সব
facebook apsnews24.com
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (শেষ পর্ব) - APSNews24.Com

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (শেষ পর্ব)

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনঃ সমস্যা ও প্রতিকার (শেষ পর্ব)

মোঃ মাহবুবুর রহমান

গত দুই পর্বে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমূহ আলোকপাত করেছি। এই পর্বে উল্লেখিত সমস্যা সমূহের প্রতিকারে জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। নিম্নে সম্ভাব্য প্রতিকারসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

১.সার্ভে সম্পাদনের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগঃ

জমির সার্ভে এবং ম্যাপ প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ শিক্ষিত, প্রশিক্ষত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করতে হবে। প্রত্যেকটি অঞ্চলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট থাকা উচিত যিনি সার্ভে ও ম্যাপ প্রস্তুতের কাজে দক্ষ হবেন এবং  সার্ভে ও ম্যাপ প্রস্তুতের সময় উপস্থিত থাকবেন। এক্ষেতে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট সার্ভে ও ম্যাপ প্রস্তুত কাজের ব্যপারে বিশেষ প্রটকলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এর কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারেন। প্রত্যেক এলাকার জন্য সুশীল সমাজ থেকে কিছু দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে যারা সার্ভে ও ম্যাপ প্রস্তুতের কাজে কথা বলার অধিকার রাখবেন।সার্ভে চলাকালীন সময়ে ভূমি রেভিনিউ কর্মকর্তার উপস্থিতি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। 

২. দক্ষ সার্ভে, ডকুমেন্টেশন, রেকর্ড, নিবন্ধন ও খাজনা আদায় পদ্ধতি নিশ্চিতকরণঃ

একটি প্যাকেজ পদ্ধতির অধিনে সার্ভে, ডকুমেন্টেশন, রেকর্ড, নিবন্ধন ও খাজনা আদায় সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ এক অফিসের অধীনে নিয়ে আসা যায় কি না তার উপর বিশেষ গবেষণা করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত ।সম্ভবপর হলে বিদ্যমান অনেক আইনেও পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষ যদি একটি এলাকার এক অফিস থেকেই এ সকল কার্য সম্পন্ন করতে পারে তবে ট্রান্সপারেন্সি বাড়বে, হয়রানি কমবে। লোকবল বৃদ্ধির মাধ্যমে তা সম্ভব। যেমন, তহসিল অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসকে একিভূত করে একটি একক এখতিয়ার সম্পন্ন নির্বাহি অফিসার তথা সহকারী কমিশনার( ভূমি) এর অধীনে নিয়ে আসা যেতে পারে। 

৩.বিচারকার্য তরান্বিত করণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণঃ

আমার এ লেখার প্রথম পর্বেই উল্লেখ করেছি যে বাংলাদেশের বিচার আদালতে যত মামলা রজু হয় তার ৮০% ই ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে সৃস্ট। অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত তার “ State, Society and Government” শিরোনামের গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিস্পত্তি হতে গড়ে ৯.৫ (সাড়ে নয়) বছর সময় লাগে। পাঠকমন্ডলী হয়তো এটা জেনেও খুব বেশী অবাক হবেন না। আমরা সবাই জানি এই প্রবাদটি- Justice delayed justice denied । ন্যায় বিচারের অভিগম্যতার (Access to justice) জন্য মামলার দীর্ঘসূত্রিতার চেয়ে বড় অন্তরায় আর কী হতে পারে? তবে আমাদের সব সয়ে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও অবশ্যই তা আশা ব্যঞ্জক নয়।বিচার বিভাগকে সুচারুরূপে ঢেলে সাজানো দরকার এবং লোকবল বাড়িয়ে বিচারকার্য আরো বেশি তরান্বিত করতে হবে। 

৪.খাস জমি বন্টন ব্যবস্থা আরো বেশি প্রয়োগিক, স্বচ্ছ ও জবাবদীহিমূলক হওয়া দরকারঃ

সরকারের প্রথম দায়ীত্ব হলো দেশে বিদ্যমান সকল খাস জমি যথাযথ ভাবে চিহ্নিত করা এবং তা গেজেট আকারে জনগনের সা্মনে প্রকাশ করা। এরপর যে সকল খাস জমি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বে-আইনী ভাবে জবরদখল হয়ে  আছে সে গুলো দখল মুক্ত করে রাষ্ট্রের মালিকানায় নিয়ে আসা।খাস জমি সংক্রান্ত সকল তথ্যাদি সরকারী ডিজিটাল পোর্টাল/ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া উচিত এবং কোন নাগরিক চাইলেই দেখতে পারে সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।একই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আরো কিছু বিষয় উল্লেখ থাকতে পারে। যেমনঃ 

 ক. খাস জমির মধ্যে বণ্টনযোগ্য জমির পরিমান।

 খ. কারা এই বন্টন যোগ্য জমির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে?

 গ. খাস জমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি। 

 ঘ. কখন এবং কার কাছে আবেদন করতে হবে?

 ঙ. আবেদনের সাথে কি পরিমান ফি পরিশোধ করতে হবে? 

 চ. বন্টনের সম্ভাব্য সময়।

 ছ. কি ভাবে খাস জমির বন্টন পাওয়ার পর তার দখল নিতে হবে?

 জ. বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হলে তার সম্ভাব্য সমাধান ।

উপরোক্ত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষ জানে না। আমাদের আইনে খাস জমি গরীব জনগনের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা আছে। অথচ গরিব কৃষক বা জনগন কি এসকল পদ্ধতি জানে? যার কারনে খাস জমির বরাদ্দ স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পেয়ে থাকে। 

৫. ভূমি সংক্রান্ত আইনের সহজ -সরল বাংলা অনুবাদ করণঃ

আমাদের দেশে ভূমি সংক্রান্ত মৌলিক যে সকল আইন আছে তার অধিকাংশই বৃটিশ বা পাকিস্তান আমলে করা হয়েছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে শুরু করে ১৯৮৪ সালের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, অধিকাংশ আইনই উচ্চ মার্গের ইংরেজি ভাষায় প্রণিত। অথচ আমাদের দেশের কৃষক শ্রেনীর অধিকাংশই অশিক্ষিত। কার্যত দেশের শিক্ষিত শ্রেনীর কতজনই বা এ সকল আইন ইংরেজি ভাষায় পড়ে বুঝতে পারবে তা নিয়ে আমার ঢের সন্দেহ ও অনাস্থা রয়েছে। আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী যারা ইংরেজী মাধ্যমে আইন পড়ে তারাও ক্লাসের মধ্যে বারবার প্রশ্ন তুলেছে যে ভূমি সংক্রান্ত আইন গুলো এতো কঠিন ভাষায় লেখা কেন? মজার ব্যপার হলো আজো এ সকল আইনের কোন নির্ভরযোগ্য বা সরকারী গেজেট আকারে বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি।সুতরাং সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করে এই আইনগুলো বাংলায় প্রকাশ করা উচিত। 

৬.  ভূমি দস্যুতা ও দূর্ণীতি বন্ধকরণঃ 

Land Grabbing বা ভূমি দখল/ দস্যুতা কে কার্ল মার্ক্স আদি যুগে থেকে চলে আসা ভুমি আহরনের পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করতেন । কিন্তু হারভে (২০০৩) এই grabbing এর অর্থের ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসেন আহরনের পরিবর্তে জবরদখল হিসেবে চিহ্নিত করেন । বাস্তবিক অর্থে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভূমি দস্যুদের জবরদখল নামক অপকর্মের আর্থিক ও সামাজিক অবিচারের সম্মুখিন হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের বাহু শক্তি ব্যবহার করে এহেন অপকর্ম গুলো চালিয়ে যায়। আর তাদের এই অপকর্মে অনেক সময় সরকারী কর্মকর্তা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন যা স্পষ্ঠত দূর্ণীতি।যেমন,  বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করে স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। অথচ চাইলেই স্থানীয় প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে পারেন। অন্যদিকে প্রবন্ধের প্রথম পর্বে ভূমি ব্যবস্থাপনায় দূর্ণীতির খড়গের কথা আলোচনা করেছি। শতকরা ৫৯ জন মানু্ষই ভূমি সংক্রান্ত ব্যপারে সেবা নিতে যেয়ে দূর্ণীতি ও হয়রানির স্বীকার। সুতরাং এগুলো বন্ধ করার জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

৭. ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ঠ সমস্যার সমাধান করাঃ

আমার এই লেখার ২য় পর্বে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ঠ সমস্যার কথা উল্লেখ করেছি। মূল কথা হলো ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের আপিল করার জন্য ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা ।( বিস্তারিত জানার জন্য ২য় পর্ব দ্রষ্টব্য)  অথচ আজো তা নাই। আবার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল আজ বিদ্যমান অথচ ২০১৩ সালেই এই ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সময় তামাদি করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে যে সকল অর্পিত জমি সরকার ব্যতিত অন্য মানুষের হাতে দখল হয়ে আছে তার সুরাহা করার মত বাস্তবিক কোন সমাধান নেই। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল চালু করা এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইব্যুনাল  এ মামলার তামাদির মেয়াদ পুনঃবিবেচনা করা দরকার।

৮. ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির উপর জোর দেওয়াঃ

আদালতের দারস্থ না হয়েই যতটা সম্ভব মানুষ যেন পরস্পরের মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পেতে পারে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালিশি পর্ষদ গঠনের উপর জোর দেওয়া যেতে পারে। প্রত্যেক ইউনিয়ন বা পৌরসভাতে  একটি করে সালিশি পর্ষদ থাকতে হবে যেটা স্থানীয় চেয়ারম্যান বা মেয়র এবং সমাজের গণ্য-মান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এই সালিশি পর্ষদের দেওয়া সিদ্ধান্ত কাউকে সংক্ষুদ্ধ করলে তবে জমি বা সম্পত্তির মূল্যমান অনুযায়ী এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা করতে পারবে। বিষয়টা অনেকটা মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এ প্রদত্ত সালিশি পর্ষদের মত হবে। এই সালিশি পর্ষদ সমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হলে তবে মোকাদ্দমা আদালতে গড়াবে। তবে সরকারী অফিস তথা তহসিল অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা শুরু হলে তার জন্য ভিন্ন উপায়ে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির পন্থা অবলম্বন করার বিধান করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবন নির্বাহের জন্য তাদের ভূমির উপর নির্ভরশীল । ভূমি ব্যবস্থাপনা যত ভালো হবে দেশের মানুষের জীবন ততো সহজ-সরল, সাবলীল হবে। কোন নীতিমালায় প্রকৃত কৃষকদের কল্যাণ আনতে পারবে না যতক্ষণ না সরকার নিজে কৃষকদের প্রকৃত কল্যাণে মনোনিবেশ করবে।ভূমি সংক্রান্ত আইনের যে সব যায়গায় গলদ আছে সে গুলো সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে পারলে সামাজিক বৈষম্য ও কলহ হ্রাস পাবে।অন্যদিকে খাস জমি গুলো উদ্ধার করে গরীব জনগনের মাঝে বন্টন পূর্বক তাদেরকে পূণর্বাসন করতে পারলে মানুষের নগরমুখি চাপ তথা রাজধানী মুখি হওয়া থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে। কমে যাবে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ।সর্বোপরি একদিনে সকল সমস্যার সমাধান হবেনা। প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা ও নতুন পদ্ধতির উন্মেষ ঘটিয়ে তা বাস্তবায়নের।

লেখকঃ প্রভাষক, আইন বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

লেখার পর্ব -১ পড়ার জন্য ক্লিক করুনঃ https://apsnews24.com/news/1214?fbclid=IwAR0029rCEw5tbZ9jKk-iSs8nKM3i0aEFRLpwtsPYWto5jCa9puhvHS371SQ

পর্ব -২ পড়ার জন্য ক্লিক করুনঃ https://apsnews24.com/news/1660

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj