মু. আহসান হাবীব
সত্য কিতাবের প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তারা অবশ্যই সৎকর্মশীল নয়। যারা সৎকর্মশীল নয় তাদের জন্য শেষপর্যন্ত কখনোই সুন্দর, মনোরম ও সুসজ্জিত ব্যবস্থা থাকতে পারে না। নিশ্চয়ই স্রষ্টা বিচারের এব্যাপারে শতভাগ ন্যায়পরায়ণশীল। লোভাতুর সুযোগ সামনে এলে যারা সুযোগ গ্রহণ করে সুবিধা হাসিল করেন, তারা কি কখনো সৎকর্মশীল হতে পারেন?
সত্য কিতাব কি? যে কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। নেই কোনো জটিলতা। যে কিতাব সত্য ও সরল পথে আহ্বান করে সত্যকে উন্মোচিত করতে সহায়তা করে সেটাই সত্য কিতাব। এই কিতাব কেবল মুখে পড়ে কখনো সত্যদর্শন/ সত্যলাভ সম্ভব নয়। কিতাব মুখস্থ/ হেফজ করেও তা হয় না কখনো। সত্যদর্শনের জন্য এই কিতাবের প্রত্যেকটি বাণীর ভেতর নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়। ডুবে যেতে হয় প্রত্যেকটি সত্যবাণীর গভীর থেকে গভীরে। কোনো অলীক কল্পনার আশ্রয়ে নয়। লৌকিক বিচারেও নয়। তবে অলৌকিক কিছু ঘটে গেলে দোষের কিছু নেই। প্রয়োজনে যৌক্তিকতাকে সেখানে খুঁজে নিতে হয় আপন পথে। করতে হয় সত্যবাণীর বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। অধৈর্যের পরিচয় দেওয়া এখানে সম্পূর্ণ বারণ। ভুলে যেতে হয় জাগতিক কাম, ক্রোধ, অহংকার, লোভ, মোহ ও মাৎসর্য। সত্যলাভের পথে এগুলো প্রধান বাঁধা গুলোর কয়েকটি। কিরূপে তা (সত্যলাভ) করতে হয়? সে পদ্ধতি কেউ আগে থেকেই তৈরি করেছে কি? না। একদম না। কারো তৈরি করা পদ্ধতিতে/ পথে হয়তো সে (নিজে) সত্যকে লাভ করেছে। কিন্তু সে পথে অন্য কারো সত্যলাভ সম্ভব নয়। বনেজঙ্গলে, মহীরুহের তলায়, গুহাবাসে, পীর, দরবেশ, আউলিয়া, দরবারে গিয়েও কখনো সত্যলাভ হয় না। এসবের অধিকাংশ-ই ভণ্ড/ ভণ্ডামি। তবে কিছুক্ষেত্রে জীবনযাপনের জন্য নৈতিক শিক্ষা ও তথ্য পাওয়া যায় সেসবে। কিছুটা উপকারীও বটে। কিন্তু তা একেবারেই অযথেষ্ট। সত্য লাভের পন্থা আবিষ্কারের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বিজ্ঞাপন, হ্যান্ডবিল তথাপি প্রচার যারা চালায় তারা সরাসরি ভণ্ড। গুরু-বাবা’রা কেল্লা স্থাপন করে চালায় ধর্মব্যবসা। এসবের কাস্টমার হলেন সরাসরি অশিক্ষিত মূর্খের দল। সাথে আছেন কিছু শিক্ষিত অপদার্থের দলও। ভনিতা, লেবাস ও সম্মোহনী শক্তি এদের প্রধান হাতিয়ার ও আকর্ষণের বস্তু। মাথায় থাকে শয়তান। ভাবভঙ্গিমায় যেনো মানুষরূপী ফেরেস্তা। মূর্খের দলেরা সেখানে আধ্যাত্মিকতা ও অলৌকিক নিদর্শনও খুঁজে বটে। সত্যদর্শনের নাম নাই; অলৌকিক নিদর্শনের চাতুর্যময়তা নিয়ে ব্যস্ত তারা। সব ছলচাতুরী ও ভণ্ডামি। যিনি সত্যলাভ করেছেন তার কাছে অলৌকিক নিদর্শন থাকতেই হবে এমনটা নয়। তবে থাকাটা দোষের নয়। আর অলৌকিকতার নামে জাদুবিদ্যা প্রদর্শন করলেই তাকে সত্যপথের দিশারী বলে মেনে নেওয়াটা সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা ও মূর্খামি। সত্য কিতাবে রয়েছে এইসব ব্যাপারে বহু সতর্কতা। সত্যকে অসত্য বলে যারা মেনে নিয়েছে তাদের কি পরিত্রাণ দিবে?
সত্য লাভ করতে হয় আপন পথে। এ পথ সহজ নাকি কঠিন? সে প্রশ্নেরও কোনো রেডিমেড জবাব নেই। একমাত্র স্রষ্টাই জানেন তার জবাব। কিন্তু সে জবাব সরাসরি মানবের মাঝে দেওয়ার রীতি তিনি অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন ওহী নাজিলের পথও। নবি আগমনের রীতিও শেষ। তাহলে উপায় কি? উপায় হলো সত্য কিতাব ও আপন পথে সত্যবাণীকে উপলব্ধি করে সত্যকে তালাশ করা। কিতাবের বাণী ধারণ করে নিজেতে খুঁজতে হয় সত্যকে। যে নিজেকে চিনল না, সে সত্যকে চিনবে কিকরে? তবে সাবধান! যার ভিতর অবিদ্যা, লোভ, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা ও অহংকার আছে তার জন্য সত্যলাভ কখনোই সম্ভব নয় এতটুকু অন্তত বলা যায়। কিন্তু পথ কোনটি/ কিভাবে? সেটা বলা যায় না।
হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের ওপর নাজিল হয়েছে উপদেশবাণী। বিশ্বাসীদের জন্য এতে রয়েছে অন্তরের সকল বিভ্রান্তি ও ব্যাধির নিরাময়, সরলপথের নির্দেশনা ও রহমত। [ সূরা ইউনুস: আয়াত: ৫৭ ]
সত্য কিতাবে যাকিছু বলা হয়েছে তার সবকিছুকে সত্য বলে মেনে নেওয়া ও তা ধারণ করে অনুসরণ করাই হলো বিশ্বাসীদের পরিচয়।
মহান রব বিপদ ও অনুগ্রহের কথা বলতে গিয়ে সত্য কিতাবে উল্লেখ করেন, ‘(জেনে রেখো) আল্লাহ্ তোমাকে কোনো বিপদ দিলে তিনি ছাড়া কেউ তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাকে কোনো অনুগ্রহ-সম্পদ দান করেন, তবে কেউ তা রদ করতে পারবে না। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তিনি অনুগ্রহ-সম্পদ দান করেন। তিনি অতীব ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।’ [ সূরা ইউনুস: আয়াত: ১০৭ ]
লেখকঃ মুহাম্মদ আহসান হাবীব: শিক্ষক ও লেখক।