সব
facebook apsnews24.com
দেওয়ানি মোকদ্দমায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের নীতি সমূহ - APSNews24.Com

দেওয়ানি মোকদ্দমায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের নীতি সমূহ

দেওয়ানি মোকদ্দমায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের নীতি সমূহ

অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাঃ (Ad interim injunction) ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারা মোতাবেক অস্থায়ীনিষেধাজ্ঞা হচ্ছে এমন একটি নিষেধাজ্ঞা যাহা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা বিজ্ঞ আদালত কতৃক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে। মোকদ্দমার যে কোন পর্যায়েই নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায় এবং ইহা ১৯০৮ সালের সিভিল প্রসিডিউর কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

যেহেতু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সিভিল প্রসিডিউর কোড দ্বার নিয়ন্ত্রিত সেহেতু সিভিল প্রসিডিউর কোডের নির্দেশাবলী আলোচনা করা আবশ্যক। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সিভিল প্রসিডিউর কোডের অর্ডার-৩৯, রুল-১ এ উল্লেখ রয়েছে, সেখানে কোন মোকদ্দমায় অ্যাফিডেভিট বা অন্য কোন উপায়ে প্রমানিত হয় যে-

(ক) মোকদ্দমার অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি মোকদ্দমার কোন পক্ষ কতৃকক বিনষ্ট,ধ্বংস বা হস্তান্তরিত হওয়ার আশংকা আছে অথবা ডিক্রি কার্যকর করার ক্ষেত্রে এ আইনের উদ্দেশ্য ব্যাহত করার জন্য বিক্রয় বা হস্তান্তরিত হতে পারে।

(খ) প্রতিপক্ষ তাহার পাওনাদারকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তাহার সম্পত্তির প্রকৃতি পরিবর্তন বা অপসারন বা হস্তান্তরিত করার ইচ্ছা প্রকাশ বা হুমকি প্রদর্শন করিতেছে, তখন বিজ্ঞ আদালত অনুরুপ কর্মকান্ড রোধ করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করিতে পারেন অথবা মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পযন্ত উক্ত সম্পত্তি বিনষ্ট,ধ্বংস,হস্তান্তর, প্রকৃতি পরিবর্তন, হস্তান্তর অপসারন স্থগিত বা রোধ করার উপযুক্ত আদেশ দিতে পোরেন।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের নীতিসমুহঃ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের ক্ষেত্রে উ”চ আদালতের একাধিক নজীরে কয়েকটি মূলনীতির কথা বলা হইয়াছে সেগুলো নি উল্লেখ করা যেতে পারে।

(১) আপাতঃ দৃষ্টিতে ভাল কেসের অস্তিত্ব থাকাঃ (Existence of Prima facie Case)

(২) যুক্তিযোগ্য কেস (Existence of Arguable Case)

(৩) অপূরণীয় ক্ষতিঃ  (Irrepararble loss)

(৪) মোকদ্দমার সার্বিক ভারসাম্যঃ (Balance of Convenience & Inconvenience)

(৫) দরখাস্তকারীর আচরণঃ (Conducit of the Petitioner)

(৬)  একাধিক নতুন মোকদ্দমার সৃষ্টিঃ (Existence Multiplicity of Suit)

(৭)  হুমকি প্রদান বা কারণঃ (Threat or Cause of Action)

নিম্নে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের  উপর্যুক্ত মূলনীতিসমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

(১) আপাতঃ দৃষ্টিতে ভাল কেসের অস্তিত্ব থাকাঃ (Existence of Prima facie Case) দরখাস্তকারীর আবেদন,অ্যাফিডেভিট, প্রয়োজনীয় দাখিলী দলিলপত্র দেখিয়া যদি আদালতের কাছে একটি স্ব”ছ ধারনা গ্রহন করা সম্ভব হয় যে মূল মোকদ্দমায় আবেদনকারীর ভাল কেস আছে তখন তাহাকে আপাতঃ দৃষ্টিতে ভাল কেসের অস্তিত্ব থাকাঃ (Existence of Prima facie Case) বলে ধরা হয়ে থাকে। প্রথম দৃষ্টিতে দরখাস্তকারীর অনুকূলে ভাল কেস থাকা অনুধাবন করা হয় বলিয়া ইহাকে আপাত দৃষ্টিতে ভাল কেস বলে। আদালত যদি দেখিতে পান যে মূল মোকদ্দমা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিষ্পত্তি করিতে হইবে এবং ঐ বিষয়ে দরখাস্তকারীর দলিল পত্র, আরজি ও আবেদনে যে কেস প্রকাশ করিয়াছেন তখনকার মত তাহার অনুকুলে রহিয়াছে এবং যদি নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা না হয় তিনি মূল মামলায় জয়ী হইলেও অপুরনীয় ক্ষতি ভোগ করিবেন তাহা হইলে দরখাস্তকারীর আপাত দৃষ্টিতে কেস আছে বলিয়া ধরিয়া নিতে হইবে বিষয়টি আরও সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায় যে, আবেদনকারীর অনুকুলে কেস আছে তাহা এক নজরে দৃষ্ট হইলে তাহাকে আপাত দৃষ্টিতে কেস থাকা বা Prima facie Case বলে।

(২) যুক্তিযোগ্য কেস (Existence of Arguable Case) কোন মোকদ্দমায় আদালতের সামনে যে কেস নিয়ে যুক্তি দেখানো যায় বা যুক্তি দিয়ে বলা যায় যে, আবেদনের যথার্থতা রহিয়াছে। মোকদ্দমার ঘটনা নিয়ে আদালতের সামনে যদি যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করা যায় তাহা হইলে যুক্তিযোগ্য কেস আছে বলিয়া ধরা যায়। নিষেধাজ্ঞা প্রার্থণা করিলে দরখাস্তকারীকে ইহা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন নেই যে, ডিক্রি হওয়ার সম্ভাবনায় একটি ভাল কেস দরখাস্তকারীর আছে। যদি দরখাস্তকারীর একটি যুক্তিযোগ্য কেস থাকে তবে উহাই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য যথেষ্ঠ হবে। এক্ষেত্রে আদালতের দেখার বিষয় যে সুন্দর ও যুক্তিযোগ্য কোন কেস দরখাস্তকারীর অনুকূলে বিদ্যমান আছে কিনা? অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের ক্ষেত্রে মোকদ্দমার গুনাগুণের উপর কোন আলোচনার বিশেষ প্রয়োজন পড়েনা।

(৩) অপূরণয়ি ক্ষতিঃ  (Injury or Irreparable Loss)  যে ক্ষতি অর্থ বা মুদ্রা দ্বারা পূরণযোগ্য নহে তাহাকে অপূরণীয় ক্ষতি বলে। অপূরণীয় ক্ষতি বলতে সকল সময় সেই সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকে বুঝিতে হইবে যাহা খেসারতের মাধ্যমে যথাযথভাবে পূরণ সম্ভব নয়। অর্থাৎ দরখাস্তকারীর পক্ষে আপাত ভাল কেস রহিয়াছে এবং বিচারক কৃত কার্যের জন্য আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এবং যদি নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা না হয় তাহলে বাদীর অপুরণীয় ক্ষতি হবে যাহা অর্র্থ দ্বারা পূরণ করা যাবেনা, ইহাকে অপূরণীয় ক্ষতিঃ  (Injury or Irreparable Loss) বলা হয়ে থাকে।

(৪) মোকদ্দমার সার্বিক ভারসাম্যঃ (Balance of Convenience) আপাত দৃষ্টিতে কেস থাকিলেও যদি দেখা যায় যে, নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করিলে যে উপকার হইবে তাহার চেয়ে ক্ষতি হইবে বেশী ,তাহা হইলে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা উচিৎ হবেনা। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করার পুর্বে আদালত কেসের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সুবিধা-অসুবিধার ভারসাম্য বিবেচনায় আনিবেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করার সময় আদালত অবশ্যই সতর্কতার সহিত পারিপার্শি¦কতা বিবেচনা করিবেন এবং পক্ষগনের সুবিধা-অসুবিধার ভারসাম্য বিবেচনা করিবেন।

(৫) দরখাস্তকারীর আচরণঃ (Existence Conduct  of Applicant) নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতকে দরখাস্তকারীর নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তীর অনুকুলে নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব প্রয়োজণীয়তা কতটুকু ইহা গভীরভাবে বিবেচনা করিতে হইবে। যদি দরখাস্তকারীর আবেদনের গুরুত্ব,ধরন, ও আবেদন পেশ করার ক্ষেত্রে বিলম্ব বা গুরুত্বহীনতা প্রকাশ পাই এবং আবেদনের গুরুত্ব বোঝা না যায় তবে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা যুক্তিযুক্ত হবেনা। নিষেধাঞার উৎপত্তি ও ইহার প্রয়োজণীয়তার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেই এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। ইকুইটি আইনের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা বা গধীরস হল যে ক) যিনি প্রতিকার পেতে চান তাহাকে বিলম্ব ছাড়াই প্রতিকার প্রার্থণা করিতে হইবে  খ)  বিলম্ব ন্যায়পরায়নতাকে বাধাগ্রস্ত করে। কারন হচ্ছে নালিশের কারন উদ্ভব হইলেই মানুষ নালিশ করিবে ইহাই স্বাভাবিক এবং এই স্বাভাবিকতার ব্যতিক্রম তখনই ঘটে যখন নালিশের কারন অতি তু”ছ ও নগন্য হয়ে থাকে।

(৬) একাধিক নতুন মোকদ্দমার সৃষ্টিঃ (Existence Multiplicity of Suit) যক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করার কারনে পক্ষদের মধ্যে একাধিক নতুন মোকদ্দমা উদ্ভবের কারন সৃষ্টি হয় সেইক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করিবেন। যতগুলি শর্ত সাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা যায় সেই সকল অতি আবশ্যকীয় শর্তপুরন সাপেক্ষে Multiplicity of  Suit এর উদ্ভব হয়। কাজেই এ অবস্থা বিবেচনা পূর্বক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা আবশ্যক।

(৭) হুমকি প্রদান বা কারণঃ (Threat or Cause of Action) প্রতিটি মোকদ্দমার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন বিদ্যমান থাকে। কারন বিনা কার্য হয়না। এই কারন উদ্ভবের পরই আইন বা আদালতের আশ্রয় গ্রহন করিতে হয়। এই কারন সৃষ্টির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের বা আইনগত অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহন করা অতি আবশ্যক, যদি তা করা না হয় সেক্ষেত্রে ঐ মোকদ্দমার আবেদনটি আইনের আশ্রয় লাভে গুরুত্বহীন ও সন্দেযুক্ত হইয়া উঠে। কাহাকেও তাহার বৈধ অধিকার হইতে বঞ্চিত,বেদখল,অপসারন ইত্যাদির হুমকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার পরেও যদি তিনি আদালতের আশ্রয় গ্রহন না করেন অথবা উক্তরুপ কোন কারন ব্যতিরেকেই আইন আদালতের আশ্রয় গ্রহন করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে আদালত তাহাকে কোন প্রতিকার প্রদান করিবেন না। সুতরাং প্রতিটি নিষেধাজ্ঞার আবেদনের মধ্যে অপরপক্ষ কর্তৃক বেদখল,অপসারন,ভয়ভীতি প্রদর্শন করার বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকিতে হইবে। কারন বিহীন কোন নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত বিবেচিত হওয়া উচিৎ নহে। প্রতিটি সিভিল মোকদ্দমার আরজিতে (Cuase of action) মোকদ্দমার কারন সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিতে হইবে। (Cuase of action) মোকদ্দমার কারন বলিতে কোন নির্দিষ্ট তারিখ বোঝায় না বরং এমন কতকগুলি ঘটনাগুচ্ছ যাহার দ্বারা মোকদ্দমাটি দায়ের করার কারন ও প্রেক্ষাপট বোঝা যায। নিষেধাজ্ঞা আবেদনের পিছনের অনুরুপ একটি প্রেক্ষাপট থাকা আবশ্যক। কারনবিহীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন কোনক্রমেই বিবেচনাযোগ্য হইতে পারেনা। এই জন্যই প্রতিটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট কারন আছে কিনা তাহা যাচাই করিয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করিতে হইবে।

যাহোক উপরোক্ত আলোনার মূল বিষয় ছিল নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর কেন্দ্রীক। নিষেধাজ্ঞা মুলত প্রতিকার মূলক আইন যে কোন দেওয়ানী মোকদ্দমায় বিষয়বস্তুর সহিত উভয় পক্ষই জড়িত থাকে এবং উভয় পক্ষের স্বার্থই বিষয়বস্তুর সহিত সম্পৃক্ত থাকিতে পারে। তাই উভয় পক্ষের স্বার্থকে সামনে রাখিয়া এই আদেশ দেওয়া হয়। আদালতের এই ক্ষমতাকে খুবই সতর্কতার সহিত প্রয়োগ করিতে হইবে যাহাতে কোন পক্ষই অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান লেখক ও আইনজীবী, জজকোর্ট মেহেরপুর। E-mail: advmizanur98@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj