নূরুন্নবী সবুজ
শান্তা নামের ১ম শ্রেণীতে পড়া মেয়েটি তার বাবা বা মা পাশে বসে না থাকলে কোন পড়াশুনাই করতে চায় না । বাসায় গৃহ শিক্ষক এসে তাকে কত পড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে তাদের কাছেও পড়তে চায় না । তাই গৃহ শিক্ষক থাকলেও বাবা-মা বা যে কেউ একজন তার সাথে থাকতেই হয়। শান্তা হয়ত একদিন বড় হবে সে একা একা পড়বে, তার পাশে আর তার বাবা মা বসে থাকার দরকার হবে না । কিন্তু আমাদের দেশে কি সাংবাদিক ছাড়া কোন ভালো কাজ করা সম্ভব? খারাপ কাজে সাংবাদিক খুবই বিপদজনক ও তা সাংবাদিকদের জন্যও বিপদজনক। সাগর রুনির আলোচিত হত্যাকান্ডসহ নানা অত্যাচার অবিচার সাংবাদিকদের উপর হয়েছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হবার ঘটনাও কম না। সাংবাদিকদের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তারা নিরাপদ সংবাদ দিতে পারবে না।
ত্রাণ আত্মসাৎ করার খবর প্রকাশ করে আজ পত্রিকার সম্পাদকের নামে মামলা চলছে। সাংবাদিকরা পায় কম দেয় অনেক বেশী। তাদের কাজই হলো ভালো বা খারাপ তার সত্য ঘটনা ও তথ্য প্রকাশ করা । ঘটনা যেন মানুষেকে সচেতন ও আরো সামাজিক করে সে ভাবে উপস্থাপন করা। তারা তাদের মহান এ দ্বায়িত্ব পালন করছে ও করবে যদিও কিছু ক্ষেত্রে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। গ্লাসের পানিতে চিনি দিলে তা পুরো গ্লাসে যায় যা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ব্যাপন । ভালো কাজের প্রকাশ করলে তা অন্য লোকদেরও উৎসাহিত করবে ও অন্যরা তা করতে উৎসাহিত হবে। এজন্য অবশ্যই ভালো কাজের প্রচারণা দরকার। আর খারাপ কাজের প্রচারণা বেশী হলে তা অনেক দূর্বল চিত্তের লোকের মাঝে খারাপ কাজ করার প্রবণতা তৈরী করতে পারে বলে খারাপ কাজ অধিক প্রচার না করাই ভালো । খারাপ ঘটনাকে ইতিবাচক ভাবে বা জনগণের জন্য শিক্ষামূলক করে তোলা কঠিন হলেও এটি সংবাদপত্রের মহান কাজের একটি। নাটক-সিনেমা দেখে না এমন লোক খুজে পাওয়া যাবে না।
কোন মামলার যখন শুনানি হয় বিশেষ করে ফেীজদারি মামলা যেমন, হত্যা তখন শুনানিতে আপনারা অপরাধের/খুনের মোটিভ কি এ কথা অবশ্যই শুনে থাকবেন। অপরাধ প্রমাণ করার সাথে সাথে অপরাধের মটিভ ও ইনটেশন প্রমাণ করতে হয়। কি কারনে কেন অপরাধ করা হলো সেটি স্পষ্ট করেতে হয়। জীবন নাটক সিনোমা না হলেও তাতে নাটকীয় অনেক ক্ষটনা ঘটে। একটি ভালো কাজের পিছনে মটিভ কি এখন এটিও খুজে দেখা দরকার। ভালো কাজটি খারাপ কাজ আড়াল করার পায়তারা নাকি অন্য কোন সুবিধা তৈরীর পথ। সরকারী কর্মচারী তার কোন কাজের বিনিময়ে যখন সরকারী ফি-এর বাদে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয় তাকে ঘুষ বলা হয় যা অবৈধ। আবার সরকারী কর্মচারী তার কোন কাজ যা তার দ্বায়িত্ব করেও যদি সে পত্রিকার হেডলাইন হয় তাহলে সেটিও ঘুষের পর্যায়ে বা তেমন কোন কাজের পর্যায়ে অবশ্যই পড়ে। সরকার বা সরকারী কর্মচারী তার কাজ দ্বায়িত্ব থেকেই করবে। এর জন্যই জনগণ কর প্রদান করে ও তাদের বেতন নিশ্চিত হয় ও তার বিশেষ ভাতার আওতাতেও আসে।তার তাদের কাজ ও সেবার মজুরী পাচ্ছেই ।
এই মজুরি পাওয়া কাজটি করে যদি তারা পত্রিকার শিরোনাম হয় তাহলে সন্দেহ জাগে অন্য কোন কাজে তাদের কোন গলদ আছে কি না??Nurunnobi Islam৫০০ টাকা মজুরিতে একজন কামলা নেবার পর সে তার নির্ধারিত কাজ করবেই। কামলাকে বলা হলো মাটি কাটতে । সে তার চুক্তিবদ্ধ কাজ করলে ও মাটি কেটে ৫০০ টাকা পেল । এখন কামলা যদি বলে আমি কোন রকমের মজুরি নেওয়া ছাড়াই মাটি কেটে দিয়েছি তাহলে তা কি কোন প্রশংসাযোগ্য কাজ হবে বা হওয়া উচিত। বা সেই কামলা এমন ভাবে তা ছড়িয়ে বেড়ালো যে সে একজনের সারাদিন মাটি কেটে দিয়ে অনেক বড় উপকার করে দিয়েছে । এই মাটি কেটে দেবার কারনেই তার ঘর আর পানিতে ডুবে যাবে না। কিন্তু সে যে ৫০০ টাকা মজুরি নিয়ে নিজের ঘর বাচালো তা আর প্রকাশ প্রকাশ করছে না বা তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে ।
সমাজে এখন কাজ করার জন্য মজুরি ভিত্তিক অসংখ্য লোক নিয়োজিত। এরা যে কাজরে জন্য মজুরী নেয় তা করার জন্যই প্রচারনা চাই। তারা আর বাকী কাজ করুক বা না করুক কোন একটা দেখানোর মত কাজ হলেই তা কোন না কোন সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশ করবেই। সে যে সে কাজের জন্য নিয়োজিত , সেই কাজটি করার জন্য নিয়োমিত তাকে মজুরি দেয়া হয় তা সে বেমালুম ভুলে যায় ও অন্যদেরও তা মনে করতে দেয় না। আর এমন কাজ খুব সহজ ভাবে ইঙ্গিত দেয় সেই প্রকাশ করা তার দ্বায়িত্বের কাজ ছাড়া অন্য কোন ভালো কাজ হয়ত নেই । বা চারিদিকে এতো বেশী দ্বায়িত্বে অবহেলা যে কেউ দ্বায়িত্ব পালন করলেই তা সংবাদে আসে। বিবেচনা করি , কোন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এক কোর্সের উপর ৪০ টা ক্লাস নেওয়া উচিত। একজন বাদে সব শিক্ষক ৪-১৪ টা ক্লাস নেয় । এখন যে শিক্ষক ৪০ টা ক্লাস নেয় তাকে নিয়ে পত্রিকার শিরোনাম আসলো । এমন অবস্থায় খুব সহজভাবেই বুঝা যায় অন্যরা তাদের দ্বায়িত্ব পালন করছে না, তারা তাদের মজুরি হালাল করছে না। তারা যে কাজ করছে তা লোক দেখানো। একাজের মাধ্যমে নিজেকে জাহির করা হয় আর তা দ্বায়িত্বে ফাকি দেবার বিষয়টি স্পস্ট করে। ভালো কাজে উৎসাহিত করা হয় না। কেউ তার দ্বায়িত্ব পালন করছে এখন এটিই একরকম অবিশ্বাস্য আর অবাক করার কাজ । দ্বায়িত্বে অবহেলাই স্বাভাবিক আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায় এমন বিশ্বাস অনেকের ভিতর কাজ করছে। এখন অনেকেই ভিক্ষুককে ২ টাকা ভিক্ষা দিলেও আশে পাশে ক্যামেরা খোজে ।
সাংবাদিক না থাকলেও নিজে সাংবাদিক হয়ে তা ক্যামেরা বন্দি করে ও সাংবাদিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আবার কেউ যদি ২০০ টাকা ভিক্ষা দেয় তার মনে জাগে সাংবাদিক যদি এর ছবিই না তোলে তাহলে তার কোন মূল্যই থাকলো না। আর তা যদি ২০০০ টাকা হয় তাহলে তাতে অবশ্যই সাংবাদিক লাগবেই লাগবে। এখন সংবাদ পত্রের ক্যামেরা ছাড়া লোকজন আর দান করে না বা দান করতে চায় না। শিরোনাম না হলে তার কোন মূল্যই থাকে না। যে কাজ একজন ব্যাক্তির দ্বায়িত্ব থেকে করা উচিত সে কাজও এখন প্রচার নির্ভর হওয়ায় প্রচার ছাড়া আর জমে উঠে না। নানা ঘটনা ও উপ-ঘটনা আমাদের এখন এ ইঙ্গিত দিচ্ছে ভালো কাজ প্রচার করে অন্যকে উৎসাহিত করা এখন একটি অমূলক ধারনা। ছবি উঠাতেই হবে আর তার প্রচার করতেই হবে। সাংবাদিক যদি না থাকে তাহলে দ্বায়িত্বের কাজ বা কোন ভালো কাজ করা যাবে না। দান করার পিছনে বা কোন ভালো কাজের পিছনেও কোন না কোন উদ্দেশ্য আছেই আর তা থাকবেই । এই উদ্দেশ্য যদি সমাজ ও সামাজিকতাকে ধোকা দেয়া হয় তাহলে তার কোন বাস্তব মূল্য থাকে না। শুধুমাত্র প্রচারণাই কোন ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে না।
নিজের নামে ত্রাণ বিতরণ, ধান কাটা নিয়ে নাটক সহ নানা সরকারী কর্মচারীর দ্বায়িত্ব পালন করে প্রচরণার যে মহা উৎসব তা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়। ১৯৪৩ ইংরেজি সাল আর বাংলায় ১৩৫০। ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব বিশ্বজুড়ে । তখন তো ফেসবুক, ইউটিউব বা এতো বেশী অনলাইন বা প্রিন্ট সংবাদ মাধ্যম ছিলো না। এই মহামরীর প্রধান কারন ছিলো মজুতদারী ও খাবারের সুষ্ঠ বন্টন না হওয়া। অনেকের ঘরেই খাবার ছিলো ও তা নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যের প্রয়োজনও মিটাতে পারতো । অনেকের কাছেই অর্থ ছিলো । যাদের খাবার ছিলো তার মজুদ থেকে খাদ্য শস্য বের করলো না। এই ভয় যে খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আজকে দেশ থেকে ফেসবুক , ইউটিউব বা মিডিয়াগুলো তুলে নেয়া হোক তাহলে চোখ বন্ধ করে বলা যাবে এতো দান খয়রাত আর সাহায্য সহযোগিতা আর হবে না।
দেশে মজুদ আর সম্পদ বৈষম্য এতো বেশী হবে যে তা অতি দ্রুত দেশে দূর্ভিক্ষ তৈরী করতে যতেষ্ট হবে। অন্যদিকে সরকারী কর্মচারী এতো বেশী দামী হবে যে তারা আর জনস্মুখে আসবে না ও তাদের ভালো ভালো কাজ গুলো আমরা দেখবো না। মিডিয়ার ভালো কাজ অনেক । মিডিয়ার প্রভাবে করোনা পরিস্থিতি বা অন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করা একটু হয়ত যাচ্ছে। সমাজে দানবীর ভালো মানুষ তৈরী হচ্ছে । স্যালুট জানাই সব ভালো মানুষকে। সংবাদ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক ছাড়া চলাও সম্ভব না । হয়ত এই ভালো মানুষরা আরো বৃদ্ধি পাবে। আরো সমাজকর্মী ও দানবীর আমরা পাবো। তবুও মনে প্রশ্ন থেকেই যায় , সব কিছু গরু মেরে জুতা দান নয়ত। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সাংবাদিক বা প্রচার মাধ্যম থাকলে আদেী এতো ভালো কাজ হবে ও সরকারী কাজগুলোও এই নূন্যতম পর্যায়ে হলেও মানুষের কাছে আসবে?
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট। ও সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি শাখা, কুস্টিয়া mdnurunnobiislam379@gmail.com
লেখকের ব্যক্তিগত মতামত