টের ভার্চুয়াল কাজ? জেলায় জেলায় সমন্বয়হীনতার প্রতিকার।

ভার্চুয়াল কোর্ট নাকি কোর্টের ভার্চুয়াল কাজ? জেলায় জেলায় সমন্বয়হীনতার প্রতিকার।

মোঃ আজিজুর রহমান দুলু

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা,  চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেরপুর এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুড়িগ্রামগণের কার্যালয় হতে ইস্যুকৃত ভিন্ন ধরনের  তিনটি সার্কুলার পর্যালোচনা করে একটি প্রশ্ন এসে যায়। প্রশ্নটি হলো ভার্চুয়াল কোট আইনগতভাবে সঠিক কিনা? ইহার সাথে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় আমাদের সামনে, সেটা হলো তিনটি জেলায় বা এলাকায়  তিন ধরনের নোটিশ  এক ধরনের সমন্বয়হীনতার পরিচয় বহন করে।  সমন্বয়হীনতা এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু সুপারিশ আলোচনা করার আগে ইহা আলোচনা করা অতীব আবশ্যক যে ভার্চুয়াল  কোট  আইনগতভাবে সঠিক কিনা?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদেরকে প্রথমে দেখতে হবে আমাদের সংবিধানের দিকে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৯৪ এবং ১১৪ অনুসারে আমাদের দেশে মাত্র দুই ধরনের কোর্ট বিদ্যমান। একটি হল দা সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ  এবং অন্যটি হলো অধস্তন আদালত অর্থাৎ সকল অধস্তন আদালত। আদালতের সংজ্ঞায় ট্রাইব্যুনালকে অন্তর্ভুক্ত করা আছে জন্য আলাদা করে ট্রাইবুনাল সংবিধানে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয়নি। সাংবিধানিকভাবেই পরিষ্কার যে এই দুই ধরনের আদালতের বাইরে কোন ধরনের আদালত বাংলাদেশে বিদ্যমান থাকার কোন আইনগত সুযোগ নাই।  হ্যাঁ এটা সত্য যে  সংবিধানের ১১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের মাধ্যমে যে কোন নামে অন্য যে কোন অধস্তন আদালত প্রতিষ্ঠা করা যাইবে।  এখন প্রশ্ন হলো  ভার্চুয়াল কোর্ট নামে কোন কোর্ট আমাদের দেশের সংসদ কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে প্রতিষ্ঠা করেছেন কি না ?  সহজ  উত্তর না। মহামান্য রাষ্ট্রপতি  ২০২০ সালের ১  নম্বর অধ্যাদেশ হিসেবে যে অধ্যাদেশ জারি করেছেন সেই অধ্যাদেশের ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে  “এই অধ্যাদেশ আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ নামে অভিহিত হইবে।” উক্ত দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যমান উচ্চ আদালত এবং অধস্তন আদালতসমূহকে আদালতের কার্যক্রম সম্পাদনের নিমিত্তে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ইহার মানে এই নয় যে, ভার্চুয়াল কোর্ট নামে আলাদা কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দেশে বিদ্যমান আদালত  যাতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তার কাজকর্ম করতে পারেন সেই ক্ষমতা প্রদান হলো উক্ত  অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য। উক্ত অধ্যাদেশের ৫নম্বর ধারায়  আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করার ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত অধ্যাদেশের কোথাও বলা হয়নি যে জেলায় জেলায় কিংবা হাইকোর্টের কাজকর্মের নিমিত্তে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন করা হলো। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে উক্ত অধ্যাদেশ এবং সংবিধান ভালো করে না জেনে প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে  আইন বহির্ভূত ভার্চুয়াল  কোর্ট   চিহ্নিত করে  নোটিশ জারি করা হয়েছে। ভুলের এই যাত্রায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের নামো চলে আসে। কেননা তিনি  তার  স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের অধস্তন  আদালতসমূহের  জন্য যে ২১৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন  উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে তিনি  সঠিকভাবে ভার্চুয়াল কোর্ট  উল্লেখ করেন নাই।  তিনি উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আইনের মর্ম অনুযায়ী ভার্চুয়াল শুনানির কথা উল্লেখ করেছেন। উক্ত অধ্যাদেশ এবং সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের আদালতের কার্যক্রম এর মধ্যে জামিন শুনানির কাজটি আপাতত ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে সম্পাদন করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় প্রাকটিস ডাইরেকশন জারি করেছেন।  কিন্তু  এ কথা আমাদের বোধগম্যতায় আসে না  কোন যুক্তিতে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের জন্য যথাক্রমে ২১৩ এবং ৪০৭ /২০২০এসসি (এডি)   নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়াল কোর্ট উল্লেখ করেছেন।

যাহাই হোক,  বাংলাদেশের সংবিধান এবং ২০২০ সালের ১ নম্বর অধ্যাদেশ অনুসারে  কিংবা অন্য কোন আইন অনুসারে  ভার্চুয়াল কোর্টের কোন অস্তিত্ব এই মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ এ নেই।  সেই কারণে  ঢাকা সিএমএম আদালত  হতে গত ১১.০৫.২০২০ ইং তারিখে ১৪৪ নম্বর আদেশে যে চারটি ভার্চুয়াল কোর্ট চিহ্নিত করেছেন  তাহা উক্ত অধ্যাদেশ, সংবিধান এবং বিদ্যমান অন্যান্য সকল আইনের পরিপন্থী  কেননা সংবিধানের ৯৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ নম্বর যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য হলো আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা প্রদান। কোন ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন নয় । ফলে কোন জেলার  চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা  দায়রা জজ ভার্চুয়াল কোর্ট নামে কোন কোর্টকে চিহ্নিতকরণ করতে পারেন না।

এবার আসা যায়, জেলায় জেলায় কি ধরনের সমন্বয়হীনতা ইতোমধ্যে ঘটেছে এবং আগামীতে যাতে আর কোন ধরনের সমন্বয়হীনতা না ঘটে তার জন্য কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা দরকার।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে  প্রদত্ত ২১১ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দারা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা বলা হলেও ২১৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তির ২ নং  নির্দেশনা অনুযায়ী  জেলায় জেলায় প্রত্যেক আদালতের একটি ইমেইল আইডি  এবং একটি মোবাইল নম্বর   দিয়ে  চিহ্নিত করতে হবে। এভাবে আদালত ভিত্তিক ই-মেইল নম্বর নিজ নিজ আইনজীবী সমিতি কে প্রদান করতে হবে। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল  ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত দুই নম্বর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে  একটি মাত্র ইমেইল আইডি দিয়ে গত ১১.০৫.২০২০ ইংরেজি তারিখে ৪৫ নম্বর অফিস আদেশ জারি করেছেন। 

অন্যদিকে  শেরপুর জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২০২০ সালের ১ নম্বর অধ্যাদেশ,  সংবিধান এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে জারীকৃত  ২১১  এবং ২১৪ নম্বর  বিজ্ঞপ্তি  এর মর্ম  সঠিকভাবে উপলব্ধি কর একটি উৎকৃষ্ট মানের  নোটিশ জারী করেছেন।  অর্থাৎ শেরপুর জেলার উক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেরপুর জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি এর অধীনে নিজের আদালতসহ মোট দশটি আদালতকে ১০টি ইমেইল এবং ১০টি মোবাইল নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করে শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ২৮ নং অফিস আদেশের কপি জারি করেছেন।  অন্যদিকে ঢাকা সিএমএম আদালত এর  বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিএমএম আদালতের সকল আদালত কে একটি ইমেইল ও একটি মোবাইল নম্বর দ্বারা চিহ্নিত না করে  সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ এবং সংবিধানের বাইরে গিয়ে ৪ টি ভার্চুয়াল কোর্ট চিহ্নিত করে আরেক ধরনের  আইন পরিপন্থী  কাজ করেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলার  বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যে মাত্রায় আইন বহির্ভূত নোটিশ জারি করেছেন  তাহা শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের ২১৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তির  লংঘন বা পরিপন্থী নয়  উপরন্ত  ইহার ফলে প্রশাসনিক এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের মাঝে এক ধরনের অনিয়ম ও হয়রানি  সৃষ্টি হতে পারে। আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক   ইস্যুকৃত নোটিশ অনুযায়ী  সংবিধান ও ২০২০ সালের ১ নম্বর অধ্যাদেশ  বহির্ভূত যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাহা সংশোধন হওয়া আবশ্যক।  উপরোক্ত তিনটি জেলার তিনটি নোটিশ তিন ধরনের হওয়ায়  সমন্বয়হীনতার যে রূপ  প্রকাশিত  হয়েছে  তাহা অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে  আর যাতে না ঘটে  সেজন্য  শেরপুর জেলার বিজ্ঞ  চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  কর্তৃক জারিকৃত  যথাযথ নোটিশটি  অন্যান্য জেলার সংশ্লিষ্ট  ম্যাজিস্ট্রেটগণ  অনুসরণ  করতে পারেন  কিংবা  রেজিস্টার জেনারেল,  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  উক্ত  যথাযথ নোটিশটি আমলে নিয়ে অন্যান্য জেলার সংশ্লিষ্ট  ম্যাজিস্ট্রেটগনকে  অনুরূপ  যথাযথ  নোটিশ/অফিস আদেশ জারি করিতে নির্দেশ দিতে পারেন।

এভাবে  সমন্বয়হীনতা  দূরীকরণের নিমিত্তে  একটি পদক্ষেপ  নেয়া যেতে পারে। একই সাথে  মাইক্রোসফট টিমস, জুম  কিংবা গুগোল  মিট  এর পাশাপাশি  অন্য যে কোন সফটওয়ারের মাধ্যমে  বিচারকগণ ও আইনজীবীগন ভার্চুয়াল শুনানিতে  যাহাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন  তার জন্য  নির্দেশনা প্রদান করা  এইজন্য যে  ২০২০ সালের ১ নম্বর অধ্যাদেশে  কোন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে তা লিমিট করা হয়নি  অর্থাৎ  তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যে কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে উক্ত অধ্যাদেশে কোন প্রকার বাধা-নিষেধ না দিয়ে  উন্মুক্ত করা হয়েছে।  ইহার একটি প্রায়োগিক  ভালো দিক হলো  যখন সফটওয়্যার ব্যবহার অনির্ধারিত থাকবে  কিংবা  প্রাকটিস ডাইরেকশন এর বাহিরের  কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে  তখন সুবিধা হবে  ভার্চুয়াল শুনানির ক্ষেত্রে  এইজন্য যে  সুনির্দিষ্ট সফটওয়্যার কার্যপদ্ধতি  যে কোনো সময়   নানা কারণে ব্যাহত হতে পারে অথবা  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জনাব সগীর হোসেন লিওন কর্তৃক প্রদত্ত  বিশ্লেষণী তথ্য অনুযায়ী  ভারতের কেরালা হাইকোর্টের  ই-জুডিশিয়ারি ফর্মুলা ফলো করা যেতে পারে । 

লেখকঃ মোঃ আজিজুর রহমান দুলু সাবেক বিচারক  ও  আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, মোবাইল: ০১৭১৬৮৩২৩০৮ E-mail: azizurrahmandulu@gmail.com 


মতামত লেখকের ব্যক্তিগত এবং তিনি এজন্য দায়ী থাকিবেন।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj