এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
পাঠক! নিবন্ধের শিরোনাম দেখে আমাকে আগেই জ্ঞানপাপী, কথিত বুদ্ধিজীবী কিংবা অন্য কোন ভাষায় গোষ্ঠী তুষ্টি করে ছাড়বেন না। আমি যদি নিবন্ধের গভীরে নিয়ে আপনার দুঃখবোধকে উস্কে দিতে পারি, তাহলে ক্ষমা করে দেবেন। আমরা তো সবাই সম্পদ বলতে সোনা-দানা, টাকা-পয়সা, কড়িকেই বুঝায়। কিন্তু জ্ঞান যে বিশাল রকমের সম্পদ, চরিত্র আরও বড় সম্পদ, সুস্বাস্থ্য অতুলনীয় সম্পদ তার পরও আমরা সম্পদ বলতে অধিক ধনকেই বুঝি এবং তার পেছনেই ছুটি। আমি আজ যে দেবতার প্রয়োজনের কথা বলছি তিনি ছিলেন অবিবাহিত, তিনি কোনো দার গ্রহণ করেননি। তাকে একবার সিঙ্গাপুরে ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে বৈজ্ঞানিক কোনো উপস্থাপনার পরে একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি বিবাহ করেননি কেন? বক্তব্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে এর কোনো মিল ছিল না বলে, তিনি কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে বলেছিলেন, ‘আমি আশা করব আপনারা সবাই সুন্দর জীবন সঙ্গিনী নিয়ে সুখী জীবনযাপন করবেন।’
আসলে একজন গবেষক যখন গবেষণা নিয়ে মত্ত থাকেন, তখন সেই গবেষণাই তার জীবন সঙ্গিনী হয়ে যায়। আমি একজন গবেষককে জানি, যার অধীনে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল, সে যখন তার গবেষণা নিয়ে দিনের পর দিন, ব্যস্ত থাকতেন, তার স্ত্রী সেটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারেননি। একদিন গবেষককে তিনি বললেন, ‘তুই থাক তোর কুত্তা বিড়াল নিয়ে আমি চলে গেলাম।’ তারপর নিয়মমাফিক ডিভোর্স।
আমি আজ যে দেবতার প্রয়োজনের কথা বলছি তিনি একজন মহান বিজ্ঞানী। ভারত প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির ভবনে প্রবেশ করেছিলেন দুটো স্যুটকেস নিয়ে, ৫ বছর পরে প্রস্থানও হয়েছিল ওই দুটো স্যুটকেস নিয়ে। এতবড় বিজ্ঞানী হয়েও তিনি ছিলেন বিশ্বাসী। অজ্ঞেয়তা বা নাস্তিকতা তাকে কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার পাশাপাশি তার সম্পদ ছিল পাহাড়সম। উপমহাদেশে কেউ আর তার অসীম সম্পদ জ্ঞানের পাহাড় স্পর্শ করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এ দেবতার কোনো চাহিদা ছিল না। প্রাপ্তি ছিল অপরিসীম। ভালোবাসা আর প্রশংসার এ প্রাপ্তিতে তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তি। নারদকুলের অতি উপরে তার স্থান ছিল বলেই, তিনি দেবতা। কোনো ধরনের লোভ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি বলেই তিনি দেবতা, কাউকে কোনো কষ্ট না দিয়ে তিনি এ ধরাধাম ত্যাগ করতে পেরেছেন বলেই তিনি দেবতা। অজাত শশ্রু এবং নির্লোভ ছিলেন বলেই তিনি দেবতার রূপে মহামানব। পরোপকারই ছিল তার ধ্যান ধারণা। তাই দেবতার সব গুণে গুণান্বিত সেই দেবতা ছিলেন ড. এপিজে আবদুল কালাম।
তিনিই ছিলেন অসাধারণ দেশপ্রেমিক এবং প্রকৃত ভারতীয়। ভারত আজীবন এ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। পৃথিবীতে এমন কোনো রাজনীতিবিদ কি আছেন, যাকে তার সঙ্গে তুলনা করা যায়? সুদূর ভবিষ্যতে এমন কেউ একজন কি আসবেন এ মর্ত্যলোকে? দেবতার কোনো মৃত্যু নেই। তিনিই সত্যিকার অমর। একটা সত্যিকার বিশ্বাস নিয়েই তিনি অমর হয়েছেন।
পাঠক! নিবন্ধের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। পতিতা মানেই বেশ্যা আমরা এটাই বুঝি। পুরুষের স্পর্শ ছাড়া কোন নারী নষ্টা হয় কি-না। দেহ বিক্রি করা মেয়েটার নাম হয় পতিতা। কিন্তু তাকে পতিতায় পরিণত করা পুরুষের আলাদা কোনো নাম নেই। বেশ্যালয়ে থাকা মেয়েটার নাম হয় বেশ্যা। কিন্তু বেশ্যালয়ে ভিড় করা পুরুষদের আলাদা কোনো নাম নেই। সেই বেশ্যাগামী পুরুষদের স্থান সমাজে হয় কিন্তু বেশ্যালয়ের নারীদের স্থান সমাজে নেই। নারী বেশ্যা, নারী নষ্টা, নারী পতিতা, নারী পণ্য, নারী সমাজের কলঙ্কিত ধর্ষিতা হয়। এই নারী গুলোর মাঝে পবিত্রতা নেই কিন্তু এদের পবিত্রতাকে নষ্ট করে দেওয়া এই পুরুষ গুলোর মাঝে সেই পবিত্রতা আছে কি? এ বিষয়ে কারো কোন জবাব আছে কি? চাল, গম, টাকা, ভোট চোর ও ঘুষখোরদের যারা উস্কে দিচ্ছে, বাহবা দিচ্ছে, সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে, টিকিয়ে রাখছে-তাদেরকে কি নামে ডাকবেন। পাঠকের কাছে প্রশ্ন রেখে উত্তরের প্রতীক্ষায় লেখাটি শেষ করলাম।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮
লেখকের ব্যক্তিগত মতামত