অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
নালিশ, ইনকোয়ারি ও তদন্ত : ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর ৪(জ)ধারা অনুসারে ”নালিশ (Complaint) অর্থ ম্যাজিস্ট্রে কতৃক এই আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্দেশ্যে তার নিকট মৌখিক অথবা লিখিতভাবে এই মর্মে অভিযোগ করা যে জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাত কোন ব্যক্তি একটি অপরাধ করেছে ,কিন্তু এতে পুলিশ অফিসারের রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত হবেনা।
আর ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর ৪(ট) ধারামতে ইনকোয়ারি (Enquiry) অর্র্থ ”এই আইন অনুসারে কোন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা আদালত কত পরিচালিত বিচার ব্যতীত সমস্ত কার্যক্রমই হল ইনকোয়ারি” ইহাকে বলা হয় ইনকোয়ারি বা অনুসন্ধান
অপর দিকে ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর ৪(ঠ) ধারা মতে তদন্ত (Investigation) অর্থ ”স্বাক্ষ-প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কোন পুলিশ অফিসার অথবা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অপর কোন ব্যক্তি(ম্যাজিস্ট্রেট নহেন) কর্তৃক পরিচালিত সকল কার্যক্রম কে তদন্ত বলা হয়।
১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড-এর ২০০ ধারার বিধান মোতাবেক নালিশি মামলার ফরিয়াদির অভিযোগ বিজ্ঞ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি আকারে গ্রহন করিয়া ফরিয়াদির বক্তব্যের সারাংশ লিপিবদ্ধ করিয়া ফরিয়াদির স্বাক্ষর গ্রহনপূর্বক,ম্যাজিস্ট্রেটও স্বাক্ষর দান করবেন। যদি ঘটনাটি উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আমলে নিতে উপযুক্ত না হন তাহলে উহা যথাযথ আদালতে দাখিল করার জন্য সেই মর্মে পৃষ্টাঙ্কন করে নালিশটি ফেরত দিবেন অথবা অভিযোগটি যদি লিখিতভাবে করা না হয় তাহলে উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট ফরিয়াদিকে উপযুক্ত আদালতে প্রেরণ করবেন(ধারা-২০১) ম্যাজিস্ট্রেট যদি উপযুক্ত মনে না করেন তবে কারন লিপিবদ্ধ করে আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য সমন বা পরোয়ানা ¯’গিত রাখতে পারেন এবং নালিশের সত্যতা বা অসত্যতা নির্ধারনের জন্য নিজে ঘটনা অনুসন্ধান করিতে পারেন অথবা তাহার অধীনস্থ, অন্যকোন ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন পুলিশ অফিসার বা তিনি যাহাকে উপযুক্ত মনে করবেন এইরুপ কোন ব্যক্তি এই বিষয়ে অনুসন্ধান বা তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন (ধারা-২০২)। ফরিয়াদির অভিযোগ গ্রহন করে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকটে যদি মনে হয় অগ্রসর হওয়ার মত কোন কারন না পেলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটি ২০৩ ধারা মতে সরাসরি খারিজও করতে পারেন
আমাদের আলোচনার মূল বিষয়ব হল যাহার বা যাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়,তিনি কি এইরুপ কোন তদন্তে বা অনুসন্ধানে নিজে অংশগ্রহন করতে পারেন কি বা তাহার বা তাহাদের তদন্তে বা অনুসন্ধান কার্যক্রমে অংশ গ্রহনে আইনগত কোন বাধা নিষেধ আছে কিনা? যাহার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নালিশের মাধ্যমে অভিযোগ করা হয তাহাদের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ২০১(১) ধারা মতে অনুসন্ধান কার্যক্রম বা তদন্তে অংশগ্রহন করিতে দেওয়া যাবেনা এ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রহিয়াছে (৩৫ ডি.এল.আর, পৃষ্টা-১৭৬) কিš’ আমরা বাস্তবে কি দেখতে পা”িছ? মামলার তদন্তপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরাসরি আসামি বা বিবাদীকে তদন্তে বা অনুসন্ধান কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করার জন্য দিন-তারিখ,সময়, স্থান উল্লেখ পূর্বক লিখিত নোটিশ প্রদান করেন। কখনো আসামিগণ নিজেরাই তদন্ত কর্মকর্তার সহিত যোগাযোগ করিয়া অনুসন্ধান বা তদন্তে নিবিড়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। অনেক সময় আসমিদের সহিত তদন্ত কর্মকর্তার অর্থনৈতিক লেনদেও হয় বলে নানাভাবে গুঞ্জন শোনা যায় যাহা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নহে।
তদন্ত বা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফরিয়াদি বা অভিযোগকারীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে কিনা? তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার মামলার ঘটনার অতি গভীরে প্রবেশের ক্ষেত্র নাই বা সুযোগ নাই। তদন্তে ফরিয়াদীর/আসামির অংশ গ্রহনে তদন্ত বা অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হয়। ধরিয়া নেওয়া যায় আসামি/ফরিয়াদি তাহার বা তাহাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে খন্ডনের জন্য জন্য বিভিন্ন অজুহাত উপস্থাপন করিবে এবং নিজেদের কতৃক অপরাধ স্বীকার করবেনা বা করতে চাইবেনা। মামলার অনুসন্ধানের সময় অ্যালিবাই বা ঘটনাস্থলে না থাকার অজুহাত কোনক্রমেই গ্রহন যোগ্য হবেনা এমনি কি মামলার চার্জ শুনানিতে এই অজুহাতে কোন আসামিকে মামলা হতে অব্যাহতি দেওয়া যাবেনা, মামলার বিচারের সময় আসামি তাহার অজুহাত প্রমান করতে পারেন। এ অজুহাতের ক্ষেত্রে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রুলিংস প্রনিধানযোগ্য” Alibi during investigation not acceptable 51. DLR(AD) but to established during trial.- B.C.R(AD) Accused did not discharge his burden of proving alibi”
প্রসঙ্গতঃ কোন মামলার অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দায়েরকৃত মামলা আছে বা ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ছিল আরও আপাতঃ যুক্তি গ্রাহ্য অজুহাত তদন্তে উপস্থাপন করা হইতে পারে বা হয়। বিষয়টি উপর্যুক্ত রুলিংস দ্বারা সুস্পস্ট যে, তদন্তে কোন অজুহাত গ্রাহ্য নহে তাহা আদালত প্রমানের বিষয় ফরিয়াদি বা আসামিদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মামলা-মোকদ্দমা বিদ্যমান থাকিতে পারে। এই ক্ষেত্রে আইন কিন্ত নিরব নহে, অর্থাৎ প্রত্যেক মামলা তাহার গুনাগুন এবং পরিবেশ পরিস্থিতির উপর বিচার হইবে।
আমলাযোগ্য গুরুতর অপরাধের সংবাদ বা এজাহার সংশ্লিষ্ট থানায় রুজু না করিয়া ফরিয়াদি পিটিশন আকারে বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করিলে বিজ্ঞ আদালত ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর ১৫৬(৩) ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদাল(ম্যাজিস্ট্রেট) উক্ত পিটিশনটি সরাসরি এজাহার হিসেবে গন্য করার আদেশ দান অথবা তদন্ত সাপেক্ষে এজাহার হিসেবে গন্য করার আদেশ প্রদান করিয়া সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে পিটিশনে উল্লেখিত স্বাক্ষ্য ছাড়াও তদন্ত প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (আই/ও) ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড এর ১৬০ ধারার বিধান মতে,পিটিশনে বর্নিত বিষয়ে যিনি সবিশেষ অবগত,নিজের থানার মধ্যে বা পার্শ্ববর্তী থানার সীমার মধ্যে সেই সকল ব্যক্তিকে হাজির হওয়ার জন্য তলব দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায যে, ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৬১ ধরায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ জবানবন্দি ছাড়াও বাদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ফিরিস্তি কোন কোন মামলায় অধিক স্থান দখল করে থাকে। চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ পায় তদন্তে অ্যালিবাই তথা অনুপস্থিতির অজুহাত প্রাধান্য পায় উক্ত রুপ তদন্তে অ্যালিবাই মামলার সাভাবিক গতিপথ সর্পিল বন্ধুর হয় কোন কোন ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসমস্ত মামলার পুলিশ রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদান করেন ফরিয়াদিপক্ষ। নারাজি শুনানিকালে বিজ্ঞ ন্যায়পরান আদালতে আসামিপক্ষ অনেক সময় নিজ উদ্দ্যেগে বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করিয়া মামলার নারাজি শুনানিতে অংশ গ্রহনের নজির প্রায়ঃশই আমরা আদালতে দেখতে পায়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালতে উক্তরুপ শুনানিতে আসামিপক্ষকে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করা স্বত্বেও আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ গ্রহন করিয়া বিজ্ঞ আদালতের ডেকোরাম ভঙ্গ ও পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি তদন্তে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টায় রত থাকে। ফলে মামলার বিচার ও নিষ্পত্তি বিলম্বিত ও বিঘ্নিত হয়।
লেখক ও আইনজীবী, জজকোর্ট মেহেরপুর