সব
facebook apsnews24.com
রাজনীতিবীদদের জন্য চাই পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউট - APSNews24.Com

রাজনীতিবীদদের জন্য চাই পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউট

রাজনীতিবীদদের জন্য চাই পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউট

রায়হান কাওসার

নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে বসবাসকারী একটি বৃহৎ মানব পরিবারই হলো একটি রাষ্ট্র।রাষ্ট্র নামক এই বৃহৎ মানব পরিবারের বিভিন্ন শীর্ষ পদে যে সকল রাজনীতিবিদগণ নেতৃত্ব দেন, তারাই হন সে দেশের সকল সম্পদের নিয়ন্ত্রণকর্তা। তারাই নির্ধারণ করেন জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা কিভাবে খরচ হবে। তাঁদের একটি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ টাকার লাভ-লোকসান। বিচক্ষণ ও পরিশ্রমী নেতৃত্বের জন্য যেমনএকটি রাষ্ট্র দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, অদূরদর্শী ও অদক্ষ নেতৃত্বের জন্য আবার কোন কোন রাষ্ট্র পিছিয়েও যায়। আবার, একটি রাষ্ট্রের ভেতরেই দক্ষ নেতৃত্বের জন্য কোন কোন ডিপার্টমেন্ট ভাল করে, আবার কোন কোন ডিপার্টমেন্ট একটি সরকারকে অজনপ্রিয় করে তোলে। তদারকিপূর্ণ নেতৃত্বের অভাবেও অনেক সময় কিছু কিছু সরকারি অফিসের কর্মচারিগণ অলস হয়ে পড়েন। ফলে রাষ্ট্রীয় সকল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়না। সুতরাং, একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় লিডারশীপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

একটি রাষ্ট্রকে সচল রাখতে গিয়ে এর কর্তা ব্যক্তিদেরকে জনগণের খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে তাদের নিরাপত্তা বিধান, সরকারি আয়-ব্যয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশী বন্ধু ও অবন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষাসহ দৈনন্দিন নানাবিধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকতে হয়।রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে দরকার হয় নানান বিষয়ে দক্ষ লোকজনেরও। যারা নিজ নিজ সেক্টরে কাজ করে দেশকে সচল রাখেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যে সকল সরকারি অফিসাররা চাকুরী করেন তারা যাতে তাদের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারেন,তাদের জন্য দেশে-বিদেশে নানা ধরনের ট্রেনিঙেরও ব্যবস্থা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

এছাড়াও সরকারি অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গঠিত হয়েছে বিপিএটিসি, বিয়ামের মত বিভিন্ন ইন্সটিটিউট ও নানা ট্রেনিং শাখা। ব্যাংকারদের জন্য স্ব-স্ব ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমী, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।অন্যান্য সেক্টরে কর্মরত অফিসারদের জন্যেও ব্যবস্থা করা হয় নানা ধরনের ইন-হাউস এবং আউটডোর ট্রেনিং ও গ্রুমিং-আপের ব্যব্যস্থা। কিন্তু এ সকল অফিসারদের যারা নেতৃত্ব দেন অর্থাৎ যেসকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জন-প্রতিনিধি হন, তাদের ট্রেনিঙের বিষয়টি খুব একটা চোখে পড়ে না।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক দলগুলো কেউ ক্ষমতায় আরোহণ করে, কেউ বা ক্ষমতা ছাড়ে। সব সময় একই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে না। ফলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েক বছর পর পরই নতুন ব্যক্তিরা আসীন হন যাদের অনেকের ঐসকল পদে কাজ করার অতীত অভীজ্ঞতা থাকে না। কেউ সাহিত্য পড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন, আবার কেউ ডাক্তারী পড়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন। যে ব্যক্তি যে বিষয়ে পারদর্শী, তাকে সে বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়না অনেক সময়।দেওয়া হয় নতুন একটি সেক্টরের দায়িত্ব।ফলে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন মানদন্ড থাকে না। কেউ টাকা আছে বলে নমিনেশন পায়, কেউ স্বামী, কেউ পিতা, কেউ মাতা, কেউ চাচা-খালুর পরিচয়ে নমিনেশন পায়, কেউ মেধা ও পরিশ্রমের জোরে নেতৃত্বে আসে, কেউ তারকা-খ্যাতি দিয়ে নমিনেশন পায়, কেউ কেউ দলের জন্য মাঠে-ঘাটে দৌড়িয়ে নমিনেশন পায়। ফলে নানা প্রকৃতি ও ব্যাক-গ্রাউন্ডের লোকজন একটি রাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলে আসে- যাদের অনেকেরই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে বড় বড় সিদ্ধান্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে না। তাদেরকে আমলা ও বিশেষজ্ঞরা যে সিদ্ধান্ত দেন, অনেক সময় সেটিই ফাইনাল বলে দিয়ে চলে আসেন। নিজস্ব মেধা ও উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা প্রয়োগ করতে পারেন না অনেক সময়।

রাষ্ট্রীয় অফিসার ও বিশেষজ্ঞগণ দেশকে ভালবাসেন। অনেকেরই নির্দিষ্ট বিষয়ে ভাল জ্ঞান ও পারদর্শীতা থাকে, তবে সরকারি অফিসার ও বিশেষজ্ঞগণের সাথে সাথে যদি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণও তাঁদের দায়িত্বাধীন বিষয়গুলির উপর ভাল ধারণা রাখতে পারেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে আরও বেশি নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব। এছাড়া, দেশের সকল সরকারি অফিসার ও বিশেষজ্ঞগণের সকলেই অনেক সৎ, দূর-দৃষ্টি সম্পন্ন এবং পরিশ্রমী হবেন– এমনটি প্রত্যাশা করা সমীচীন নয়। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদেরকেও তাদের স্ব-স্ব দায়িত্বাধীন বিষয়ের উপর মৌলিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান থাকা উচিত। এক্ষত্রে তাঁদেরকে যদি রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণবিষয়গুলির উপর মাঝে মাঝে ট্রেনিং প্রদান করা হয়- তাঁরা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার শিখরে পৌছানোর চেষ্টায় সর্বদা লিপ্ত থাকে। জাতীয়নির্বাচন এবং জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে ঘিরে অনেক সময় তাদের মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিযোগিতা ও মতবিরোধ। এসকল প্রতিযোগিতা ও মতবিরোধ অনেক সময় রূপ নেয় জাতীয় হানাহানিতে যা কেড়ে নেয় শত শত নিরপরাধ প্রাণ, ক্ষতি হয় কোটি কোটি রাষ্ট্রীয় টাকা। কাগজে কলমে সুস্থ প্রতিযোগিতার কথা বলা হলেও বাস্তবে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না। সকল রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতৃবৃন্দদের সম্মিলিত একটি মিলন মেলার স্থান হিসেবে যদি পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউটকে বেছে নেওয়া হয়- সেটি জাতির জন্য ভালই হবে-আশা করা যায়। একটি সম্মিলিত মিলন মেলার মাধ্যমে পলিটিক্যাল লিডারদের যদি কিছুটাও মোটিভেট করা যায়, পরস্পরের প্রতি আরেকটু সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল করা যায়- সেটি দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্যঅনেক কল্যাণ বয়ে আনবে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নিকট হতে জুনিয়র নেতৃবৃন্দ অনেক জ্ঞান ও অভীজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

পৃথিবীতে অনেক দেশই আছে যারা দক্ষ ও সুবিবেচক নেতা পাওয়ার কারণে জাতি হিসেবে দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌছাতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেক দেশই আছে যেখানে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও দ্বিমতের কারণে তারা ততটা এগিয়ে যেতে পারেনি। অনেক দেশ আছে যেখানে নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য আর অনাস্থার কারণে বিদেশী শক্তি সেসব দেশে আস্তানা গেড়েছে এবং নানা ফন্দি-ফিকির করে সে দেশের সম্পদ লুটে নিয়েছে।

একটি সুন্দর হৃদয় পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। একটি ভাল নেতৃত্ব পরবর্তী প্রজন্মের নিকট অনুসরনীয় হয়ে ওঠে। যে জাতী ভাল নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পেরেছে, সে জাতীর পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বও তাদের পূর্বসূরীদের মত তাদের দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের রাজনীতিবীদ মহাত্মা গান্ধী সফল নেতৃত্বের একটি ভাল উদাহরণ। মহাত্মা গান্ধীর রাজনীতির অহিংস নীতি এখন শুধু পুরো ভারত বর্ষেই নয়, পৃথিবীরঅনেক আধুনিক রাষ্ট্রের রাজনীতিবীদদের উপরেওপ্রভাব বিস্তার করেছে। ভারত একটি উন্নয়নশীল বৃহৎ রাষ্ট্র। অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যা বিরাজমান থাকলেও ভারতের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে তেমন বড় কোন বিতর্ক দেখা যায় না, আবার নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও এদেশের বৈদেশিক নীতিতেও বড় কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অগ্রজ নেতৃবৃন্দ ভাল হওয়ার কারণে আমেরিকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিও বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় কিছুটাহলেও এগিয়ে। ভাল লিডারশীপের কারণেই সিঙ্গাপুর সবচেয়ে অল্প সময়ের ব্যব্যধানে তৃতীয় বিশ্ব হতে প্রথম বিশ্বের একটি দেশে পরিণত হতে পেরেছে। নেতৃত্ব সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউট এক্ষত্রে সম্ভাব্য একটি সুযোগ হতে পারে আমাদেরজন্য।

অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মিডিয়ায় কিংবা সংসদে অপ্রত্যাশিত কথা বলার কারণে নিজেকে এবং নিজ দলকে একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেন। যদিও তিনি পরক্ষণে বুঝতে পারেন যে, উক্ত কথাটি তাঁর বলা উচিত হয়নি। কিন্তু ততক্ষণে জনগণ ও তাঁর দল তাঁকে যেনম্বরপত্র ধরিয়ে দেয়, সেখানেতাঁর মার্কস লেখা থাকে ৩৩এর নিচে, অর্থাৎ ফেল। একজন নেতার বক্তব্য সাধারণ জনগণের মনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। বেফাঁস ও আনাড়ী বক্তব্য দেওয়ার কারণে অনেক নেতা তাঁদের মন্ত্রীত্ব বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেনি- এমন নজিরও কম নেই।

আধুনিক বিশ্বে কোন দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে একটি দেশের দুটি প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহনশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা প্রণয়ণ করতে হবে। কেননা, রাজনীতির বৈকরনিক অর্থ হলো দেশের কল্যাণ, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী-বিশেষের কল্যাণ নয়। তাই একটি দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ এবং মতবিনিময়ের একটি সুন্দর মাধ্যমও হতে পারে পলিটিক্যাল লিডারশীপ ইন্সটিটিউট।

লেখকঃ রায়হান কাওসার, আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সাবেক শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, ঢাবি। raihankawsardu@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj